এই
পর্বে যা যা থাকছে
আবু ইসহাক
রশীদ করীম
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সৈয়দ আলী আহসান
আবু ইসহাক
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক আবু ইসহাক ছিলেন জীবনসন্ধানী লেখক । তাঁর রচনার মূল বিষয় ছিল বিশ্বযুদ্ধ, দূর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র, যা তিনি নির্মোহ দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন।
সাহিত্যিক উপাদান
|
সাহিত্যিক তথ্য
|
জন্ম
|
আবু ইসহাক ১ নভেম্বর, ১৯২৬ সালে শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শিরঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
|
‘রসের জলসায়’ গল্প
|
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৪০ সালে 'রসের জলসায়' গল্পটি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ' নবযুগ ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
|
এনএসআই
|
১ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালে এনএসআই এর খুলনা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
|
সম্পাদনা
|
তিনি বাংলা একাডেমির ‘সমকালিন বাংলা ভাষার অভিধান' (১৯৯৩) সম্পাদনা করেন ।
|
পুরস্কার ও সম্মাননা
|
তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), একুশে পদক (১৯৯৭) পান ।
|
বাড়ি
|
চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে খুলনার খালিশপুর এলাকায় ‘সূর্যদীঘল বাড়ি' নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন।
|
উপন্যাস
|
তাঁর উপন্যাসগুলো:
‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ (১৯৫৫): এটি প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দেশ বিভাগ, স্বাধীনতার আনন্দ ও বেদনাসহ বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের বিশ্বস্ত দলিল এ উপন্যাস। এপ্রিল, ১৯৮৯ সালে এর কিশোর সংস্করণ প্রকাশিত হয় । প্রধান চরিত্র: জয়গুন।
‘পদ্মার পলিদ্বীপ' (১৯৮৬): এটির প্রথম ১৬টি অধ্যায় ১৯৭৪-৭৬ পর্যন্ত ‘মূখর মাটি’ নামে বাংলা একাডেমির ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এর অনেক পরে তিনি উপন্যাসটি ৩২টি অধ্যায়ে সমাপ্ত করে ১৯৮৬ সালে ‘পদ্মার পলিদ্বীপ' নামে প্রকাশ করেন। এ উপন্যাসের একদিকে রয়েছে পদ্মাতীর কেন্দ্রীক চরের অধিবাসীর জীবনসংগ্রাম, পদ্মার বুকে জেগে উঠা চর দখলকে কেন্দ্র করে সংঘাত, অন্যদিকে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় গ্রামীণ বা চরাঞ্চলের মানুষের জীবনের দুর্বিষহ দিনাতিপাত। চরিত্র: ফজল, এরফান মাতব্বর, জরিনা।
‘ জাল' (১৯৮৮): এটি গোয়েন্দা কাহিনি ভিত্তিক ।
|
অন্যান্য সাহিত্যকর্ম
|
তাঁর অন্যান্য সাহিত্যকর্মসমূহ:
গল্পগ্রন্থ: ‘মহাপতঙ্গ' (১৯৬৩): এ গল্পটিতে একজোড়া চড়ুই পাখির জবানিতে একদিকে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ, অন্যদিকে অভিশাপের কথা বিধৃত হয়েছে। এ গল্পের ইংরেজি অনুবাদ Dragon Fly এর নাট্যরূপের জন্য “সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক পুরস্কার' লাভ করেন ।
‘অভিশাপ’ (১৯৪০): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প। যা কাজী নজরুল ইসলামের ‘নবযুগ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
‘হারেম’ (১৯৬২),
‘জোঁক’ (ছোটগল্প)।
নাটক: ‘জয়ধ্বনি'
স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ: “স্মৃতিবিচিত্রা”
|
মৃত্যু
|
তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সালে ঢাকায় মারা যান।
|
‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের পরিচয়
গ্রামীণ জীবনের দারিদ্র্য, কুসংস্কার, মোড়ল ও মোল্লাদের দৌড়াত্ম্য, হৃদয়হীনা শাশুড়ির বৌয়ের প্রতি অত্যাচার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আবু ইসহাক রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস 'সূর্য দীঘল বাড়ী' (১৯৫৫)। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বাংলার ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। যারা প্রাণ বাঁচিয়ে লঙ্গরখানায় আশ্রয় নিতে পেরেছিল তাদেরই একজন স্বামী পরিত্যাক্তা জয়গুন। এই জয়গুনের জীবনের আলেখ্যকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায়। উপন্যাসের কাহিনি। জয়গুনদের বাড়িতে রাতে কথিত ভূতের ঢিল পড়ে, সে বাড়িতে নির্ভয়ে থাকা যায় না। তাই সূর্য দীঘল বাড়ী অমঙ্গলের প্রতীকে পরিণত হয়। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দেশ বিভাগ, স্বাধীনতার আনন্দ ও বেদনাসহ বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের বিশ্বস্ত দলিল এ উপন্যাস। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৯ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন শেখ নিয়ামত আলী ও মসীহউদ্দিন শাকের। এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। এর চলচ্চিত্ররূপ আন্তর্জাতিক ১টি পুরস্কার লাভ করে । উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
রশীদ করীম
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক রশীদ করীম নাগরিক জীবন-ইতিহাস-নগর সমাজের সমন্বয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের বহুমুখী পরিচয় বিধৃত করেছেন। সমাজ মনস্কতা, মধ্যবিত্তের মনস্তত্ত্ব ও টানাপোড়েন তাঁর উপন্যাসের উপজীব্য ।
সাহিত্যিক উপাদান
|
সাহিত্যিক তথ্য
|
জন্ম
|
রশীদ করীম ১৪ আগস্ট, ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন । কথাসাহিত্যিক আবু রুশদ তাঁর ভাই ।
|
প্রথম গল্প
|
তাঁর রচিত প্রথম গল্প ‘ আয়েশা ’ ১৯৪২ সালে ‘ সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
|
পুরস্কার ও সম্মাননা
|
তিনি আদমজী পুরস্কার (১৯৬১), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭২), একুশে পদক (১৯৮৪), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯১) পান ।
|
উপন্যাস
|
তাঁর রচিত উপন্যাসসমূহ:
‘উত্তম পুরুষ' (১৯৬১): এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, যা দেশবিভাগের প্রেক্ষাপটে রচিত। প্রধান চরিত্র শাকেরকে ঘিরে সেলিনা, অনিমা, শেখর, মুশতাক ইত্যাদি চরিত্র আবর্তিত এবং এদের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় কোথাও কোথাও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। নগরজীবনের বৈশিষ্ট্য অবলম্বনে উপন্যাসটি রচিত। পুরো উপন্যাসে শাকের তিনটি নারী চরিত্রের নৈকট্য লাভ করে। কিন্তু তাদের পাওয়ার পথে আসে বিভিন্ন ধরনের বাঁধা। এ উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬১ সালে ‘আদমজী পুরস্কার' পান।
‘প্রসন্ন পাষাণ' (১৯৬৩): প্রধান চরিত্র তিশনা এ উপন্যাসের কথক। উত্তম পুরুষের বর্ণনায় উপন্যাসটি রূপায়িত। চরিত্রঃ তিশনা, কামিল, আলিম ।
‘আমার যত গ্লানি' (১৯৭৩): স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিক অস্থিরতাকে আশ্রয় করে তিনি এটি রচনা করেন। এতে ১৯৪৭ সাল থেকে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালের মধ্যকার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঢাকার একটি বহুজাতিক ফার্মের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির এরফান চৌধুরী। অফিসের পর ক্লাবে বসে মদপান ও নারীসঙ্গ বিশেষত মধ্যবয়সী সুন্দরী আয়েশার সাথে সময় কাটানো তার কাজ। তবে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে আত্মকেন্দ্রিক এরফান এ সময়টাকে অস্বীকার করতে পারেনি। ব্যক্তিজীবনে নায়ক এরফান অন্তর্গতভাবে দহন হবার ফলে সামাজিক কঠিন বাস্তবতার কাছে বারংবার পরাজিত হয়। কিন্তু অন্তরাত্মাকে সজাগ রাখে বলে শেষ অবধি সে অপরাজিত থাকে। এ অপরাজেয় মানসিকতাই এ উপন্যাসের মূলসুর ।
‘প্রেম একটি লাল গোলাপ' (১৯৭৮): উমর চরিত্রের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের চাকরিজীবী, মধ্যবিত্ত জীবনের হীনমন্যতা, নিজ চরিত্রে নিহিত যৌবন বিকারের কাহিনি ফুটে উঠেছে।
‘সাধারণ লোকের কাহিনি' (১৯৮২),
‘ শ্যামা ' (১৯৮৪),
‘সোনার পাথর বাটি’ ,
‘ খাঁচায় ’,
‘মায়ের কাছে যাচ্ছি',
‘পদতলে রক্ত’,
‘বড়ই নিঃসঙ্গ’,
‘লাঞ্চবাক্স' (১৯৯৩)।
|
প্রবন্ধগ্রন্থ
|
তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ সমূহ :
‘আর এক দৃষ্টিকোন’,
‘অতীত হয় নূতন পুনরায়’,
‘মনের গহনে তোমার মুরতিখানি’।
|
গল্পগ্রন্থ
|
গল্পগ্রন্থ: ‘প্রথম প্রেম' ।
|
আত্মজীবনী
|
আত্মজীবনী: ‘জীবন মরণ' (১৯৯৯)।
|
মৃত্যু
|
তিনি ১৯৯২ সালে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন এবং ২৬ নভেম্বর, ২০১১ সালে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক সেন্টারে মারা যান ।
|
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১)
বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার, জীবনসন্ধানী ও সমাজ-সচেতন শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি ব্যক্তিজীবন ও সমাজসমস্যার প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, মূল্যবোধের বিপর্যয়, মানসিক স্খলন ও পতনের আলেখ্য উজ্জ্বলভাবে অঙ্কন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি প্রবাসে ইউনেস্কোতে কর্মরত থাকায় স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ার ক্ষেত্রে কাজ করেন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান
|
সাহিত্যিক তথ্য
|
জন্ম
|
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৫ আগস্ট, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের ষোলশহরে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস নোয়াখালী ।
|
সম্পাদনা
|
তিনি ‘Contemporary' নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৫ সালে কলকাতার “দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকার সহ-সম্পাদক পদে যোগদান করেন।
|
বিবাহ
|
১৯৫৬ সালে সিডনী দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিডনীর ফরাসী দূতাবাসে কর্মরত অ্যান মারিকে বিবাহ করেন। অ্যান মারি ধর্মান্তরিত হয়ে নাম রাখেন আজিজা মোসাম্মত নাসরিন। যদিও তিনি এ নামে পরিচিত হননি।
|
পুরস্কার ও সম্মাননা
|
তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬১), 'আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৫), 'একুশে পদক' (১৯৮৩- মরণোত্তর) পান ।
|
প্রথম গল্প
|
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ প্রকাশিত প্রথম গল্পের নাম ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’: এটি ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ।
|
উপন্যাস
|
তাঁর উপন্যাসসমূহ:
‘লালসালু' (১৯৪৮): এতে গ্রাম-বাংলায় ধর্ম নিয়ে একটি শ্রেণির ব্যক্তিস্বার্থ অর্জন ও নারী জাগরণের চিত্র ফুটে উঠেছে। এ উপন্যাসটি তাঁর স্ত্রী অ্যান মারি ফরাসি ভাষায় 'L Arbre Sams Maeme' (১৯৬১) নামে অনুবাদ করেন। এটি Tree without roots (১৯৬৭) নামে অনূদিত হয়। চরিত্র: মজিদ, জমিলা, আমেনা ।
‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪): আরেফ আলী নামের এক স্কুল মাস্টারকে অবলম্বন করে মানুষের চেতনাগত জটিলতা উল্লেখ প্রসঙ্গে সামন্ত-সমাজ প্রভাবিত গ্রামীণ জীবনের নানা অসঙ্গতি এ উপন্যাসের মূল বিষয়। এটি মনঃসমীক্ষণমূলক অস্তিত্ববাদী উপন্যাস। এক জ্যোৎস্না রাতে আরেফ আলী ঘর থেকে বের হয়ে দেখে বাঁশঝাড়ের ভেতর এক নগ্ন যুবতির লাশ পড়ে আছে। পাশে দণ্ডায়মান কাদের মিয়া (আরেফ আলী যে বাড়িতে আশ্রিত সেই বাড়ির মালিক)। কাদেরের সহযোগী হয়ে সে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু এ সত্য কথাটি সে বলতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। একদিকে আশ্রয় হারানোর ভয়, অন্যদিকে সত্য গোপনের যন্ত্রণা। অবশেষে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দাদা সাহেব ও আইন কর্তৃপক্ষের নিকট সব সত্য বলে দিয়ে নিজে অস্তিত্ববান হয়ে উঠে। চরিত্র: আরেফ আলী, কাদের (দরবেশ), আলফাজ উদ্দিন (দাদা সাহেব) ।
The Ugly Asian : এটি ইংরেজিতে রচিত। এটি শিব্রত বৰ্মণ 'কদৰ্য এশীয়' (২০০৬) নামে অনুবাদ করেন। ‘কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮): ধর্মের নামে আচার-সর্বস্বতা, বিজ্ঞানের নামে অদৃষ্টবাদিতা, বাস্তবতার নামে স্বপ্ন-কল্পনা ইত্যাদির বিরুদ্ধাচরণ, ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনের সুখ-দুঃখ ইত্যাদির সার্থক রূপায়ণ এ উপন্যাস। এ মনঃসমীক্ষণমূলক উপন্যাসে ফুটে উঠেছে একদিকে মুহাম্মদ মুস্তফার করুণ জীবনালেখ্য, অন্যদিকে শুকিয়ে যাওয়া বাকাল নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনচিত্র। এটি চেতনাপ্রবাহ রীতিতে লেখা। বাংলা সাহিত্যে ওয়ালীউল্লাহ প্রথম চেতনাপ্রবাহ রীতির প্রয়োগ ঘটান। How does one cook beans : এটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। এটি শিবব্রত বর্মণ ‘শিম কিভাবে রান্না করতে হয়' নামে অনুবাদ করেন।
|
নাটক
|
তাঁর নাটকসমূহ:
' বহিপীর ' (১৯৬০, সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান): এ নাটকে ধর্মকে কিভাবে ভণ্ড বহিপীর নিজের সুবিধার্থে কাজে লাগিয়েছে তাই ফুটে উঠেছে। চরিত্র: বহিপীর, তাহেরা, হাতেম, হাসেম ।
' তরঙ্গভঙ্গ' (১৯৬৪, সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান): অস্তিত্বের সংকটে নিপতিত মানুষের অন্তর্গত আর্তনাদ শব্দরূপ পেয়েছে এ নাটকে। চরিত্র: আমেনা, মতলুব আলী। 'সুড়ঙ্গ' (১৯৬৪): এ নাটকে মানুষের চেতনার গভীরস্থ লোভ, লালসা, ঘৃণা, ঈর্ষাকে রূপকাশ্রয়ে তুলে ধরেছেন। “উজানে মৃত্যু” (১৯৬৬): আধুনিক সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতা, এর ক্লান্তিকর পথপরিক্রমা, নিরাশাবাদী ভাব কিন্তু সুখের জন্য অসীম প্রতীক্ষা,যা শেষ হবার নয়,এগুলোই এ নাটকের বিষয়বস্তু।এটি একটি অ্যাবসার্ড নাটক।
|
গল্পগ্রন্থ
|
তাঁর গল্পগ্রন্থসমূহ:
“নয়নচারা” (১৯৫১): এটি তার প্রথম গল্পগ্রন্থ,যা ছাত্রাবস্থায় প্রকাশিত হয়।
‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ (১৯৬৫),
গল্প সমগ্র (১৯৭২)।
|
মৃত্যু
|
তিনি ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। প্যারিসের উপকণ্ঠে মদোঁ-স্যুর বেলভুতে তাকে সমাহিত করা হয় ।
|
সৈয়দ আলী আহসান
সৈয়দ আলী আহসান (১৯২২-২০০২)
সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন কবি, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী। তিনি ইকবাল ও ইলিয়ট এর নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ করেন; একদিকে ইসলামি ভাব ও বিষয় নিয়ে, অন্যদিকে লেনিন ও সামাজিক প্রসঙ্গ নিয়ে কবিতা রচনা করেন। ভাববস্তুতে ঐতিহ্য সচেতনতা, সৌন্দর্যবোধ ও দেশপ্রীতি ছিল তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। তিনি জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন।
সৈয়দ আলী আহসানের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান
|
সাহিত্যিক তথ্য
|
জন্ম
|
সৈয়দ আলী আহসান ২৬ মার্চ, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে যশোরের (বর্তমান মাগুরা) আলোকদিয়া নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
|
অনুবাদ
|
তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদক।
|
বিশেষ পরিচিতি
|
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে ‘ চেনাকণ্ঠ' ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।
|
পরিচালক
|
তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক (১৯৬০-৬৬) ছিলেন।
|
ইংরেজি কবিতা
|
১৯৩৭ সালে আরমানিটোলা বিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্কুল ম্যাগাজিনে 'The Rose' নামে একটি ইংরেজি কবিতা ছাপা হয়।
|
পুরস্কার ও সম্মাননা
|
তিনি 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৭), ‘একুশে পদক' (১৯৮৩), ‘স্বাধীনতা পুরস্কার' (১৯৮৮) পান।
|
জাতীয় অধ্যাপক
|
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘জাতীয় অধ্যাপক' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ।
|
গ্রন্থসমূহ
|
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:
কাব্যগ্রন্থ:
‘অনেক আকাশ' (১৯৫৯),
‘একক সন্ধ্যায় বসন্ত’ (১৯৬৪),
‘সহসা সচকিত' (১৯৬৫),
‘আমার প্রতিদিনের শব্দ' (১৯৭৪),
‘উচ্চারণ' (১৯৬৮),
‘সমুদ্রেই যাব’ (১৯৮৭),
‘রজনীগন্ধা’ (১৯৮৮),
‘প্রেম যেখানে সর্বস্ব' ।
অনুবাদগ্রন্থ :
‘ইডিপাস' (১৯৬৩),
‘হুইটম্যানের কবিতা' (১৯৬৫)।
শিশুতোষ : ‘কখনো আকাশ' (১৯৮৪)।
আত্মজীবনী :
‘আমার সাক্ষ্য' (১৯৯৪)।
প্রবন্ধ:
‘গল্পসঞ্চয়ন’ (১৯৫৩) - ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সহযোগে সংকলন সম্পাদনা,
‘নজরুল ইসলাম' (১৯৫৪)- সমালোচনা গ্রন্থ
‘কবিতার কথা' (১৯৫৭)
‘কবি মধুসূদন’ (১৯৫৭)
‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত' (১৯৫৬)- মুহম্মদ আবদুল হাই সহযোগে
‘সাহিত্যের কথা' (১৯৬৪)
‘পদ্মাবতী' (১৯৬৮)
‘মধুমালতি' (১৯৭২)
|
মৃত্যু
|
তিনি ২৫ জুলাই, ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মারা যান ।
|