DAILY SCIENCE (LEC 13)

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks দৈনন্দিন বিজ্ঞান

 

 

রক্ত রক্ত সঞ্চালন | Blood and blood circulation

রক্ত এক ধরনের অস্বচ্ছ, আন্তঃকোষীয় তরল যোজক কলা রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত দেহের সর্বত্র প্রবাহিত হয় এবং কোষে অক্সিজেন খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে। ফলে দেহের সব কোষ সজীব এবং সক্রিয় থাকে। যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত প্রতিনিয়ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ অংশে চলাচল করে, তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। তন্ত্রে প্রবাহিত রক্তের মাধ্যমেই খাদ্য, অক্সিজেন এবং রক্তের বর্জ্য পদার্থ দেহের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। মানবদেহে রক্তপ্রবাহ কেবল হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালিগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কখনো এর বাইরে আসে না। ধরনের সংবহনতন্ত্রকে বন্ধ সংবহনতন্ত্র (Close circulatory system) বলা হয়। সারা দেহে রক্ত একবার সম্পূর্ণ পরিভ্রমণের জন্য মাত্র এক মিনিট বা তার চেয়েও কম সময় লাগে। মানবদেহে রক্তের তাপমাত্রা ৩৬-৩৮° সেলসিয়াস।


Table of Content 

 

·          রক্ত (Blood)

o     রক্তের উপাদান

·          রক্তের কাজ

·          রক্তের গ্রুপ

·          রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি

o     রক্তবাহিকা

 

 

রক্ত (Blood)

রক্ত একটি অস্বচ্ছ, মৃদু ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত তরল পদার্থ। রক্ত হৃৎপিন্ড, শিরা, উপশিরা, ধমনি, শাখা ধমনি এবং কৈশিকনালি পথে আবর্তিত হয়। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে রক্তের রং লাল দেখায়। হাড়ের লাল বা লোহিত অস্থিমজ্জাতে রক্তকণিকার জন্ম হয়। রক্ত সামান্য ক্ষারীয় এবং এর pH মান .৩৫-.৪৫। রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব .০৬। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দেহে রক্তের পরিমাণ - লিটার যা মানুষের মোট ওজনের প্রায় % একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ১২০ দিন বা - মাস পর পর রক্ত দিতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা ৬৫ - ১১০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীর উদাহরণ ব্যাঙ উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীর উদাহরণ মানুষ, গরু, ছাগল ইত্যাদি।

 

শীতনিদ্রা: ব্যাঙ শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। শীতকালে এরা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এজন্য এরা শীতকালে বিভিন্ন উষ্ণ স্থানে আশ্রয় নিয়ে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সময় এরা খাদ্যও গ্রহণ করে না। দেহের সঞ্চিত খাদ্য হতে এদের বিপাক ক্রিয়া চলে। দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে নড়াচড়া না করে একস্থানে অবস্থান করাকে শীতনিদ্রা বলে।

 

রক্তের উপাদান

রক্ত এক ধরনের তরল যোজক কলা। রক্তরস এবং কয়েক ধরনের রক্তকণিকার সমন্বয়ে রক্ত গঠিত। রক্তের ৫৫% হলো রক্তরস যার অধিকাংশই পানি

() রক্তরস (Plasma): রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস বা প্লাজমা বলে। প্লাজমা হলো রক্তের দৃশ্যমান তরল অংশ। অন্যদিকে রক্ত জমাট বাঁধার পর রক্তের হালকা অবশিষ্ট অংশকে সিরাম বলে সাধারণত রক্তের শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ রক্তরস। রক্তরসের প্রধান উপাদান পানি। রক্তরসে ৯০-৯২% পানি এবং -% কঠিন পদার্থ থাকে। আবার কঠিন পদার্থ .-.% জৈব পদার্থ .% অজৈব পদার্থ আর জৈব পদার্থে প্রোটিন (প্লাজমাপ্রোটিন) থাকে গড়ে -% এছাড়া বাকি অংশে কিছু প্রোটিন, জৈবযৌগ সামান্য অজৈব লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। রক্তরসে শর্করা (গ্লুকোজ), লবণ ইউরিক এসিড সবই বিদ্যমান থাকে এর মধ্যে যে-পদার্থগুলো থাকে তা হলো:

·         প্রোটিন, যথা-অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন ফাইব্রিনোজেন

·         গ্লুকোজ

·         ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্বিকণা

·         খনিজ লবণ

·         ভিটামিন

·         হরমোন

·         এন্টিবডি

·         বর্জ্য পদার্থ যেমন: কার্বন ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি।

এছাড়া সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট অ্যামাইনো এসিড থাকে। আমরা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তা পরিপাক হয়ে অন্ত্রের গাত্রে শোষিত হয় এবং রক্তরসে মিশে দেহের সর্বত্র সঞ্চালিত হয়। এভাবে দেহকোষগুলো পুষ্টিকর দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেহের পুষ্টির সাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে। তাছাড়া চিংড়ী, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক প্রভৃতি প্রাণীদের রক্তরসে হিমোসায়ানিন নামক তাম্রঘটিত নীল রঙের পদার্থ থাকে। এর উপস্থিতিতে এদের রক্ত নীলাভ বর্ণের হয়।

·         প্লাজমা প্রোটিন কোথায় তৈরী হয়: যকৃত।

·         প্লাজমা প্রোটিন কোনগুলো: এলবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফিব্রিনোজেন।

·         দেহকোষ রক্ত হতে কি গ্রহণ করে: অক্সিজেন খাদ্যসার (গুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি)

·         দেহকোষ হতে রক্ত কি বর্জন করে: বর্জ্য পদার্থ (CO, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি)

·         রক্ত সংগ্রহের জন্যে পছন্দসই শিরা: Median cubital vein.

·         RBC Matuaration এর জন্য কোন ভিটামিন দরকার: vitamin B12 (Cobalamin), vitamin B9 (folic acid)

রক্তরসের কাজ:

·         . ক্ষুদ্রান্ত্র হতে খাদ্যসার (গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড) রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কলায় পৌঁছে।

·         . কলা হতে উৎপন্ন CO রক্তরসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়।

·         . কলা হতে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড) রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যায়।

·         . রক্তরসের বাই কার্বনেট, ফসফটে বাফার অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

·         . অন্তক্ষরা গ্রন্থি হতে উৎপন্ন হরমোন রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছায়।

 

() রক্তকণিকা (Blood corpuscles) : সাধারণত রক্তের শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ রক্তকণিকা মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকা দেখা যায়, লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Corpuscles), শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Corpuscles) এবং অণুচক্রিকা (Blood Platelets) যদিও এগুলো সব কোষ, তবে রক্তের প্লাজমার মধ্যে ভাসমান কণার সাথে তুলনা করে এদেরকে অনেক দিন আগে রক্তকণিকা নাম দেওয়া হয়েছিল, তখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র এখনকার মতো উন্নত ছিল না। সেই নাম এখনও প্রচলিত।

 

(i) লোহিত রক্তকণিকা বা ইরাইথ্রোসাইট : মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি শ্বাসকার্যে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাল অস্থিমজ্জায় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়। এর গড় আয়ু 120 দিন। মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে অনেকটা দ্বি-অবতল বৃত্তের মতো। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় 50 লক্ষ। এটি শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে প্রায় 500 গুণ বেশি। পুরুষের তুলনায় নারীদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা কম থাকে। তুলনামূলকভাবে শিশুদের দেহে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বেশি থাকে। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়, আবার সমপরিমাণে তৈরিও হয়। লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে।

 

হিমোগ্লোবিন: হিমোগ্লোবিনকে রক্তের রবিনহুড অণু বলা হয় হিমোগ্লোবিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। মানবদেহে হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় থাকলে কেঁচোর রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে রক্তরসে  লোহিত রক্তকণিকায় এর উপস্থিতির কারণে রক্ত লাল দেখায়  রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকলে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা (anemia) দেখা দেয়। বাংলাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী রোগে আক্রান্ত। রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের ক্ষেত্রে ১৩. ১৬. মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীর ক্ষেত্রে ১২. - ১৫. মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার

·         মানুষের রক্তে লোহিত কণিকা প্লীহাতে সঞ্চিত থাকে। এখান থেকে তাৎক্ষনিক প্রয়োজনে লোহিত কণিকা রক্তরসে সরবরাহ হয়।

·         রক্তের লোহিত কণিকার কাজ: রক্তের লোহিত কণিকার কাজ হলো অক্সিজেন পরিবহন করা।

·         হিমোগ্লোবিনের গঠন উপাদান: গ্লোবিন নামক সরল প্রোটিন (৯৬%) এবং লৌহ ঘটিত হিম (%)

·         রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে কোনটি: রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে হেম (Fe) গ্লোবিন নামক প্রোটিন মিলে। অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের তৈরিতে অংশ নেয় হেম বা আয়রন বা লৌহ।

·         হিমোগ্লোবিনের কাজ:
) ফুসফুস হতে অক্সিজেন গ্রহণ করে তা কলায় পরিবহন করা।
) কলা হতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে তা ফুসফুসে পরিবহন করা।
) বাফার হিসাবে কাজ করা।

·         রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়াকে কি বলে: অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। ভিটামিন বি-১২ এবং ফলিক এসিডের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়

·         রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াকে কি বলে: পলিসাইথেমিয়া।

·         পিত্তরঞ্জক বা বিলিরুবিন তৈরী হয়: RBC এর ভাঙনের ফলে

·         হিমোপয়েসিস (Haemopoiesis): রক্ত তৈরীর প্রক্রিয়া।

·         Erythropoiesis: RBC তৈরীর প্রক্রিয়া।

·         Haemolysis: RBC ভাঙার প্রক্রিয়া।

·         সাদা বা বর্ণহীন রক্ত বিশিষ্ট প্রাণীর নাম: তেলাপোকা বা আরশোলা।

·         আরশোলার রক্ত সাদা বা বর্ণহীন কেন: হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থের অনুপস্থিতির জন্য।

·         থেলাসেমিয়া: থেলাসেমিয়া এক ধরণের বংশগতীয় অস্বাভাবিক রোগ যা লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া বা অনুপস্থিতি বোঝায়। রোগের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। রোগের মাত্রা অনুসারে, রোগীকে কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরপর রক্ত নিতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

·         কোন গ্যাস রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা বিনষ্ট করে: কার্বন মনোক্সাইড রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা নষ্ট করে। কার্বন মনোক্সাইডের প্রতি হিমোগ্লোবিনের আসক্তি অক্সিজেন অপেক্ষা বেশি। তাই কার্বন মনোক্সাইড রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হলে হিমোগ্লোবিন আর অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হতে পারে না।

 

(ii) শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট : শ্বেতকণিকার নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ। শ্বেত কণিকার গড় আয়ু -১৫ দিন। হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে এদের শ্বেত রক্তকণিকা, ইংরেজিতে White Blood Cell বা WBC বলে। শ্বেত কণিকার সংখ্যা RBC-এর তুলনায় অনেক কম। এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকারের পরিবর্তন করে। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে। শ্বেত কণিকাগুলো রক্তরসের মধ্য দিয়ে নিজেরাই চলতে পারে। রক্ত জালিকার প্রাচীর ভেদ করে টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। দেহ বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, দ্রুত শ্বেত কণিকার সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে 4-10 হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। অসুস্থ মানবদেহে এর সংখ্যা বেড়ে যায়। স্তন্যপায়ীদের রক্তকোষগুলোর মধ্যে শুধু শ্বেত রক্ত কণিকায় DNA থাকে। লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বেত রক্তকণিকা বেড়ে যায় মানুষের রক্তে শ্বেত কণিকা লোহিত কণিকার অনুপাত : ৭০০। ক্ষতস্থানে শ্বেত রক্তকণিকার মৃত্যুর ফলে যে সাদা দুর্গন্ধময় বস্তুর সৃষ্টি হয় তাকে পুঁজ বলে

 

শ্বেত কণিকার কাজ:

·         নিউট্রোফিল মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস (Phagocytosis) পদ্ধতিতে রোগ জীবাণু ধ্বংস করে।

·         ইওসিনোফিল বেসোফিল হিস্টামিন নিঃসৃত করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

·         বেসোফিল নিঃসৃত হেপারিন রক্তনালীর অভ্যন্তরে রক্তজমাট বাধতে দেয় না।

·         লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরী করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ করে।

প্রকারভেদ: গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুসারে শ্বেত কণিকাকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা () অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন এবং () গ্রানুলোসাইট বা দানাযুক্ত।

 

() অ্যাগ্রানুলোসাইট:  ধরনের শ্বেত কণিকার সাইটোপ্লাজম দানাহীন স্বচ্ছ। অ্যাগ্রানুলোসাইট শ্বেত কণিকা দুরকমের; যথা- লিম্ফোসাইট মনোসাইট। দেহের লিম্ফনোড, টনসিল, প্লিহা ইত্যাদি অংশে এরা তৈরি হয়। লিম্ফোসাইটগুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা। মনোসাইট ছোট, ডিম্বাকার বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট বড় কণিকা। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রোগজীবাণু ধ্বংস করে। এভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে।

 

() গ্রানুলোসাইট: এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত। গ্রানুলোসাইট শ্বেত কণিকাগুলো নিউক্লিয়াসের আকৃতির ভিত্তিতে তিন প্রকার যথা: নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল। নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে। ইওসিনোফিল বেসোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে। বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকার ভিতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।

 

(iii) অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট : ইংরেজিতে এদেরকে প্লেইটলেট (Platelet) বলে। এগুলো গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে। এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গাণু- মাইটোকন্ড্রিয়া, গল্পি বস্তু থাকে; কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না। অনেকের মতে, অণুচক্রিকাগুলো সম্পূর্ণ কোষ নয়; এগুলো অস্থি মজ্জার বৃহদাকার কোষের ছিন্ন অংশ। অণুচক্রিকাগুলোর গড় আয়ু -১০ দিন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। অসুস্থ দেহে এদের সংখ্যা আরও বেশি হয়। অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত তঞ্চন করা বা জমাট বাঁধানোতে (blood clotting) সাহায্য করা। যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সেখানকার অণুচক্রিকাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে অনিয়মিত আকার ধারণ করে এবং থ্রম্বোপ্লাসটিন (Thromboplastin) নামক পদার্থ তৈরি করে। পদার্থগুলো রক্তের প্রোটিন প্রোথ্রমবিনকে থ্রমবিনে পরিণত করে। থ্রমবিন পরবর্তী সময়ে রক্তরসের প্রোটিন- ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালে পরিণত করে রক্তকে জমাট বাধায় কিংবা রক্তের তঞ্চন ঘটায়। ফাইব্রিন একধরনের অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা প্রস্তুত করে। এটি ক্ষত স্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তবে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি আরও জটিল, প্রক্রিয়ায় জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন K ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে। রক্তে উপযুক্ত পরিমাণ অণুচক্রিকা না থাকলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। ফলে অনেক সময় রোগীর প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে।

·         অনুচক্রিকার (Platelet) কাজ: দেহের কোন স্থান কেটে গেলে ক্ষতস্থানে রক্তজমাট বাধতে সহায়তা করে।

·         ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাধা জন্য কোন কোন উপাদান দরকার: রক্তে ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, অনুচক্রিকা, থ্রোম্বোপ্লাস্টিন, ক্যালসিয়াম আয়ন থাকে। যখন কোনো স্থান কেটে যায় রক্ত গড়িয়ে পড়ে তখন ফাইব্রিনোজেন অন্যান্য উপাদান মিলে জালের মত আবরণী সৃষ্টি করে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধে। তবে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য হরমোনের প্রয়োজন নেই।

·         রক্ত জমাট বাঁধতে কতটি ফ্যাক্টর কাজ করে: ১৩ টি।

রক্ত জমাট বাঁধার প্রধান ৪টি ফ্যাক্টর:
ফিব্রিনোজেন
প্রোথ্রম্বিন
টিস্যু থ্রম্বোপ্লাস্টিন
ক্যালসিয়াম

·         রক্ত জমাট বাঁধার স্বাভাবিক সময়:  - মিনিট।

·         দেহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধেনা কেন: রক্তের হেপারিন, অ্যান্টিথ্রোম্বিন -III, a-ম্যাক্রোগ্লোবিউলিন রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়। এজন্য রক্তনালীর অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধেনা।

১৮-৬০ বছর বয়সী যেকোনো শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ সক্ষম ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবে। ওজনের ক্ষেত্রে যাদের ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি তারা রক্ত দিতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি একবার রক্ত দেওয়ার মাস পর পুনরায় রক্ত দিতে পারবেন।

·         লোহিত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল : ১২০ দিন

·         শ্বেত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল : -১৫ দিন

·         অনুচক্রিকার আয়ুষ্কাল : -১০ দিন

·         লোহিত কণিকা ধ্বংস হয় - প্লীহায়

রক্তের কাজ

রক্ত দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের নানাবিধ কাজ করে, যেমন:

·         অক্সিজেন পরিবহনলোহিত রক্তকণিকা অক্সিহিমোগ্লোবিনরূপে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে।

·         কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ: রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষগুলোতে যে কার্বন ডাই- অক্সাইড উৎপন্ন হয়, রক্তরস সোডিয়াম বাই কার্বনেটরুপে তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে এবং নিঃশ্বাস বায়ুর সাথে ফুসফুসের সাহায্যে দেহের বাইরে বের করে দেয়।

·         খাদ্যসার পরিবহন: রক্তরস গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, চর্বিকণা ইত্যাদি কোষে সরবরাহ করে।

·         তাপের সমতা রক্ষা: দেহের মধ্যে অনবরত দহনক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার তাপ সৃষ্টি হয় এবং তা রক্তের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে দেহের সর্বত্র তাপের সমতা রক্ষা হয়।

·         বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন: রক্ত দেহের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বহন করে এবং বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সেসব ইউরিয়া, ইউরিক এসিড কার্বন ডাই-অক্সাইড হিসেবে নিষ্কাশন করে।

·         হরমোন পরিবহন: হরমোন নালিবিহীন গ্রন্থিতে তৈরি এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ বা রস। এই রস সরাসরি রক্তে মিশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হয় এবং বিভিন্ন জৈবিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

·         রোগ প্রতিরোধ: কয়েক প্রকারের শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্ত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

·         রক্ত জমাট বাঁধা: দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দেহের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।

 

রক্তের গ্রুপ

অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে বিভিন্ন ব্যক্তির লোহিত রক্ত কণিকায় A এবং B নামক দুই ধরনের অ্যান্টিজেন (antigens) থাকে এবং রক্তরসে a b দুধরনের অ্যান্টিবডি (antibody) থাকে। এই অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্তকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা যায়। একে ব্লাড গ্রুপ বলে। বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার 1901 সালে মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করে তা A, B, AB এবং O - চারটি গ্রুপের নামকরণ করেন। সাধারণত একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ আজীবন একই রকম থাকে। নিচের সারণিতে রক্তের গ্রুপের এন্টিবডি এবং এন্টিজেনের উপস্থিতি দেখানো হলো:

ব্লাড গ্রুপ

 

রক্তের গ্রুপ

অ্যান্টিজেন ( লোহিত রক্ত কণিকায় )

অ্যান্টিবডি ( রক্তরসে )

A

A

b

B

B

a

AB

A, B

নেই

O

নেই

a , b

আমরা উপরের সারণিতে রক্তে বিভিন্ন অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখেছি। এর ভিত্তিতে আমরা ব্লাড গ্রুপকে এভাবে বর্ণনা করতে পারি। যেমন:

·         গ্রুপ A:  শ্রেণির রক্তে A অ্যান্টিজেন b অ্যান্টিবডি থাকে।

·         গ্রুপ B:  শ্রেণির রক্তে B অ্যান্টিজেন a অ্যান্টিবডি থাকে।

·         গ্রুপ AB:  শ্রেণির রক্তে A B অ্যান্টিজেন থাকে এবং কোনো অ্যান্টিবডি থাকে না

·         গ্রুপ O:  শ্রেণির রক্তে কোনো অ্যান্টিজেন থাকে না কিন্তু a b অ্যান্টিবডি থাকে।

দাতার লোহিত কণিকা বা কোষের কোষঝিল্লিতে উপস্থিত অ্যান্টিজেন যদি প্রহীতার রক্তরসে উপস্থিত এমন অ্যান্টিবডির সংস্পর্শে আসে, যা উক্ত অ্যান্টিজেনের সাথে বিক্রিয়া করতে সক্ষম তাহলে, অ্যান্টিজেন- অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া হয়ে গ্রহীতা বা রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। এজন্য সব গ্রুপের রক্ত সবাইকে দেওয়া যায় না। যেমন: তোমার রক্তের গ্রুপ যদি হয় A (অর্থাৎ লোহিত কণিকার ঝিল্লিতে A অ্যান্টিজেন আছে) এবং তোমার বন্ধুর রক্তের গ্রুপ যদি B হয় (অর্থাৎ রক্তরসে a অ্যান্টিবডি আছে) তাহলে তুমি তোমার বন্ধুকে রক্ত দিতে পারবে না। যদি দাও তাহলে তোমার A অ্যান্টিজেন তোমার বন্ধুর a অ্যান্টিবডির সাথে বিক্রিয়া করে বন্ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই দাতার রক্তে যে অ্যান্টিজেন থাকে তার সাথে মিলিয়ে এমনভাবে গ্রহীতা নির্বাচন করতে হয় যেন তার রক্তে দাতার অ্যান্টিজেনের সাথে সম্পর্কিত অ্যান্টিবডিটি না থাকে। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কোন গ্রুপ কাকে রক্ত দিতে পারবে বা পারবে না, তার একটা ছক বানানো যায়। কিন্তু ছকটি গ্রহণযোগ্য হবে না কেননা, রক্তকে অ্যান্টিজেনের ভিত্তিতে শ্রেণিকরণ করার ক্ষেত্রে ABO পদ্ধতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও রক্তে আরও অসংখ্য অ্যান্টিজেন থাকে, যেগুলো ক্ষেত্রবিশেষে অসুবিধার কারণ হতে পারে। যেমন: রেসাস (Rh) ফ্যাক্টর, যা এক ধরনের অ্যান্টিজেন। কারো রক্তে এই ফ্যাক্টর উপস্থিত থাকলে তাকে বলে পজিটিভ আর না থাকলে বলে নেগেটিভ। এটি যদি না মেলে তাহলেও গ্রহীতা বা রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই ABO গ্রুপের পাশাপাশি রেসাস ফ্যাক্টরও পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখা চাই। অর্থাৎ রেসাস ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নেওয়া হলে রক্তের গ্রুপগুলো হবে A+, A-, B+ B-, AB+, AB-, O+ এবং O- নেগেটিভ গ্রুপের রক্তে যেহেতু রেসাস ফ্যাক্টর অ্যান্টিজেন নেই, তাই এটি পজিটিভ গ্রুপকে দেওয়া যাবে কিন্তু পজিটিভ গ্রুপের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপকে দেওয়া যাবে না। এছাড়া রক্তে আরও অনেকগুলো অ্যান্টিজেনভিত্তিক গৌণ গ্রুপ (minor blood group) থাকায় রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে ABO গ্রুপিং এবং Rh টাইপিং এর পাশাপাশি ক্রস ম্যাচিং (cross matching) নামক একটি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক যাতে গৌণ গ্রুপসমূহের কারণে জটিলতার সৃষ্টি না হয়। তাছাড়া, রক্ত গ্রহীতা যেন জীবাণুঘটিত মারাত্মক রোগের (যেমন: এইডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদি) সংক্রমণের শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করতে দাতার রক্তের স্ক্রিনিং পরীক্ষা (screening test) করাটাও জরুরি।

·         ব্লাড গ্রুপ কে আবিষ্কার করেন: কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার।

·         রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন: উইলিয়াম হার্ভে।

·         রক্তের গ্রুপের প্রকারভেদ: A, B, AB, O ১৯০০ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডির উপস্থিতি-অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে রক্তের গ্রুপ বিন্যাস করেন।

·         কোন গ্রুপকে সর্বজনীন দাতা বলা হয়: O গ্রুপকে

·         গ্রুপকে সর্বজনীন দাতা বলা হয় কেন: O গ্রুপের রক্ত যে কোন ব্যক্তির শরীরে দেওয়া যায়। অর্থাৎ গ্রুপের রক্ত O, A, B, AB যে কোন গ্রুপধারী ব্যক্তি গ্রহণ করতে পারে।

·         সর্বজনীন গ্রহীতা রক্তের গ্রুপ: AB

·         সর্বজনীন গ্রহীতা বলতে কি বুঝায়: AB গ্রুপধারী ব্যক্তি যেকোন গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে।

·         Rh ফ্যাক্টর: লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লিতে রেসাস বানরের লোহিত কণিকার ঝিল্লির মত একটি এন্টিজেন থাকে। অ্যান্টিজেনকে রেসাস ফ্যাক্টর বা Rh ফ্যাক্টর বলে। Rh ফ্যাক্টর বিশিষ্ট রক্তকে Rh +ve ( পজিটিভ ) রক্ত এবং Rh বিহীন রক্তকে Rh -ve ( নেগেটিভ ) রক্ত বলে।

 

রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি

হৃৎপিণ্ড একটি পাম্পের মতো কাজ করে। এটি চারটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটি নিচের দুটির চেয়ে আকারে ছোট। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান এবং বাম অলিন্দ (right & left atrium) বলে এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান এবং বাম নিলয় (right & left ventricle) বলে। অলিন্দ দুটির প্রাচীর তুলনামূলকভাবে পাতলা, আর নিলয়ের প্রাচীর পুরু। অলিন্দ এবং নিলয় যথাক্রমে আন্তঃঅলিন্দ পর্দা এবং আন্তঃনিলয় পর্দা দিয়ে পরস্পর পৃথক থাকে। হৃৎপিন্ডের সংকোচন এবং প্রসারণ দিয়ে রক্ত সঞ্চালনের কাজ সম্পন্ন হয়। হৃৎপিন্ডের অবিরাম সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সংবহন পদ্ধতি অব্যাহত থাকে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচনকে বলা হয় সিস্টোল এবং প্রসারণকে বলা হয় ডায়াস্টোল। হৃৎপিণ্ডের একবার সিস্টোল-ডায়াস্টোলকে একত্রে হৃৎস্পন্দন (heart beat) বলে।

অলিন্দ দুটি প্রসারিত হলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত হৃৎপিন্ডে প্রবেশ করে। ঊর্ধ্ব মহাশিরার ভিতর দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। ফুসফুসীয় বা পালমোনারি শিরার ভিতর দিয়ে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে।

অলিন্দ দুটির সংকোচন হলে নিলয় দুটির পেশি প্রসারিত হয়। তখন ডান অলিন্দ-নিলয়ের ছিদ্রপথের ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। ঠিক এই সময়ে বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয়ের বাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় তখন বাম অলিন্দ থেকে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। এর পরপরই ছিদ্রগুলো কপাটিকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিলয় থেকে রক্ত আর অলিন্দে প্রবেশ করতে পারে না।

যখন নিলয় দুটি সংকুচিত হয়, তখন ডান নিলয় থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত ফুসফুসীয় ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এখানে রক্ত পরিশোধিত হয়। ঠিক একই সময়ে বাম নিলয় থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত মহাধমনির মাধমে সারা দেহে পরিবাহিত হয় এবং উভয় ধমনির অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপটিকাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রক্ত পুনরায় নিলয়ে ফিরে আসতে পারে না। এভাবে হৃৎপিণ্ডে পর্যায়ক্রমিক সংকোচন এবং প্রসারণের ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।

হৃৎপিন্ডের কাজ: রক্ত সংবহন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হৃৎপিণ্ড। এর সাহায্যেই সংবহনতন্ত্রের রক্তপ্রবাহ সচল থাকে। হৃৎপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলো সম্পূর্ণ বিভক্ত থাকায় এখানে অক্সিজেনযুক্ত অক্সিজেনবিহীন রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে না।

রক্তবাহিকা (Blood Vessel)

যেসব নালির ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত বা সঞ্চালিত হয়, তাকে রক্তনালি বা রক্তবাহিকা বলে। এসব নালিপথে হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত বাহিত হয় এবং দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে পুনরায় হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। গঠন, আকৃতি এবং কাজের ভিত্তিতে রক্তবাহিকা বা রক্তনালি তিন ধরনের- ধমনি, শিরা এবং কৈশিক জালিকা।

() ধমনি (Artery) : যেসব রক্তনালির মাধ্যমে সাধারণত অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিন্ড থেকে সারাদেহে বাহিত হয় তাকে ধমনি বলে। ফুসফুসীয় ধমনি এর ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমধর্মী ধমনি হৃৎপিন্ড থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত ফুসফুসে পৌঁছে দেয়। ধমনির প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট, যথা-
(i)
টিউনিকা এক্সটার্না (Tunica externa): এটি তহুময় যোজক কলা দিয়ে তৈরি বাইরের স্তর।
(ii)
টিউনিকা মিডিয়া (Tunica media): এটি বৃত্তাকার অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে তৈরি মাঝের স্তর।
(iii)
টিউনিকা ইন্টারনা (Tunica interna): এটি সরল আবরণী কলা দিয়ে তৈরি ভিতরের স্তর।
সরল আবরণী কলা দিয়ে তৈরি ভিতরের স্তর। ধমনির প্রাচীর পুরু স্থিতিস্থাপক। ধমনিতে কপাটিকা থাকে না, এর নালিপথ সরু। হৃৎপিণ্ডের প্রত্যেক সংকোচনের ফলে দেহে ছোট-বড় সব ধমনিতে রক্ত তরঙ্গের মতো প্রবাহিত হয়। এতে ধমনিপাত্র সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ধমনির এই স্ফীতি এবং সংকোচনকে নাড়িস্পন্দন বলে। ধমনির ভিতর রক্তপ্রবাহ, ধমনিপাত্রের সংকোচন, প্রসারণ এবং স্থিতিস্থাপকতা নাড়িস্পন্দনের প্রধান কারণ। হাতের কব্জির ধমনির উপর হাত রেখে নাড়িস্পন্দন অনুভব করা যায়।

() শিরা (Vein) : যেসব নালি দিয়ে রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে তাদের শিরা বলে। এরা ধমনির মতোই সারা দেহে ছড়িয়ে থাকে। শিরাগুলো সাধারণত দেহের বিভিন্ন স্থানের কৈশিকনালি থেকে আরম্ভ হয় এবং রকম অসংখ্য নালি একত্রে সুক্ষ্ম শিরা, উপশিরা, অতঃপর শিরা এবং মহাশিরায় পরিণত হয়ে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে। শিরার প্রাচীর ধমনির মতো তিন স্তরবিশিষ্ট। শিরার প্রাচীর কম পুরু, কম স্থিতিস্থাপক কম পেশিময়। এদের নালিপথ একটু চওড়া এবং কপাটিকা থাকে। ফুসফুস থেকে হৃৎপিন্ডে আসা শিরাটি ছাড়া অন্য সব শিরা কার্বন ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ রক্ত পরিবহন করে হৃৎপিণ্ডে নিয়ে আসে। ফুসফুসীয় শিরা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুস থেকে হৃৎপিন্ডে পৌঁছে দেয়।

() কৈশিক জালিকা (Capillaries) : পেশিতন্তুতে চুলের মতো অতি সূক্ষ্ম রক্তনালি দেখা যায়। একে কৈশিক জালিকা বা কৈশিক নালি বলে। এগুলো একদিকে ক্ষুদ্রতম ধমনি এবং অন্যদিকে ক্ষুদ্রতম শিরার মধ্যে সংযোগ সাধন করে। ফলে ধমনি শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে ক্রমে ক্রমে সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্মতর কৈশিক নালিতে পরিণত হয় এবং প্রত্যেকটি কোষকে পরিবেষ্টন করে রাখে। এদের প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা। এই পাতলা প্রাচীর ভেদ করে রক্তে দ্রবীভূত সব বস্তু ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষে প্রবেশ করে।

·         ধমনীর কাজ: অক্সিজেন যুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ড হতে দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করা।

·         কোন ধমনী কার্বন-ডাই অক্সাইডযুক্ত পরিবহন করে: পালমোনারী ধমনী।

·         নাড়ীর স্পন্দন প্রবাহিত হয় কিসের মাধ্যমে: ধমনীর মাধ্যমে।

·         পূর্ণ বয়স্ক মানুষের নাড়ীর স্পন্দন কত: ৬০-৯০/মিনিট (গড়ে ৭২/ মিনিট)

·         শিরার কাজ: কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশ হতে হৃদপিণ্ডে পরিবহন করা।

·         কোন শিরা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পরিবহন করে: পালমোনারী শিরা।

·         কোন ধরনের রক্তনালীতে কোষ রক্তের মধ্য খাদ্যসার বর্জ্য পদার্থের আদান প্রদান হয়: কৈশিক জালিকায়।

 

অস্থি, তরুণাস্থি এবং অস্থিসন্ধি | Bones, cartilage and joints

 

অস্থি (Bone)

অস্থি যোজক কলার রূপান্তরিত রূপ। এটি দেহের সবচেয়ে দৃঢ় কলা। অস্থির মাতৃকা বা আন্তঃকোষীয় পদার্থ এক ধরনের জৈব পদার্থ দিয়ে গঠিত। মাতৃকার মধ্যে অস্থিকোষগুলো ছড়ানো থাকে। একদিকে অস্থির পুরাতন অংশ ক্ষয় হতে থাকে এবং অন্যদিকে অস্থির মধ্যে নতুন অংশ গঠন হতে থাকে। এই ভারসাম্য নষ্ট হলে অস্থির বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। বয়স বাড়লে অবশ্য এমনিতেই ভারসাম্যটি হাড় ক্ষয়ের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। অস্থি মূলত ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের বিভিন্ন যৌগ দিয়ে তৈরি। এছাড়া অস্থিতে প্রায় 40-50 ভাগ পানি থাকে। জীবিত অস্থিকোষে 40% জৈব এবং 60% অজৈব যৌগ পদার্থ নিয়ে গঠিত। অস্থি বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন 'ডি' এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। এসব খাবারের অভাবে অস্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সূর্যের আলো ত্বকে অবস্থিত কোলেস্টেরলের এমন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, যা যকৃৎ এবং বৃক্কে আরও কিছু ধারাবাহিক পরিবর্তনের পর ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ করে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা উচিত। যারা সবসময় ঘরে বসে থাকেন বা সারা শরীর আবৃতকারী পোশাক পরেন, তাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 

তরুণাস্থি (Cartilage)

তরুণাস্থি অস্থির মতো শক্ত নয়। এগুলো অপেক্ষাকৃত নরম এবং স্থিতিস্থাপক। এটি যোজক কলার ভিন্নরূপ। এর কোষগুলো একক বা জোড়ায় জোড়ায় খুব ঘনভাবে স্থিতিস্থাপক মাতৃকাতে বিস্তৃত থাকে। তরুণাস্থি কোষগুলো থেকে কক্লিন নামক এক ধরনের শন্ত, ঈষদচ্ছ রাসায়নিক বস্তু বের হয়। মাতৃকা কঞ্জিন দিয়ে পঠিত, এর বর্ণ হালকা নীল। জীবিত অবস্থায় তরুণাস্থি কোষের প্রোটোপ্লাজম খুব স্বচ্ছ এবং নিউক্লিয়াসটি গোলাকার থাকে। কঞ্জিনের মাঝে পহ্বর দেখা যায়। এগুলোকে ক্যাপসুল বা ল্যাকিউনি বলে। এর ভিতর কন্ড্রোব্লাস্ট এবং কন্ড্রোসাইট থাকে। সব তরুণাস্থি একটি তক্ষুময় যোজক কলা নির্মিত আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে, একে পেরিকন্ড্রিয়াম বলে। এই আবরণটি দেখতে চকচকে সাদা, তাই আমরা সাধারণত তরুণাস্থিকে সাদা, নীলাভ এবং চকচকে দেখতে পাই। আমাদের দেহে করেক রকম তরুণাস্থি আছে (যেমন কানের পিনার তরুণাস্থি) তরুণাস্থি বিভিন্ন অস্থির সংযোগস্থলে, কিংবা অস্থির কিছু অংশে উপস্থিত থাকে।

তরুণাস্থির প্রকারভেদ

[] নমনীয় স্থায়িত্ব অনুসারে তরুণাস্থিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

অস্থায়ী তরুণাস্থি: যে সকল তরুণাস্থি ধীরে ধীরে অস্থিতে পরিণত হয় সে সকল তরুণাস্থিকে অস্থায়ী তরুণাস্থি বলে। উদাহরণ: বাচ্চা মুরগির বুকের স্টারনামের অগ্রপ্রান্তের তরুণাস্থি।

স্থায়ী তরুণাস্থি: যে সকল তরুণাস্থি কখনও অস্থিতে পরিণত হয় না সে সকল তরুণাস্থিকে স্থায়ী তরুণাস্থি বলে। উদাহরণ: স্তন্যপায়ীদের নাকের কানের পিনার তরুণাস্থি; হিউমেরাস, ফিমার ইত্যাদি অস্থির দুই প্রান্তে অবস্থিত তরুণাস্থি।

[] মাতৃকার গঠনের ওপর ভিত্তি করে নিচে বর্ণিত চার ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়। যথা-

. হায়ালিন তরুনাস্থি: এর মাতৃকা ঈষৎ, নীলাভ, নমনীয় এবং তন্ত্রবিহীন। উদাহরণ: স্তন্যপায়ীর নাক, শ্বাসনালী, স্বরযন্ত্রের তরুণাস্থি।

. স্থিতিস্থাপক তরুণাস্থি: এর মাতৃকা অস্বচ্ছ হালকা হলুদ বর্ণের। মাতৃকায় স্থিতিস্থাপক পীততন্তু ছড়ানো থাকে। উদাহরণ: বহিঃকর্ণ বা পিনা, আলজিহ্বার তরুণাস্থি।

. শ্বেত-তন্তুময় তরুণাস্থি: এর মাতৃকায় প্রচুর পরিমাণ শ্বেততন্ত্র থাকে। উদাহরণ: দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী তরুণাস্থি।

. চুনময় তরুণাস্থি:  ক্ষেত্রে মাতৃকায় প্রচুর ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমা থাকে। উদাহরণ: হিউমেরাস ফিমারের মস্তকের তরুণাস্থি।

 

অস্থিসন্ধি (Bonejoint বা Joint)

অস্থিসন্ধি (Bonejoint বা Joint) : দুই বা ততোধিক অস্থির সংযোগস্থলকে অস্থিসন্ধি বলে। প্রতিটি অস্থিসন্ধির অস্থিগুলো একরকম স্থিতিস্থাপক রজ্জুর মতো বন্ধনী দিয়ে দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে, ফলে অস্থিগুলো সহজে সন্ধিস্থল থেকে বিচ্যুত হতে পারে না। সন্ধিস্থল বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সাহায্য করে।আমাদের শরীরে সব অস্থিসন্ধি এক রকম নয়। এদের কোনোটি একেবারে অনড়, যেমন আন্তঃকশেরুকীয় অস্থিসন্ধি, কোনোটি আবার সহজে সঞ্চালন করা যায়, যেমন হাত এবং পায়ের অস্থিসন্ধি।

সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি (Synovial Joint): একটি অস্থিসন্ধিতে দুটি মাত্র অস্থির বহির্ভাগে এসে মিলিত হয়ে একটি সরল সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি গঠন করে। আর যখন দুয়ের অধিক অস্থি মিলিত হয়, তখন একে জটিল সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি বলে।

সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধির অংশগুলো হলো: তরুণাস্থিতে আবৃত অস্থিপ্রান্ত, সাইনোভিয়াল রস (Synovial fluid) এবং অস্থিসন্ধিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখার জন্য অস্থিবন্ধনী বা লিগামেন্ট বেষ্টিত একটি মজবুত আবরণী বা ক্যাপসুল। অস্থিসন্ধিতে সাইনোভিয়াল রস এবং তরুণাস্থি থাকাতে অস্থিতে অস্থিতে ঘর্ষণ এবং তজ্জনিত ক্ষয় হ্রাস পায় অস্থিসন্ধি নড়াচড়া করাতে কম শক্তি ব্যয় হয়। অস্থিসন্ধি কয়েক ধরনের। যেমন:

(a) নিশ্চল অস্থিসন্ধি (Fixed Joint): নিশ্চল অস্থিসন্ধিগুলো অনড়, অর্থাৎ এগুলো নাড়ানো যায় না, যেমন করোটিকা অস্থিসন্ধি।

(b) ঈষৎ সচল অস্থিসন্ধি (Slightly movable Joint): এসব অস্থিসন্ধি একে অন্যের সাথে সংযুক্ত থাকলেও সামান্য নাড়াচাড়া করতে পারে, ফলে আমরা দেহকে সামনে, পিছনে এবং পাশে বাঁকাতে পারি। যেমন মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধি।

(c) পূর্ণ সচল অন্থিসন্ধি (Freely movable Joint):  সকল অস্থিসন্ধি সহজে নড়াচড়া করানো যায়। জাতীয় অস্থিসন্ধির মধ্যে বল কোটরসন্ধি, কব্জাসন্ধি প্রধান। সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধিই কেবল পূর্ণ সচল হতে পারে।

(i) বল কোটরসন্ধি (Ball & Socket Joint): বল কোটরসন্ধিতে সন্ধিস্থলে একটি অস্থির মাথার মতো গোল অংশ অন্য অস্থির কোটরে এমনভাবে স্থাপিত থাকে যেন অস্থিটি বাঁকানো, পাশে চালনা করা কিংবা সকল দিকে নাড়ানো সম্ভবপর হয়। এটি এক ধরনের সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি। উদাহরণ: কাঁধ এবং উরুসন্ধি

(ii) কব্জা সন্ধি (Hinge Joint): কব্জা যেমন দরজার পাল্লাকে কাঠামোর সাথে আটকে রাখে, সেরূপ কব্জার মতো সন্ধিকে কব্জা সন্ধি বলে। যেমন: হাতের কনুই, জানু এবং আঙুলগুলিতে ধরনের সন্দ্বি দেখা যায়। এসব সন্ধি কেবল এক দি

 

 

 

 

অনুশীলন অধ্যায়

 

. কোনটি রক্তের কাজ নয়[১৫তম বিসিএস/ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষা-২০২১ ]

·         হরমোন বিতরণ করা

·         ক্ষুদ্রান্ত্র হতে কলাতে খাদ্যের সারবস্তু বহন করা

·         জারক রস বিতরণ করা

·         কলা হতে ফুসফুসে বর্জ্য পদার্থ বহন করা

. মানবদেহে রক্তে সোডিয়াম আয়নের নরমাল Value কত ? [ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষা-২০২১ ]

·         120-130mmol/L

·         135-155 mmol/L

·         170-180 mmol/L

·         130-145 mmol/L

. স্যালাইন পুশ করার জন্য প্রয়োজন- [সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষা-২০২১ ]

·         ল্যাটারাল কিউটেনিয়াস ভেইন

·          মিডিয়াল কিউটেনিয়াস ভেইন

·         মিডিয়াল কিউবিটাল ভেইন

·          সবগুলো

. নিচের কোনটি বিভিন্ন Organ থেকে রক্ত সগ্রহ করে ? [নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স ২০১৮ ]

·          Veins

·          Arteries

·          Nerves

·          Lungs

. রক্তে রক্ত কণিকার পরিমাণ কত ? [ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন ডাক অধিদপ্তরের বিল্ডিং ওভারশিয়ার ২০১৮ ]

·         ৪৫%

·         ৫০%

·         ৫৫%

·         ৬০%

. রক্ত সংগ্রহ করা হয় সাধারণত কোন শিরা থেকে ? [ স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নার্সিং মিডওয়াইফ অধিদপ্তরের মিডওয়াইফ ২০১৭ ]

·          সেফালিক

·          ্যাসিলিক

·          ফিমোরাল

·         মিডিয়ান কিউবিটাল

. Mismatched Blood Trasfusion-এর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা কি নিতে হবে ? [ স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র স্টাফ নার্স (বার্তিলকৃত) ২০১৭]

·         Antibiotic অক্সিজেন শুরু করা

·         Blood দেয়া বন্ধ করে Steroid দেয়া

·          I/V স্যালাইন জ্বরের ওষুধ দেয়া

·         I/V Lasix স্যালাইন Oxygen দেয়া

. ABG Analysis করার Blood সংগ্রহ কোথা থেকে করা হয় ? [স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র স্টাফ নার্স (বার্তিলকৃত) ২০১৭ ]

·          Cephalic Vein

·         Femoral Vein

·          Artery

·          Capillary

. রক্তে Sodium এর স্বাভাবিক মাত্রা কত ? [ স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র স্টাফ নার্স (বাতিলকৃত) ২০১৭ ]

·          ১১৫-১৩৫

·         ১৩৫-১৪৫

·          ১৫০-১৭০

·         ১৭০-১৯০

১০. রক্ত সংগ্রহের জন্যে পছন্দসই শিরা— [স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সেবা পরিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স ২০১৬ ]

·         Cephalic vein

·         Carotid vein

·         Median cubital vein

·         Axillary vei