খাদ্য ও পুষ্টি |
Food and nutrition
ইঞ্জিন চালানোর জন্য কয়লা, ডিজেল, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করা হয়। বলতে পারো, এ জ্বালানিগুলোর কাজ কী? এ জ্বালানিগুলো পুড়ে শক্তি উৎপন্ন করে। আর এ শক্তি যানবাহনগুলোকে গতি দান করে। যানবাহনগুলো চলতে থাকে। মানবদেহকে একটি ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করা হয়। অন্যান্য ইঞ্জিনের মতো আমাদের দেহ নামক ইঞ্জিনটি চালানোর জন্য চাই শক্তি। মানবদেহ এ শক্তি কোথা থেকে পায়? খাদ্য আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ও শক্তি যোগায়। খাদ্যের মূল উৎস সজীব দেহ। খাদ্য মূলত বিভিন্ন যৌগের সমন্বয়ে গঠিত। আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে মূলত খাদ্য পাই। খাদ্য বলতে সেই জৈব উপাদানকে বোঝায় যা জীবের দেহ গঠন ও শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যের মধ্যে যে সকল উপাদান বা পুষ্টিদ্রব্য থাকে তা আমাদের দেহে প্রধানত তিনটি কাজ করে। যথা-
·
জীবের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।
·
তাপশক্তি ও কর্মশক্তি প্রদান।
· রোগ প্রতিরোধ, সুস্থতা বিধান ও শারীরবৃত্তীয় কাজ (যেমন: পরিপাক, শ্বসন, রেচন ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করে।
পুষ্টি ও পুষ্টিমান
পুষ্টি একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত হয়। দেহ এসব সরল উপাদান শোষণ করে নেয়। শোষণের পরে খাদ্য উপাদানগুলো দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন কোষ গঠন করে। তাছাড়া তাপ উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুষ্টি যোগায়। দেহে খাদ্যের এই সকল কাজই পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। অর্থাৎ পুষ্টি উপাদান হচ্ছে প্রতিদিনের খাবারের গুণসম্পন্ন সেসব উপাদান যা দেহের শক্তি ও যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, মেধা ও বুদ্ধি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ করে, অসুখ-বিসুখ থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে এবং মানুষকে কর্মক্ষম করে।
কোন খাদ্যে কী পরিমাণ ও কত রকম খাদ্য উপাদান থাকে তার উপর নির্ভর করে ঐ খাদ্যের পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য। যেমন- সিদ্ধ চালে ৭৯% শ্বেতসার, ৬% স্নেহ পদার্থ থাকে। এছাড়া সামান্য পরিমাণ আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। ১০০ গ্রাম চাল থেকে ৩৪৫-৩৪৯ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। সিদ্ধ চালে শ্বেতসার, আমিষ ও ভিটামিন থাকে। কিন্তু এতে শ্বেতসারের পরিমাণ বেশি থাকে। অতএব চাল একটি শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ।
কোনো খাদ্য উপাদানের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হলে ঐ খাদ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। খাদ্যের প্রকৃতি বলতে এটা কি মিশ্র খাদ্য, নাকি বিশুদ্ধ খাদ্য তাকে বোঝায়। মিশ্র খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যেমন- দুধ, ডিম, খিচুরি, পেয়ারা ইত্যাদি। অন্যদিকে বিশুদ্ধ খাদ্যে শুধুমাত্র একটি উপাদান থাকে। যেমন- চিনি, গ্লুকোজ। এতে শর্করা ছাড়া আর কোনো উপাদান থাকে না।
খাদ্য উপাদান
খাদ্য অনেকগুলো রাসায়নিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এ রাসায়নিক উপাদানগুলোকে খাদ্য উপাদান বলা হয়। কেবলমাত্র একটি উপাদান দিয়ে গঠিত এমন খাদ্যবস্তুর সংখ্যা খুবই কম। উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
1.
আমিষ বা প্রোটিন – অসংখ্য অ্যামাইনো এসিড বিভিন্নভাবে সমন্বিত হয়ে বৃহদাকার যৌগিক জৈব অণু গঠন করে, যা প্রোটিন নামে পরিচিত। প্রোটিন ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও দেহ গঠন করে।
2.
শর্করা বা শ্বেতসার- কার্বন-ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এর সমন্বয়ে যৌগিক জৈব অণু গঠন করে, যা শর্করা বা শ্বেতসার নামে পরিচিত । এটি শক্তি উৎপাদন করে।
3.
স্নেহ বা চর্বি – কার্বন-ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন এর সমন্বয়ে যৌগিক জৈব অণু গঠন করে, যা স্নেহ বা লিপিড নামে পরিচিত । এটি তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে।
এছাড়া অন্যান্য তিন প্রকার উপাদান বিশেষ প্রয়োজন। যথা-
1.
খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন- রোগ প্রতিরোধ, শক্তি বৃদ্ধি, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা যোগায়।
2.
খনিজ লবণ- বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
3.
পানি- দেহে পানির সমতা রক্ষা করে, কোষের গুণাবলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ অঙ্গাণুসমূহকে ধারণ ও তাপের সমতা রক্ষা করে।
বডি মাস ইনডেক্স (BMI): মানবদেহের গড়ন ও চর্বির একটি সূচক নির্দেশ করে। অর্থাৎ সুস্থ জীবনযাপনে মানব শরীরের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কোনো নির্দিষ্ট বয়সে শরীরের দৈর্ঘ্যের সাথে চর্বির পরিমাণগত সম্পর্ক মান নির্দেশ করে। শরীরের সুস্থতা ও স্থুলতা মান নির্ণয়ে এই মানদন্ড দু'টি খুবই উপযোগী। সুস্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ মান ১৮.৫-২৪.৯। ২৫-২৯.৯ শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং ৩০ - ৩৪.৯ মোটা হওয়ার প্রথম স্তর নির্দেশ করে।
·
খাদ্য উপাদানকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়: দুইভাগে। যথাঃ
ক) ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টঃ প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, লিপিড ।
খ) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টঃ ভিটামিন, খনিজ লবণ, পানি।
·
সুষম খাদ্যের উপাদান: ৬টি। যথাঃ শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজলবণ এবং পানি ।
·
সুষম খাদ্যে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবারের অনুপাত: ৪: ১ : ১ ।
·
কোনটিকে মোটামুটিভাবে সম্পূর্ণ বা আদর্শ খাদ্য বলা হয়: দুধ। ভিটামিন সি ব্যতীত সব খাদ্যোপাদানই দুধে বিদ্যমান ।
·
কোন খাদ্য উপাদান থেকে শক্তি পাওয়া যায়: শর্করা, আমিষ, স্নেহ ।
·
আমাদের দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের গড় কত ক্যালরি শক্তি প্রয়োজন: ২৫০০ ক্যালরি ।
শ্বেতসার, আমিষ এবং স্নেহজাতীয় পদার্থ হতে কি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়:
শর্করা/শ্বেতসাব: ৪ কিলোক্যালরি/ গ্রাম,
আমিষ : ৪.৩৫ কিলোক্যালরি/ গ্রাম,
স্নেহ : ৯.৩ কিলোক্যালরি/ গ্রাম।
সংবেদী অঙ্গ | Sensory
Organs
সংবেদী অঙ্গ হল সেই সব অঙ্গ যেগুলো দ্বারা আমরা বাইরের জগৎ অনুভব করতে পারি। অর্থাৎ যে অঙ্গের সাহায্যে আমরা বাহিরের জগৎকে অনুভব করতে পারি বা বুঝতে পারি , তাকে সংবেদী অঙ্গ বলে। চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক এ পাঁচটি হল মানুষের সংবেদী অঙ্গ।
চোখ : চোখের আলোক সংবেদী অংশের নাম রেটিনা । চক্ষু লেন্সের পেছনে অবস্থিত অক্ষিগালেকের ভিতরের পৃষ্ঠের গোলাপি রঙের ঈষৎ স্বচ্ছ আলোকসংবেদী আবরণকে রেটিনা বলে। এটি নার্ভতন্তু ও রক্তবাহী নালী দ্বারা গঠিত এক ধরনের আলোকগ্রাহী পর্দা। চোখে আলো পতিত হলে আলো নার্ভতন্তুতে সাড়া জাগায় এবং দৃষ্টিবোধের সৃষ্টি হয়। রেটিনা আলোক শক্তিকে তড়িৎ সংকেতে পরিণত করে । এটি রডস (Rods) ও কোনস (Cones) নামক কতগুলো স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। এখানে বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। রড কোষগুলো লম্বাটে ও রোডপসিন নামক প্রোটিনযুক্ত এবং অনুজ্জ্বল আলোতে দর্শনের জন্য বিশেষ উপযোগী। কোণ কোষগুলো কোণাকৃতি ও আয়োডপসিন নামক প্রোটিনযুক্ত । এই কোণ কোষগুলো উজ্জ্বল আলোতে এবং রঙিন বস্তু দর্শনের জন্য উপযোগী। যে অস্বচ্ছ পর্দার সাহায্যে চোখের মনি বা তারাতে আলো প্রবেশ করে তাই আইরিস। এটি চোখে আলো প্রবেশের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবচোখে রয়েছে উভোত্তল লেন্স। চোখের অশ্রুর উৎস ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি। চোখের অশ্রুতে লাইসোজাইম এনজাইম থাকে । চোখের রঙ নিয়ন্ত্রণকারী পদার্থ হলো মেলানিন। এ মেলানিন প্রস্তুতকারী এজেন্ট হলো P প্রোটিন যা OCA2 ও HERC2 নামক পাশাপাশি অবস্থিত জিন তৈরি করে। এ জিনদ্বয় আবার ক্রোমোজোম-১৫ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থিত। অর্থাৎ চোখের রঙ পরোক্ষভাবে DNA দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। স্ক্লেরা ও রেটিনার মধ্যবর্তী করয়েড নামক স্তরটি মেলানিন রঞ্জকে রঞ্জিত।
কান : কানের প্রধান কাজ হল শ্রবণে অংশ নেয়া। এছাড়া শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় কান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কানে শব্দতরঙ্গ প্রবেশ করলে কর্ণপর্দা অংশ কেঁপে ওঠে। মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল- বহিঃকর্ণ , মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ । বহিঃকর্ণ কর্ণছত্র , কর্ণকুহর ও কর্ণপটহ দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে বাইরের থেকে মধ্যকর্ণে প্রবাহিত করা । মধ্যকর্ণ মেলিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস নামে তিনটি অস্থি দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে কর্ণপটহ থেকে অন্তকর্ণে প্রবাহিত করা। স্টেপিস মানবদেহের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম অস্থি বা অঙ্গ । স্টেপিস ত্রিকোণাকার অস্থি।
নাক : মানুষের নাক হলো মুখের সবচেয়ে প্রসারিত অংশ। এটি শ্বাসযন্ত্র ও ঘ্রাণতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। নাকের হাড়, নাকের কার্টিলেজ এবং নাকের সেপ্টাম দ্বারা নাকের আকৃতি নির্ধারিত হয়। নাকের সেপ্টাম নাকের ছিদ্রগুলোকে পৃথক করে এবং নাকের গহ্বরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। নাকের প্রধান কাজ হচ্ছে শ্বাসক্রিয়া সম্পন্ন করা। নাকের মধ্যে নাকের মিউকাস দ্বারা বাতাস ফিল্টার হয় এবং এর ফলে নাকে প্রবেশকৃত অপ্রয়োজনীয় কণাগুলিকে ফুসফুসে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। হাঁচির মাধ্যমে নাক থেকে অবাঞ্ছিত কণাগুলি বের হয়ে যায়। অ্যারোসল হাঁচি প্রক্রিয়াকে বাঁধা দিতে পারে। নাকের আরেকটি প্রধান কাজ হল ঘ্রাণ এবং গন্ধের অনুভূতি। উপরের নাক গহ্বরের এপিথেলিয়ামে ঘ্রাণের জন্য সংবেদী বিশেষ ঘ্রাণকোষ রয়েছে।
জিহ্বা : জিহ্বা হলো অধিকাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীর মুখের একটি পেশীবহুল অঙ্গ; যা খাদ্য চিবুতে এবং তা গিলে ফেলতে সহায়তা করে। মানুষের জিহ্বায় চার ধরণের টেস্টবাড থাকে। এগুলো হল টক, তিতা, মিষ্টি এবং লবণাক্ত। খাদ্যদ্রব্যের রাসায়নিক পদার্থগুলো লালামিশ্রিত হয়ে জিহ্বার টেস্টবাডের সংস্পর্শে আসার পর আমরা কেবল খাদ্যের স্বাদ বুঝতে পারি। জিহ্বা প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। জিহ্বার প্রধান কাজ হলো, মানুষের ক্ষেত্রে কথা বলায় সাহায্য করা এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর সক্রিয় করা।
ত্বক : মানবদেহের বৃহত্তম অঙ্গ হল ত্বক। প্রকৃতপক্ষে এটি নরম আবরণ এবং দেহকে আবৃত করে রাখে। এটি প্রাণিদেহের ভিতরের অংশগুলোকে রক্ষা করে। স্তন্যপায়ীদের ত্বকে লোম বা ছোট চুল থাকে। মানুষের গায়ের রঙ ত্বকের মেলানিনের উপর নির্ভর করে। ত্বকে মেলানিন বেশি থাকলে গায়ের রঙ কালো হয় এবং ত্বকে মেলানিন কম থাকলে গায়ের রঙ ফর্সা হয়। মানুষের চামড়ার রং নিয়ন্ত্রণ করে ডিএনএ । যা বংশপরস্পরায় ত্বকের রং বহন করে ।
·
রাতের বেলা বিড়াল ও কুকুরের চোখ জ্বলজ্বল করে কেন: কুকুর ও বিড়ালের চোখে টেপেটাম নামক রঞ্জক কোষ থাকে।
·
কানের কাজ : শ্রবণ ও দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা।
·
কোন প্রাণী জিহবার সাহায্যে শোনে : সাপ।
·
কোন প্রাণী গায়ের রঙ পরিবর্তন করে আত্মরক্ষা করতে পারে: গিরগিটি।
·
মানুষের চোখ , কান , নাক , জিহ্বা এবং ত্বক এই পাঁচটি অঙ্গকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় বলা হয় । কারণ এগুলো দ্বারা আমরা কোন কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি ।
·
আলট্রভায়োলেট রশ্মি চর্ম ক্যান্সার সৃষ্টি করে ।
·
পেঁচা দিনে দেখতে পায় না কিন্তু রাতে দেখতে পায় কারণ পেঁচার চোখের রেটিনাতে রডস এর সংখ্যা বেশি এবং কোনস এর সংখ্যা কম ।
মানবদেহের গ্রন্থি ও নিঃসৃত রস
যে সমস্ত অঙ্গসমূহ এক বা একাধিক রাসায়নিক যৌগ উৎপাদন এবং ক্ষরণের কাজে নিয়োজিত থাকে তাকে 'গ্রন্থি' বলে । মানবদেহে দুই ধরনের গ্রন্থি রয়েছে- অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থি।
১. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি - হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারী, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, অ্যাড্রেনাল, প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় , টেস্টিস, ওভারী, প্লাসেন্টা।
২. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি – ঘর্মগ্রন্থি , ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি, স্তন গ্রন্থি, সেরোমিনাস গ্রন্থি, সেবাসিয়াস গ্রন্থি , মেবোমিয়ান গ্রন্থি , যকৃত এবং মিউকাস ।
Table of Content
·
অন্তঃক্ষরা ও বহি:ক্ষরা গ্রন্থি
অন্তঃক্ষরা ও বহি:ক্ষরা গ্রন্থি
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি : প্রাণীদেহের নালীবিহীন গ্রন্থিসমূহ হতে নিঃসৃত রস সরাসরি রক্তে মিশ্রিত হয়ে রক্ত দ্বারাই দেহের বিভিন্ন স্থানে পরিবাহিত হয়। এ সকল গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। এই রস নির্দিষ্ট পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণস্বরূপ-থাইরয়েড নামক অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোন 'থাইরক্সিন' প্রাণীর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত করে।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য:
·
কোন নালীপথ নেই। রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে ক্রিয়াশীল অঙ্গে পৌঁছায়।
·
ক্ষরিত পদার্থ হরমোন নামে পরিচিত।
·
এ সব গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস দূরবর্তী নির্দিষ্ট অঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়।
বহি:ক্ষরা গ্রন্থি : বহি:ক্ষরা গ্রন্থি হচ্ছে সেইসব গ্রন্থি যারা নালীর মাধ্যমে আবরণী টিস্যুর উপরিভাগে পদার্থ উৎপন্ন এবং ক্ষরণ করে। যকৃত এবং অগ্ন্যাশয় উভয় অন্তঃক্ষরা এবং বহিঃক্ষরা গ্রন্থি; তারা বহি:ক্ষরা গ্রন্থি কারণ তারা পিত্ত এবং অগ্ন্যাশয় রস উভয়ই একসারি নালীর মাধ্যমে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে ক্ষরণ করে এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কারণ তারা অন্যান্য পদার্থ সরাসরি রক্তে ক্ষরণ করে।
বহিঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য:
·
ক্ষরণ পরিবহনের জন্য এদের নিজস্ব নালী আছে।
·
ক্ষরিত পদার্থ বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমনঃ ঘাম, এনজাইম, দুধ, লালা ইত্যাদি।
·
ক্ষরিত বস্তু ক্ষরণ স্থানে বা সেখান থেকে অদূরে কাজ করে।
গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস
গ্রন্থি |
নিঃসৃত রস |
লালাগ্রন্থি |
লালা রস |
স্তনগ্রন্থি |
দুধ |
ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি |
চোখের পানি |
ঘর্মগ্রন্থি |
ঘাম |
শুক্রাশয় |
টেসটোস্টেরন |
ডিম্বাশয় |
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরণ |
অ্যাডরেনাল |
অ্যাডরিনালিন |
আইলেট অব ল্যাঙ্গারহেনস (আলফা কোষ) |
ইনসুলিন |
আইলেট অব ল্যাঙ্গারহেনস (বিটা কোষ) |
গ্লুকাগন |
আইলেট অব ল্যাঙ্গারহেনস (ডেল্টা কোষ) |
সোমাটোস্ট্যাটিন |
বিভিন্ন গ্রন্থি পরিচিতি
যকৃত : মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হল যকৃত। এটি একটি মিশ্র গ্রন্থি । এটি অন্ত:ক্ষরা এবং বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে । যকৃতকে (Liver) মানবদেহের ল্যাবরেটরী বলা হয় । যকৃতকে জীবন সমুদ্রের কর্মমুখর পোতাশ্রয় বলা হয় । যকৃতের ওজন ১.৫ - ২ কেজি। যকৃতে পিত্তনালী ও অসংখ্য কৈশিকনালী থাকে। বিষক্রিয়া ধ্বংস করা, প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং হজমের জন্য কিছু জৈব উপাদান (হরমোন) প্রস্তুত করা যকৃতের অন্যতম কাজ। অতিরিক্ত খাদ্য যকৃত বা লিভারে সঞ্চিত হয়। প্রাণিদের যকৃতে সঞ্চিত খাদ্যকে গ্লাইকোজেন বলে। লোহিত রক্ত কণিকা যকৃতে গিয়ে ধ্বংস হয় । যকৃত বাইল (পিত্তরস) প্রস্তুত করে যা হজমের জন্য অন্যতম সহায়ক উপাদান অ্যামাইনো এসিড প্রস্তুত করে। লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিনের হিম অংশ যকৃত হতে আসে। চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিবহনের জন্য কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রস্তুত করে।
অগ্ন্যাশয় : Pancrease এর বাংলা হল অগ্ন্যাশয়। অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্র গ্রন্থি, অর্থাৎ এটি অন্ত:ক্ষরা গ্রন্থি এবং বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবেও কাজ করে। অগ্নাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ হল আইলেটঅব ল্যাঙ্গার হেনস। যার বিটা কোষ ইনসুলিন, আলফা কোষ গ্লুকাগন, ডেল্টা কোষ সোমাটোস্টাটিন হরমোন নিঃসরণ করে। অগ্নাশয়ের বহিঃ ক্ষরা অংশ হতে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয় যাতে প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট ও চর্বিজাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য এনজাইম থাকে। মানবদেহের অগ্ন্যাশয়ের দৈর্ঘ্য ১৫-২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৬৫ থেকে ৭৫ গ্রাম। এর শীর্ষাংশ ডিওডেনামের অর্ধবৃত্তাকার বাঁকের মধ্যে অবস্থিত ও বাকী অংশ উদরগহ্বরের পেছনে প্রসারিত। ফলে এটা দেখতে অনেকটা লাতিন J বর্ণের মত।
লালা গ্রন্থি: লালা গ্রন্থি ৩ জোড়া। যথাঃ প্যারোটিড, সাবম্যান্ডিবুলার, সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি। লালা গ্রন্থি হতে লালা রস উৎপন্ন হয়। মানব লালার মধ্যে ৯৯.৫% পানি । বাকি অংশে ইলেক্ট্রোলাইট, শ্লেষ্মা, বিভিন্ন এনজাইম থাকে । খাদ্যকনা এবং চর্বি হজম প্রক্রিয়ার শুরুতে লালাস্থিত এনজাইমগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এইসকল এনজাইম দাতের ফাকে আটকে থাকা খাদ্যকনাও ভাঙ্গতে সাহায্য করে যার মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ হতে দাতকে সুরক্ষার কাজটিও করে থাকে। খাদ্য ভেজাতে, গিলার সুবিধা এবং মুখের অভন্ত্যরের শ্লেষাজিল্লির উপরিস্তর রক্ষার্থে লালা পিচ্ছিলকারক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland) : পিটুইটারি গ্রন্থি বা হাইপোফাইসিস মস্তিষ্কের নিচের অংশে অবস্থিত। এটি মানবদেহের প্রধান হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থি। কারণ একদিকে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন সংখ্যায় যেমন বেশি, অপরদিকে অন্যান্য গ্রন্থির উপর এসব হরমোনের প্রভাবও বেশি। এজন্য পিটুইটারি গ্রন্থিকে গ্রন্থির রাজা বলা হয়। তাছাড়া এটিকে প্রভু গ্রন্থি ও বলা হয় । কারণ এটি অন্যান্য গ্রন্থির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে । দেহের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নালিবিহীন গ্রন্থি হলেও এটি আকারে সবচেয়ে ছোট। এই গ্রন্থি থেকে গোনাডোট্রপিক, সোমাটোট্রপিক, থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (TSH), এডরেনোকর্টিকোট্রপিন ইত্যাদি হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি অন্যান্য গ্রন্থিকে প্রভাবিত করা ছাড়াও মানবদেহের বৃদ্ধির হরমোন নির্গত করে।
থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid gland) : থাইরয়েড গ্রন্থি গলায় ট্রাকিয়ার উপরের অংশে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে প্রধানত থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণ হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন থাইরক্সিন (Thyroxine) সাধারণত মানবদেহে স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েডের আরেকটি হরমোন ক্যালসিটোনিন (calcitonin) ক্যালসিয়াম বিপাকের সাথে জড়িত। প্যারাথরমোন রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ায় আর থাইরোক্যালসিটোনিন রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমায়।
প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি (Parathyroid gland) : একজন মানুষের সাধারণত চারটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থাকে, যার সবগুলোই থাইরয়েড গ্রন্থির পিছনে অবস্থিত। এই গ্রন্থি হতে নিঃসৃত প্যারাথরমোন (Parathormone) মূলত ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland) : থাইমাস গ্রন্থি গ্রীবা অঞ্চলে অবস্থিত। থাইমাস গ্রন্থি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করে। শিশুকালে এই গ্রন্থি বিকশিত থাকে পরে বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে ছোট হয়ে যায়। এই গ্রন্থি থেকে থাইমোসিন (thymosin) হরমোন নিঃসরণ হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষে সাধারণত এই হরমোন থাকে না, থাকলেও খুবই নিম্ন মাত্রায়।
অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি (Adrenal gland) : ভয় পেলে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি অ্যাডরেনাল থেকে অ্যাড্রোলিন হরমোন নিঃসৃত হয়। যার ফলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। অ্যাডরেনাল গ্রন্থি কিডনির উপরে অবস্থিত। অ্যাডরেনাল গ্রন্থি দেহের অত্যাবশ্যকীয় বিপাকীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থি মূলত কঠিন মানসিক ও শারীরিক চাপ থেকে পরিত্রাণে সাহায্য করে। অ্যাডরেনালিন (adrenalin) এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলোর একটি।
আইলেটস অফ ল্যাংগারহ্যানস
(Islets of langerhans) : আইলেটস্ অফ ল্যাংগারহ্যানস অগ্ন্যাশয়ের মাঝে অবস্থিত, এই কোষগুচ্ছ শরীরের শর্করা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এর নালিহীন কোষগুলো ইনসুলিন (insulin)ও গ্লুকাগন (glucagon) নিঃসরণ করে যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন হরমোনের অভাবেই ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র রোগের দেখা দেয় ।
গোনাড বা জনন অঙ্গ গ্রন্থি : এটি মেয়েদের ডিম্বাশয় এবং ছেলেদের শুক্রাশয়ে অবস্থিত। জনন অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের পরিণত বয়সের লক্ষণগুলো বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও প্রাণীর জনন অঙ্গের বৃদ্ধির পাশাপাশি জননচক্র এবং যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জনন অঙ্গ থেকে পরিণত বয়সের পুরুষ- দেহে টেস্টোস্টেরন (testosterone) এবং স্ত্রী-দেহে ইস্ট্রোজেন (estrogens) হরমোন উৎপন্ন হয়।
ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন
ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস হল ইনসুলিন হরমোনের অভাব জনিত রোগ। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি এ রোগের অন্যতম সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য। প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস-এর বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন ও গ্লুকাগন দুটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। ইনসুলিন শর্করার বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এর অভাব হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় যা ঘন ঘন প্রস্রাবের দ্বারা নিষ্ক্রান্ত হয়। এ রোগকে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র বা মুধমেহ বলে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা 200 gm/L-এর হলে তা ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র বা মধুমেহ রোগের অবস্থিতি প্রকাশ করে। ADH (Antidiuretic hormone)/
Vasopressin হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগ হয় ।
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগের লক্ষণ:
·
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ।
·
ঘন ঘন পানির পিপাসা পাওয়া ।
·
ক্ষুধা বেশি লাগা ।
·
শরীরের ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি ।
চিনি জাতীয় খাবারের সাথে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক: চিনি জাতীয় খাবার খেলে এ রোগ হয় - প্রচলিত এ ধারণা সঠিক নয় কিন্তু এ রোগ হয়ে গেলে চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত কারণ এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা সহজ হয়।
ডায়বেটিক রোগীর বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাঃ
·
কিডনী নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
·
চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
·
পায়ে ক্ষত বা ঘায়ের তৈরি হয় ।
·
হার্ট এটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসাঃ
·
নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখা ।
·
শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া ।
·
ঔষধঃ ইনসুলিন, মেটফরমিন ইত্যাদি।
ইনসুলিন : বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ইনসুলিন, সোমাটোস্টাটিন, গ্রোথ হরমোন, থাইরোট্রপিন, থাইমোপোয়েটিন ইত্যাদি হরমোন তৈরি করা হয় । এর মধ্যে ইনসুলিন প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯২২ সালে জার্মানিতে। ইনসুলিন হচ্ছে একটি পলিপেপটাইড এবং এক ধরনের হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত হয় এবং চিনির বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক জীবদেহের রক্তে চিনির মাত্রা ধ্রুবক থাকে। রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়লে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নির্গমন বৃদ্ধি করে দেয়। ইনসুলিন অণুতে ৪৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে।
তথ্য কণিকা
·
ভয় পেলে গায়ের লোম খাড়া হয় কেন: অ্যাড্রেনালিন হরমোনের জন্য।
·
অ্যাড্রেনালিন হরমোন কোথা থেকে নিঃসৃত হয়: অ্যাড্রেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি ।
·
বিপদকালীন হরমোন বলা হয় কাকে: অ্যাড্রেনালিনকে।
·
জীবন রক্ষাকারী হরমোন কোনটি: অ্যালডোস্টেরন।
·
কোন গ্রন্থি শরীরের বৃদ্ধি ও বিপাকীয় কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে: থাইরয়েড গ্রন্থি।
·
শুক্রাশয় হতে কি হরমোন নিঃসৃত হয়: টেসটোস্টেরন।
·
দাড়ি গোঁফ গজায় কোন হরমোনের জন্য: টেসটোস্টেরন।
·
মহিলাদের রজঃ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে কোন হরমোন: ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন।
·
গায়ের বর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে কোন হরমোন: ACTH (Adrenocortical
hormone)।
·
কোন হরমোনের অভাবে শিশু বামন হয়: থাইরক্সিন।
·
জন্ম নিয়ন্ত্রণে কোন হরমোন ব্যবহার করা হয়: OCP (Oral Contraceptive
Pill)
·
চিনির বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন:
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায় : ইনসুলিন
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায় : গ্লুকাগন, গ্রোথ হরমোন, কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিন।
·
গ্লুকাগন কিভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়: লিভারের গ্লাইকোজেনকে ভেঙ্গে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে ।
·
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়াকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে।
·
হাইপারগ্লাইসেমিয়া: রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়াকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।
·
কে মানবদেহে রাসায়নিক দূত হিসেবে কাজ করে: হরমোন।