বায়ুর প্রবাহ হলো বায়ুর স্থান পরিবর্তন। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন তাপমাত্রা এবং চাপের কারণে বায়ুর প্রবাহ তৈরি হয়। বায়ুর প্রবাহ পৃথিবীর আবহাওয়া এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। বায়ুর তাপ ও চাপের পার্থক্যের জন্য বায়ু সর্বদা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। ভূপৃষ্ঠে সমান্তরাল বায়ু চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে।
বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য: বায়ুপ্রবাহ সাধারণত কয়েকটি বিশেষ নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। যথা-
১) উচ্চচাপ বলয় থেকে শীতল ও ভারি বায়ু নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
২) ফেরেলের সূত্র (Ferrel's Law) অনুসারে বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
চাপ বলয় (Pressure belts): ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অক্ষাংশের তাপের পার্থক্য এবং গোলাকার পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে বায়ুমন্ডলে কয়েকটি চাপ বলয় উৎপন্ন হয়। যেমন:
১. নিরক্ষীয় চাপ বলয়
২. ক্রান্তিয় উচ্চচাপ বলয়
৩. উপ মেরু বিত্তের নিম্নচাপ বলয়
৪. মেরু অঞ্চলের উচ্চচাপ বলয়
বায়ুপ্রবাহ কয়েক প্রকারের হতে পারে। যেমন- নিয়ত বায়ু, সমুদ্র ও স্থলবায়ু, মৌসুমী বায়ু।
নিয়ত বায়ু পৃথিবীর চাপ বলয়গুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বছর সকল সময় একই দিকে প্রবাহিত হয়। যে বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলা হয়। নিয়ত বায়ু তিন প্রকারের- অয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু।
ক) অয়ন বায়ু : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে উষ্ণ ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে শীতল ও ভারী বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, এরূপ বায়ুকে অয়ন বায়ু বলা হয়। ফেরেলের সুত্র অনুসারে এ বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। প্রাচীনকালে পরিচালিত জাহাজগুলো এ বায়ুপ্রবাহের দিক অনুসরণ করতো বলে এগুলোকে অয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু বলা হয়। উত্তর-পূর্ব অয়ন বায়ু ঘণ্টায় প্রায় ১৬ কিমি এবং দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু প্রায় ২২.৫৪ কিমি বেগে প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখার নিকটবর্তী হলে অত্যধিক তাপে উষ্ণ ও হালকা হয়ে উর্ধেব উঠে যায়। তখন নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং নিরক্ষরেখার উভয়দিকে উত্তর-দক্ষিণে ৫০ অক্ষাংশ পর্যন্ত একটি শান্ত বলয়ের সৃষ্টি হয়। এ বলয়কে নিরক্ষীয় শান্ত বলয় (Doldrum) বলে।
খ) পশ্চিমা বায়ু বা প্রত্যয়ন বায়ু : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে অয়ন বায়ু ব্যতীত আরও দুটি বায়ুপ্রবাহ মেরুবৃত্ত নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ুপ্রবাহকে পশ্চিমা বায়ু বলে। উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের পরিমাণ অধিক বলে স্থানীয় কারণে পশ্চিমা বায়ুর সাময়িক বিরতি ঘটে। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে পশ্চিমা বায়ু প্রবলবেগে এ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এজন্য এই বায়ুপ্রবাহকে প্রবল পশ্চিমা বায়ু (Brave west winds) বলে। ৪০০ থেকে ৪৭০ দক্ষিণ পর্যন্ত পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ সর্বাপেক্ষা বেশি। এ অঞ্চলকে গর্জনশীল চল্লিশ (Roaring forties) বলে।
নিরক্ষীয় শাস্ত্র বলয়ের ন্যায় ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়েও দুটি শান্ত বলয়ের সৃষ্টি হয়। ৩০০ থেকে ৩৫০ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় দুটি অবস্থিত। বায়ু নিম্নগামী বলে এই অঞ্চলে অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ অনুভব করা যায় না। প্রাচীনকালে যখন আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে জাহাজযোগে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় অশ্ব ও অন্যান্য পশু রপ্তানি করা হতো তখন এ অঞ্চলে পৌঁছলে বায়ুপ্রবাহের অভাবে পালচালিত জাহাজের গতি মন্থর বা প্রায় নিশ্চল হয়ে পড়ত। এ অবস্থায় নাবিকগণ খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে অনেক সময় তাদের অশ্বগুলো সমুদ্রে ফেলে দিত। এজন্য আটলান্টিক মহাসাগরের ক্রান্তীয় শান্ত বলয়কে অশ্ব অক্ষাংশ (Horse latitude) বলে। উত্তর গোলার্ধে ৩০০ থেকে ৩৫০ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত অঞ্চলটিতে শীতকালেও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।
গ) মেরু বায়ু (Polar Winds): মেরু অঞ্চলের উচ্চচাপ বলয় থেকে অতি শীতল ও ভারী বায়ু উত্তর গোলার্ধে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এবং, দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এ প্রবাহদ্বয়কে সুমেরু বায়ু ও কুমেরু বায়ু বলে।
সাময়িক বায়ু : দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অথবা বছরের কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে যে বায়ুপ্রবাহ জল ও স্থলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য সৃষ্টি হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে। যথা-সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু ও মৌসুমী বায়ু।
দিনের বেলায়ে স্থলভাগ বেশি উত্তপ্ত হয় বলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু জলভাগ বেশি উত্তপ্ত হয় না বলে সেখানকার বায়ু উচ্চচাপ যুক্ত হয়। ফলে তখন জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। একে সমুদ্রবায়ু বলে। আবার রাত্রিকালে জলভাগের চেয়ে স্থলভাগ বেশি শীতল বলে স্থলভাগের বায়ু উচ্চচাপ যুক্ত হয়। তখন স্থলভাগ থেকে জলভাগ বা সমুদ্রের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। একে স্থলবায়ু বলে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থানের কারণে সামুদ্রিক ও স্থলবায়ু নিয়মিত প্রবাহিত হয়।
সমুদ্র বায়ুর বৈশিষ্ট্য:
১) দিনের বেলা সমুদ্র থেকে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
২) এ বায়ু সকাল ১০টা থেকে প্রবাহিত হতে থাকে। বিকালে (অপরাহ্নে) এ বায়ুর বেগ সবচেয়ে বেশি হয়।
স্থলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:
১) রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়।
২) সন্ধ্যার পর থেকে এ বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে রাত ৩ টায় এ বায়ুর বেগ সবচেয়ে বেশি হয়।
আরবি ভাষায় "মওসুম' শব্দের অর্থ ঋতু। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয় তাকে মৌসুমি বায়ু বলে। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের ফলে শীত-গ্রীষ্মে ঋতুভেদে স্থলভাগ ও জলভাগের তাপের তারতম্য ঘটে। সেজন্য মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয়। উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। এর ফলে কর্কটক্রান্তি অঞ্চলের অন্তর্গত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর-পশ্চিম ভারত, মধ্য এশিয়া প্রভৃতি স্থানের স্থলভাগ অতিশয় উত্তপ্ত হয়। ফলে এ সকল অঞ্চলে বায়ুর চাপ কমে যায় এবং একটি সুবৃহৎ নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ গোলার্ধের ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আগত দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে এশিয়া মহাদেশের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবলবেগে ছুটে যায়। এ বায়ুকে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মের মৌসুমি বায়ু বলে। নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু গতি বেঁকে দক্ষিণ- পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এজন্য গ্রীষ্মের এ বায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে।
গ্রীষ্মের মৌসুমি বায়ু সমুদ্রের উপর দিয়ে আসে বলে এতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে। এটি আরব সাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় এ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। আরব সাগরীয় শাখা পাকিস্তান ও পশ্চিম ভারতে এবং বঙ্গোপসাগরীয় শাখা বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। স্থলভাগের উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসে বলে এটা শুষ্ক। এ মৌসুমি বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে বাম দিকে বেঁকে যায় এবং উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়।
শীতকালে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণ: বর্ষাকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে জলীয়বাষ্পপূর্ণ মৌসুমী বায়ুপ্রবাহিত হয়। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পক্ষান্তরে, শীতকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে মহাদেশীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম। ফলে এ সময় বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।
স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য কিংবা তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ভূপৃষ্ঠের স্থানে স্থানে স্থানীয় বায়ুর উৎপত্তি হয়। পৃথিবীতে প্রায় কয়েকশ স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ আছে। যেমন- রকি পর্বতের চিনুক (Chinook), ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় মালভূমি থেকে প্রবাহিত মিস্ট্রাল (Mistral), আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের পম্পাস অঞ্চলের উত্তরে পাম্পেরু (Pampero), আড্রিয়াটিক সাগরের পূর্ব উপকূলে বোরা (Bora), উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ ইতালিতে সিরক্কো (Sirocco), আরব মালভূমির সাইমুম (Simoom), মিসরের খামসিন (Khamsin) ও ভারতীয় উপমহাদেশের লু (Loo) কয়েকটি স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ।
কোনো স্থানে অধিক উত্তাপের জন্য বায়ুর চাপ কমে যায় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। আবার অত্যধিক শৈত্যের জন্য কোনো স্থানের বায়ু শীতল হলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে অনিয়মিত বায়ু বলে। যেমন- ক) ঘূর্ণিবাত (Cyclone) খ) প্রতীপ ঘূর্ণিবাত (Anti- Cyclone)
বায়ুর তাপ হলো বায়ুতে থাকা তাপের পরিমাণ। বায়ুর তাপমাত্রা সেলসিয়াস বা ফারেনহাইট স্কেলে পরিমাপ করা হয়। বায়ুর তাপমাত্রা সূর্যের আলো, ভূমি, জল এবং বায়ুর প্রবাহের উপর নির্ভর করে।
বায়ুর চাপ হলো বায়ুমণ্ডলের ওজনের কারণে প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রয়োগ করা বল। বায়ুর চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ নামেও পরিচিত। বায়ুর চাপ বায়ুর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে।
বায়ুর আর্দ্রতা হলো বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বায়ুর আর্দ্রতা শতাংশ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বায়ুর আর্দ্রতা বায়ুর তাপমাত্রা এবং বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
বায়ুর তাপের প্রধান উৎস: বায়ুমণ্ডলের মোট শক্তির ৯৯.৯৭% আসে সূর্য থেকে। সূর্য থেকে আগত এ শক্তি বায়ুমণ্ডল তাপীয় শক্তি বা গতিশক্তি আকারে ধারণ করে।
উচ্চতার সাথে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার সম্পর্ক: উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা হ্রাস পায়। সাধারণত প্রতি ১০০০ মি: উচ্চতায় ৬০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়। অর্থাৎ প্রতি ১৬৫ মি: উচ্চতায় ১০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রা হ্রাস পায়। সাধারণত প্রতি ১০০০ মি. উচ্চতায় ৬০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
যে কোনো পদার্থের মত বায়ুর নিজস্ব ওজন আছে। বায়ুর এ ওজন জনিত কারণে যে চাপের সৃষ্টি হয়। তাই বায়ুর চাপ (Atmospheric Pressure) |
বায়ুর চাপের নিয়ামক:
ব্যারোমিটার : যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর চাপ পরিমাপ করা হয়, তাকে ব্যারোমিটার বলে। ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভের উচ্চতা হঠাৎ হ্রাস পেলে বুঝতে হবে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা সূর্যতাপে বায়ু প্রসারিত ও হালকা বায়ুর চাপ কমে গেছে। এরূপ হলে ঝড়ের সম্ভাবনা বোঝায়।
বায়ুর স্বাভাবিক চাপ: ভূ-পৃষ্ঠ্যে/ সমুদ্র সমতলে/ একজন মানুষের উপর স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় চাপ-
বায়ুমণ্ডলের চাপের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানি লিফ্ট পাম্পের সাহায্যে সর্বোচ্চ কত গভীরতা থেকে উঠান যায়? উত্তর: ১০ মিটার।
সাধারণ পাম্পে পানিকে ৩৪ ফুটের অধিক উচ্চতায় উঠানো যায় না কেন? উত্তরঃ স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলের চাপ ৩৪ ফুটের অধিক উচ্চতার পানিস্তম্ভ ধরে রাখতে পারে না। সাধারণ পাম্প যেহেতু বায়ুমণ্ডলের চাপ দ্বারা পানিকে উপরে তোলে, তাই সাধারণ পাম্প পানিকে ৩৪ ফুটের অধিক উচ্চতায় উঠাতে পারে না।
জলীয়বাষ্প বায়ুর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করাকে বায়ুর অর্দ্রতা বলে। বায়ুমন্ডলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ শতকরা ১ ভাগেরও কম। বায়ুতে জলীয়বাষ্প যখন একদম থাকে না, তাকে শুষ্ক বায়ু বলে। যে বায়ুতে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে, তাকে আর্দ্র বায়ু বলে। আর্দ্র বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ থাকে প্রায় শতকরা ২ থেকে ৫ ভাগ। বায়ুর আর্দ্রতা দুভাবে প্রকাশ করা যায়। যথা-
ক) পরম আর্দ্রতা (Absolute humidity)
খ) আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative humidity)
১) পরম আর্দ্রতা: কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয়বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণকে পরম আর্দ্রতা বলে। বায়ুর পরম আর্দ্রতা 10-2Kg.m-3: বায়ুর পরম আর্দ্রতা 10-2Kg.m-3: বলতে বুঝায়, এক ঘনমিটার বায়ুতে 10-2Kg জলীয়বাষ্প বিদ্যমান।
২) আপেক্ষিক আর্দ্রতা: কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয়বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণ আর একই আয়তনের বায়ুকে একই উষ্ণতায় পরিপৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্পের প্রয়োজন, এ দুটির অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। একে শতকরায় প্রকাশ করা হয়।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা = ( বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ÷ একই উষ্ণতায় বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা ) ×১০০
আবহাওয়ার ৯০% আর্দ্রতা: আবহাওয়ার ৯০% আর্দ্রতা বলতে বুঝায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সম্পৃক্ত অবস্থার শতকরা ৯০ ভাগ।
হাইগ্রোমিটার: বায়ুর আর্দ্রতা হাইগ্রোমিটার (Hygrometer) দ্বারা পরিমাপ করা হয়। বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পেলে জলীয়বাষ্পের ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তখন বায়ুকে পরিপৃক্ত করতে পূর্বের চেয়ে কম জলীয়বাষ্পের প্রয়োজন হয়। ফলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পায়।
পরিপূক্ত বায়ু: কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয়বাষ্প বায়ুতে থাকলে বায়ু আর জলীয়বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না। তখন সেই বায়ুকে পরিপূক্ত বায়ু বলে।
শীতকালে পমেট বা গ্লিসারিন ব্যবহারের কারণ: শীতকালে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম বলে বাতাস শরীরের অনাবৃত অংশ হতে জলীয় বাষ্প শোষণ করে নেয়। তাই শীতকালে ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেটে যায়। ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফাটা বন্ধ করতে পমেট বা গ্লিসারিন লাগিয়ে চামড়াকে ভিজা রাখা হয়।
শীতকালে ভিজা কাপড় দ্রুত শুকানোর কারণ: বর্ষার দিনে বাতাস জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত থাকে। ফলে বাতাস অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না। শীতকালে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকে বলে বাতাস ভিজা কাপড় হতে দ্রুত জলীয়বাষ্প শোষণ করে সম্পৃক্ত হতে চায়। ফলে শীতকালে ভিজা কাপড় দ্রুত শুকায়।