বাংলা সংবাদপত্র
পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র ১৫৬০ সালে জার্মান থেকে প্রকাশিত হয়। ১৭০২ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয় বিশ্বের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৫ সালে পত্র-পত্রিকায় প্রথম সেন্সর প্রথা চালু করে।
প্রশ্নঃ ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্রের নাম কী?
উঃ. জেমস্ অগাস্টাস হিকি সম্পাদিত ‘বেঙ্গল গেজেট’( ১৭৮০)। এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্নঃ. বাংলা ভাষার প্রথম সাময়িকপত্র কোনটি?
উঃ. জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত 'দিগদর্শন' (১৮১৮)।
প্রশ্নঃ. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?
উঃ. জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত 'সমাচার দর্পণ' (১৮১৮)। এটি সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্নঃ. বাঙালি কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?উঃ. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'বাঙ্গাল গেজেট' (১৮১৮)।
প্রশ্নঃ. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র কোনটি?
উঃ. ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত 'সংবাদ প্রভাকর'। সাপ্তাহিক হিসেবে ১৮৩১ সালে এবং দৈনিক হিসেবে ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্নঃ. মুসলমান কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা কোনটি?
উঃ. শেখ আলিমুল্লাহ সম্পাদিত 'সমাচার সভারাজেন্দ্র (১৮৩১)।
প্রশ্ন. বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?
উঃ. গুরুচরণ রায় সম্পাদিত ‘রংপুর বার্তাবহ” (১৮৪৭)।
প্রশ্নঃ. ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?
উঃ. কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত 'ঢাকা প্রকাশ (১৮৬১)।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রমথ চৌধুরী
উইলিয়াম কেরী
বুদ্ধদেব বসু
#.'দৈনিক নবযুগ' পত্রিকার সম্পাদক-
কাজী নজরুল ইসলাম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মোজাম্মেল হক
মাওলানা আকরাম খাঁ
#.‘শনিবারের চিঠি' কি ধরনের সাহিত্য পত্রিকা?
মন্তব্যধর্মী
নীতিকথা
হাস্যরসাত্মক
তথ্য সমৃদ্ধ
#.নিচের কোনটি বিশ শতকের পত্রিকা?
শনিবারের চিঠি
বঙ্গদর্শন
তত্ত্ববোধিনী
সংবাদ প্রভাকর
#.সবুজপত্র পত্রিকার সম্পাদকের নাম-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাজী নজরুল ইসলাম
প্রমথনাথ বিশী
প্রমথ চৌধুরী
বঙ্গদর্শন
বঙ্গদর্শন মাসিক সাহিত্যপত্রিকা। ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) কর্তৃক এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। উনিশ শতকের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বিশেষত বাংলা গদ্যের গঠনে এর অবদান অবিস্মরণীয়। পত্রিকাটি ১৮৭৬ পর্যন্ত মাত্র চার বছর প্রকাশিত হয়।
বঙ্গদর্শনের ভাষা ছিল খুব উন্নত মানের সাধু বাংলা। সাহিত্য, সমাজ, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন সম্পর্কিত মূল্যবান প্রবন্ধ এবং উপন্যাস এতে প্রকাশিত হতো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮৭৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এর সম্পাদক ও প্রধান লেখক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র এক গুরু দায়িত্ব পালন করেন।
বঙ্গদর্শনকে তখন শিক্ষিত বাঙালি সমাজের প্রথম মুখপত্র বলা হতো, কেননা বাঙালি জাতির আধুনিক চিন্তা ও মনন এর মাধ্যমেই প্রথম প্রকাশ লাভ করে। বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্ম ও সাম্যবিষয়ক চিন্তা এই পত্রিকায়ই প্রকাশিত হয়।
বঙ্গদর্শনের প্রধান লেখক বঙ্কিমচন্দ্র হলেও গঙ্গাচরণ, রামদাস সেন, অক্ষয় সরকার, চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ পন্ডিতও এতে নিয়মিত লিখতেন। বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘বন্দে মাতরম্’ এই পত্রিকায়ই প্রথম মুদ্রিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের পরে তাঁর ভাই সঞ্জীবচন্দ্র ও শ্রীশচন্দ্র স্বল্প সময় বঙ্গদর্শন সম্পাদনা করেন। ২০০০ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটিস্থ বঙ্কিমভবন গবেষণাকেন্দ্র কর্তৃক বঙ্গদর্শন নবরূপে ষাণ্মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “বঙ্গদর্শন” পত্রিকা কত সালে প্রকাশিত হয়?
১৮৭১
১৮৭২
১৮৭৩
১৮৮৫
#.বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার প্রকাশকাল-
১৮৬৫
১৮৭০
১৮৭২
১৮৭৪
#.' বঙ্গদর্শন ' পত্রিকা কোন সালে প্রথম প্রকাশিত হয়?
১৮৬৫
১৮৭২
১৮৭৫
১৮৮১
কল্লোল
কল্লোল মূলত একটি সাহিত্য-পত্রিকা, যা অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের কলকাতা থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। কল্লোল ১৯২৩ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ভেতরে সংগঠিত প্রভাবশালী বাংলা সাহিত্য বিপ্লবের সমনামিক। কল্লোল যেসকল নব্য-লেখকদের প্রধান মুখপাত্র ছিল, যাদের অন্যতম হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ। অন্যান্য সাময়িক পত্রিকা যেগুলো কল্লোল পত্রিকাকে অনুসরণ করে সেগুলো হলো– উত্তরা (১৯২৫), প্রগতি (১৯২৬) এবং কালিকলম (১৯২৬)।[১]
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.‘কল্লোল’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদকের নাম কী?
মুজতবা আলী
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
দীনেশরঞ্জন দাস
কাজী নজরুল ইসলাম
#.‘কল্লোল’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদকের নাম কি?
বুদ্ধবেদ বসু
দীনেশরঞ্জন দাস
সজনীকান্ত দাস
প্রেমেন্দ্র মিত্র
#.'কল্লোল' পত্রিকার প্রকাশকাল --
১৯২৩
১৯২৮
১৯২৯
১৯৩৫
#.'কল্লোল' পত্রিকার প্রথম সম্পাদকের নাম কী?
বুদ্ধদেব বসু
দীনেশরঞ্জন দাশ
সজনীকান্ত দাস
প্রেমেন্দ্র মিত্র
#.কল্লোল শব্দের অর্থ কী?
কলকল
শব্দময় ঢেঊ
কোলাহল
তরঙ্গ
সমকাল
দৈনিক সমকাল বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা। এটি ২০০৫ সালের ৩১ মে থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। পত্রিকাটির প্রকাশক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।
বঙ্গদূত
বঙ্গদূত পত্রিকাটি ১৮২৯ সালে নীলমণি হালদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকির সম্পাদনায় বেঙ্গল গেজেট পত্রিকাটি প্রকাশিত
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.বঙ্গদূত পত্রিকাটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
১৮৩৯ সালে
১৭৮০ সালে
১৮৩৩ সালে
১৮২৯ সালে
বাংলা সাহিত্যের শাখা
চর্যাপদ
চর্যাপদ পুঁথির একটি পৃষ্ঠা
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতম রচনা এটি। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ়ার্থ সাংকেতিক রূপবন্ধে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তারা পদগুলি রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীতের শাখাটির সূত্রপাতও এই চর্যাপদ থেকেই। এই বিবেচনায় এটি ধর্মগ্রন্থ স্থানীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলিতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ আজও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ুচণ্ডীদাস নামক জনৈক মধ্যযুগীয় কবি রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যানকাব্য। ১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে এই কাব্যের একটি পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে তারই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে পুথিটি প্রকাশিত হয়। যদিও কারও কারও মতে মূল গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। কৃষ্ণের জন্ম, বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে তার প্রণয় এবং অন্তে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় অভিপ্রয়াণ – এই হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য। আখ্যানভাগ মোট ১৩ টি খণ্ডে বিভক্ত। পুথিটি খণ্ডিত বলে কাব্যরচনার তারিখ জানা যায় না। তবে কাব্যটি আখ্যানধর্মী ও সংলাপের আকারে রচিত বলে প্রাচীন বাংলা নাটকের একটি আভাস মেলে এই কাব্যে। গ্রন্থটি স্থানে স্থানে আদিরসে জারিত ও গ্রাম্য অশ্লীলতাদোষে দুষ্ট হলেও আখ্যানভাগের বর্ণনানৈপূণ্য ও চরিত্রচিত্রণে মুন্সিয়ানা আধুনিক পাঠকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা ভাষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন। বাংলা ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে এর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। অপরদিকে এটিই প্রথম বাংলায় রচিত কৃষ্ণকথা বিষয়ক কাব্য। মনে করা হয়, এই গ্রন্থের পথ ধরেই বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলির পথ সুগম হয়।
মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং পরিণামে এ সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিসীম।সকল সাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধনে অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট ভূমিকা আছে।বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতীক্রম পরিলক্ষিত হয় না।"সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা।"ভাষার মান বাড়ানোর জন্য ভাষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়,আর তাতে সহায়তা করে অনুবাদকর্ম।উন্নত সাহিত্য থেকে ঋণ গ্রহণ করা কখনো অযৌক্তিক বিবেচিত হয়নি।উন্নত ও সমৃদ্ধ ভাষা-সাহিত্যের সান্নিধ্যে এলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়,অন্য ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দও গ্রহণ করা যায়। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বক্তব্য আয়ত্তে আসে।ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্পদশালী ভাষায় উৎকর্ষপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির অনুবাদ একটি আবশ্যিক উপাদান।
জ্ঞানবিজ্ঞানের বিষয়ের বেলায় শুদ্ধ অনুবাদ অভিপ্রেত।কিন্তু সাহিত্যের অনুবাদ শিল্পসম্মত হওয়া আবশ্যিক বলেই তা আক্ষরিক হলে চলে না। ভিন্ন ভাষার শব্দ সম্পদের পরিমাণ, প্রকাশক্ষমতা ও বাগভঙ্গি অনুযায়ী ভিন্ন ভাষায় ব্যক্ত কথায় সংকোচন, প্রসারণ, বর্জন ও সংযোজন আবশ্যিক হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যে অনুবাদের ধারাটি সমৃদ্ধি লাভ করে তাতে সৃজনশীল লেখকের প্রতিভা কাজ করেছিল।সে কারণে মধ্যযুগের এই অনুবাদকর্ম সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।
বুলিকে লেখ্য ভাষার তথা সাহিত্যের ভাষায় উন্নীত করার সহজ উপায় হচ্ছে অনুবাদ।অন্যভাষা থেকে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞান-মননের বিভিন্ন বিসয় অনুবাদ করতে হলে সে বিষয়ক ভাব-চিন্তা-বস্তুর প্রতিশব্দ তৈরী করা অনেক সময় সহজ হয়,তৈরী সম্ভব না হলে মূল ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।এভাবেই সভ্য জাতির ভাষা-সাহিত্য মাত্রই গ্রহণে-সৃজনে ঋদ্ধ হয়েছে।এ ঋণে লজ্জা নেই।যে জ্ঞান বা অনুভব আমাদের দেশে পাঁচশ বছরেও লভ্য হত না,তা আমরা অনুবাদের মাধ্যমে এখনই পেতে পারি।যেমনঃ বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলো,শ্রেষ্ঠ দার্শনিক চিন্তাগুলো,বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো,সমাজতত্ত্বগুলো-মানবচিন্তার শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলো এভাবে আয়ত্তে আসে।
চৌদ্দ পনেরো শতকে আমাদের লেখ্য সাহিত্যও তেমনি সংস্কৃত-অবহটঠ থেকে ভাব-ভাষা-ছন্দ গ্রহণ করেছে,পুরাণাদি থেকে নিয়েছে বর্ণিত বিষয় ও বর্ণনাভঙ্গি এবং রামায়ণ-মহাভারত-ভাগবত-প্রণয়োপাখ্যান-ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি সংস্কৃত-ফারসী-আরবী-হিন্দি থেকে অনূদিত হয়েছে আমাদের ভাষায়।এভাবেই আমাদের লিখিত বা শিষ্ট বাংলা ভাষাসাহিত্যের বুনিয়াদ নির্মিত হয়েছিল।
আদর্শ অনুবাদকের একটা বিশেষ যোগ্যতা অপরিহার্য। ভাষান্তর করতে হলে উভয় ভাষার গতিপ্রকৃতি, বাকভঙ্গি ও বাকবিধির বিষয়ে অনুবাদকের বিশেষ ব্যুৎপত্তির দরকার।তাহলেই ভাষান্তর নিখুঁত ও শিল্পগুণান্বিত হয়।তাই ভাষাবিদ কবি ছাড়া অন্য কেউ কাব্যের সুষ্ঠু অনুবাদে সমর্থ হয় না।মধ্যযুগে অ-কবিও অনুবাদ কর্মে উৎসাহী ছিলেন।তাই অনুবাদে নানা ত্রুটি দেখা যায়।এছাড়া এঁরা নিজেদের সামর্থ্য রুচিবুদ্ধি ও প্রয়োজন অনুসারে মূল পাঠের গ্রহণ-বর্জন ও সংক্ষেপ করেছেন।এজন্য মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় কোন তথাকথিত অনুবাদই নির্ভরযোগ্য নয়।সবগুলোই কিছু কায়িক,কিছু ছায়িক,কিছু ভাবিক অনুবাদ এবং কিছু স্বাধীন রচনা।কাব্য সাহিত্যের অনুবাদ আক্ষরিক হতেই পারে না।
বৈষ্ণব পদাবলি
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য একটি বিস্তৃত কালপর্ব জুড়ে বিন্যস্ত। প্রাকচৈতন্যযুগে বিদ্যাপতি,চণ্ডীদাস এবং চৈতন্য ও চৈতন্য পরবর্তী যুগে গোবিন্দদাস,জ্ঞানদাস বিশেষভাবে খ্যাতিমান হলেও আরও বহু কবি বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত পদ লিখেছেন। তবে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে পদাবলি চর্চার এই ইতিহাস চৈতন্যের ধর্মান্দোলনের পরই ছড়িয়েছিল। বৈষ্ণব পদাবলির মূল বিষয়বস্তু হল কৃষ্ণের লীলা এবং মূলত মাধুর্যলীলা। অবশ্য এমন নয় যে কৃষ্ণের ঐতিহ্যলীলার চিত্রণ হয়নি। তবে সংখ্যাধিক্যের হিসেবে কম। আসলে বৈষ্ণব পদাবলির মধ্যে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা স্তরে স্তরে এমন গভীর ও বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে অনেকের ধারণা বাংলা সাহিত্যে এ আসলে একটি রোমান্টিক প্রণয়কাব্যের নমুনা। বস্তুত পৃথিবীর অন্যান্য মধ্যযুগীয় সাহিত্যের মতনই এও বিশেষভাবে ধর্মাশ্রিত ও বৈষ্ণব ধর্মের তত্ত্ববিশ্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তবে যে কোন ধর্মের মতনই বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বেরও আনেকগুলি ঘরানা ছিল। এর মধ্যে তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী। এদের ধর্মীয় দর্শনের প্রভাব পড়েছে চৈতন্যপরবর্তী পদকর্তাদের রচনায়। প্রাকচেতন্যযুগের পদাবলিকারদের রচনায় তন্ত্র বা নানা সহজিয়া সাধনপন্থার প্রভাব রয়েছে। ভারতীয় সাধনপন্থা মূলত দ্বিপথগামী- স্মার্ত ও তান্ত্রিকী। শশীভূষণ দাশগুপ্ত এই দুই পথকেই বলেছেন "উল্টাসাধন" তন্ত্রও হল এই উল্টাসাধনই। দেহভান্ডই হল ব্রহ্মান্ড এই বিশ্বাস সহজিয়া ও তান্ত্রিক পন্থীদের। সেই কারণে চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতির সঙ্গে জ্ঞানদাস বা গোবিন্দদাসদের মূলগত প্রভেদ রয়েছে। বৃন্দাবনের বৈষ্ণবগোষ্ঠী যে তত্ত্ববিশ্ব নির্মাণ করলেন তাতে কৃষ্ণলীলার মূল উৎস ভাগবত ও আন্যান্য পুরাণ হলেও,আসলে কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা, সর্বোপরি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা প্রাধান্য পেল। কেননা এঁদের মতে কৃষ্ণের দুই রূপ। প্রথমটি ঐশ্বর্যস্বরূপ ঈশ্বর, যিনি সর্বশক্তিমান। কৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ প্রতিটি লোক সে তার মাতা-পিতা বা, স্ত্রী বা সখা যেই হোক না কেন- কৃষ্ণকে তারা ভগবান বলে জানেন, সেভাবেই তাকে দেখেন। দ্বিতীয়টি হল মাধুর্যস্বরূপ কৃষ্ণ। এইরূপে কৃষ্ণের লীলার যে বিচিত্র প্রকাশ অর্থাৎ প্রভুরূপে,পুত্ররূপে,সখারূপে, প্রেমিকরূপে সর্বোপরি রাধামাধবরূপে তাতে কোথাও কৃষ্ণের মনে বা কৃষ্ণলীলাসহকারদের মনে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যমূর্তির জাগরণ ঘটেনা। ঐশ্বর্যমূর্তি নেই বলে কৃষ্ণভক্তি এখানে শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর হয়ে শুদ্ধতম হয়েছে। তাই এই মতাবলম্বী বৈষ্ণব কবিসাধকরা কেউ প্রভু, কেউ পুত্র, কেউ সখা, আর কেউবা প্রেমিকরূপে কৃষ্ণকে প্রার্থনা করেছেন। শেষোক্ত কবিসাধকের সংখ্যাই বেশি।
বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামীর অন্যতম রূপ গোস্বামী উজ্জ্বলনীলমণি-তে কৃষ্ণভক্তিকেই একমাত্র রসপরিনতি বলা হয়েছে। এর স্হায়ীভাব হল দুপ্রকারের-
১. বিপ্রলম্ভ শৃঙ্গার
২. সম্ভোগ শৃঙ্গার
আবার এই দুটি প্রকারও আবার চারটি করে উপবিভাগে বিন্যস্ত।
বিপ্রলম্ভ
পূর্বরাগ
মান (এরও দুটি ভাগ- সহেতু আর নির্হেতু)
প্রেমবৈচিত্ত
প্রবাস (এরও দুটি ভাগ- সুদূর আর অদূর)
সম্ভোগ
সংক্ষিপ্ত
সংকীর্ণ
সম্পূর্ণ
সমৃদ্ধিমান
বৈষ্ণব পদাবলিতে কৃষ্ণের লীলাবিলাস এই বিষয়পর্যায়ে বিন্যস্ত। অবশ্য,উপর্যুক্ত চারটি ছাড়াও বিপ্রলম্ভকে আরও সূক্ষাতিসূক্ষভাগে ভাগ করা হয়েছে নানাসময়। যেমন- অনুরাগ, আক্ষেপানুরাগ কিংবা, বিপ্রলব্ধা, খন্ডিতা বা, বাসরসজ্জিতা অথবা অভিসার। পুরাণ ছাড়া সাহিত্যে বা কাব্যে বাংলা বৈষ্ণব পদাবলির উৎস হল- সংস্কৃত পদসংকলন গ্রন্থগুলি। যথা, গাথা সপ্তশতী,....... তাছাড়া জয়দেবের গীতগোবিন্দের কথা তো এ প্রসঙ্গে বলতেই হয়। বিদ্যাপতি মূলত মৈথিলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেছেন। তবে অনেকে এই পদাবলিগুলির ভাষার বিশেষ মাধুর্যের জন্য একে ব্রজবুলি ভাষা বলে কল্পনা করতে চেয়েছেন। প্রাচীন এই মতটিকে পরবর্তীকালের আধুনিক সমালোচক শংকরীপ্রসাদ বসু স্বীকার করে নিয়েছেন এবং বিদ্যাপতিকে একটি সাহিত্যিক ভাষার মহান সর্জক বলে মনে করেছেন। সে যাই হোক ভাষাগত এই প্রভাব যে পরবর্তীকালের কবিদেরও বিরাট প্রভাবিত করেছিল তার প্রমাণ গোবিন্দদাস। জ্ঞানদাসের কিছু কিছু পদও এই তথাকথিত ব্রজবুলি ভাষাতেই রচিত। মধ্যযুগের বহু কবি এই ভাষাতেই পদরচনা করেছেন। এমনকি আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যখন ' ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ' লেখেন তখন তিনি লেখেন ব্রজবুলি ভাষাতেই। বৈষ্ণব পদাবালি সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস ছাড়াও যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, গয়াস খান, আলাওল, দীন চণ্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখ্যযোগ্য কবি। বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যিক গুণে আসামান্য। বিভিন্ন কবির লেখা কিছু পদ এখানে উল্লেখ করা হল- ১.সই কেমনে ধরিব হিয়া।/আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়/ আমার আঙিনা দিয়া।।/সে বধুঁ কালিয়া না চাহে ফিরিয়া/ এমতি করিল কে।/আমার অন্তর যেমন করিছে/তেমনি করুক সে।।/যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু/ লোকে অপযশ কয়।/সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি/আর যেন কার হয়।।/যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙাইয়া/এমত করিল কে।/আমার পরাণ যেমতি করিছে/তেমতি হউক সে।। (চণ্ডীদাস) ২.চলে নীল সাড়ি নিঙারি নিঙারি/পরান সহিতে মোর।/সেই হৈতে মোর হিয়া নহে থির/মন্মথ জ্বরে ভোর । (চণ্ডীদাস) ৩.এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর।।/ঝম্পি ঘণ গন — জন্তি সন্ততি/ভুবন ভরি বরি খন্তিয়া।/কান্ত পাহুন কাম দারুন/সঘনে খন শর হন্তিয়া।।/কুলিশ শত শত পাত-মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া।/মও দাদুরী ডাকে ডাহুকী/ফাটি যাওত ছাতিয়া।।/তিমির দিক ভরি ঘোর যামিনী/অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।/বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়াবি/হরি বিনে দিন রাতিয়া।। (বিদ্যাপতি)
মঙ্গলকাব্য
মধ্যযুগের বাংলা কাব্যধারার একবিশিষ্ট শাখা হল মঙ্গলকাব্য। মঙ্গল শব্দের আভিধানিক অর্থ হল কল্যাণ। মধ্যযুগে বিভিন্ন দেব-দেবীর মহিমা ও মাহাত্ম্যকীর্তন এবং পৃথিবীতে তাদের পূজা প্রতিষ্ঠার কাহিনী নিয়ে যেসব কাব্য রচিত হয়েছে সেগুলোই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত।মঙ্গলকাব্যের তিনটি প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল ছিল অন্যতম । এই কাব্য তিনটির প্রধান চরিত্র হল যথাক্রমে মনসা, চণ্ডী ও ধর্মঠাকুর যারা বাংলার সকল স্থানীয় দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও কিছু ছোট মঙ্গলকাব্য রয়েছে, যেমন- শিবমঙ্গল, কালিকা মঙ্গল, রায় মঙ্গল, শশী মঙ্গল, শীতলা মঙ্গল ও কমলা মঙ্গল প্রভৃতি নামে পরিচিত। মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত প্রধান কবিরা হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিজয়গুপ্ত, রূপরাম চক্রবর্তী প্রমুখ।
রাজসভার সাহিত্য
রাজসভার সাহিত্য হল রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত সাহিত্য। মধ্যযুগের প্রধান রাজসভার কবি ছিলেন আলাওল (১৫৯৭-১৬৭৩) এবং ভারত চন্দ্র প্রমুখ। মহাকবি আলাওল ছিলেন আরাকান রাজসভার প্রধান কবি। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় কাব্য রচনা করেছিলেন। ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। আলাওলের পদ্মাবতী (১৬৪৮ খৃ:) ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য। তাছাড়া :
সতীময়না লোরচন্দ্রানী (১৬৫৯খৃঃ)
সপ্ত পয়কর (১৬৬৫ খৃঃ)
সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল (১৬৬৯খৃঃ)
সিকান্দরনামা (১৬৭৩খৃঃ)
তোহফা (১৬৬৪ খৃঃ)
রাগতালনামা
মধ্যযুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের প্রধান কবি ছিল ভারত চন্দ্র। তিনি তার অন্নদামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। এই কাব্যের বিখ্যাত উক্তি হল, "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"।
শিবায়ন কাব্য
শিবায়ন কাব্য মধ্যযুগীয় বাংলা আখ্যানকাব্যের একটি ধারা। শিব ও দুর্গার দরিদ্র সংসার জীবন কল্পনা করে মঙ্গলকাব্যের আদলে এই কাব্যধারার উদ্ভব। শিবায়ন কাব্যে দুটি অংশ দেখা যায় – পৌরাণিক ও লৌকিক। মঙ্গলকাব্যের আদলে রচিত হলেও শিবায়ন মঙ্গলকাব্য নয়, মঙ্গলকাব্যের সঙ্গে এক কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই কাব্যের দুটি ধারা দেখা যায়। প্রথমটি মৃগলুব্ধ-মূলক উপাখ্যান ও দ্বিতীয়টি শিবপুরাণ-নির্ভর শিবায়ন কাব্য। শিবায়নের প্রধান কবিরা হলেন রতিদেব, রামরাজা, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র কবিচন্দ্র ও শঙ্কর কবিচন্দ্র।
শাক্তপদাবলি
শাক্তপদাবলী হল কালী-বিষয়ক বাংলা ভক্তিগীতির একটি জনপ্রিয় ধারা। এই শ্রেণীর সঙ্গীত শাক্তপদাবলীর একটি বিশিষ্ট পর্যায়। শাক্তকবিরা প্রধানত তন্ত্রাশ্রয়ী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন বলে শাক্তপদাবলীতে তন্ত্রদর্শন নানাভাবে দ্যোতিত। শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে কালী বা শ্যামা মাতৃরূপে ও ভক্ত সাধক সন্তানরূপে কল্পিত। ভক্তের প্রাণের আবেগ, আকুতি, আবদার, অনুযোগ, অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার নিবেদন ছন্দোবদ্ধ হয়ে গীতধারায় প্রকাশিত হয়েছে এই পর্যায়ে। এই কারণে সাধনতত্ত্বের পাশাপাশি আত্মনিবেদনের ঘনিষ্ঠ আকুতি শাক্তপদাবলীর পদগুলিতে অপূর্ব কাব্যময় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সমাজজীবন ও লৌকিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ এই পদাবলির অধ্যাত্মতত্ত্ব শেষাবধি পর্যবসিত হয়েছে এক জীবনমুখী কাব্যে।
শাক্তপদাবলী ধারাটি বিকাশলাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এই সময় বঙ্গদেশে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালে বৈষ্ণব ধর্মানুশীলনের পরিবর্তে শাক্তদর্শন ও শক্তিপূজা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। তার কারণ দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার সতীরুপের শক্তিপীঠগুলির অনেকগুলিই বঙ্গদেশে। সেই শক্তিপীঠগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে এসেছে শক্তিসাধনা। তারই ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত হয় শাক্তসাহিত্য। শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদ সেন এবং তার পরেই স্থান কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের। এই দুই দিকপাল শাক্তপদকর্তা ছাড়াও অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পদকর্তা এই ধারায় সংগীতরচনা করে শাক্তসাহিত্য ও সর্বোপরি শাক্তসাধনাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – কৃষ্ণচন্দ্র রায়, শম্ভুচন্দ্র রায়, নরচন্দ্র রায়, হরুঠাকুর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু), কালী মির্জা, দাশরথি রায় (দাশুরায়) প্রমুখ। অনেক মুসলমান কবিও শাক্তপদাবলী ধারায় নিজ নিজ কৃতিত্ব স্থাপন করে গেছেন। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ শ্যামাসঙ্গীত রচয়িতা হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে এই শতাব্দীর জনপ্রিয় শ্যামাসঙ্গীত গায়কদের অন্যতম হলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
নাথসাহিত্য
বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে নাথধর্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য।প্রাচীনকালে শিব উপাসক এক সম্প্রাদয় ছিল,তাদের ধর্ম ছিল নাথধর্ম। হাজার বছর আগে ভারতে এই সম্প্রাদয় খ্যাতি লাভ করেছিল। তাদের গতিবিধির ব্যাপকতার জন্য সারা ভারতবর্ষে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। নাথ অর্থ প্রভু,দীক্ষালাভের পর নামের সাথে তারা নাথ শব্দটি যোগ করত। তারা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারি ছিল। বৌদ্ধ ও শৈব ধর্মের সমন্বয়ে এ ধর্ম গরে ওঠে। এই নাথ পন্থা বৌদ্ধ মহাযান আর শূন্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। অবিদ্যা ও অজ্ঞান থেকে মুক্তির জন্য এবং মহাজ্ঞান লাভ করাই নাথগনের লক্ষ্য ছিল।সাধনার মাধ্যমে দেহ পরিশুদ্ধ করে মহাজ্ঞান লাভের যোগ্য করলে তাকে পক্ক দেহ বলা হত। এই মতের প্রতিষ্ঠাতা মীননাথ। আর শিব হল আদি নাথ। সব নাথ তার অনুসারী। দশম-একাদশ শতকে নাথধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করে। অই সময়ে নাথ সাহিত্য বিস্তার লাভ করে। প্রধান প্রধান নাথগন হলেন- মীননাথ,গোরখনাথ,প্রমুখ।
বাউল সাহিত্য
বাউল মতবাদের উপর ভিত্তি করে রচিত সাহিত্যই হল বাউল সাহিত্য। বাউল সাধকদের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন জগন্মোহন গোসাঁই ও লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন। এছাড়াও বাউল কবিদের মধ্যে জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, হাছন রাজা, রাধারমণ, সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু সাঁই, পাগলা কানাই, শীতলং সাঁই, দ্বিজদাস, হরিচরণ আচার্য, মনোমোহন দত্ত, লাল মাসুদ, সুলা গাইন, বিজয় নারায়ণ আচার্য, দীন শরৎ (শরৎচন্দ্র নাথ), রামু মালি, রামগতি শীল, মুকুন্দ দাস, আরকুন শাহ্, সিতালং ফকির, সৈয়দ শাহ্ নূর, শাহ আব্দুল করিম, উকিল মুন্সি, চান খাঁ পাঠান, তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, দুলু খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, আবদুল মজিদ তালুকদার, আবদুস সাত্তার, খেলু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আলী হোসেন সরকার, চান মিয়া, জামসেদ উদ্দিন, গুল মাহমুদ, প্রভাত সূত্রধর, আবদুল হেকিম সরকার, ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ, ফকির দুর্বিন শাহ, শেখ মদন, দুদ্দু সাঁই,কবি জয়দেব, কবিয়াল বিজয়সরকার, ভবা পাগলা, নীলকণ্ঠ, দ্বিজ মহিন, পূর্ণদাস বাউল, খোরশেদ মিয়া, মিরাজ উদ্দিন পাঠান, আব্দুল হাকিম, মহিলা কবি আনোয়ারা বেগম ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের মাধ্যমেই বাউল মতবাদ বা বাউল সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা লোক সাহিত্য
বাংলাদেশের লোক সাহিত্য বাংলা সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এর সৃষ্টি ঘটেছে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রসার ঘটেছে মৌখিকভাবে, তথাপি বাংলা সাহিত্যকে এ লোক সাহিত্য ব্যাপ্তি প্রদান করেছে, করেছে সমৃদ্ধ। পৃথক পৃথক ব্যক্তি-বিশেষের সৃষ্টি পরিণত হয়েছে জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যে যার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটেছে ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তা চেতনার। লোক সাহিত্য মূলত মৌখিক সাহিত্য। ফলে এধরনের সাহিত্য স্মৃতিসহায়ক কৌশল, ভাষার গঠনকাঠামো এবং শৈলীর উপরও নির্ভর করে। এদেশের লোক সাহিত্য সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করছে। এগুলো হচ্ছে মহাকাব্য, কবিতা ও নাটক, লোক গল্প, প্রবাদ বাক্য, গীতি কাব্য প্রভৃতি। লোক সাহিত্যের এই সম্পদগুলো সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অথবা অন্য কোন উপায়ে এখনো এই অঞ্চলে টিকে রয়েছে। বহুবছর ধরে এদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাংলাদেশের লোক সাহিত্য এই জাতিগোষ্ঠীগুলো দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। ফলশ্রুতিতে বর্তমান বাংলাদেশের বহুমুখী বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল লোক সাহিত্যের একাংশের ব্যাখ্যায় ইতিহাসের প্রয়োজন পরে।
বাংলাদেশের লোক সাহিত্য লোক সাহিত্যের প্রচলিত সকল শাখায় নিজেকে বিস্তার করেছে। এগুলো হচ্ছে গল্প, ছড়া, ডাক ও খনার বচন, সংগীত, ধাঁধা, প্রবাদ বাক্য, কুসংস্কার ও মিথ। লোকগীতি বাংলা লোক সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের সংগীত মূলত কাব্যধর্মী। এদেশীয় সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের চেয়ে মৌখিক সুরের দক্ষতার উপর অধিক নির্ভরশীলতা লক্ষ করা যায়। লোকগীতিকে আমরা সাতটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করতে পারি। এগুলো হচ্ছেঃ প্রেম, ধর্মীয় বিষয়, দর্শন ও ভক্তি, কর্ম ও পরিশ্রম, পেশা ও জীবিকা, ব্যাঙ্গ ও কৌতুক এবং এসবের মিশ্রণ। অন্যদিকে এদেশীয় লোকসাহিত্যে আমরা গানের বিভিন্ন শাখা দেখতে পাই। এগুলো হচ্ছেঃ বাউল গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, গম্ভীরা, কবিগান, জারিগান, সারিগান, ঘাটু গান,যাত্রা গান ,ঝুমুর গান, জাগের গান,গাজী গান,উরি গান প্রভৃতি।
বাংলা লোক সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হল:
মৈমনসিংহ গীতিকা (ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রচলিত পালাগানগুলোকে একত্রে মৈমনসিংহ গীতিকা বলা হয়। এই গানগুলো প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩-৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। বর্তমান নেত্রকোণা জেলার আইথর নামক স্থানের আধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাঁথা সংগ্রহ করছিলেন।)
পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (পূর্ববঙ্গ অঞ্চলের প্রচলিত লোকসাহিত্যকে একত্রে পূর্ববঙ্গ গীতিকা বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসা পালাগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১৯২৬ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সাহায্যে পালাগুলো সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। পরে ১৯৭১-১৯৭৫ সালে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক ও সাত খণ্ডে প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা প্রকাশ করেন।)
ঠাকুরমার ঝুলি (বাংলা শিশুসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় রূপকথার সংকলন। এই গ্রন্থের সংকলক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার রূপকথার গল্পগুলো সংগ্রহ করেছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে। তবে সংগৃহীত হলেও দক্ষিণারঞ্জণের লেখনীর গুণে গল্পগুলো হয়ে উঠে শিশু মনোরঞ্জক। ৮৪ টি চিত্র সংবলিত ঠাকুরমার ঝুলির চিত্র অঙ্কন করেছেন গ্রন্থকার স্বয়ং। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার 'ভট্টাচার্য এন্ড সন্স' প্রকাশনা সংস্থা হতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন। এরপর থেকে এর শত শত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। রিনা প্রীতিশ নন্দী কর্তৃক অনূদিত এর একটি ইংরেজি সংস্করণও বের হয়েছে।)
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.‘বিচিত চিন্তা' কী জাতীয় রচনা?
নাটক
উপন্যাস
ছোটগল্প
প্রবন্ধ
#.বুকে ভর দিয়ে চলে যে প্রাণী
পারগ
উরগ
বিহগ
মোরগ
#.'মৈমনসিংহ গীতিকা' কে সম্পাদনা করেছেন?
ড. দীনেশচন্দ্র সেন
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
ড. আহমেদ শরীফ
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ
#.'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রবচনটি বোঝায়-
কষ্টের উপর আরো কষ্ট
দুরারোগ্য ব্যাধি
বুড়োর ভীমরতি
নতুন যৌবনপ্রাপ্তি
#.পাণিনি কে ছিলেন?
ভাষাবিদ
ঋগ্বেদবিদ
বৈয়াকরণিক
ঐপন্যাসিক
বাংলা কবিতা
বাংলা কবিতা এর উৎপত্তি হয়েছিল মূলত পালি এবং প্রাকৃত সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতি থেকে। এটি বৈদিক ধর্মীয় ধর্মানুষ্ঠান এবং বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম এর রীতিনীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরস্পর বিরোধি ছিলো। তবে আধুনিক বাংলার সংস্কৃত ভাষা ভাষার উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয় নি। বাংলা ১৪১৫ সাল নাগাদ থেকে বাংলা সাহিত্য জগতে এক ভিন্ন স্বাদের কবিতাশ্রয়ী ঘরানার উদ্ভব হতে দেখা যায়-দশকোষী কাব্য ঘরানা, পঞ্চবান কাব্য ঘরানা ইত্যাদি।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.’বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতাটি কার লেখা?
বিদ্রোহীকবি কাজী নজরুল ইসলাম
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
পল্লীকবি জসিমউদ্দীন
#.’একখানি ছোট ক্ষেত, আমি একালা’ কোন কবিতার চরণ?
চিত্রা
বলাকা
সোনার তরী
১৪০০ সাল
#.’ওরে বাছা মাতৃকোষে রতনের রাজি, এ ভিখারী দশা তবে কেন তোর আজি’ কোন কবির লেখা?
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
বিহারীলাল চক্রবর্তী
বন্দে আলী মিয়া
শাহ মুহাম্মদদ সগীর
#.’রূপসী বাংলার কবি’ কাকে বলা হয়?
জসীমউদ্দীন
জীবনানন্দ দাশ
সমরেশ বসু
হাছন রাজা
#.’পল্লীকবি’ কোন কবিকে বলা হয়?
জসীমউদ্দীন
দীনবন্ধু মিত্র
কাজী নজরুল ইসলাম
সতেন্দ্রনাথ দত্ত
সনেট
চতুর্দশপদী(Sonnet) হল এক ধরনের কবিতা যার প্রথম উদ্ভব হয় মধ্যযুগে ইতালিতে। এর বৈশিষ্ট্য হল যে এই কবিতাগুলো ১৪টি চরণে সংগঠিত এবং প্রতিটি চরণে সাধারণভাবে মোট ১৪টি করে অক্ষর থাকবে। এর প্রথম আট চরণের স্তবককে অষ্টক এবং পরবর্তী ছয় চরণের স্তবককে ষটক বলে। অষ্টকে মূলত ভাবের প্রবর্তনা এবং ষটকে ভাবের পরিণতি থাকে, যাকে বলা হয় ভোল্টা।
ইংরেজি চতুর্দশপদী
[সম্পাদনা]
ইংরেজিতে চতুর্দশপদী কবিতাকে সনেট (sonnet) বলা হয়। ইংরেজি চতুর্দশপদী প্রথম পরিচিতি পেয়েছিল খ্রিষ্টীয় ১৬শ (ষোড়শ) শতাব্দীতে 'টমাস ওয়াট' এর প্রয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু এর প্রচলন প্রবল হয়ে ওঠে স্যার ফিলিপ সিডনি এর Astrophel
and Stella (১৫৯১) প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে। তার পরের দুই শতক উইলিয়াম শেকসপিয়র, এডমন্ড স্পেন্সার, মাইকেল ড্রায়টন ইত্যাদি ব্যক্তিত্ত্বরা চতুর্দশপদী কবিতাকে নতুন নতুন ধাপে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এরুপ কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল নারীর প্রতি ভালবাসা।
বাংলা চতুর্দশপদী
[সম্পাদনা]
বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনার কৃতিত্ব মাইকেল মধুসূদন দত্তের, সনেটকে বাংলায় চতুর্দশপদী নাম মহাকবি মাইকেল মধুসূদনই দিয়েছিলেন। বাংলা সনেট (চতুর্দশপদী) এর সার্থক স্রষ্টা কবি মধুসূদন দত্ত ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে অবস্থানকালেই ইতালির কবি পেত্রার্কের সনেট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রথম বাংলা সনেটের দিগন্ত উন্মোচন করেন। ১৮৬৬ খ্রীষ্টাব্দে কবির চতুর্দশপদী কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই কবিতাগুলিতে কবি চিত্তের ব্যকুলতা, স্বদেশ প্রেম ও আবেগ ধ্বনিত হয়েছে।[১]
মাইকেল মধুসূধন দত্তের একটি চতুর্দশপদী।
“বউ কথা
কও”[২]
কি দুখে, হে পাখি, তুমি শাখার উপরে
বসি, বউ কথা কও, কও এ কাননে ?—
মানিনী ভামিনী কি হে, ভামের গুমরে,
পাখা-রূপ ঘোমটায় ঢেকেছে বদনে ?
তেঁই সাধ তারে তুমি মিনতি-বচনে ?
তেঁই হে এ কথাগুলি কহিছ কাতরে ?
বড়ই কৌতুক, পাখি, জনমে এ মনে—
নর-নারী-রঙ্গ কি হে বিহঙ্গিনী করে ?
সত্য যদি, তবে শুন, দিতেছি যুকতি;
(শিখাইব শিখেছি যা ঠেকি এ কু-দায়ে)
পবন বেগে যাও যথায় যুবতী;
“ক্ষম, প্রিয়ে” এই বলি পড় গি
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.সনেটের বৈশিষ্ট্য- 1. চৌদ্দ চরণবিশিষ্ট ii. প্রতি চরণে চৌদ্দ মাত্রা iii. তিন পর্ব। নিচের কোনটি সঠিক?
i, ii, iii
i
i ও ii
ii ও iii
#.প্রথম বাঙালী সনেট কার লেখা?
প্রমথ চৌধুরী
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
বিহারীলাল চক্রবর্তী
#.সনেটের কটি অংশ ?
একটি
দুটি
তিনটি
চারটি
#.বাংলা ভাষায় প্রথম আধুনিক সনেট রচনা করেছেন কে?
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
গোবিন্দচন্দ্র দাস
মধুসূদন দত্ত
নবীনচন্দ্র সেন
#.বাংলা ভাষায় সনেটের প্রবর্তক কে?
রবীন্দ্রনাথ
মধুসূদন
নজরুল
চন্ডীদাস
অমিত্রাক্ষর ছন্দ
অমিত্রাক্ষর ছন্দ বাংলা সাহিত্যের একটি
বিশেষ
ছন্দ
যা
মাইকেল
মধুসূদন দত্ত
প্রবর্তন করেন। এতে চরণগুলির মধ্যে
অন্ত্যমিল থাকে
না,
তবে
পয়ারের
মতো
চরণগুলি নিয়মিত
দৈর্ঘ্যের হয়। এটি বাংলা কাব্যকে একটি
নতুন
রূপ
দিয়েছে।
অমিত্রাক্ষর ছন্দ:
·
এটি
ইংরেজি
Blank Verse-এর
বাংলা
রূপ।
·
এ ছন্দে চরণগুলির মধ্যে
কোন
মিল
থাকে
না,
তবে
পয়ারের
মতো
চরণগুলি নিয়মিত
দৈর্ঘ্যের হয়।
·
এই
ছন্দে
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের
বৈশিষ্ট্য বজায়
থাকে।
·
মধুসূদন দত্ত
সর্বপ্রথম তাঁর
'পদ্মাবতী' নাটকে
এই
ছন্দের
ব্যবহার করেন।
·
পরবর্তীতে তিনি
'তিলোত্তমাসম্ভব' ও 'মেঘনাদবধ কাব্য' সহ অন্যান্য কাব্যেও এই
ছন্দ
ব্যবহার করেন।
·
এই
ছন্দ
বাংলা
কাব্যকে একটি
নতুন
পথে
চালিত
করে
এবং
আধুনিক
বাংলা
কবিতার
ভিত্তি
স্থাপন
করে।
উদাহরণস্বরূপ, মধুসূদন দত্তের 'তিলোত্তমাসম্ভব' কাব্যের প্রথম
সর্গের
কিছু
লাইন
এখানে
দেওয়া
হলো:
"ধবল
নামেতে
গিরি
হিমাদ্রির শিরে-
অভ্রভেদী, দেব-আত্মা, ভীষণ দর্শন;
সতত
ধবলাকৃতি, অচল
অটল;
যেন
ঊর্ধ্ববাহু, সদ্য,
শুভ্রবেশধারী,
নিমগ্ন
তপঃসাগরে ব্যোমকেশ শূলী-
যোগীকুলধ্যেয় যোগী। নিকুঞ্জ, কানন,
তরুরাজি, লতাবলী,
মুকুল,
কুসুম..."
এই উদাহরণে, প্রতিটি লাইনের
শেষে
মিল
খুঁজে
পাওয়া
যায়
না,
তবে
প্রতিটি লাইনের
অক্ষর
সংখ্যা
প্রায়
সমান,
যা
অমিত্রাক্ষর ছন্দের
বৈশিষ্ট্য।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট্য হলো-
অন্ত্যমিল আছে
চরণের প্রথমে মিল থাকে
অন্ত্যমিল নেই
বিশ মাত্রার পর্ব
#.অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক কে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাজী নজরুল ইসলাম
মাইকেল মধুসুদন দত্ত
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
#.অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট হলো-
চরণের প্রথমে মিল
বিশ মাত্রার পর্ব থাকে
অন্ত্যমিল আছে
অন্ত্যমিল নাই
#.বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক?
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সতেন্দ্র নাথ দত্ত
কাদের নওয়াজ
#.অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট হলো
অন্ত্যমিল আছে
বিশ মাত্রার পর্ব থাকে
চরনের প্রথমে মিল থাকে
অন্ত্যমিল নাই
বাংলা নাটক
বাংলা নাটকের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং এর যাত্রা সংস্কৃত নাটক থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা নাটক পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলা নাটকের যাত্রা মূলত সংস্কৃত নাটকের প্রভাব থেকে শুরু হলেও, পরবর্তীতে তা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। উনিশ শতকে বাংলা থিয়েটার এবং নাট্যচর্চা বিশেষভাবে প্রসার লাভ করে, যার ফলস্বরূপ অনেক বিখ্যাত নাট্যকার এবং নাটকের জন্ম হয়।
বাংলা নাটকের ইতিহাসের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক:
·
প্রাচীন যুগ:
বাংলা নাটকের যাত্রা সংস্কৃত নাটকের হাত ধরে শুরু হয়। গুপ্ত বংশের আমলে উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলাতেও নাট্যচর্চা শুরু হয়।
·
মধ্যযুগ:
মধ্যযুগে বাংলা লোকনাট্য এবং যাত্রা পালার প্রচলন ছিল। এই সময়ে ধর্মীয় এবং লৌকিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নাটক মঞ্চস্থ হতো।
·
আধুনিক যুগ:
উনিশ শতকে এসে বাংলা নাটকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। হেরাসিম লেবেদেফ কলকাতায় প্রথম বাংলা থিয়েটার (১৮শ শতকের শেষে) প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর একে একে বেশ কয়েকটি নাট্যমঞ্চ স্থাপিত হয়, যেমন - হিন্দু থিয়েটার (১৮৩১), ওরিয়েন্টাল থিয়েটার (১৮৫৩), ইত্যাদি।
·
মৌলিক বাংলা নাটক:
তারাচরণ শিকদারের "ভদ্রার্জুন" (১৮৫২) বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিক নাটক হিসেবে ধরা হয়। তবে মাইকেল মধুসূদন দত্তের "শর্মিষ্ঠা" (১৮৫৯) প্রথম সার্থক ও আধুনিক নাটক হিসেবে বিবেচিত।
·
উল্লেখযোগ্য নাট্যকার:
বাংলা নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমুখ নাট্যকার উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
·
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নাটকে গান ও নৃত্যের ব্যবহার করেছেন, যা বাংলা নাটকে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
·
নীলদর্পণ:
দীনবন্ধু মিত্রের "নীলদর্পণ" (১৮৫৯) নাটকটি নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
এইভাবে বাংলা নাটক তার যাত্রা বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে আধুনিক রূপ লাভ করেছে।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.'কবর' নাটকটির লেখক----
জহির রায়হান
মুনীর চৌধুরী
কাজী নজরুল ইসলাম
জসীমউদ্দীন
#.নিচের কোনটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক?
ফেরারী সূর্য
দেয়াল
নীল দংশন
যে অরণ্যে আলো নেই
#.মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটক কোনটি?
সুর্বচন নির্বাচনে
রক্তাক্ত প্রান্তর
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
নুরলদীনের সারাজীবন
#.মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক কোনটি?
ছেঁড়াতার
চাকা
বাকী ইতিহাস
কী চাহ শঙ্খচিল
#.মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক কোনটি?
ছেঁড়াতার
চাকা
বাকী ইতিহাস
কী চাহ শঙ্খচিল
বাংলা প্রবন্ধ
একটি বাংলা প্রবন্ধ হলো কোনো একটি বিষয় নিয়ে লেখা একটি গদ্য রচনা। এখানে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত, বিশ্লেষণ বা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধ সাধারণত একটি ভূমিকা, মূল অংশ, এবং উপসংহার নিয়ে গঠিত হয়।
একটি ভালো বাংলা প্রবন্ধ লেখার জন্য কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
·
বিষয় নির্বাচন:
প্রথমে একটি আকর্ষণীয় এবং আকর্ষণীয় বিষয় নির্বাচন করুন।
·
রূপরেখা তৈরি:
লেখার আগে একটি রূপরেখা তৈরি করুন, যেখানে আপনি আপনার মূল যুক্তি এবং বিষয়গুলি সাজিয়ে নেবেন।
·
ভূমিকা:
একটি আকর্ষক ভূমিকা লিখুন যা পাঠকের আগ্রহ তৈরি করবে এবং মূল বিষয়বস্তুর দিকে আকৃষ্ট করবে।
·
যুক্তি উপস্থাপন:
আপনার মূল অংশে, যুক্তিসহ আপনার মতামত বা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করুন।
·
উদাহরণ ও তথ্য:
আপনার যুক্তি প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত উদাহরণ ও তথ্য ব্যবহার করুন।
·
উপসংহার:
উপসংহারে আপনার মূল বিষয়গুলির সংক্ষিপ্তসার এবং চূড়ান্ত মতামত পেশ করুন।
·
ভাষা ও শৈলী:
ভাষা সহজ, স্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় হওয়া উচিত।
·
প্রমাণীকরণ:
লেখার শেষে, ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রবন্ধটি ভালোভাবে প্রমাণীকরণ করুন।
একটি আদর্শ বাংলা প্রবন্ধের কয়েকটি উদাহরণ:
·
জীবনমুখী প্রবন্ধ:
এই ধরনের প্রবন্ধে জীবনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, বা সাধারণ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
·
ঐতিহাসিক প্রবন্ধ:
এখানে ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা, ব্যক্তি, বা যুগ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
·
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ:
এই ধরনের প্রবন্ধে বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
·
পর্যালোচনা প্রবন্ধ:
কোনো বই, চলচ্চিত্র, বা শিল্পের অন্যান্য মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করা হয়।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.‘বিচিত চিন্তা' কী জাতীয় রচনা?
নাটক
উপন্যাস
ছোটগল্প
প্রবন্ধ
#.কোনটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধগ্রন্থ?
কালান্তর
ডাকঘর
বলাকা
চিত্র
#.’অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া?
অবরোধবাসিনী
মতিচূর
সুলতানার স্বপ্ন
পদ্মরাগ
#.'সাত ঘাটের কানাকড়ি' প্রবাদ প্রবন্ধ টির অর্থ কি?
কপট মমতা
বড় রকমের ক্ষতি করা
ঘোর শত্রুতা
অকিঞ্চিৎকর সংগ্রহ
#.'রচনার শিল্পগুণ' প্রবন্ধটি কার লেখা?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
প্যারীচাঁদ মিত্র
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বিহারীলাল
বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনী (বাংলায়)
মানব সভ্যতার বহমান পথ পরিক্রমায় ভ্রমণ সাহিত্য প্রাচীনত্বের দাবি করতেই পারে। অথচ বাংলা সাহিত্যে কোনটি প্রথম ভ্রমণ কাহিনী সেটি নিয়ে আলোচনা হয়না বললেই চলে। কিন্তু এমন ভ্রমণ কাহিনী রয়েছে সেগুলি পাঠ করে স্বাদ পেতে পারেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসার। কল্পনায় আপনি ঘুরে বেড়াতে পারেন আকাশচুম্বী পাহাড় পর্বতে, অ্যামাজনের গহীন জঙ্গলে, আন্টার্কটিকায় সীল মাছগুলোর সাথে কিংবা তারা ভরা আকাশের নীচে সাহারা মরুভূমিতে।
বাংলা সাহিত্যে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত “পালামৌ” প্রথম বাংলা ভ্রমণ কাহিনী। রচনাটি ৬ কিস্তিতে প্র.না.ব ছদ্মনামে ১৮৮০-৮২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সঞ্জীবচন্দ্রের জীবৎকালে “পালামৌ” স্বতন্ত্র পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “সঞ্জীবণী সুধা” নাম দিয়ে সঞ্জীবচন্দ্রের রচনাগুলির সংকলন প্রকাশ করেন, সেখানেই “পালামৌ” সর্বপ্রথম পুস্তকাকারে মুদ্রণ গৌরব লাভ করে। “পালামৌ” রচনা প্রসঙ্গে সুকুমার সেন লিখেছিলেন - “বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড় ভাই সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পালামৌ' কে বাংলা গদ্য সাহিত্যে প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে গন্য করা যায়।”
বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ কাহিনীর তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনি গুণে, মানে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় কিছু ভ্রমণ কাহিনীর তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হল –
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :
• য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র (১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম ইংল্যান্ড যাত্রা)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র” রচনা সম্পর্কে চারুচন্দ্র দত্ত কে বলেছিলেন - “সেই প্রথম বয়সে যখন ইংল্যান্ড গিয়েছিলুম, ঠিক মুসাফেরের মতো যায়নি। অর্থাৎ রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে বাহির থেকে চোখ বুলিয়ে যাওয়া বরাদ ছিল না – ছিলেম অতিথির মতো, ঘরের মধ্যে প্রবেশ পেয়েছিলুম(রবীন্দ্র রচনাবলী, দশম, জন্ম শতবার্ষিক সংস্করণ, পৃ-৩৪০)।”
• য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি (১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ, দ্বিতীয় ইংল্যান্ড যাত্রা)
• পথের সঞ্চয় (১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দ, তৃতীয়বার ইংল্যান্ড যাত্রা)
• জাপান যাত্রী (১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম জাপান যাত্রা)
• পশ্চিম যাত্রীর ডায়েরি (১৯২৪-২৫ খ্রিস্টাব্দ, দক্ষিণ আমেরিকা যাত্রা)
• জাভা যাত্রীর পত্র (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ, জাভা ও বালি যাত্রা)
• রাশিয়ার চিঠি (১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ, রাশিয়া ভ্রমণ)
• পারস্য যাত্রী (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ, পারস্য ও ইরাক ভ্রমণ)
বুদ্ধদেব বসু :• আমি চঞ্চল হে (১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ, সস্ত্রীক ভুবনেশ্বর, পুরী, কোনার্ক, চিল্কা ভ্রমণ)
• সমুদ্র তীর (১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ, ক্রিসমাসে স্ত্রী ও শিশুকন্যা সহ গোপালপুর ও ওয়ালটেয়ার ভ্রমণ)
• সব পেয়েছির দেশ (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ, শান্তিনিকেতন ভ্রমণ)
• দেশান্তর (১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ, বক্তৃতা ও অধ্যাপনার কারণে জাপান, হনলুলু, আমেরিকা, পিটসবার্গ, মিশর, ইউরোপ ভ্রমণ)
বুদ্ধদেব বসুর প্রথম বই দুটি সম্পর্কে চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন - “বুদ্ধদেবের সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি সরস সাহিত্যের আমেজ তাঁর লেখনী কে করে তুলেছে অনন্য। পাঠকের ইচ্ছে হবে সমুদ্র তীরের দেশগুলোতে পুনর্বার নতুন চোখে বেড়িয়ে আসতে (পরিচয়, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ পৌষ সংখ্যা)।”
অন্নদাশঙ্কর রায় :
• পথে প্রবাসে
• জাপানে
“পথে প্রবাসে” প্রসঙ্গে প্রথম চৌধুরী বলেছেন - “এ শুধু ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয়, একখানি যথার্থ সাহিত্য গ্রন্থ।”
জসীমউদ্দীন :
• চলে মুসাফির ১৯৫২
• হলদে পরির দেশে ১৯৬৭
• যে দেশে মানুষ বড় ১৯৬৮
• জার্মানির শহরে বন্দরে ১৯৭৫
বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় :
• কালনা থেকে রংপুর (নৌকা যোগে ২৭ দিনে কালনা থেকে রংপুর যাওয়ার অভিজ্ঞতা)
বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় হলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পিতামহ। এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত সম্পর্কে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন লিখেছিলেন - “এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দের, অর্থাৎ রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর মাত্র ৭ বৎসর পর লিখিত হয়। উক্ত রাজার বহু শতাব্দী পূর্ব হইতে সাধারণের মধ্যে বাংলা গদ্যের যে ধারা প্রচলিত ছিল, মৃত্যুঞ্জয় প্রভৃতি সংস্কৃত পণ্ডিত ও রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ ইংরেজির পক্ষপাতী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগন সেই প্রাচীন ধারাটি গ্রাহ্য করেন নাই।”
জলধর সেন :
• টপকেশ্বর ও গুচ্ছপানি (ভারতী ও বালক পত্রিকায় মাঘ ১২৯৯ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত)
• প্রবাসচিত্র ১৮৯৯
• হিমালয় ১৯০০
• পথিক ১৯০১
• হিমাচল বক্ষে ১৯০৪
• হিমাদ্রি ১৯১১
• দশদিন ১৯১৬
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় :
• কবিতার জন্য সারা পৃথিবী
• তিন সমুদ্র সাতাশ নদী
• ছবির দেশে কবিতার দেশে
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় :
• চাঁদের পাহাড় (১৯৩৭)
দীনবন্ধু মিত্র :
• সুরধুনী কাব্য ১৮৭১
বিনয় মুখোপাধ্যায় (যাযাবর) :
• দৃষ্টিপাত
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় :
• A Visit to
Europe ১৮৮৯ (পরিমল গোস্বামী তাঁর এই বইটির বঙ্গানুবাদ করে নাম দেন “আমার ইউরোপ ভ্রমণ”)
রমেশচন্দ্র দত্ত :
• Three
Years in Europe ১৮৯৬
শিবনাথ শাস্ত্রী :
• ইংল্যান্ডের ডায়েরি
কেশর সেন :
• Dairy in
England
প্রবোধ কুমার সান্যাল :
• মহাপ্রস্থানের পথে
অবধূত :
• মরুতীর্থ হিংলাজ
কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য :
• দুরাকাঙ্খার বৃথা ভ্রমণ ১৮৫৮
প্রবোধ সান্যাল :
• রাশিয়ার ডায়েরি
নারায়ণ সান্যাল :
• জাপান থেকে ফিরে
বিকাশ বিশ্বাস :
• উদিত ভানুর দেশ জাপান
যদুনাথ সর্বাধিকারী :
• তীর্থ ভ্রমণের রোজনামচা ১৯১৫
ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় :
• শ্রীশ্রীগয়াতীর্থ বিস্তার
ঈশ্বরচন্দ্র বাগচী :
• তীর্থমুকুর
রাজেন্দ্র মোহন বসু :
• কাশ্মীর কুসুম ১৮৭৫
দুর্গাচরণ রক্ষিত :
• সচিত্র ভারত প্রদক্ষিণ ১৯০৩ (রয়েছে ভ্রমণ রসের পাশাপাশি সে সময়ের ১৮ টি দুর্লভ ছবি)
বাংলা সাহিত্যে মহিলা লিখিত ভ্রমণ কাহিনী :
বাংলা সাহিত্যে মহিলা লিখিত প্রথম ভ্রমণ কাহিনী রচনা করেন কৃষ্ণভাবিনী দাস। তাঁর রচিত রচনাটির নাম - “ইংল্যান্ডে বঙ্গমহিলা” (১৮৯১)।
হরিপ্রভা দেবী :
• বঙ্গ মহিলার জাপান যাত্রা ১৯১৫
মৈত্রেয়ী দেবী :
• মহাসোভিয়েত
নবনীতা দেবসেন :
• করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে (কুম্ভস্নান)
• ট্রাকবাহনে ম্যাকমোহনে
• হে পূর্ণ তবে চরণের কাছে
প্রসন্নময়ী দেবী :
• আর্য্যাবর্ত্তে বঙ্গমহিলা
জগৎমোহনী চৌধুরী :
• ইংল্যান্ডে সাত মাস ১৯০২
বিমলা দাশগুপ্ত :
• নরওয়ে ভ্রমণ ১৯১৫
শরৎরেণু দেবী :
• পারস্যে বঙ্গ রমনী ১৯১৬
অবলা বসু :
• জাপান ভ্রমণ ১৯১৬ (মুকুল পত্রিকায় প্রকাশিত)
• প্রথম ভারতীয় ও বাঙালি ভূপর্যটক বিমল মুখার্জি যিনি দুচাকার বাইসাইকেলে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা থেকে রচনা করেন - “দু চাকায় দুনিয়া” (১৯৮৬)।
বিখ্যাত রম্যরচনা (বাংলায়)
ম্যরচনা হলো সাহিত্য রচনার একটি বিশেষ বিভাগ, যেখানে হাস্যরস ও কৌতুকের মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এটিকে হালকা চালে লেখা একটি উপভোগ্য রচনা হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা যায়।
বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কিছু রম্যরচনা হলো: "হুতোম পেঁচার নকশা", "কমলাকান্তের দপ্তর", "আয়না", "গ্যালিভারের সফরনামা", এবং "পঞ্চতন্ত্র"। এই রচনাগুলি বাংলা সাহিত্যের রম্যরচনার ধারায় বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
এখানে কয়েকটি বিখ্যাত রম্যরচনা এবং তাদের রচয়িতার একটি তালিকা দেওয়া হল:
·
হুতোম পেঁচার নকশা: কালীপ্রসন্ন সিংহ
·
কমলাকান্তের দপ্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
·
আয়না: আবুল মনসুর আহমদ
·
গ্যালিভারের সফরনামা: আবুল মনসুর আহমদ
·
পঞ্চতন্ত্র: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
চাচা কাহিনী: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
টুনি মেম: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
বহুরূপী নরসুন্দর: নুরুল মোমেন
·
হ য ব র ল: সুকুমার রায়
·
মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
·
লোক রহস্য: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
·
ফুড কনফারেন্স: আবুল মনসুর আহমদ
·
আসমানী পর্দা: আবুল মনসুর আহমদ
·
দ্বন্দ্বমধুর: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
চতুরঙ্গ: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
বড়বাবু: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
দু-হারা: সৈয়দ মুজতবা আলী
·
চেনা মানুষের ইতিকথা: তাজাকলম
বাংলা উপন্যাস
বিখ্যাত বাংলা উপন্যাস :
ঔপন্যাসিক উপন্যাসের নাম ও প্রকাশকাল
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস চিলে কোঠার সেপাই (১৯৮৭), খোয়াবনামা (১৯৯৩)।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যয় দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) বিষবৃক্ষ (১৮৭৩), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪)।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় রমা সুন্দরী (১৯০৮), রতœদ্বীপ (১৯১৫), মনের মানুষ (১৯২২), সতীর পতি (১৯২৮)।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বড়দিদি (১৯১৩), বিরাজ বৌ (১৯১৪), পরিনীতা, মেজদিদি (১৯১৫), কাশীনাথ (১৯১৭), শেষপ্রশ্ন (১৯৩১)।
রমেশচন্দ্র দত্ত বঙ্গবিজেতা (১৮৭৪), সংসার (১৮৮৬), সমাজ (১৮৯৪)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকাডুবি (১৯০৬), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), শেষের কবিতা (১৯২৯)।
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ধাত্রী দেবতা (১৯৩৯), গণদেবতা
(১৯৪২), হাঁসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৪৭), জলসা ঘর (১৯৪২), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৩)।
মানিক বন্দোপাধ্যয় পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৩৬), পুতুল নাচের ইতিকথা ( ১৯৩৬), শহরতলী (১৯৪০), শহর বাসের ইতিকথা (১৯৪৬), অহিংসা (১৯৪১), সোনার চেয়ে দামী (১৯৫১)।
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় পথের পাঁচালী (১৯২৯), অপরাজিতা (১৯৩১), আরণ্যক (১৯৩৮), দৃষ্টি প্রদীপ (১৯৩৫), ইছামতি (১৯৪৯)।
টেকচাঁদ ঠাকুর আলালের ঘরে দুলাল (১৮৫৮) |
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ লাল সালু (১৯৪৮), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৪৫), কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৫)।
মুক্তিযুদ্ধের ১০ উপন্যাসঃঃ
রাইফেল রোটি আওরাত
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরুর পরের তিন দিনের গল্প আনোয়ার পাশা 'রাইফেল রোটি আওরাত'। এপ্রিলে লেখা শুরু করে শেষ করেছিলেন জুনে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস এটি।যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে, প্রত্যক্ষ বাস্তবতার ভেতর তিনি উপন্যাসটি লেখেন। যুদ্ধের এমন প্রত্যক্ষ, এমন মৌলিক ব্যাপ্তি সত্যিই বিরল। এ উপন্যাস শুধু বিপন্ন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি নয়, রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে উদ্ভাসিত এক নতুন বাংলাদেশ। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সুদীপ্ত শাহীন-ই যেন সেই বাংলাদেশ। তিনি ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত হন।
নেকড়ে অরণ্য
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শওকত ওসমান একাধিক উপন্যাস লিখেছেন। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি উপন্যাস 'নেকড়ে অরণ্য' ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস 'জাহান্নাম হইতে বিদায়', 'দুই সৈনিক' এবং 'জলাংগী'। 'নেকড়ে অরণ্য' উপন্যাসে লেখক একটি গুদামঘরের বর্ণনা দিয়েছেন। টিনে ছাওয়া, সমতল মেঝের বিশাল এক গুদামঘর। একসময় এই ঘরটিই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের নারী ধর্ষণের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সে আস্তানায় তানিমা, জায়েদা, রশিদারা ধর্ষিত হয় কখনো পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের দ্বারা, কখনো সাধারণ সৈনিকের দ্বারা। তাদের চিৎকার, আর্তনাদ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, বিপর্যস্ততার নির্মোহ রূপটি তুলে আনেন লেখক এ উপন্যাসে। বনের ভেতর নেকড়ের নৃশংসতাও হার মানে যেন ছোট্ট একটুকরো গুদামঘরে। কিন্তু তার পরও থেমে থাকে না প্রতিবাদ। ক্যাপ্টেনের গুলি বুক পেতে নেয় তানিমা। আর আত্মহত্যার মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় এইসব বীরাঙ্গানারা।
যাত্রা
যুদ্ধের প্রথম দিকের ঘটনা ও সময় নিয়ে রচিত উপন্যাস শওকত আলীর 'যাত্রা'। শুরুর প্রাক্কালে দলে দলে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে; আবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। এ পলায়ন শুধু চেতনাগত নয়, মানসিকভাবেও পলায়ন। কিন্তু ওই যে ফিরে তাকানো, সেখানেই আছে উপন্যাসের অন্তর্নিহিত মনস্তত্ত্ব। আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর গোপন ইচ্ছাটুকু ওখানেই আছে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অধ্যাপক রায়হান মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন। একসময় প্রগতিশীল রাজনীতিক রায়হান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন কি নেবেন না- এ সংশয় ও দ্বিধায় শেষাবধি যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। ১৯৭২ সালে রচিত হয় 'যাত্রা' উপন্যাসটি। তবে প্রকাশ পায় ১৯৭৬ সালে।
হাঙর নদী গ্রেনেড
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন সেলিনা হোসেন। তার মধ্যে ভীষণ আলোচিত উপন্যাস 'হাঙর নদী গ্রেনেড'। মুক্তিযুদ্ধের এক আবেগী ও প্রতিবাদী উপন্যাস এটি। হলদী গ্রামের এক বয়স্ক নারীর জীবন এই উপন্যাসে মূর্ত হয়ে ওঠে। এই নারী তাঁর নিজের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে তুলে দেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। উপন্যাসে এই মায়ের আত্মসংগ্রাম, দেশের জন্য ত্যাগের অপার মহিমা ভাস্বর হয়ে ওঠে। আর উপন্যাসে বর্ণিত গ্রামটিও যেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকী এক বাংলাদেশ।
জীবন আমার বোন
মাহমুদুল হকের বহুল পঠিত উপন্যাস 'জীবন আমার বোন'। বরাবরই মধ্যবিত্তের জীবনসংগ্রাম, তাদের দ্বিধাগ্রস্ততা, অপূর্ণতা আর সুবিধাবাদী চরিত্র অসাধারণভাবে এঁকেছেন এই শিল্পী তাঁর প্রতিটি উপন্যাসে। 'জীবন আমার বোন' উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জাহেদুল করিমের মধ্যবিত্তীয় সুবিধাবাদী মানসিকতার পাশাপাশি যুদ্ধের নানা বাস্তবতায় নিজের বোঝাপড়াও লেখক তুলে ধরেন পাঠকের সামনে। লেখকের অসামান্য উপস্থাপনা, ভাষার কাব্যিক ব্যঞ্জনায় ছোট্ট, হৃদয়গ্রাহী উপন্যাসটি যতই পড়া যায় ততই বিষমবেদনায় ভারাক্রান্ত করে।
দ্বিতীয় দিনের কাহিনী
'বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ', 'নীল দংশন', 'নিষিদ্ধ লোবান'-এর পর সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি উপন্যাস 'দ্বিতীয় দিনের কাহিনী' (১৯৮৪)। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে চমৎকারভাবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপরিচয়, সংগ্রাম, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার কথা পরম মমতায় তুলে ধরেছেন এ উপন্যাসে। একজন প্রধান শিক্ষক তাহের উদ্দীন খন্দকারের আত্মোপলব্ধি, অন্বেষণ ও স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধে জলেশ্বরীর দুর্বার ভূমিকার কথা। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা জলেশ্বরীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে তাহেরের স্মৃতিচারণায়।
খাঁচায়
মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে রচিত উপন্যাস রশীদ হায়াদারের 'খাঁচায়'। অবরুদ্ধ ঢাকার বন্দি নগরবাসীর চিত্র তিনি এ উপন্যাসে চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন। এ শহরে অবরুদ্ধ জাফরের শঙ্কাময় উপলব্ধি, অনুভূতির কথা আমরা জানতে পারি উপন্যাস থেকে। যখন সে ভাবে, 'সমস্ত অনুভূতি নিষ্ক্রিয় হয়ে রাস্তার মতো হয়ে গেছে, যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, খাঁচাটা আরো সংকুচিত হয়ে আসছে, খাঁচার চারপাশে উদ্যত মারণাস্ত্র'; তখন এই বিপন্নতা স্পর্শ করে পাঠককেও।
জোছনা ও জননীর গল্প
মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ লেখেন 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি। এটি যতটা উপন্যাস, ততটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, বিবরণ, ঐতিহাসিক চরিত্র ও তার ভূমিকা, নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণকে উপজীব্য করে লিখেছেন দীর্ঘ এই উপন্যাসটি। একাত্তরের পুরো ৯ মাসের গল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসে। কোনো একটি নির্দিষ্ট চরিত্র বা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই রচনা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। লেখকের চিরায়ত গল্প বলার সৌন্দর্য এ উপন্যাসেও যে পাঠক উপভোগ করেন, তা বলা বাহুল্য।
সাড়ে তিন হাত
ভূমি
একটি কবরের আয়তন কত? এই প্রশ্নের উত্তর, 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'। জনপ্রিয় কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনের বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের মধ্যে এটিও উল্লেখযোগ্য একটি উপন্যাস। মুক্তিযোদ্ধা রবি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গ্রামে আসেন পরিবারের খোঁজ নিতে। এসে দেখেন উঠানে পড়ে আছে বাবার মৃতদেহ, ঘরে মা ও বোনের লাশ। আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে আছে বাড়ির পেছনে। হতবিহ্বল, অসাড়, অনুভূতিহীন রবি উঠানে নিজ হাতেই খুঁড়ে চলেন প্রিয় স্বজনদের কবর। যেন খুঁড়ে চলেন স্মৃতির গহিন পরিখা। মা-বাবা, বোন, স্ত্রী; এমনকি অনাগত সন্তানের সঙ্গেও স্মৃতির ঝাঁপি পাখা মেলে। আর তা দৃশ্যমান হতে থাকে পাঠকের চোখের সামনে। উপস্থাপনার দিক থেকে উপন্যাসটি একেবারেই আলাদা।
জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
প্রয়াত লেখক শহীদুল জহিরের 'জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা' উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের গল্প হলেও এর সূত্রপাত মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে। উপন্যাসে উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র বদু মওলানা। একাত্তরের কুখ্যাত এক রাজাকার সে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের নানা অস্থিতিশীলতা, প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধতার অভাব আর ক্ষমতার রাজনীতির সুযোগে বদু মওলানাদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হওয়ার গল্প। আজকের এ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতেও কী ভীষণ বাস্তব সে দৃশ্য! উপন্যাসের এক চরিত্র আবদুল মজিদের চোখে দেখা মোমেনার নৃশংস অবয়বের বর্ণনার মতো নির্মম বাস্তবতার গল্প 'জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা'।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান অবলম্বনে রচিত উপন্যাস—
বং থেকে বাংলা
কাঁটাতারে প্রজাপতি
চাঁদের অমাবস্যা
চিলেকোঠার সেপাই
#.‘চিলেকোঠার সেপাই' উপন্যাসের রচয়িতা-
শওকত আলী
শওকত ওসমান
সত্যেন সেন
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
#.কোনটি উপন্যাস?
শেষের কবিতা
বলাকা
ডাকঘর
কালান্তর
#.আরেক ফাল্গুন' কার লেখা উপন্যাস?
শওকত ওসমান
জহির রায়হান
আলউদ্দিন আল আজাদ
শওকত আলী
#.অভয়া' চরিত্রটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কোন উপন্যাসে রয়েছে?
পল্লী সমাজ
শ্রীকান্ত
চন্দ্রনাথ
পথের দাবী
বাংলা ছোট গল্প
বাংলা ছোট গল্পের ইতিহাস মূলত উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়। এই ধারার প্রথম ছোট গল্প হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ভিখারিণী" (১৮৭৭) গল্পটিকে ধরা হয়। এর আগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও ছোটগল্প রচনার চেষ্টা করেছিলেন। ছোটগল্প, উপন্যাসের মত জীবনের সামগ্রিক দিক না দেখিয়ে, এর একটি খণ্ডাংশকে উপস্থাপন করে এবং সাধারণত আকারে ছোট ও রসময় হয়ে থাকে।
বাংলা ছোট গল্পের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়,
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়,
সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, এবং নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের অবদান অনস্বীকার্য।
বাংলা ছোট গল্পের বৈশিষ্ট্য:
·
ছোট গল্পের আকার সাধারণত ছোট হয় এবং এক বসাতেই পড়া শেষ করা যায়।
·
এতে চরিত্র ও ঘটনার সংখ্যা সীমিত থাকে।
·
ছোট গল্পের শুরুটা সাধারণত নাটকীয় হয়।
·
এটি জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত বা দিকের উপর আলোকপাত করে।
·
গল্পটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ধারণা বা অনুভূতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.রতন’ চরিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন ছোটগল্পের ?
সমাপ্তি
দেনা- পাওনা
পোস্ট- মাস্টার
মধ্যবর্তনী
#.‘মৃন্ময়ী’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন ছোট গল্পের চরিত্র?
মালদান
সমাপ্তি
কাবুলিওয়ালা
শান্তি
#.বাংলা ছোট গল্পের জনক কাকে বলা হয়?
কাজী নজরুল ইসলাম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জসীমউদ্দীন
কালিদাস
#.'একাত্তরের যীশু' গল্পের রচয়িতা কে?
শাহরিয়ার কবির
সেলিম আল দীন
মামুনুর রশীদ
সৈয়দ শামসুল হক
#.বাংলা ছোটগল্পের পথিকৃৎ-
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কাজী নজরুল ইসলাম
ছন্দ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। বাংলা ছন্দ মূলত তিন প্রকার: স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত। এই ছন্দগুলি বাংলা কবিতার বৈশিষ্ট্য এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রাচীন বাংলা সাহিত্য, যেমন চর্যাপদ, মূলত অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। মধ্যযুগেও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রাধান্য ছিল, তবে মাত্রাবৃত্ত ছন্দও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
আধুনিক বাংলা সাহিত্য, বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীতে, ছন্দের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। Rabindranath Tagore, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ কবিরা বিভিন্ন ছন্দের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং নতুন ছন্দ তৈরি করেছেন।
বাংলা ছন্দের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, এটি প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিবর্তিত হয়েছে এবং বাংলা সাহিত্যের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছে।
এখানে বাংলা ছন্দের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
·
স্বরবৃত্ত ছন্দ:
এটি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ছন্দগুলির মধ্যে একটি, যা সাধারণত দ্রুত লয়ের এবং সংক্ষিপ্ত পংক্তির কবিতায় ব্যবহৃত হয়।
·
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ:
এটি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ, যা দীর্ঘ পংক্তির কবিতায় বেশি ব্যবহৃত হয়।
·
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ:
এই ছন্দে অক্ষর বা শব্দের মাত্রা গণনা করা হয় এবং এটি বাংলা কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ।
এই ছন্দগুলি বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.বাংলা ভাষার ছন্দ কত প্রকার?
দুই
তিন
চার
পাঁচ
#.ছন্দের জাদুকর’ কোন কবি?
অক্ষয়মিত্র
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
সুকান্ত ভট্টাচার্য
জসিমউদ্দীন
#.ছন্দের জাদুকর-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
মোহিতলাল মজুমদার
শরৎচট্টপাধ্যায়
#.কবি কবি ভাব কিন্তু ছন্দের অভাব’ এখানে ‘কবি কবি’ কি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
ভালো অর্থ
পুনরাবৃত্তি অর্থে
পৌনঃপুনিক অর্থে
উপহাস অর্থে
#.বাংলা ছন্দ প্রধানত কত প্রকার?
দুই
তিন
চার
পাঁচ
গ্রন্থ
"গ্রন্থ" শব্দটি বাংলা ভাষায় "বই" বা "শাস্ত্র" অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সাধারণ শব্দ যা কোনো লিখিত বা মুদ্রিত রচনাকে বোঝায়।
গ্রন্থ শব্দের অর্থ ও ব্যবহার:
·
"গ্রন্থ" একটি বিশেষ্য পদ, যার অর্থ বই বা শাস্ত্র।
·
এটি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে রচিত একটি লিখিত বা মুদ্রিত রচনাকে বোঝায়।
·
ধর্মীয় গ্রন্থ, যেমন - বেদ, পুরাণ, মহাভারত, রামায়ণ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ইত্যাদি সবই গ্রন্থ নামে পরিচিত, বলে উইকিপিডিয়া জানায়।
·
শিখ ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ "গুরু গ্রন্থ সাহেব" ও একটি গ্রন্থ।
·
ইসলামে "কুরআন" একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
·
বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম,
বৈজ্ঞানিক রচনা, ঐতিহাসিক দলিল ইত্যাদিও গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
·
"গ্রন্থ" শব্দটি সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, ইতিহাস ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.সর্বপ্রথম ’ বঙ্গ’ দেশের নাম পাওয়া যায় যে গ্রন্থে-
আইন- ই আকবরী
বাঙালির ইতিহাস
ঐতরেয় আরণ্যক
রঘুবংশ
#.’সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কে?
কাজী নজরুল ইসলাম
কায়কোবাদ
সৈয়দ শামসুল হক
জসীমউদ্দীন
#.বীরবলের হালখাতা’ গ্রন্থটি কোন ধরনের রচনা?
কাব্য
নাটক
উপন্যাস
প্রবন্ধ
#‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
মুহাম্মদ আবদুল হাই
আতাউর রহমান
আবুল মনুসর আহমদ
#.বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থের নাম-
সংগ্রাম
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
বাংলাদেশ ও আমি
আমার জীবনী
বাংলা কাব্য
কাব্য বাংলা কাব্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের। খ্রিস্টীয় নয় থেকে বারো শতকের মধ্যে রচিত চর্যাপদ বাংলা কাব্য তথা বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন। এতে বৌদ্ধধর্মীয় সহজিয়াপন্থিদের জীবনদর্শন বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া সে সময়ের বাঙালি জীবনের নানা দিক, যেমন: বাঁচার আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, দারিদ্র্যযন্ত্রণা ইত্যাদিও ব্যক্ত হয়েছে। গীতিকবিতার আঙ্গিকে এর পদগুলি রচনা করেছেন তৎকালীন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন লুইপা, কাহ্নপা,
শবরপা, ঢেন্ডণপা, ভুসুকুপা প্রমুখ। চর্যাপদের পাশাপাশি আর যেসব কাব্যধারার পরিচয় পাওয়া যায় সেগুলির মধ্যে রয়েছে শূন্যপুরাণ,
ময়নামতীর গান, গোরক্ষবিজয় ইত্যাদি।
মধ্যযুগের প্রারম্ভকালীন দেড়-দুশ বছর অর্থাৎ তেরো ও চৌদ্দ শতকে সামাজিক, রাজনীতিক বিপর্যয় ও অস্থিতিশীলতা এবং লেখ্য ভাষা হিসেবে বাংলা পুরোপুরি গড়ে না ওঠার কারণে বাঙালির কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে বন্ধ্যাসময় অতিবাহিত হয়। চৌদ্দ শতকের শেষার্ধে অর্থাৎ ১৩৫০-এর পরবর্তী সময়ে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য রচনার মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের বাংলা কাব্যধারার সূচনা হয়। বড়ুু চন্ডীদাস রচিত এ কাব্য বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম কাহিনিকাব্য হিসেবে স্বীকৃত। রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাবিষয়ক এ কাব্যের উৎস শ্রীমদ্ভাগবত হলেও বড়ু চন্ডীদাস এতে রাধাকৃষ্ণভিত্তিক বাংলার লোককাহিনিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ফলে এ কাব্যে রাধার বিরহের মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালি নারীর প্রেমকাতরতা ও আর্তিই মূর্ত হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি চরিত্রচিত্রণে দক্ষতা, নাটকীয়তা ও বিরহআর্তিসমৃদ্ধ শিল্পবৈশিষ্ট্যের দ্বারা এ কাব্য বাংলা কাব্যধারায় চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে।
ইউসুফ-জোলেখা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম মুসলিম কবি। তিনি বাংলার মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রাচীনতম। তিনি গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের রাজত্বকালে ইউসুফ জোলেখা নামে একটি কাব্য রচনা করেন।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পর থেকে বাংলা কাব্যে বহুমুখী রূপ, রস ও জীবনভাবনাসমৃদ্ধ এক অনন্য ও বহুমাত্রিক কাব্যধারা লক্ষ্যযোগ্য। এ ধারার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন মঙ্গলকাব্য। পনেরো শতক থেকে শুরু করে আঠারো শতকের প্রান্তসীমা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় সমগ্র মধ্যযুগ ব্যাপী বিভিন্ন লৌকিক দেবদেবীর পূজা প্রচলনের কাহিনি অবলম্বনে এগুলি রচিত। মঙ্গলকাব্যগুলি উদ্দীষ্ট দেবতাদের নামানুসারে মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল,
ধর্মমঙ্গল, কালিকামঙ্গল ইত্যাদি শাখায় বিভক্ত। এসব কাব্যে সংশ্লিষ্ট দেবদেবীদের মাহাত্ম্য প্রচার প্রসঙ্গে তৎকালীন সমাজ ও জনজীবন রূপায়িত হয়েছে। মঙ্গলকাব্যের কবিদের মধ্যে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী শ্রেষ্ঠ।
মঙ্গলকাব্যের মতোই মধ্যযুগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হচ্ছে বৈষ্ণবপদাবলি। রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনীর রূপকে মূলত এ গীতিকবিতাগুলিতে বৈষ্ণবতত্ত্বের পরমাত্মা ও জীবাত্মার দর্শনকেই রূপায়িত করা হয়েছে। চৈতন্য-পূর্ববর্তী তথা সমগ্র বৈষ্ণবপদাবলি ধারার শ্রেষ্ঠ কবি হচ্ছেন বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস। মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি ব্রজবুলি নামক কোমল ভাষায় পদাবলি রচনার মাধ্যমে রাধার বিরহিণী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন। আর বিরহ-বেদনার কবি চন্ডীদাস সরল ও সাবলীল ভাষায় বাঙালি হূদয়ের গভীরতম ভাবের আবেদনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ দুজন ব্যতীত পদাবলি সাহিত্যে অন্য শ্রেষ্ঠ কবিরা হচ্ছেন দ্বিজ চন্ডীদাস, দীন চন্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস প্রমুখ।
সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্যদুটির শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কবি হচ্ছেন যথাক্রমে কৃত্তিবাস ওঝা ও কাশীরাম দাস। এঁদের স্বাতন্ত্র্য এখানেই যে, এঁরা সংস্কৃত রামায়ণ ও মহাভারত অনুবাদ করলেও তার মধ্যে বাঙালির সমাজ, সংস্কৃতি ও জীবনধারা রূপায়ণে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অন্যান্য অনুবাদক হচ্ছেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর,
শ্রীকর নন্দী, চন্দ্রাবতী,
অদ্ভুতাচার্য, ভবানীদাস প্রমুখ।
বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে মুসলমান রচিত শ্রেষ্ঠ কাব্যধারা হচ্ছে রোমান্সমূলক কাব্য। বাংলার প্রান্তবর্তী অঞ্চল আরাকান রাজসভায় উদ্ভূত ও বিকশিত এ ধারার কবিরা মৌলিক গ্রন্থ রচনা না করে বরং আওধি, ফারসি ও আরবি ভাষার শ্রেষ্ঠ কাব্যসমূহের অনুবাদ ও ভাবানুবাদ করেন এবং এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে প্রথম মানবীয় প্রেমভাবনা, যুদ্ধকাহিনি ইত্যাদি বিষয় সংযোজন করেন। শাহ মুহম্মদ সগীর রচিত ইউসুফ-জুলেখা এ ধারার প্রথম কাব্য এবং আলাওলের পদ্মাবতী,
মুহাম্মদ কবীরের মধুমালতী, দৌলত কাজীর সতীময়না-লোরচন্দ্রানী, দৌলত উজির বাহরাম খানের লায়লী-মজনু প্রভৃতি এ ধারার প্রতিনিধিত্বমূলক কাব্য।
উপরিউক্ত কবিদের মধ্যে আলাওল রোমান্সমূলক ধারার শ্রেষ্ঠ কবি। পদ্মাবতী কাব্যে ছন্দ-অলঙ্কারের চমৎকার প্রয়োগ এবং বাঙালির জীবনযাত্রা চিত্রণে তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। মধ্যযুগে এর পাশাপাশি জীবনীকাব্য, শাক্তপদাবলি, দোভাষী পুথি ইত্যাদি ধারার উদ্ভব ও বিকাশের মাধ্যমে বাংলা কাব্য পরিপুষ্টি লাভ করে। এ সকল ধারার উল্লেখযোগ্য কবিরা হচ্ছেন বৃন্দাবন দাস, কৃষ্ণদাস কবিরাজ, রামপ্রসাদ,
দাশু রায়, সৈয়দ হামজা,
ফকির গরীবুল্লাহ প্রমুখ।
আধুনিক যুগে বাংলা কাব্যের বিষয়ভাবনা ও জীবনচেতনায় যেমন বৈচিত্র্য ও রূপান্তর পরিলক্ষিত হয়, তেমনি আঙ্গিকগত কৌশলেরও পরিবর্তন ও বহুমুখিতা দেখা যায়। এ সময় ইংরেজ শাসনের কারণে বাঙালি জনমানস ভারতীয় তথা প্রাচ্যসাহিত্যের গন্ডি অতিক্রম করে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পাঠের সুযোগ পায় এবং তার মাধ্যমে পাশ্চাত্য সাহিত্যচেতনা ও আঙ্গিক কৌশল আয়ত্ত করে। ফলে প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবিরা যেখানে তাঁদের সাহিত্যের বিষয় হিসেবে মানবাতীত দৈবজীবন ও পারলৌকিকতাকে গ্রহণ করেছেন এবং কদাচিৎ মানবীয় প্রেমকাহিনী প্রযুক্ত করেছেন, সেখানে আধুনিক যুগের কবিরা আধুনিক মানুষের জীবনজটিলতা, তাদের চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদিকে আধুনিক পাশ্চাত্য সাহিত্য প্রভাবিত নানা পারিভাষিক বৈশিষ্ট্যের আলোকে ও তত্ত্বের সমন্বয়ে উপস্থাপিত করেছেন। অন্যদিকে মধ্যযুগের কবিরা যেখানে কবিতার আঙ্গিক কৌশলরূপে দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক পয়ারকে অবলম্বন করেছেন, সেখানে আধুনিক কবিরা ভাবের মুক্তির লক্ষ্যে মধ্যযুগীয় পয়ার ভেঙ্গে ছন্দের ক্ষেত্রে নানা রূপান্তর এনেছেন। তবে যুগসন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) তাঁর কবিতায় মধ্যযুগীয় পয়ারমাত্রার মধ্যেই আধুনিকতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আধুনিক বাংলা কাব্যের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি মেঘনাদবধ কাব্যের (১৮৬১) মধ্য দিয়ে বাংলা কাব্যে পাশ্চাত্যের অনুকরণে মহাকাব্য রচনার ধারা প্রবর্তন করেন। এ কাব্যের বিষয়চেতনায় স্বাদেশিকতাবোধ, সৌন্দর্যচেতনা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য প্রয়োগের মাধ্যমে মধুসূদন বাংলা কাব্যে আধুনিকতা তথা পাশ্চাত্য বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলেন। ভাবের যথোপযুক্ত প্রকাশের জন্য তিনি মধ্যযুগীয় পয়ারের পরিবর্তে নতুন অমিত্রাক্ষর ছন্দের উদ্ভাবন করেন। এ ছাড়া ইউরোপীয় সনেটের আলোকে তিনি বাংলা কাব্যে চতুর্দশপদী কবিতারও সার্থক রচয়িতা।
বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪) আধুনিক বাংলা কাব্যে ইউরোপীয় রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা। জীবন ও জগতের প্রতি বীতরাগ, প্রকৃতির প্রতি প্রেম, সংসারধর্মে অনীহা কল্পনাধর্মিতা তাঁর কাব্যের বিষয়। স্বীয় জীবনভাবনায় অপরিমেয় আস্থাসমৃদ্ধ ইউরোপীয় রোমান্টিক জীবনচেতনাকে বাংলা কাব্যে তিনিই প্রথম প্রয়োগ করেন। মূলত তাঁর দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১)। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যের আলোকে স্বকীয় ভাবনাপ্রসূত দর্শনের সমন্বয়ে গভীর জীবনচেতনাকে যেমন প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি বাংলা কবিতার বিষয়, আঙ্গিক ও দর্শনকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে নির্মাণ করেছেন ‘রবীন্দ্র ভাবলোক’, যা একাধারে ‘জীবনদেবতার’ দুর্জ্ঞেয় রহস্যে আচ্ছন্ন, অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবন ও পারিপার্শ্বের আবেগ-অনুভূতিসমৃদ্ধ। এভাবে রবীন্দ্রনাথ বাংলা কাব্যে যে সমৃদ্ধ সম্মোহনক্ষেত্র তৈরি করেন, ফলে তাঁর সমকালেই রবীন্দ্রানুসারী একদল কবির উদ্ভব ঘটে, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রমোহন বাগচী প্রমুখ। এ প্রেক্ষাপটে বিশ শতকের শুরুতে বাংলা কাব্যে বিষয়ভাবনায় রবীন্দ্রবিরোধিতার নতুন সুর নিয়ে আবির্ভূত হন মোহিতলাল মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম ও যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। এঁদের মধ্যে উদ্দাম আবেগ, দ্রোহ ও প্রেমের সমন্বিত আবাহনে বাংলা কাব্যকে প্লাবিত করে নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
বাংলা কাব্যে পরিপূর্ণ রবীন্দ্রবিরোধিতা ও আধুনিক জীবন বিন্যাসের সম্মিলন ঘটান বিশ শতকের প্রথম দিকে বিকাশলাভকারী বাংলা কবিতার পঞ্চপুরুষ জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে ও অমিয় চক্রবর্তী। সমকালীন আধুনিক মানুষের দুর্মর জীবনচেতনা, সময়ের ভাঙচুর, নাস্তিভাবনা,
নিঃসঙ্গতা ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে বিপন্ন মানবতার অভিঘাতে বিশ্বে তখন যে আধুনিক সাহিত্য আন্দোলন ও তত্ত্বগুলি বিকাশ লাভ করছিল, তারই আলোকে বাংলা কবিতাকে তাঁরা অভিব্যঞ্জিত করেন, যা পরবর্তীকালের বাংলা কবিতার দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের ফলে বাংলা প্রদেশ বিভক্ত হলে বাংলা কাব্যেরও বিভক্তিকরণ হয় এবং কলকাতার পাশাপাশি ঢাকাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বাংলা কাব্যের নতুন রূপনির্মাণ। ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলা কাব্যে চল্লিশের দশকের প্রতিনিধিত্বশীল কবিরা হচ্ছেন আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব প্রমুখ, যাঁরা কবিতায় নিসর্গচেতনা, নন্দনভাবনা ও ইসলামি জীবনদর্শনকে প্রতিস্থাপিত করতে চেয়েছেন। পঞ্চাশের দশকে এসে বাংলা কবিতায় নতুন জীবনবিন্যাস প্রযুক্ত হয়। পাকিস্তানি নব্য ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নজনিত প্রভাবে বাংলা কবিতায় এ সময় রাজনীতি, সংগ্রাম, আন্দোলন এবং পাশাপাশি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, লোকায়ত কৌমজীবন, শেকড়চেতনা, সাম্যবাদ ইত্যাদি প্রবলভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে। পঞ্চাশের এ ধারার প্রধান কবিরা হচ্ছেন হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ। এঁদের মধ্যে শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলা কবিতার দুই প্রধান কবি। নাগরিক চেতনাদীপ্ত কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় যেমন বাঙালির সংগ্রাম, আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি প্রধানভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে, তেমনি আল মাহমুদের কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে কৌমজীবনচেতনা,
সাম্যবাদ ইত্যাদি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী বাঙালি কবিদের লিখতে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁদের কাব্যে যুদ্ধের বিভীষিকা ও জনগণের বীরত্ব ফুটে ওঠে।
ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলা কাব্যের পরবর্তী দশকের কবিরা মূলত পূর্ববর্তী ‘পঞ্চকবি’ প্রভাবিত এবং শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ উদ্দীপ্ত আধুনিকতাবোধ ও তার সৌন্দর্যচেতনাকেই চিত্রিত করেছেন।
চলচ্চিত্র
বাংলা চলচ্চিত্র হলো বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র। এই শিল্পটি মূলত বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস প্রায় শতাব্দী পুরনো। ১৯১৩ সালে দাদাসাহেব ফালকে নির্মিত "রাজা হরিশচন্দ্র" ছিল বাংলা ভাষার প্রথম চলচ্চিত্র।[১] তবে, বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। ঢাকা,কলকাতা দুই মহানগরী বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বিখ্যাত। মূলত কলকাতাতেই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র নির্মিত হত। পরে ১৯৫৬ সাল থেকে ঢাকায় বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়।[২] বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন থেকে তারেক মাসুদ পর্যন্ত সবাই কমবেশ সুপরিচিত। ১৯২৭-২৮ সালে ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। নওয়াব পরিবারের কয়েকজন তরুণ সংস্কৃতিসেবী নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র সুকুমারী।বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’।[৩] বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। এই সময়ে নির্মিত "জীবন থেকে নেওয়া", "সারেং বৌ", "ছুটির ঘন্টা", "অনুভূতি", "ভাত দে","মনপুরা" প্রভৃতি চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশের তথা বাঙালি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অমূল্য সম্পদ।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
#.কাজী নজুরুল ইসলাম অভিনীত চলচ্চিত্র এর নাম-
পাতালপুরী
গোরা
ধ্রুব
গ্রহের ফের
#.নিচের কোন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা অষ্কার পুরস্কার লাভ করেছেন?
তারেক মাসুদ
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
সত্যজিৎ রায়
কোনোটিই নয়
#.’সূর্য’ দীঘলবাড়ী’ চলচ্চিত্রের পরিচালক কে?
শেক নিয়ামত আলী
জহিার রায়হান
সুভাস দত্ত
খান আতা
#.'সূর্য দীঘল বাড়ি' চলচ্চিত্রের পরিচালক কে?
শেখ নিয়ামত শাকের
আবু ইসহাক
সুভাষ দত্ত
খান আতা
#.'সূর্য দীঘল বাড়ি' চলচ্চিত্রের পরিচালক কে?
শেখ নিয়ামত শাকের
আবু ইসহাক
সুভাষ দত্ত
খান আতা