ব্যাকরণ, ভাষা,ভাষা রীতি,ভাষার রুপ,বাংলা ব্যাকরণ , অভিধান

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি বাংলা ২য় প্ত্র

বাংলা বাংলা ২য় পত্র |

 

ব্যাকারণ কাঠামো

 

ভাষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ব্যাকরণ বলতে সাধারণত ভাষার কাঠামোর, বিশেষ করে শব্দ বাক্যের কাঠামোর, গবেষণাকে বোঝায়। অর্থে ব্যাকরণ হল কোন ভাষার রূপমূলতত্ত্ব বাক্যতত্ত্বের আলোচনা। কখনও কখনও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে ব্যাকরণ পরিভাষাটি দিয়ে কোন ভাষার কাঠামোর সমস্ত নিয়মকানুনের বর্ণনাকে বোঝানো হয়, এবং এই ব্যাপকতর সংজ্ঞার ভেতরে ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব প্রয়োগতত্ত্বের আলোচনাও চলে আসে।

 

উপরে দেওয়া ব্যাকরণের সংজ্ঞাগুলি মূলত উচ্চতর ভাষাবিজ্ঞানী মহলে প্রচলিত এবং ধরনের ব্যাকরণকে বর্ণনামূলক ব্যাকরণও বলা হয়। অন্যদিকে স্কুল কলেজে পাঠ্য ব্যাকরণগুলিতে ভাষার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক বর্ণনা থাকে না, বরং এগুলিতে সাধারণত মান ভাষার কাঠামোর কিছু বিবরণের পাশাপাশি আদর্শ বা মান ভাষাতে লেখার বিভিন্ন উপদেশমূলক নিয়ম বিধিবদ্ধ করে দেওয়া থাকে। এগুলিকে বলা হয় বিধানবাদী ব্যাকরণ।

 

ব্যুৎপত্তি সংজ্ঞা

ব্যাকরণ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হলো "বিশ্লেষণ" (বি + + ক্রি + অন) বিশেষ এবং সম্যকরূপে বিশ্লেষণ। ভাষার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে নানান সাহিত্যিক নানান মতামত লক্ষ্য করা যায় তবে যে সমস্ত মতামতগুলি গ্রহণযোগ্য তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ আকৃতি প্রয়োগের নীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সেই শাস্ত্র কে বলে সেই ভাষার ব্যাকরণ।

 

ইতিহাস

প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগিজ ভাষায়। এর লেখক ছিলেন মানোয়েল দা আসুম্পসাঁও। তাঁর বাংলা-পর্তুগিজ অভিধানের ভূমিকা অংশ হিসেবে তিনি এটি রচনা করেন। এরপর ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয় নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড প্রণীত ইংরেজি ভাষায় রচিত পূর্ণাঙ্গ একটি বাংলা ব্যাকরণ।

 

 

​​​​​ভাষার সংজ্ঞা 

 

মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কণ্ঠধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে, ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর, কণ্ঠ, নাক ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বোঝায়। এই ধ্বনিই ভাষার মূল উপাদান। এই ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। আবার ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রের দ্বারা। গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদি বাক্ প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বলে বাগ্যন্ত্র। এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে।

 

বাংলা ভাষাঃ

 

বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা।বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার .০৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে।সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৭. কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত স্তোত্র বাংলাতে রচিত।

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

 

১/ বঙ্গভাষা সনেট প্রথমে কী নামে লেখা হয়?

 

কবি-মাতৃভাষা

মাতৃভাষা

মহাভাষার অহঙ্কার

আত্মবিলাপ

 

 

২/  'আবেস্তা' গ্রন্থ কোন ভাষায় রচিত?

 

সংস্কৃত

পথিক

লাতিন

জেন্দা

 

৩/  রংপুর অঞ্চলে রেশমকে স্থানীয় ভাষায় কী বলে

 

এরেন্ডা

এন্ডি

রেহি

ভেড়েন্ডা

 

৪/ বাংলা ভাষার উৎপত্তি কোন শতাব্দীতে?

 

৬ষ্ঠ শতাব্দীতে

৮ম শতাব্দীতে

৭ম শতাব্দীতে

৯ম শতাব্দীতে

 

৫/ 'জাদু' শব্দটি কোন ভাষার?

 

হিন্দি

আরবি

ফারসি

উর্দু

 

ভাষার ইতিহাস-

 

মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক্ সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা হয়। অর্থাৎ বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলো ভাষা।

 

দেশ, কাল পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করে মানুষ আপন মনোভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বস্তু ভাবের জন্য বিভিন্ন ধ্বনির সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি করেছে। সেসব শব্দ মূলত নিৰ্দিষ্ট পরিবেশে মানুষের বস্তু ভাবের প্রতীক (Symbol) মাত্র। জন্যই আমরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই। সে ভাষাও আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়ে এসেছে। ফলে, শতকে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যে ভাষা ব্যবহার করে, হাজার বছর আগেকার মানুষের ভাষা ঠিক এমনটি ছিল না

 

বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বাংলা একটি ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। বাংলাদেশের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা বাংলাদেশের ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ এবং ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা আসামের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা। ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগণ রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা

 

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

১/ "মোদের গর্ব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা" গানটির রচয়িতা কে?

রামনিধি গুপ্ত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অতুল প্রসাদ সেন

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

 

২/ সওগাতশব্দটি কোন ভাষা থেকে আগত?

আরবি

তুর্কি

ফারসি

পর্তুগিজ

 

৩/ বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করেন-

বঙ্কিমচন্দ্র

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

শরৎচন্দ্র

 

৪/ বাংলাভাষায় যতি বা ছেদ চিহ্ন-

৪টি

৫টি

১৬টি

১১টি

 

৫/ বাড়িআলাশব্দে কোন ভাষার প্রত্যয় রয়েছে?

বাংলা

ইংরেজি

হিন্দি

ফারসি

 

বাংলা ভাষার ইতিহাস -

 

বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি। বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

 

১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।[১৮] ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

 

 

 

ভাষারীতি ভাষারূপ

 

বাংলা ভাষা প্রধান বা মৌলিক রূপ দুইটি যথা- লৈখিক রূপ এবং মৌখিক লেখার রীতি ভাষার মৌলিক রীতি। বাংলা চাষার প্রকারভেদ বা রীতিভেদ নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো যায় - লৈখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে ) সাধু, ) চলিত

 

মৌখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে ) চলিত ) আঞ্চলিক ( উপভাষা )

 

) সাধু রীতি

 

সংস্কৃত -ব্যতপত্তি সম্পন্ন মানুষের ভাষাকে " সাধু ভাষা " বলএ প্রথম অভিহিত করেন রাজা রামমোহন রায় ।বাংলা গদ্যের প্রথম যুগে সাধু রীতির প্রচলন ছিল

 

) চলিত রীতি

 

সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কে " চলিত ভাষা " বলা হয় চলিত ভাষার আদর্শরুপে গৃহীত ভাষাকে বলা হয় প্রতিম ভাষা চলিত ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রমিত উচ্চারণ কলকাতা অঞ্চলের মৌখিক ভাষাকে ভিত্তি করে চলিত ভাষা গড়ে উঠেছে উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে ভাবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যয়ের হাতে চলিত রীতির প্রথম ব্যবহার হয় তারপর প্যারীচাঁদ মিত্র কালী প্রসন্ন সিংহের রচনায় এর ক্রমবিকাশ ঘটে আলালের ভাষা ছিল মূলত সাধু ভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেবল কিছু বর্ণ্না এবং কোনো কোনো সংলাপ চলিত রীতির ; অপরপক্ষে, হুতোম লেখা হয়েছিল পুরোপুরি চলিত রীতিতে প্রম্থ চৌধুরীর "সবুজপত্র "কে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালের দিকে গদ্যরীতির সাহিত্যিক স্বীকৃতি পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। প্রম্থ চৌধুরী "বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক " বলা হয় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতির ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধ করেন

 

 

 

 প্রমিত চলিত ভাষারীতি:

 

 দেশের সকল মানুষ যে আদর্শ ভাষারীতিতে কথা বলে, যেই ভাষারীতি সকলে বোঝে, এবং যে ভাষায় সকলে শিল্প-সাহিত্য রচনা শিক্ষা অন্যান্য কাজকর্ম সম্পাদন করে, সেটিই প্রমিত চলিত ভাষারীতি। এই ভাষায় যেমন সাহিত্য সাধনা বা লেখালেখি করা যায়, তেমনি কথা বলার জন্যও এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সকলে বোঝে বলে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে, যেমন কোনো অনুষ্ঠানে বা অপরিচিত জায়গায় বা আনুষ্ঠানিক (formal) আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে এই ভাষারীতি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, এই রীতি লেখ্য কথ্য উভয় রীতিতেই ব্যবহৃত হয়।

 

 বাংলা প্রমিত চলিত ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভাগীরথী- তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষার উপর ভিত্তি করে। তবে, পূর্বে এই ভাষা সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তখন কেবল সাধু ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করা হতো। কারণে বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ছোটগল্পকাররা সাধু ভাষায় উপন্যাস, নাটক গল্প লিখেছেন। পরবর্তীতে, প্রমথ চৌধুরী চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনার উপর ব্যাপক জোর দেন এবং তাঁরসবুজপত্র’ (১৯১৪) পত্রিকার মাধ্যমে চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

 

 

 

সাধু রীতি:

 

 পূর্বে সাহিত্য রচনা লেখালেখির জন্য তৎসম শব্দবহুল, দীর্ঘ সর্বনাম ক্রিয়াপদ সম্পন্ন যে গুরুগম্ভীর ভাষারীতি ব্যবহৃত হতো, তাকেই সাধু ভাষা বলে। এই ভাষা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর, দুরূহ এবং এতে দীর্ঘ পদ ব্যবহৃত হয় বলে এই ভাষা কথা বলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক না। তাই এই ভাষায় কথাও বলা হয় না। এই ভাষা কেবল লেখ্য রীতিতে ব্যবহারযোগ্য। তাও বহু আগেই লেখ্য রীতি হিসেবে চলিত রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সাধু রীতি এখন লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না। কেবল সরকারি দলিল-দস্তাবেজ লেখা অন্যান্য কিছু দাপ্তরিক কাজে এখনো এই রীতি ব্যবহৃত হয়।

 

 

 

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

১/  আমি তার উদ্ধতপূর্ণ আচরণে ব্যাথিত হইয়াছি' সাধু ভাষার বাক্যে মোট কয়টি ভুল আছে ?

 

টি

 

২টি

 

টি

 

টি

 

আঞ্চলিক কথ্য রীতি

দেশ-কাল পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ঘটে অঞ্চল বিশেষের মানুষের মুখের ভাষাকে উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা বলে

 

- মেগো" শব্দের আঞ্চলিক রূপের শিষ্ট পদ্যরূপ"মোদের "

 

আঞ্চলিক কথ্য রীতি:

 

বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে যে বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাকেই আঞ্চলিক কথ্য রীতি বা আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। সকল ভাষাতেই আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এগুলো কোনোভাবেই বিকৃত ভাষা নয়, এগুলো শুদ্ধ প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক ভাষারীতি।

 

 

 

 প্রকৃতঅর্থে, প্রমিত চলিত ভাষারীতিও একটি অঞ্চলের কথ্য রীতির উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেবল- ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে তখন প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অন্যগুলোকে প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

 

 

 

 তবে আঞ্চলিক কথ্য রীতি লেখ্য ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়, সকল অঞ্চলের মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা বুঝবে না। তবে কোনো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কোনো সাহিত্য রচিত হলে সেখানে আঞ্চলিক ভাষা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সম্পূর্ণ বা পুরোটুকুই আঞ্চলিক ভাষায় রচিত একটি শিল্পসম্মত উপন্যাস হলো হাসান আজিজুল হকেরআগুনপাখি

 

 

সাধু চলিত ভাষার পার্থক্য

সাধু চলিত রীতি পার্থক্য

সাধু রীতি                                                                                          চলিত রীতি

পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত সুনির্দিষ্ট                               পরিবর্তনশীল

গুরুগম্ভীর আভিজাত্যের পরিচায়ক                           সংক্ষিপ্ত , সহজবোধ্য কৃত্রিমতা বর্জিত

তৎসম শব্দ বহুল                                                               তদ্ভব শব্দবহুল

শুধু লৈখিক রূপ আছে                                                                  লৈখিক মৌখিক উভয় রূপ আছে।

নাটকের সংলাপ , বক্তৃতা এবং আলাপ - আলোচনার অনুপযোগী   নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা এবং আলাপ-আলোচনার উপযোগী

সর্বনাম ক্রিয়াপদের বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে ক্রিয়া, সর্বনাম ওয়নুসর্গের পূর্ণ্রুপ ব্যবহ্নত হয়        সর্ব ক্রিয়াপদ পরিবর্তিত সহজতর রূপ লাভ করে ক্রিয়া ,সর্বনাম অনুসর্গের রূপ সংক্ষিপ্ত

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

সাধু চলিত রীতিতে অভিন্নরূপে ব্যবহৃত হয়-

 

সর্বনাম

ক্রিয়া

সম্বধন পদ

অব্যয়

 

ব্যাকরণ-

 

ব্যাকরণ (= বি + + √কৃ + অন) শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। সংজ্ঞা : যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা: ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি সেসবের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং লেখায় কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ সহজ হয় বাংলা ব্যাকরণ : যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়, তাই বাংলা ব্যাকরণ বাংলা ব্যাকরণে আলোচ্য বিষয প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক অংশ থাকে। যেমন

 

. ধ্বনি (Sound)

 

. শব্দ (Word )

 

. বাক্য (Sentence )

 

. অর্থ (Meaning)

 

 

 

সব ভাষার ব্যাকরণেই প্রধানত নিম্নলিখিত চারটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়

 

. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)

 

. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব ((Morphology)

 

. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) এবং

 

. অর্থতত্ত্ব (Semantics)

 

ছাড়া অভিধানতত্ত্ব (Lexicography) ছন্দ অলংকার প্রভৃতিও ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

 

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

১/ 'দুরন্ত ' থেকে 'দুরন্তপনা' কী ধরনের পরিবর্তন?

 

বিশেষ্য > বিশেষণ

সর্বনাম > বিশেষণ

বিশেষণ> বিশেষ্য

সর্বনাম > বিশেষ্য

২/  পাতায় পাতায় পড়ে নিশীর শিশির এখানে

পাতায় পাতায় কী  বোঝাতে ব্যবহার হয়েছে?

 

ধারাবাহিকতা

নির্দিষ্টতা

আধিক্য

পৌনঃপুনিকতা

 

৩/ সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায় রচিত ব্যাকরণটির নাম কী?

গৌড়ীয় ব্যাকরণ

বৈয়াকরণ

ভাষা প্রকাশ বাঙলা ব্যাকরণ

ব্যাকরণ

 

অভিধান

ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলায় অভিধান শব্দের অর্থ শব্দার্থ। একে ইংরেজিতে বলে ডিকশনারি (Dictionary), যার অর্থ গৃহীত। মূলত অভিধান বা শব্দকোষ এক ধরনের বই, যাতে একটি নির্দিষ্ট ভাষার শব্দগুলোর অর্থ, উচ্চারণ, ব্যুৎপত্তি, ব্যবহার ইত্যাদি বর্ণিত, ব্যাখ্যায়িত শব্দগুলো বর্ণানুক্রমে তালিকাভুক্ত থাকে।

 

অভিধান বিভিন্ন রকমের হয়। কোনো অভিধানে শব্দের এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ থাকে, কোনো অভিধানে কোন শব্দ কিভাবে ব্যবহার হবে সেটির বর্ণনা থাকে। আবার জীবনীর অভিধানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীর সংকলন থাকে, প্রযুক্তি সম্পর্কিত অভিধানে প্রযুক্তির সুনির্দিষ্ট বিভাগ সম্পর্কিত শব্দগুলোর অর্থ ব্যাখ্যা থাকে।

 

 

 

১২২৫ সালে লাতিন ভাষায় বিশ্বে প্রথম অভিধান লেখা হয়। এর সংকলক ছিলেন জন গারল্যান্ড। ইংরেজি ভাষায় প্রথম ইংরেজি অভিধান রচিত হয় ১৫৫২ সালে, যার সংকলক ছিলেন রিচার্ড হুলোয়েট। এই অভিধানে শব্দ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ হাজার। এতে প্রথমে ইংরেজি শব্দের ইংরেজি অর্থ এবং পরে তার লাতিন প্রতিশব্দ ছিল। ১৮১৭ সালে বাংলা ভাষায় বাংলা থেকে বাংলা প্রথম অভিধান সংকলন করেন রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ। তিনি এর নাম দেন বঙ্গ ভাষাভিধান।

 

বিশ শতকের সূচনা থেকে আধুনিক পদ্ধতির একভাষিক বাংলা-বাংলা অভিধান প্রকাশ পেতে শুরু করে। এক্ষেত্রে ১৯০৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সুবল মিত্রের সরল বাঙ্গালা অভিধান দীর্ঘকাল ব্যাপী জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সমর্থ হয়।

 

১৯৫৫ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে অভিধান চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠান একভাষিক, দ্বিভাষিক, বহুভাষিক, বিষয়ভিত্তিক এবং পারিভাষিক নানা ধরনের অভিধান শব্দকোষ প্রণয়ন প্রকাশ করে আসছে। অভিধান শব্দকোষ মিলে ২০০৯ সাল নাগাদ বাংলা একাডেমি প্রায় সত্তরটি অভিধান প্রকাশ করে। তার মধ্যে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ১৯৬৫), সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান (আহমদ শরীফ, ১৯৯২), সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান, দু-খন্ড (আবু ইসহাক, ১৯৯৩ ১৯৯৮), বানান অভিধান (জামিল চৌধুরী, ১৯৯৪),মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান (মোহাম্মদ আবদুল কাইউম, ২০০৮) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।