উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান | Plant nutrients
উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো তাদের বেঁচে থাকতে এবং সুষমভাবে বেড়ে ওঠতে সহায়তা করে । প্রধানত, উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হলো অ্যামিনো অ্যাসিড, কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার, বরিয়াম, ক্লোরিন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কোবাল্ট, মোলিবডেনাম এবং সিলিকন। প্রত্যেক পুষ্টি উপাদানের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার উদ্ভিদের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালসিয়াম- পাতা এবং স্নায়ুজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ফসফরাস বীজপোষক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, প্রাইমারি পুষ্টি উপাদান যেমন নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন । সাধারণত, কোন একটি পুষ্টি উপাদানের অভাবে একটি উদ্ভিদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় । এই অভাব সমাধান করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যেমন উদ্ভিদের জন্য সামান্য পুষ্টি সাপেক্ষে সার প্রয়োগ এবং ফলনের উন্নতি করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার। পুষ্টি উপাদান প্রাপ্তির উপায় বিভিন্ন হতে পারে, যেমন মাটি, জল, বায়ু , পর্যাপ্ত আলো, সার ইত্যাদি । সংক্ষেপে, উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান খুবই প্রয়োজনীয় যা তাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ১৬টি। উদ্ভিদের প্রয়োজন অনুযায়ী এদেরকে আবার দুইভাগে ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ ক) ম্যাক্রোমৌল খ) মাইক্রোমৌল
মুখ্য উপাদান বা ম্যাক্রোমৌল : যে সমস্ত উপাদান গাছের জন্য অধিক প্রয়োজন হয় সেগুলোকে মুখ্য উপাদান বা ম্যাক্রোমৌল বলে। উদ্ভিদের মুখ্য উপাদান দশটি। যথা- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার বা গন্ধক এবং লৌহ। এর মধ্যে কার্বন ও অক্সিজেন উদ্ভিদ বায়ু হতে গ্রহণ করে এবং হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পানি হতে গ্রহণ করে । অবশিষ্ট সবগুলো উদ্ভিদ মাটি থেকে গ্রহণ করে । কচুশাকে লৌহ রয়েছে। ক্লোরোফিল অণুর উপাদান ম্যাগনেশিয়াম । লিগিউমেনাস গোত্রের উদ্ভিদের মূলে নডিউল সৃষ্টিতে সাহায্য করে সালফার। নাইট্রোজেন উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য দ্বায়ী। যেহেতু ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেন থাকে তাই ইউরিয়া সার ও উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য দ্বায়ী।
গৌণ উপাদান বা মাইক্রোমৌল : যে সমস্ত খাদ্যোপাদান উদ্ভিদের জন্য খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয় সেগুলোকে গৌণ উপাদান বা মাইক্রোমৌল বলে। উদ্ভিদের গৌণ উপাদান ছয়টি। যথা- ম্যাংগানিজ, মলিবডেনাম, তামা বা কপার , দস্তা, বোরন এবং ক্লোরিন । এ সবগুলো উপাদান উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের সাহায্যে গ্রহণ করে ।
এ ছাড়াও কিছু পুষ্টিদায়ক পদার্থ সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় যেমন- নিকেল, কোবাল্ট, সোডিয়াম, সিলিকন, সেলেনিয়াম , ভেনাডিয়াম ইত্যাদি । তবে এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে সব পুষ্টি উপাদানগুলিই সব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়, কয়েকটির ক্ষেত্রে অপরিহার্য। সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়, এমন উপাদানগুলির ক্ষেত্রে উপকারী এবং অপরিহার্যের মধ্যে তফাৎ করাটা কঠিন। যেমন, কোবাল্ট কলাই শস্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ স্থির রাখতে সাহায্য করে। দেখা গেছে, উদ্ভিদের তাপ ও খরা পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায় কোষের দেওয়ালে জমে থাকা সিলিকন। পাশাপাশি সিলিকন কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকেও উদ্ভিদকে রক্ষা করে। সিলিকন একটি উপকারী পদার্থ হিসেবে অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, ফসফরাস ও অ্যালুমিনিয়ামের বিষক্রিয়া রোধ করে। দস্তার অভাবও পূরণ করে। উদ্ভিদের পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়টিকে যদি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা যায়, তা হলে একে কখনওই অপরিহার্য পুষ্টিদায়ক পদার্থ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না। এর মধ্যে যাবতীয় উপকারী উপাদানগুলিকেও রাখতে হবে, কারণ সেগুলোকে বাদ দিয়ে উদ্ভিদের সুষম বেড়ে ওঠা সম্ভব হয় না।
পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত লক্ষণসমূহ
গাছ বা ফসলের খাদ্যোপাদানের অভাবে ইহার গঠন, আকৃতি ও পাতায় নানারকম লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হল-
(ক) নাইট্রোজেনের অভাবে-
·
ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে এবং প্রথমে গাছের পাতা হালকা সবুজ রং ধারণ করে এবং পরে তা হলুদ রঙে পরিণত হয়। একে ক্লোরোসিস বলে।
·
অনেক গাছের পাতা ঝরে যায়, পার্শ্বকুড়ি শুকিয়ে যায় এবং ফল যথেষ্ট পরিমাণে কম ধরে।
·
কোষের বৃদ্ধি হয় না, বিভাজন কমে যায়, ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ফলে ইহা খর্বাকৃতির হয়।
(খ) ফসফরাসের অভাবে-
·
চারাগাছ গাঢ় সবুজ ও ফ্যাকাশে গোলাপী / বেগুনী রং ধারণ করে, পরে তা হলদে রঙে রূপান্তরিত হয়।
·
মূলের বৃদ্ধি কমে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
·
ফসল পাকতে ও ফলের বীজে পরিণত হতে বিলম্ব ঘটে।
·
পাতা, ফুল ও ফল অপরিণত অবস্থায় ঝরে পড়ে; পাতা ও ফলে বাদামি দাগ পড়ে ।
(গ) পটাশিয়ামের অভাবে-
·
প্রায় গাছেই পোড়ানো ঝাঁঝাল পাতা দেখা যায়।
·
ক্রমান্বয়ে পাতার শীর্ষ ও কিনারায় হলুদ দাগ দেখা দেয় এবং পরিশেষে শুকিয়ে কোঁকড়াইয়া মৃত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
(ঘ) ক্যালসিয়ামের অভাবে-
·
পাতার শীর্ষভাগ বিকৃতভাবে গঠিত হয় এবং পরিশেষে তাতে পচন দেখা যায়।
·
পাতার কিনারা ও দুই শিরার মাঝখানে হলুদ ও বাদামী রঙের সৃষ্টি হয়।
(ঙ) ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে-
·
বয়স্ক পাতা প্রথমে হলুদ হয়। পাতার দুটি শিরার মধ্যবর্তী অঞ্চল হলুদ হয়। পাতায় মৃত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
·
জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে পাতা ঝরে যায়।
(চ) লৌহের অভাবে-
·
প্রথমে কচি পাতার রঙ হালকা হয়ে যায় তবে সরু শিরার মধ্যবর্তী স্থানেই প্রথমে হালকা হয়। কখনও কখনও সম্পূর্ণ পাতা বিবর্ণ হয়।
·
সয়াবিন, কমলালেবু এবং সবজি জাতীয় গাছের পাতায় পচন ধরে।
·
খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় পাতা একেবারে সাদা হয়ে যায়।
(ছ) সালফারের অভাবে-
·
গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং কাণ্ড কৃশ ও খর্বাকৃতি হয়ে যায়।
·
কোন কোন গাছে নিচের পাতা গাঢ় লাল রং ধারণ করে।
(জ) ম্যাঙ্গানিজের অভাবে-
·
গাছ বামনাকৃতি প্রাপ্ত হয়।
·
গাছে ফুল ও ফল ধরতে বিলম্ব ঘটে।
(ঝ) মলিবডেনামের অভাবে-
·
ফুল কপিতে আশ্চর্যজনক বিকৃতি ঘটে। এই বিকৃতি ঘটিত রোগকে 'হুইপ টেইল' বলে।
·
গাছ লম্বা হয়ে বিদঘুটে দেখায়।
(ঞ) বোরনের অভাবে -
·
মূলের বৃদ্ধি কমে যায়, শাখার শীর্ষ মরে যায়, ফুলের কুড়ি জন্ম ব্যাহত হয়।
(ট) জিংকের অভাবে -
·
উদ্ভিদের পাতার আকার হ্রাস পায়।
মটর গাছে গুটি হয় কেন? মটর একটি ডালজাতীয় গাছ। আর এ ডাল জাতীয় গাছ প্রোটিন তৈরি করে, যে প্রোটিনে নাইট্রোজেন থাকে। মটর জাতীয় গাছের নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয় যা সরাসরি বায়ু থেকে গ্রহণ করতে পারে না। মটর জাতীয় গাছের শিকড়ে গুটি তৈরি হয়। এ গুটিতে বাস করে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যার মধ্যে অন্যতম রাইজোবিয়াম। এ রাইজোবিয়াম বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে অক্সিজেনের সাহায্যে নাইট্রোজেন যৌগ গঠন করে যা উদ্ভিদ গ্রহণ করে থাকে।
কোন ধরনের উদ্ভিদ বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে? শিম জাতীয় উদ্ভিদ বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে। শিম, মটরশুটি, ছোলা ইত্যাদি উদ্ভিদের মূলে সিমবায়েটিক জীবাণু 'রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া' গুটি বা নুডুল তৈরি করে সরাসরি বায়ুস্থ নাইট্রোজেন গ্রহণ করে।
পরাগায়ন | Pollination
পরাগায়নকে পরাগসংযোগও বলা হয়। পরাগায়ন ফল ও বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত। একটি ফুলের পুংস্তবকের পরাগধানীতে তোমার আঙুলের ডগা ঘষে দেখ। তোমার হাতে নিশ্চয়ই হলুদ বা কমলা রঙের গুঁড়ো লেগেছে। এই গুঁড়ো বস্তুই পরাগরেণু।
ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে। পরাগায়ন দু'প্রকার, যথা- স্ব-পরাগায়ন ও পর-পরাগায়ন।
স্ব-পরাগায়ন: একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে তখন তাকে ব-পরাগায়ন বলে। শিম, টমেটো, কানশিরা , সরিষা, কুমড়া, ধুতুরা ইত্যাদি উদ্ভিদে ব-পরাগায়ন ঘটে।
পর-পরাগায়ন: একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে তখন তাকে পর-পরাগায়ন বলে। ধান, গম, ভূট্টা, সরিষা, শিমুল, পেঁপে ইত্যাদি গাছের ফুলে পর-পরাগায়ন হতে দেখা যায়।
পরাগায়নের মাধ্যম: পরাগরেণু স্থানান্তরের কাজটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো না কোনো মাধ্যমের দ্বারা হয়ে থাকে। যে বাহক পরাগরেণু বহন করে গর্ভমুণ্ড পর্যন্ত নিয়ে যায় তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে।
বায়ু, পানি, কীট-পতঙ্গ, পাখি, বাদুড়, শামুক এমনকি মানুষ এ ধরনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। মধু খেতে অথবা সুন্দর রঙের আকর্ষণে পতঙ্গ বা পাখি ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। এ সময়ে পরাগরেণু বাহকের গায়ে লেগে যায়। এই বাহকটি যখন একই প্রজাতির অন্য ফুলে গিয়ে বসে তখন পরাগরেণু ঐ ফুলের গর্ভমুণ্ডে লেগে যায়। এভাবে তাদের অজান্তে পরাগায়নের কাজটি হয়ে যায়।
পরাগায়নের মাধ্যমগুলোর সাহায্য পেতে ফুলের গঠনে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একে অভিযোজন বলা হয়। বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য অভিযোজনগুলোও আলাদা। অভিযোজনগুলো নিম্নরূপ:
পতঙ্গপরাগী ফুলের অভিযোজন : ফুল বড়, রঙিন, মধুগ্রন্থিযুক্ত। পরাগরেণু ও গর্ভমুন্ড আঠালো এবং সুগন্ধযুক্ত, যেমন- সরিষা, তুলশী, অর্কিড, গোলাপ, কুমড়া , জবা , ইত্যাদি।
বায়ুপরাগী ফুলের অভিযোজন : ফুল বর্ণ, গন্ধ ও মধুগ্রন্থিহীন। পরাগরেণু হালকা, অসংখ্য ও আকারে ক্ষুদ্র। এদের গর্ভমুন্ড আঠালো, শাখান্বিত, কখনো পালকের ন্যায়, যেমন- ধান।
পানিপরাগী ফুলের অভিযোজন: এরা আকারে ক্ষুদ্র, হালকা এবং অসংখ্য। এরা সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। এসব ভূলে সুগন্ধ নেই। স্ত্রীফুলের বৃত্ত লম্বা কিন্তু পুং ফুলের বৃত্ত ছোট। পরিণত পুং ফুল বৃত্ত থেকে খুলে পানিতে ভাসতে থাকে, যেমন- পাতাশ্যাওলা , ঝাউঝাঁঝি ইত্যাদি ।
প্রাণিপরাগী ফুলের অভিযোজন: এসব ফুল মোটামুটি বড় ধরনের হয়। তবে ছোট হলে ফুলগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে সজ্জিত থাকে। এদের রং আকর্ষণীয় হয়। এসব ফুলে গন্ধ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। যেমন- মাদার , কদম, শিমুল, কচু ইত্যাদি ।
ডুমুরের ফুলের পরপরাগায়নের মাধ্যম কি: কাল পিঁপড়া। বাদুড়ের দ্বারা পরাগায়ন ঘটে- কদম ফুলের।
দিনে ও রাতে ফোটা পতঙ্গপরাগী ফুলের মধ্যে পার্থক্য:
পতঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্য দিনে ফোটা পতঙ্গ পরাগী ফুল উজ্জ্বল বর্ণের এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুগন্ধযুক্ত হয়, যেমনঃ গোলাপ। কিন্তু রাতে ফোটা পতঙ্গপরাগী ফুল তীব্র গন্ধযুক্ত হলেও এদের বর্ণ হয় সাদা কারণ অন্ধকারে আলোর স্বল্পতার জন্য কীটপতঙ্গ রঙিন ফুলকে কালো দেখে।
বায়ু পরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য:
·
সাধারণ. অনাকর্ষণীয় ও অনুজ্জ্বল বর্ণের হয়।
·
মিষ্টিগন্ধ ও মধু থাকেনা।
·
পরাগরেণু খুব হালকা ও সংখ্যায় অনেক বেশি হয়।
·
গর্ভমুণ্ড পক্ষল, বৃহৎ ও আঠালো হয় যাতে বাতাসে ভেসে আসা পরাগরেণু সহজেই আটকে যায়।
·
বায়ু পরাগী ফুলের উদাহরণ: ধান, গম, ভূট্টা, ইক্ষু, তাল ইত্যাদি।
·
কোন কোন প্রাণী পরাগায়নে সহায়তা করে: অনেক প্রাণী পরাগায়নে সহায়তা করে যেমন. পাখি, বাদুড়, শামুক ইত্যাদি।
নিষেকের পর -
* ডিম্বাণু পরিণত হয় ভ্রুণে
* গর্ভাশয় পরিণত হয় ফলে
* ডিম্বক পরিণত হয় বীজে
উদ্ভিদের প্রজনন হলো এমন একটি পদ্ধতি যা উদ্ভিদগুলি ব্যবহার করে নতুন উদ্ভিদের উৎপাদন করে অথবা উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি করে । উদ্ভিদের গঠন এবং প্রকারভেদ জানতে পারলে প্রজননের এই অংশটি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে আসে। উদ্ভিদগুলির প্রজনন বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। তবে প্রধানত দুই ভাবে ভাগ করা যেতে পারে যথাঃ যৌন প্রজনন ও অযৌন প্রজনন । তবে আজকের টিউটরিয়ালে অযেীন প্রজনন নিয়েই বিশদ আলোচনা হবে । কারণ অযেীন প্রজননের সাথে অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে যেমন-উদ্ভিদের গঠনগত বৈশিষ্ট্য , প্রকারভেদ ইতাদি । একটি উদ্ভিদের বীজ থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। । এছাড়া উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ থেকেও নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। এ সবই উদ্ভিদের প্রজনন বা বংশ বৃদ্ধির উদাহরণ। উদ্ভিদগুলির প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং গুচ্ছমাত্রিক প্রক্রিয়া। এটি উদ্ভিদের প্রায় সমস্ত জীবনব্যাপী ঘটে। এটি পৃথিবীর জীবনের পরিস্থিতি ও বায়োডাইভার্সিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বিভিন্ন ধরণের প্রজননের পদ্ধতিতে এই উদ্ভিদগুলি নতুন জীবনের সৃষ্টি ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পৃথিবীর প্রতিটি জীব মৃত্যুর পূর্বে তার বংশধর রেখে যেতে চায়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যে জটিল প্রক্রিয়ায় জীব তার প্রতিরূপ বা বংশধর সৃষ্টি করে তাকে প্রজনন বা জনন বলে। প্রজনন বা জনন প্রধানত দুই প্রকার, যথা-অযৌন ও যৌন জনন।
অযৌন জনন : যে প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্নধর্মী জনন কোষের মিলন ছাড়াই জনন সম্পন্ন হয় তাই অযৌন জনন। নিম্নশ্রেণির জীবে অযৌন জননের প্রবণতা বেশি। অযৌন জনন প্রধানত দুই ধরনের, যথা-স্পোর উৎপাদন ও অঙ্গজ জনন।
(ক) স্পোর উৎপাদন: প্রধানত নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে স্পোর বা অণুবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ রক্ষা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। উদ্ভিদের দেহকোষ পরিবর্তিত হয়ে অণুবীজবাহী একটি অঙ্গের সৃষ্টি করে। এদের অণুবীজথলি বলে। একটি অণুবীজথলিতে সাধারণত অসংখ্য অণুবীজ থাকে। তবে কখনো কখনো একটি থলিতে একটি অণুবীজ থাকতে পারে। অণুবীজ থলির বাইরেও উৎপন্ন হয়। এদের বহিঃঅণুবীজ বলে। বহিঃঅণুবীজের কোনো কোনোটিকে কনিডিয়াম বলে। Mucor
এ থলির মধ্যে অসংখ্য অণুবীজ উৎপন্ন হয়। Penicillium কনিডিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে।
(খ) অঙ্গজ জনন: কোনো ধরনের অযৌন রেণু বা জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খণ্ডিত হয়ে বা কোনো অঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে জনন ঘটে তাকে অঙ্গজ জনন বলে। এ ধরনের জনন প্রাকৃতিক নিয়মে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটলে তাকে প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন বলা হয়। যখন কৃত্রিমভাবে অঙ্গজ জনন ঘটানো হয় তখন তাকে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন বলে।
প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন: বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্বাভাবিক নিয়মেই এ ধরনের অঙ্গজ জনন দেখা যায়, যেমন-
১. দেহের খণ্ডায়ন: সাধারণত নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে এ ধরনের জনন দেখা যায়।
Spirogyra, Mucor ইত্যাদি উদ্ভিদের দেহ কোনো কারণে খন্ডিত হলে প্রতিটি খন্ড একটি স্বাধীন উদ্ভিদ হিসেবে জীবনযাপন শুরু করে।
২. মূলের মাধ্যমে : কোনো কোনো উদ্ভিদের মূল থেকে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হতে দেখা যায়, যেমন-পটল, সেগুন ইত্যাদি। কোনো কোনো মূল খাদ্য সঞ্চয়ের মাধ্যমে বেশ মোটা ও রসাল হয়। এর গায়ে কুঁড়ি সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে নতুন উদ্ভিদ গজায়, যেমন- মিষ্টি আলু।
৩. রূপান্তরিত কান্ডের মাধ্যমে : উদ্ভিদের কোন অংশকে কান্ড বলে তা নিশ্চয়ই তোমরা জানো তবে কিছু কাণ্ডের অবস্থান ও বাইরের চেহারা দেখে তাকে কান্ড বলে মনেই হয় না। এরা পরিবর্তিত কান্ড। বিভিন্ন প্রতিকূলতায়, খাদ্য সঞ্চয়ে অথবা অঙ্গজ জননের প্রয়োজনে এরা পরিবর্তিত হয়। এদের বিভিন্ন রূপ নিম্নে দেওয়া হলো:
(ক) টিউবার : কিছু কিছু উদ্ভিদে মাটির নিচের শাখার অগ্রভাগে খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত হয়ে কন্দের সৃষ্টি করে, এদের টিউবার বলে। ভবিষ্যতে এ কন্দ জননের কাজ করে। কন্দের গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত থাকে। এগুলো দেখতে চোখের মতো তাই এদের চোখ বলা হয়। একটি চোখের মধ্যে একটি কুঁড়ি থাকে। আঁশের মতো অসবুজ পাতার (শঙ্কপত্র) কক্ষে এসব কুঁড়ি জন্মে। প্রতিটি চোখ থেকে একটি স্বাধীন উদ্ভিদের জন্য হয়. যেমন- আলু ।
(খ) রাইজোম: এরা মাটির নিচে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। কান্ডের মতো এদের পর্ব, পর্বসন্ধি স্পষ্ট। পর্বসন্ধিতে শঙ্কপত্রের কক্ষে কাক্ষিক মুকুল জন্মে। এরাও খাদ্য সঞ্চয় করে মোটা ও রসাল হয়। অনুকূল পরিবেশে এসব মুকুল বৃদ্ধি পেয়ে আলাদা আলাদা উদ্ভিদ উৎপন্ন করে, যেমন- আদা।
(গ) কন্দ (বাল্ব): এরা অতি ক্ষুদ্র কান্ড। এদের কাক্ষিক ও শীর্ষ মুকুল নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়, যেমন-পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি।
(ঘ) স্টোলন: তোমরা কচুর লতি দেখে থাকবে। এগুলো কচুর শাখা কান্ড। এগুলো জননের জন্যই পরিবর্তিত হয়। স্টোলনের অগ্রভাগে মুকুল উৎপন্ন হয়। এভাবে স্টোলন উদ্ভিদের জননে সাহায্য করে, যেমন- কচু, পুদিনা।
(ঙ) অফসেট: কচুরিপানা, টোপাপানা ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদে শাখা কান্ড বৃদ্ধি পেয়ে একটি নতুন উদ্ভিদ উৎপন্ন করে। কিছুদিন পর মাতৃউদ্ভিদ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন উদ্ভিদে পরিণত হয়, যেমন- কচুরিপানা।
(চ) বুলবিল: কোনো কোনো উদ্ভিদের কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি যথাযথভাবে না হয়ে একটি পিন্ডের মতো আকার ধারণ করে। এদের বুলবিল বলে। এসব বুলবিল কিছুদিন পর গাছ থেকে খসে মাটিতে পড়ে এবং নতুন গাছের জন্ম দেয়, যেমন- চুপড়ি আলু।
৪. পাতার মাধ্যমে: কখনো কখনো পাতার কিনারায় মুকুল সৃষ্টি হয়ে নতুন উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। যেমন- পাথরকুচি।
এতক্ষণ যেসব প্রক্রিয়ার কথা বলা হলো তা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে। অঙ্গজ জননে উৎপাদিত উদ্ভিদ মাতৃউদ্ভিদের মতো গুণসম্পন্ন হয়। এর ফলে কোনো নতুন বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটে না। উন্নত গুণসম্পন্ন অর্থকরী ফসলের ক্ষেত্রে তাই অনেক সময় কৃত্রিম অঙ্গজ জনন ঘটানো হয়।
কৃত্রিম অঙ্গজ জনন: ভালো জাতের আম, কমলা, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি গাছের কলম করতে তোমরা দেখেছ। কেন কলম করা হয় তা কি ভেবে দেখেছ? যেসব উদ্ভিদের বীজ থেকে উৎপাদিত উদ্ভিদের ফলন মাতৃউদ্ভিদের তুলনায় অনুন্নত ও পরিমাণে কম হয় সাধারণত সেসব উদ্ভিদে কৃত্রিম অঙ্গজ জননের মাধ্যমে মাতৃউদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করা হয়। এবার এসো কৃত্রিম অঙ্গজ জনন সম্পর্কে আমরা জানি।
১. কলম (Grafting): কলম করার জন্য প্রথমে একটি সুস্থ গাছের কচি ও সতেজ শাখা নির্বাচন করতে হবে। উপযুক্ত স্থানে বাকল সামান্য কেটে নিতে হবে। এবার ঐ ক্ষত স্থানটি মাটি ও গোবর মিশিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে দিতে হবে। এবার সেলোফেন টেপ অথবা পলিথিন দিয়ে ঐ স্থানটি মুড়ে দিতে হবে যাতে পানি লেগে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ খসে না পড়ে। নিয়মিত পানি দিয়ে এ অংশটি ভিজিয়ে দিতে হবে। এভাবে কিছুদিন রেখে দিলে এ স্থানে মূল গজাবে। এর পরে মূলসহ শাখার এ অংশটি মাতৃউদ্ভিদ থেকে কেটে নিয়ে মাটিতে রোপণ করে দিলে নতুন একটি উদ্ভিদ হিসেবে বেড়ে উঠবে।
২. শাখা কলম (Cutting): তোমরা লক্ষ করেছ যে গোলাপের ডাল কেটে ভেজা মাটিতে পুঁতে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই তা থেকে নতুন কুঁড়ি উৎপন্ন হয়। এসব কুঁড়ি বড় হয়ে একটি নতুন গোলাপ গাছ উৎপন্ন করে।
অনুশীলন অধ্যায়
১. পাখির দ্বারা পুষ্পরেণু বহন করাকে বলে— [ স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এস্টিমেটর ২০১৮ ]
·
Autogamy
·
Ornithophily
·
Entomophily
·
Anemophily
২. পরাগায়ন কত প্রকার ? [কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা-২০১৪ ]
·
দুই
·
তিন
·
চার
·
পাঁচ
৩. ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় স্ত্রী স্তবকের- [পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা
(FWV) পশিক্ষণার্থী-২০১৩ ]
·
গর্ভদন্ডে
·
গর্ভমুন্ডে
·
ডিম্বাশয়ে
·
ডিম্বকে
৪. কোন উদ্ভিদ স্ব-পরাগায়ন ঘটে ? [ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাঃ ২০১২ - পদ্মা/মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকঃ ০১ ]
·
ধান
·
আম
·
শিম
·
সরিষা
৫. ধানের ফুলে পরাগ সংযোগ ঘটে- [১১তম বিসিএস/ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিভিশনের অডিয়েন্স রিসার্চ অফিসারঃ ০৬/ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রদর্শকঃ ০৪/ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চীফ ইন্সট্রাক্টর, ননটেকঃ ০৩/ সহকারী থানা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারঃ ৯৮ ]
·
ফুলে ফুলে সংস্পর্শে
·
বাতাসের সাথে পরাগ ঝড়ে পড়ে
·
কীট পতঙ্গের সাহায্যে
·
পাতা দ্বারা স্থানান্তরিত হয়ে
৬. ধানের পরাগায়ন কিভাবে হয় ? [ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকঃ ০৬ ]
·
বাতাসের সাহায্যে
·
বৃষ্টির সাহায্যে
·
কীট-পতঙ্গের সাহায্যে
·
মৌমাছির সাহায্যে
৭. যে সব ফুল পতঙ্গপরাগী এবং রাতে ফোটে সেসব ফুলে কোনটি থাকে ? [ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ৯৯/ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকঃ ১৮]
·
গন্ধ ও পাপড়িহীন
·
তীব্র গন্ধ এবং সাদা পাপড়ি
·
তীব্র গন্ধ পাপড়িহীন
·
গন্ধহীন কিন্তু অনেক মধু
৮. ডুমুরের পুংরেণুর সাথে স্ত্রী রেণুর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম- [থানা শিক্ষা অফিসারঃ ৯৯ ]
·
মৌমাছি
·
কাল পিঁপড়া
·
প্রজাপতি
·
লাল পিঁপড়া
৯. বাদুড় কোন ফুলের পরাগায়ন ঘটায় ? [মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রদর্শকঃ ০৪ ]
·
পাতা ঝাঁঝি
·
জংলীকলা
·
মঞ্জুরীপত্র
·
কোনটিই নয়