তড়িৎ কোষ | Battery
তড়িৎ কোষ যাকে ইংরেজি পরিভাষায় সাধারণভাবে ব্যাটারি (Battery) বলে। যা সাধারণত ফ্ল্যাশলাইট, মোবাইল ফোন , ব্যাকআপ লাইট , টর্চলাইট , চার্জার ফ্যান এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৭৯৪ সালে আলেসান্দ্রো ভোল্টা সর্বপ্রথম তড়িৎ কোষ আবিষ্কার করেন। এটি সরলতম তড়িৎ কোষ। ব্যাটারিতে কার্বন দণ্ড ধনাত্মক পাত এবং দস্তার পাত ঋণাত্মক পাত হিসেবে কাজ করে। তরল হিসেবে সালফিউরিক এসিড এবং ছেদন নিবারক হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তকে অ্যানোড এবং ঋণাত্মক প্রান্তকে ক্যাথোড বলে। এ ব্যাটারি থেকে ডিসি কারেন্ট পাওয়া যায়। ব্যাটারির তড়িচ্চালক বল ১.৫ ভোল্ট। সাধারণ স্টোরেজ ব্যাটারিতে সীসার ইলেকট্রোডের সাথে সালফিউরিক এসিড ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে সৌর চুল্লীতে স্টোরেজ ব্যাটারি ব্যবহার করে ডিসি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। স্টোরেজ ব্যাটারির সাহায্যে দিনের সৌরশক্তিকে সঞ্চিত করে রাতেও ব্যবহার করা যায়। যানবাহনে পেট্রোল ট্যাংক যেমন জ্বালানি বহন করে স্টোরেজ ব্যাটারিও তেমনি সৌরশক্তি ধরে রাখে। সূর্য যখন কিরণ দেয় তখন স্টোরেজ ব্যাটারি ছাড়াও পাওয়ার সাপ্লাই পাওয়া যায়, কিন্তু সূর্য যখন কিরণ দেয় না তখন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাওয়ার সাপ্লাই পেতে গেলে স্টোরেজ ব্যাটারি প্রয়োজন হয় ।
·
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ও গ্যালভানিক কোষের পার্থক্য
তড়িৎ কোষ
যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য শক্তি হতে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করার জন্য তড়িৎ প্রবাহ বজায় রাখা হয় তাকে তড়িৎ কোষ (Electric cell) বলে। যেমন-- রাসায়নিক কোষ (Chemical cell), সৌর কোষ (Solar cell), আলোক তড়িৎ কোষ (Photoelectric cell)। সচল যন্ত্রাংশযুক্ত তড়িৎ কোষ হলো ডায়নামো (Dynamo)।
তড়িৎ কোষের প্রকারভেদ: তড়িৎ কোষ দুইপ্রকার যথাঃ
১. তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বা গ্যালভানিক সেল ।
২. তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ
১ . তড়িৎ রাসায়নিক কোষ: যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে রাসায়নিক শক্তিকে সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তিতে অথবা বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলে। আবিষ্কারক: আলেসান্দ্রো ভোল্টা ।
তড়িৎ রাসায়নিক কোষ আবার দুই প্রকার যথাঃ প্রাথমিক/ মৌলিক কোষ এবং গৌণ ও সঞ্চয়ী কোষ । যা নিচের টেবিলে দেখানো হলঃ
প্রাথমিক / মৌলিক কোষ |
গৌণ ও সঞ্চয়ী কোষ |
১. এক তরল কোষ (লেকল্যান্স কোষ) |
১. লেড ( সঞ্চয়ী কোষ ) |
২. দুই তরল কোষ (ড্যানিয়েল কোষ) |
২. নিকেল অক্সাইড ( সঞ্চয়ী কোষ ) |
৩. শুষ্ক কোষ |
|
তড়িৎ রাসায়নিক কোষ |
প্রাথমিক / মৌলিক কোষ
প্রাথমিক ব্যাটারি বা কোষ রিচার্জেবল নয় । ব্যবহারের জন্য এগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যার শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেলে আর ব্যবহার করা যায় না । এগুলিকে পুনরায় চার্জ করা যায় না। যে কারণে একবার ব্যবহারের পর তা ফেলে দেওয়া হয়। এগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি সাধারণত উভমুখী হয় না, তাই যখন ব্যাটারিতে বিক্রিয়কের সরবরাহ শেষ হয়ে যায়, তখন ব্যাটারি কারেন্ট উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এবং অকেজো হয়ে যায়। উদহারণস্বরুপ বলা যায় টর্চলাইটের ব্যাটারি যা একবার ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হয় । এগুলি তিন ধরনের হতে পারে যথাঃ ১. এক তরল কোষ (লেকল্যান্স কোষ) ২. দুই তরল কোষ (ড্যানিয়েল কোষ) ৩. শুষ্ক কোষ
☞ লেকল্যান্স কোষ
১৮৬৫ সালে জর্জ লেকল্যান্স এই কোষ উদ্ভাবন করেন। যে কারণে তার নামানুসারে এই কোষের নামকরণ করা হয় লেকল্যান্স কোষ বা সেল । একটি কাচের বড় ঘন পাত্রে আ্যমোনিয়াম ক্লোরাইড দ্রবনের মধ্যে একটি পারদের প্রলেপ দেয়া দস্তার দন্ড ডুবিয়ে এই ধরনের কোষ বানানো হয়ে থাকে।এই দন্ড ঋণাত্মক মেরু হিসাবে কাজ করে। কাচ পাত্রের মাঝখানে একটি সূক্ষ ছিদ্রযুক্ত পাত্র রাখা হয়।পাত্রটির মধ্যে একটি কার্বন দন্ডের চারদিকে কাঠকয়লার গুঁড়া,ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড থাকে।কার্বন দন্ডটি ধণাত্মক মেরু হিসাবে কাজ করে। গ্যাস বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য সচ্ছিদ্র পাত্রের উপরে একটি সরু ছিদ্র থাকে। আ্যমোনিয়াম ক্লোরাইড এই কোষের সক্রিয় তরল এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড পোলারন নিবারক। কাচ পাত্রের মুখ পীচ দিয়ে বন্ধ করা থাকে এবং দস্তা ও কার্বন দন্ডের মাথায় সংযোগ স্ক্রু লাগানো থাকে।
☞ ড্যানিয়েল কোষ বা গ্যালভানিক কোষ
গ্যালভানিক বা ড্যানিয়েল কোষ হলো এক ধরনের তড়িৎ রাসায়নিক কোষ । যার মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। দুটি আলাদা ধাতুর তৈরি তড়িতদ্বারকে একটি লবণ সেতুর সংযোগের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। একে ভলটায়িক কোষ বা ইলেকট্রোকেমিক্যাল কোষও বলা হয়ে থাকে। ১৭৮০ সালে লুইজি গ্যালভানি আবিষ্কার করেন যে, দুটি ভিন্ন ধাতু যেমন: তামা ও দস্তাকে একসাথে যুক্ত করে একটি ব্যাঙের একটি স্নায়ুর আলাদা অংশে যুক্ত করলে পা দুটি দুলে ওঠে। তিনি এটিকে প্রাণী বিদ্যুৎ বলে আখ্যা দেন। ১৮০০ সালের দিকে আলেসান্দ্রো ভোল্টার তৈরি ভোল্টায়িক পাইল গ্যালভানিক কোষের অনুরূপ। এই আবিষ্কার ব্যাটারী বা বিদ্যুৎ কোষ আবিষ্কারের পথ সুগম করে।
গঠন ও ক্রিয়া কৌশল : একটি গ্যালভানিক কোষে দুটি অর্ধকোষ থাকে। প্রতিটি অর্ধকোষে একটি ইলেকট্রোড যা জিঙ্ক ও কপারের পাত এবং একটি ইলেকট্রোলাইট যা এদের জলীয় দ্রবণ ZnSO4 ও CuSO4। ধাতব ইলেকট্রোডের ধাতু মিশ্রণের সাথে দ্রবীভূত হতে পারে এবং এর ফলে ইলেকট্রোলাইটে ধনাত্মক আয়ন যুক্ত হয় এবং ইলেকট্রনে ঋনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড থাকে। এভাবে সকল অর্ধকোষে নিজস্ব অর্ধ-বিক্রিয়া ঘটে। চিত্রে প্রদর্শিত ডেনিয়েল কোষে Zn অনুর দ্রবীভূত হবার প্রবণতা Cu অণু থেকে বেশি। নির্দিষ্ট করে বললে, জিঙ্ক ইলেকট্রোডের ইলেকট্রনগুলোতে কপার ইলেকট্রোডের ইলেকট্রনের তুলনায় বেশি শক্তি থাকে। কেননা ইলেকট্রনের আধান ঋনাত্মক, এখন ইলেকট্রনকে আরো শক্তি দিতে হলে জিঙ্ককে কপারের চেয়ে বেশি ঋনাত্মক ইলেকট্রিকাল পোটেনশিয়াল থাকতে হবে। অবশ্য ইলেকট্রোডদ্বয়ের মধ্যে বাহ্যিক সংযোগ না থাকলে বিদ্যুত প্রবাহিত হয় না।
যখন ইলেকট্রোড দুটিকে বাহ্যিকভাবে সংযুক্ত করা হয় তখন ইলেকট্রনগুলো ঋনাত্মক ইলেকট্রোড জিঙ্ক থেকে ধনাত্মক ইলেকট্রোড কপারের দিকে অগ্রসর হয়। ইলেকট্রনের ঋনাত্মক আধান থাকার কারণে ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত দিকে বিদ্যুত প্রবাহিত হয়। একই সময়ে ইলেকট্রোলাইটের ভিতর দিয়ে সমান পরিমাণ আয়নিক প্রবাহ চলে। বহিঃস্থ সংযোগের মাধ্যমে প্রতি দুটি ইলেকট্রন জিঙ্ক ইলেকট্রোড থেকে কপার ইলেকট্রোডের দিকে প্রবাহিত হবার সময় একটি Zn অণূ অবশ্যই দ্রবণে Zn2+ আয়ন হিসেবে চলে যাবে এবং চলে যাওয়া দুটি ইলেকট্রনকে প্রতিস্থাপিত করবে। সংজ্ঞানুযায়ী অ্যানোড হলো সেই ইলেকট্রোড যেখানে জারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, অর্থাৎ গ্যালভানিক কোষে জিঙ্ক ইলেকট্রোড একটি অ্যানোড। কপার ইলেকট্রোডে গৃহীত দুটি ইলেকট্রন দ্রবণে গিয়ে একটি Cu2+ আয়নের সাথে যুক্ত হয়ে কপার অণু গঠন করে যা Cu ইলেকট্রোডে যুক্ত হয়। একইভাবে ক্যাথোডে বিজারণ সংঘটিত হয় বা ইলেকট্রন গৃহীত হয়, তাই এখানে কপার ইলেকট্রোডটি একটি ক্যাথোড।
কোন ইলেকট্রোডে কোন বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তা মনে রাখার একটি সহজ পদ্ধতি হল anode ও oxidation উভয়েই ইংরেজি স্বরবর্ণ দ্বারা সূচীত হয় এবং reduction ও cathode উভয়েই ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা সূচীত হয়। গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ও ক্যাথোড ধানত্বক চার্জযুক্ত। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে অবশ্য মনে রাখা প্রয়োজন যে, অ্যানোড এ সবসময় জারণ অর্ধবিক্রিয়া ও ক্যাথোড এ বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া ঘটে। গ্যালভানিক কোষ এর গঠন ব্যাখ্যা করার জন্য প্রায় সময়ই ড্যানিয়েল কোষের কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করা হয়। বিজ্ঞানী Daniel এই তড়িৎ রাসায়নিক কোষ আবিষ্কার করেন।
লবণ সেতু (Salt bridge ) : একটি তড়িৎ কোষে দুটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ যদি পরস্পরের সংস্পর্শে থাকে তখন তরলদ্বয়ের সংযোগ স্থলে এক প্রকার বিভব সৃষ্টি হয়। একে তরল সংযোগ বিভব বলে। এর ফলে কোষের তড়িৎ চালক বল হ্রাস পায় । সুতরাং কোষের বিভব নির্ভুলভাবে পরিমাপের জন্য তরল সংযোগ বিভব দুর করা প্রয়োজন। সাধারণত: কোষের দুটি তড়িৎদ্বার ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণকে দুটি ভিন্ন পাত্রে নিয়ে পাত্র দুটির দ্রবণকে লবণ সেতু দ্বারা পরোক্ষভাবে সংযোগ করলে তরল সংযোগ বিভব হ্রাস পায় । সাধারণ KCI বা KNO3 বা NH4NO3 লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণে সামান্য পরিমাণ অ্যাগার মিশ্রিত করে গরম অবস্থায় একটি U আকৃতির কাচনলে ভর্তি করা হয়। অত:পর শীতল হলে নলটির মধ্যে দ্রবণ জেলির মত জমে যায়। অ্যাগার ম্যাগার মিশ্রিত এরূপ সম্পৃক্ত দ্রবণ ভর্তি U আকৃতির টিউবকে লবণ সেতু বলে। লবণ সেতুর উভয় মুখ তুলা দিয়ে বন্ধ করে দুই প্রান্ত পৃথক দুটি পাত্রে রাখা দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। এর ফলে তরলদ্বয়ের মধ্যে সরাসরি সংযোগ এড়ানো যায় এবং সম্পূর্ণ কোষে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপিত হয় ।
লবণ সেতুর ভূমিকা: লবণ সেতুর লবণের আয়নগুলো তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের উভয় অর্ধকোষের দ্রবণে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলাচল করে। আয়নগুলো দ্রবণের সাথে কোন প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া করেনা। জারণ অর্ধকোষে উৎপন্ন ধনাত্নক আয়ন বৃদ্ধি পেলে লবণ সেতু হতে ঋনাত্বক আয়ন ব্যপন প্রক্রিয়ায় দ্রবণে প্রবেশ করে চার্জের ভারসাম্য রক্ষা করে। একইভাবে বিজারণ অর্ধকোষে ঋনাত্নক আয়ন বৃদ্ধি পেলে লবণ সেতু হতে ধনাত্নক আয়ন ব্যপন প্রক্রিয়ায় দ্রবণে প্রবেশ করে চার্জের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে উভয় অর্ধকোষের দ্রবণে তড়িৎ নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। লবণ সেতু না থাকলে জারণ অর্ধকোষ ও বিজারণ অর্ধকোষে ধনাত্নক ও ঋনাত্নক চার্জের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জারণ-বিজারণ ক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় ।
☞ শুষ্ক কোষ ( Dry Cell )
আমরা টর্চ লাইট, বিভিন্ন রকম রিমোট কন্ট্রোলার, নানা রকম খেলনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করি এগুলোকে ড্রাইসেল বা শুষ্ক কোষ বলে।
ড্রাইসেল ব্যাটারি : সাধারণ ড্রাইসেলে কার্বন দণ্ড ধনাত্মক পাত এবং দস্তার কৌটা ঋণাত্মক পাত হিসেবে কাজ করে। কার্বন দণ্ডের চারপাশে থাকে কার্বন গুড়ো ও ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড। ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ছদন নিবারক হিসেবে কাজ করে। দস্তার কৌটা, কার্বন গুড়া এবং ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের মাঝে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের ঘন পেস্ট থাকে যা বিদ্যুৎ উত্তেজক হিসেবে কাজ করে।
শুষ্ক কোষের গঠন : এই কোষে একটি দস্তার চোঙের মধ্যস্থলে একটি কার্বন দণ্ড বসানো থাকে। কার্বন দণ্ড কোষের ধনাত্মক পাত এবং দস্তার চোঙ ঋণাত্মক পাত হিসেবে কাজ করে। কার্বন দণ্ডের উপরে একটি পিতলের টুপি থাকে। কার্বন দণ্ডের চারিদিকে ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড ও কাঠ-কয়লার গুঁড়ার মিশ্রণ রাখা হয়। মিশ্রণসহ কার্বন দণ্ডটিকে দস্তার চোঙের মধ্যে স্থাপন করে চোঙের ফাঁকা অংশ অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের ঘন পেস্ট দ্বারা পূর্ণ করা হয়। পেস্ট যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে সেজন্য দস্তার চোঙের উপরের মুখ পিচ, গালা, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি দ্বারা বন্ধ থাকে। গ্যাস বের হওয়ার । জন্য পিচের মধ্যে একটা ছোট ছিদ্র থাকে। অতঃপর কোষের চোঙাকৃতি অংশকে কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
ক্রিয়া: এ কোষকে যখন কোন বর্তনীতে সংযুক্ত করা হয়, তখন দস্তা ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হতে থাকে এবং ইলেক্ট্রন ছেড়ে দেয়।
দস্তার আয়ন এবং বিভব পার্থক্য সৃষ্টিকারী NH4Cl এর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত হয় এবং দস্তা NH4CI থেকে ধনাত্মক আয়ন H+ মুক্ত করে নিজে ঋণাত্মক আধান ধারণ করে, ফলে দন্তার খোলের বিভব হ্রাস পায়।
এদিকে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) কার্বন দণ্ডের কাছে গিয়ে কার্বন দন্ড থেকে দুটি ইলেক্ট্রন নিয়ে নিস্তড়িত হাইড্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়। কার্বন দণ্ড ইলেক্ট্রন দান করে ধনাত্মক আধানযুক্ত হয় এবং এর বিভব বৃদ্ধি পায়। ফলে দস্তার খোল থেকে কার্বন দণ্ডের দিকে ইলেক্ট্রন প্রবাহিত হয়ে তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে ।
গৌণ ও সঞ্চয়ী কোষ
গৌণ ব্যাটারি, যা সেকেন্ডারি সেল বা রিচার্জেবল ব্যাটারি হিসাবেও পরিচিত, প্রথমবার ব্যবহারের আগে চার্জ করতে হয়; এগুলি সাধারণত ক্ষরণ অবস্থায় থাকা সক্রিয় উপকরণগুলির সাথে যুক্ত করা হয়। রিচার্জেবল ব্যাটারিগুলি বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রয়োগ করে পুনরায় চার্জ করা হয়, যা ক্ষরণ /ব্যবহারের সময় ঘটে এমন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বিপরীত দিকে ঘটায়। উপযুক্ত তড়িৎপ্রবাহ সরবরাহ করার যন্ত্রগুলিকে চার্জার বলা হয়। রিচার্জেবল ব্যাটারির প্রাচীনতম রূপটি হল লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি, যা মোটরগাড়ি এবং নৌকা চালানোর যন্ত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তিতে একটি খোলা কনটেইনারে তরল তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ থাকে, আর এক্ষেত্রে জন্য ব্যাটারিটি খাড়া করে রাখতে হয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণে চার্জ হয়ে গেলে যাতে এর থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন গ্যাস সহজে বেড়িয়ে যেতে পারে সেজন্য ভালভাবে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়। লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করতে পারে তার অনুপাতে সেটি তুলনামূলকভাবে ভারী হয়ে থাকে। যেখানে এটির ওজন এবং পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্যার তুলনায় এর ক্ষমতা (প্রায় ১০ অ্যাম্পিয়ার) বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেখানে এটির স্বল্প উৎপাদন ব্যয় এবং উচ্চতর তড়িৎপ্রবাহ ক্ষমতা এটিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে । এটির সাধারণ ব্যবহার হল আধুনিক গাড়ির ব্যাটারি হিসেবে, যা সাধারণত সর্বোচ্চ ৪৫০ অ্যাম্পিয়ারের প্রবাহ সরবরাহ করতে পারে।
☞ লেড এসিড ব্যাটারি
এক বা একাধিক কোষ সমন্বিত একটি ধারক, যেখানে রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয় এবং শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। লেড এসিড ব্যাটারির প্লেট তৈরি হয় সীসা এবং লেড অক্সাইড [আরো কিছু উপাদান থাকে ঘনত্ব, শক্ত করার জন্য] এর সাথে ৩৫% সালফিউরিক এসিড ও ৬৫% পানির মিশ্রণ থাকে। এসিড পানির এই মিশ্রণটিকে বলে ইলেকট্রোলাইট যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন তৈরি করে। ব্যাটারি টেস্টের জন্য হাইড্রোমিটার দিয়ে ইলেকট্রোলাইটে সালফিউরিক এসিডের পরিমাণ মাপা হয়।
লেড-এসিড ব্যাটারির ধরন : (ক)মূলত দুই ধরনের ব্যাটারি দেখা যায়, ১.ডিপসাইকেল ব্যাটারি ২.স্টার্টিং ব্যাটারি বা ক্র্যাংকিং ব্যাটারি
ডিপ সাইকেল: যা অনেকবার চার্জ ডিসচার্জে সক্ষম, এই ধরনের ব্যাটারিকে মেরিন টাইপ ব্যাটারি ও বলা হয়, এগুলো সাধারণত এভাবে স্পেসিফিকেশন লেখা হয় যেমন 12V7AH ব্যাটারি অর্থাৎ এটি ১২ ভোল্ট এর এবং ঘণ্টায় ৭ এমপিয়ার কারেন্ট দিতে সক্ষম বা ৭ এমপিয়ারে ১ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। এগুলোতে থাকে মোটা প্লেট যা চার্জ দীর্ঘক্ষন ধরে রাখে ও ধীরে ধীরে ডিসচার্জ করতে সক্ষম।
স্টার্টিং ব্যাটারি বা ক্র্যাংকিং ব্যাটারি: এ গুলো মূলত গাড়ির ব্যাটারি। গাড়ি বা ইঞ্জিন স্টার্ট করতে বেশ শক্তিশালি একটি স্টার্টিং মোটর [যাকে সেলফ বলা হয়] থাকে এটিকে ১৫-৩০ সেকেন্ড চালু রাখলেই ইঞ্জিন স্টার্ট নিয়ে নেয়, অর্থাৎ খুব অল্প সময়ের জন্য ২৫-১৫০ এমপিয়ার কারেন্ট প্রবাহের প্রয়েজন হয় ঐ সেলফ চালাতে এর পরে আর ব্যাটারির তেমন শক্তির কোন কাজ করতে হয় না বরং ইঞ্জিন এর অলটারনেটর হতে ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হতে থাকে। এগুলোতে থাকে পাতলা প্লেট যা অনেক বেশি কারেন্ট বা এমপিয়ার তৈরি করতে পারে।
☞ নিকেল অক্সাইড ব্যাটারি
একটি নিকেল মেটাল হাইড্রাইড ব্যাটারি (NiMH বা Ni-MH) হল এক ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি। ধনাত্মক ইলেক্ট্রোডে রাসায়নিক বিক্রিয়াটি নিকেল-ক্যাডমিয়াম কোষের (NiCd) অনুরূপ, উভয়ই নিকেল অক্সাইড হাইড্রক্সাইড (NiOOH) ব্যবহার করে। যাইহোক, নেতিবাচক ইলেক্ট্রোডগুলি ক্যাডমিয়ামের পরিবর্তে একটি হাইড্রোজেন-শোষণকারী খাদ ব্যবহার করে। NiMH ব্যাটারির ক্ষমতা একই আকারের NiCd ব্যাটারির চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি হতে পারে, উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ শক্তির ঘনত্ব সহ, যদিও লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মাত্র অর্ধেক। এগুলি সাধারণত অনুরূপ আকৃতির নন-রিচার্জেবল ক্ষারীয় ব্যাটারির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়, কারণ এগুলি সামান্য কম কিন্তু সাধারণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেল ভোল্টেজ বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং ফুটো হওয়ার প্রবণতা কম।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ও গ্যালভানিক কোষের পার্থক্য |
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ |
গ্যালভানিক কোষ |
১. যে কোষে তড়িৎ শক্তি ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলে। |
১. যে কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয় তাকে গ্যালভানিক কোষ বলে। |
২. তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে অ্যানোড ধনাত্মক চার্জযুক্ত এবং ক্যাথোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। |
২. গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কিন্তু ক্যাথোড ধণাত্মক চার্জযুক্ত। |
৩. কোন মৌল বা যৌগ উৎপাদন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, ধাতু বিশোধন প্রভৃতি কাজে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ব্যবহৃত হয়। |
৩. তড়িৎ শক্তি উৎপাদন করার যন্ত্র যেমন- ব্যাটারি তৈরিতে গ্যালভানিক কোষ ব্যবহৃত হয়। |
সংক্রামক রোগ | infectious disease
সংক্রামক রোগ হলো এমন রোগ যা একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এগুলি জীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর মাধ্যমে সৃষ্ট হয়। সংক্রামক রোগ বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে , স্পর্শের মাধ্যমে , খাদ্য বা পানির মাধ্যমে , যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে , কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ইত্যাদি ।
·
সংক্রামক রোগ : যে সকল রোগের জীবাণু বায়ু, পানি বা অন্য কোন মাধ্যমের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করে তাদের সংক্রামক রোগ বলে। যেমন- কলেরা, প্লেগ, বসন্ত, এইডস ইত্যাদি।
·
ছোঁয়াচে রোগ: যে সকল রোগের বিস্তার রোগীর সংস্পর্শে বা ছোঁয়ায় বিস্তার লাভ করে তাদের ছোঁয়াচে রোগ বলে। যেমন: কলেরা, জলবসন্ত, হুপিংকাশি, যক্ষ্মা, মাম্পস, টিটেনাস, ফাইলোরিয়া, করোনা প্রভৃতি।
⮚ কোন কোন সংক্রামক রোগ সাধারণত একবারের বেশি হয় না: হাম, বসন্ত, পীতজ্বর প্রভৃতি সংক্রামক রোগ সাধারণত একবারের বেশি হয় না। এসব রোগের জীবাণু আক্রমণে কোনো রোগ হলে শরীরের মধ্যে এদের এন্টিবডি তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ করে। আস্তে আস্তে এ এন্টিবডিসমূহ কমে গেলেও বিশেষ বিশেষ রোগের এন্টিজেনের সান্নিধ্যে আবার বেড়ে ওঠে যাকে বুস্টার প্রতিক্রিয়া বলে।
·
কলেরা
·
ইবোলা
·
এভিয়ান ফ্লু/ সোয়াইন ফ্লু (Swine Flu)
কলেরা
কলেরা বা উদরাময়: এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে সংক্রমিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট রোগ কলেরা। এ রোগের প্রধান উপসর্গ মারাত্মক ডায়রিয়া। কলেরা রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আগে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অধিকাংশ রোগী মারা যেত। এখন পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে। বিশেষতঃ খাবার স্যালাইন বা লবণ-গুড় পানির সরবত ডায়রিয়ার চিকিৎসায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
বসন্ত রোগ
·
বসন্ত রোগের উপসর্গ ও প্রতিষেধক : বসন্ত ভাইরাস জনিত রোগ। বাতাসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগ অতিশয় সংক্রামক এবং সাধারণত মহামারীরূপে দেখা যায়। বসন্ত রোগে আক্রান্ত রোগীর কপালে, নাকে, হাতে-পায়ে গুটি ওঠে। বুকে পিঠেও সামান্য গুটি দেখা যায়। এ রোগে খুব জ্বর এবং শরীর ব্যথাযুক্ত হয়। বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা দেয়া হয়। একবার টিকায় না সারলে বারবার টিকা দিতে হয়।
·
জলবসন্ত কি ধরনের রোগ: জলবসন্ত ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগ সাধারণত শিশু কিশোরদের মধ্যে মহামারী আকারে দেখা যায়। এ রোগে পিছনের স্নায়ুমূল এবং স্নায়ুগুটিকাতে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত স্নায়ু কর্তৃক সরবরাহকৃত ত্বকে পানিপূর্ণ ফোস্কা সৃষ্টি হয়। জলবসন্ত রোগে গায়ে ফোস্কা উঠার আগে জ্বর থাকে এবং গা ম্যাজ ম্যাজ করে। ফোস্কা উঠার পরেও জ্বর থাকে এবং ফোস্কাসমূহ ঝাঁকে ঝাঁকে উঠতে থাকে।
·
গুটি বসন্তের টিকা তৈরির প্রক্রিয়া গুটি বসন্ত দ্বারা আক্রান্ত কোনো প্রাণীর দেহ থেকে প্রথমে গুটি বসন্তের জন্য দায়ী নির্দিষ্ট প্রজাতির ভাইরাস সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত এই নির্দিষ্ট প্রজাতির ভাইরাসকে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে গুটি বসন্তের টিকা তৈরি করা হয়।
·
বসন্তের টিকা আবিষ্কারক: জেনার
মাম্পস রোগ
মাম্পস হলো একটি সংক্রামক রোগ যা মাম্পস ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে বড়দেরও হতে পারে। এটি কর্ণগ্রন্থির প্রদাহজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ হলে কথা বলা বা চিবানো কষ্টকর ও ব্যথাদায়ক হয়।
মাম্পস রোগের লক্ষণ: Infection, Poliomyelitis,
জ্বর, মাথাব্যথা, গলায় ঘা, Respiratory paralysis ,
কানের কাছে লালাগ্রন্থিতে ফোলাভাব ইত্যাদি।
·
প্রতিকার: Vaccination
Rabies' বা জলাতংক রোগ
জলাতঙ্ক হলো একটি ভাইরাসজনিত প্রাণঘাতী রোগ যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রেবিস ভাইরাস নামক এক ধরণের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। জলাতঙ্ক রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই এবং রোগ নির্ণয়ের পর প্রায়শই মৃত্যু ঘটে।
·
Rabies virus এ রোগের জন্য দায়ী।
·
Rabied প্রাণী , যারা Rabies virus ধারণ করে তাদের কামড়ে এই রোগ হয়। যেমন- কুকুর, বিড়াল।
·
বৈশিষ্ট্য: জ্বর, ক্ষুধামন্দা, অনুভূতিহীনতা, দ্বিধাদ্বন্বতা, মুখে লালা আসা, ব্যাথাময় পেশির সংকোচন, পানির প্রতি ভয় ইত্যাদি।
·
প্রতিকারসমূহ: ৫টি টিকা দেয়া হয় ০, ৩, ৭.১৪, ২৮ দিনে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৪ দিনে ১৪টি টিকা দেয়া হয়।
·
লুই পাস্তুর কি আবিষ্কার করেছিলেন: জলাতঙ্ক রোগের টিকা।
চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ১৯৫৩ সালে তানজানিয়ায় চিকুনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে। তবে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্ব ধরা পড়ে এবং দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ঘটনা ঘটে ২০১১ সালে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশাই চিকুনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাসের বাহক।
লক্ষণ: - প্রচন্ড জ্বর (1020 -1040 ফাঃ) - গিরায় তীব্র যন্ত্রণা। - মাথা ব্যাথা। - পেশির যন্ত্রণা। - হাড়ের সংযোগস্থল ফোলা ও চর্মরোগ। মশা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ৩-৭ দিনের মধ্যে চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।
চিকিৎসা:
1.
রোগের লক্ষণ দেখা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
2.
চিকুনগুনিয়ার জন্য কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই।
3.
কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।
4.
ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে।
5.
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
6.
জ্বর এবং গায়ে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়:
1.
হালকা রঙের ফুলহাতা জামা ও ট্রাউজার ব্যবহার করতে হবে।
2.
মশা বংশবিস্তার করে এমন আবদ্ধ পানিযুক্ত জায়গা যেমন পুরাতন কন্টেইনার, ফুলের টব ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে।
3.
দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে অথবা সম্ভব হলে নেট ব্যবহার করতে হবে।
4.
মশা প্রতিরোধক লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
5.
মশারির ভিতর ঘুমাতে হবে।
6.
ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় চিকুনগুনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইবোলা
ইবোলা হলো ভাইরাস ঘটিত একটি মনুষ্য রোগ। Ebola virus এর সংক্রমণে এই রোগটি হয়ে থাকে। মধ্য আফ্রিকার গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো উপত্যকায় প্রবাহিত একটি নদীর নাম ইবোলা। ১৯৭৬ সালের জুন মাসে এই নদী তীরের একটি গ্রামে প্রথম এ রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং এ জীবাণু শনাক্ত করা হয়। সেই থেকে এ রোগের নাম ইবোলা।
ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ পদ্ধতি :
1.
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রস (রক্ত, লালা, পায়খানা, বমি, বীর্য, মূত্র, ঘাম, অশ্রু, নাকের পানি, এমনকি বুকের দুধ) সুস্থ ব্যক্তির মুখ, নাক চোখ, যৌনাঙ্গ, ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসলে ইবোলা ভাইরাস শরীরের প্রবেশ করে।
2.
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
3.
আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত দূষিত সূচ, সিরিঞ্জ এবং অন্যান্য ব্যবহারকৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
4.
আক্রান্ত পশুপাখি, বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ফলহারী বাদুড়ের সংস্পর্শে কিংবা মাংস খেলে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
5.
আক্রান্ত পশুপাখির শরীরে লালার সংস্পর্শে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
6.
আক্রান্ত ব্যক্তির লালা যুক্ত পানি, পানীয়, খাবার ভাগাভাগী করে খেলে ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাতাস, পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায় না।
লক্ষণ: ইবোলা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ২১ দিন লাগতে পারে এ রোগের লক্ষণসমূহ পরিলক্ষিত হওয়ার জন্য। এই রোগের লক্ষণসমূহ সাধারণ ফ্লু এর মতই। সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়েরিয়া ও জ্বর এই রোগের প্রধান উপসর্গ।
প্রতিরোধ:
1.
সবসময় হাত সাবান এবং গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে।
2.
চোখ, নাক অথবা মুখে হাত লাগানোর আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
3.
আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় শরীর ঢেকে মাস্ক পরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
4.
আক্রান্ত ব্যক্তির বডি লিকুইড (বীর্য, রক্ত) যাতে আপনার সংস্পর্শে কোনোভাবেই না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
5.
যদি কোনো কারণে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে, যাতে অন্য কেউ এ রোগে আক্রান্ত না হয় এবং দ্রুত চিকিৎসার পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
চিকিৎসা: এই রোগের কোনো স্বীকৃত ঔষধ নেই। তবে আশার কথা, সম্প্রতি গবেষণায় দুটি নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা এখনও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। সুতরাং এ রোগের চিকিৎসা হবে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো লক্ষণ নির্ভর এবং এর সাথে প্রয়োজন রোগীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ।
এভিয়ান ফ্লু/ সোয়াইন ফ্লু (Swine Flu)
এভিয়ান ফ্লু বা H1N1 নামক ভাইরাসের কারণে সোয়াইন ফ্লু (Swine flu) রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। ২০০৯ সালে প্রথম এ ভাইরাস মানুষের নজরে আসে ।
এভিয়ান ফ্লু: এভিয়ান ফ্লু হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি প্রকার। 'এ' টাইপের ভাইরাস হিসেবে একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সনাক্ত করা হয়। 'এ' টাইপের ভাইরাস প্রকৃতিতে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে আছে। এটি দ্বারা প্রথমত উড়ন্ত পাখি, হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হয়। তাই একে 'এভিয়ান ফ্লু' বলা হয়। এ ভাইরাসটি যখন কোনো মানুষকে সংক্রমিত করে তখন তাকে বলে 'বার্ড ফ্লু'। বার্ড ফ্লুর অপর নাম এভিয়ান ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা।
জিকা ভাইরাস
জিকা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয় ১৯৪৭ সালে। এটি একটি মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস সমগোত্রীয় RNA ভাইরাস। ইয়েলো ফিভার গবেষকরা উগান্ডার জিকা বনে বানরের উপর গবেষণা করার সময়ে বানরের শরীরে এই ভাইরাসের দেখা পান। তখন জিকা বনের নাম অনুসারেই এই ভাইবাসের নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে নাইজেরিয়াতে প্রথম মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। এরপর সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকা এই ভাইরাসটি দেশে দেশে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
লক্ষণ: প্রতি পাঁচজন জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের মাঝে একজনের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের লক্ষণগুলো হলো :
1.
জ্বর হওয়া;
2.
গায়ে র্যাশ ওঠা:
3.
গাঁটে ব্যথা;
4.
চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখের পর্দার প্রদাহ ইত্যাদি। এছাড়াও মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথা থাকতে পারে।
নিবারণ: জিকা ভাইরাস নিবারণের জন্য এখনো কোনো টিকা বা নির্দিষ্ট ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি । আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পানীয় খাবার খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ: এই ভাইরাস থেকে নিয়ন্ত্রণের উপায় হলো-
1.
মশা থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখা;
2.
ঘরবাড়ি মশা মুক্ত রাখা;
3.
ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার রাখা;
4.
মশার বিস্তার রোধ করা;
5.
মশানাশক ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদে থাকা।
সার্স (SARS)
সার্স একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। (SARS-এর পূর্ণরূপ Severe Actue Respiratory
Syndrone') করোনা নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ রোগ হয়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা না থাকলেও আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৫%।
লক্ষণ:
1.
এ রোগে জ্বরের মাত্রা ১০১০ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
2.
এ রোগে কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
3.
এ রোগে মাথা ব্যাথা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
মার্স ভাইরাস
MERS-এর পূর্ণরূপ Middle East Respiratory
Syndrome। এটি ভাইরাসজনিত শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যা ২০১২ সালে সর্বপ্রথম সৌদি আরবে শনাক্ত হয়। এটি একটি PNA ভাইরাস। এটি করোনা ভাইরাস দলের। তাই একে MERS-COV নামেও প্রকাশ করা হয়।
এইচআইভি, এইডস
১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ কিছু সমকামীর মধ্যে জীবাণু সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট মারাত্মক নিউমোনিয়ার কারণ সনাক্ত করতে গিয়ে AIDS এর সন্ধান পাওয়া যায়। এর দু'বছর পর রোগটির জন্য দায়ী ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। প্রথমে ভিন্ন নাম দেয়া হলেও বর্তমানে এই ভাইরাসটির সর্বজনস্বীকৃত নাম HIV. Human Immune
Deficiency Virus-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল HIV. এটি এইডস রোগের ভাইরাস। এটি শরীরের 'T Lymphocyte' নামক কোষ ধ্বংস করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। ইনজেকশন, এইচআইভি জীবাণুঘটিত রক্ত গ্রহণ এবং অনিয়ন্ত্রিত। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। ইনকিউবেশন সময় → ৬ মাস--৬ বছর/বেশি।
এইচআইভি এইডস্ এ রূপ নিতে কত সময় লাগে: এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করার পর তা এইডস্ এ রূপ নেয়ার মধ্যকার সময়সীমার তারতম্য থাকতে পারে, তবে গড়ে ৮ থেকে ১০ বছর লাগে। এই তারতম্যের কারণ সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। মধ্যবর্তী সময়ে বেশীরভাগ এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ থাকেন কিন্তু তার কাছ থেকে ভাইরাস অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এইচআইভি সংক্রমনের কয়েক মাসের মধ্যে রক্তে এইচআইভি'র এন্টিবডি পাওয়া যায়। অধিকাংশ এইচআইভি পরীক্ষায় এই এন্টিবডির উপস্থিতি দেখে এইচআইভি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
HIV ছড়ায়:
1.
যৌন পথে (৭৫%-৮৫%)।
2.
ভাটিকাল সঞ্চারণ → অমরা দিয়ে, জন্মের সময়, বুকের দুধের মাধ্যমে।
3.
রক্ত দিয়ে সঞ্চারণ → রক্ত এবং রক্তের উপাদান দিয়ে ব্যবহৃত সূচ।
4.
যে কোন চামড়া ছিদ্র করণের মাধ্যমে।
5.
অন্যান্য পথে → রেজর, টুথব্রাশ, চিরুনি (রোগীর ব্যবহৃত)
রক্ত, রক্তজাত সামগ্রী ও সংক্রমিত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কিভাবে এইডস ভাইরাস সংক্রমিত হয় : রক্ত, রক্তজাত সামগ্রী (মানুষের রক্ত থেকে তৈরী সামগ্রী, যেমন- প্লাজমা, রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান, লোহিত রক্ত কণিকা ইত্যাদি) এবং সংক্রমিত সূচ ও সিরিঞ্জ এইচআইভি ছড়ানোর বিপদজ্জনক মাধ্যম, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এই বিপদের আশঙ্কা বেশি থাকে। জীবাণু মুক্ত না করে একই সূচ ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করার ফলে শিরার মাধ্যমে মাদক দ্রব্য সেবনকারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি থাকে যেহেতু শিরায় মাদকদ্রব্য প্রবেশকরানোর আগে সাধারণত কিছু রক্ত সিরিঞ্জে টেনে আনা হয়। অন্য যেসব ক্ষেত্রে এইচআইভি সংক্রমণের খুবই সামান্য ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কান ফুটো করা, খৎনা করা, উল্কি নেয়া এবং নাপিতের দোকান বা সেলুনে একই ক্ষুর দিয়ে শেভ করা। দাঁতের পরিচর্যা প্রদানের মাধ্যমেও এইচআইভি ও হেপাটাইটিস বি ও সি এর মতো অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে যেমন - একই টুথব্রাশ ব্যবহার করা ।
মা থেকে শিশুতে কিভাবে এইডস্ সংক্রমণ হয়: এইচআইভি ভাইরাস গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় কিংবা প্রসব-পরবর্তীকালে মায়ের কাছে থেকে তার গর্ভের ভ্রূণে কিংবা শিশুর দেহে সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রমিত মা থেকে গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর তার সন্তানের সংক্রমিত হওয়ার আশংকা ২০% থেকে ৪০% প্রসব পরবর্তী কালে বুকের দুধের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এইচআইভি সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব যতই ব্যাপক হচ্ছে, সংক্রমিত গর্ভবর্তী মায়েদের কাছ থেকে তাদের গর্ভের ভ্রূণে ব্য সন্তানের দেহে সংক্রমণের হার ততই বাড়ছে এবং তা শিশুদের এইডস রোগীদের শতকরা ৭৫ ভাগের বেশি তাদের মায়েদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও অপুষ্টি এবং যেখানে খুব কম মায়েরাই এইচআইভি সংক্রমিত, যেসব দেশে শিশুদের অন্যান্য রোগ মৃত্যুর ঝুঁকির চেয়ে বুকের দুধের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম হওয়ার কথা।
কি কি উপায়ে এইচআইভি ছড়ায় না:
1.
সংক্রমিত লোকের ব্যবহৃত গ্লাসে পানি পান করলে;
2.
এইচআইভি/এইডস্ আক্রান্ত লোকদের ব্যবহৃত পুকুর বা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলে;
3.
মশা বা অন্যান্য রক্তচোষা পোকা-মাকড় সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত চুষে তারপর সুস্থ ব্যক্তিদের কামড়ালে;
4.
এইচআইভি/এইডস রোগীদের সাথে সামাজিক মেলামেশা বা সাময়িকভাবে অবস্থান করলে;
5.
এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত লোকের ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে;
6.
এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত লোকের সাথে করমর্দন করলে ;
7.
এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত লোকের সাথে আলিংগন করলে বা তাকে চুম্বন করলে;
8.
এইচআইভি এইডস আক্রান্ত লোকের সাথে খাবার, কাপড়-চোপড় বা বাসনপত্র গ্রহন বা ব্যবহার করলে ;
9.
কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ও
10.
রক্ত দানের সুযোগ-সুবিধা যথাযথ ব্যবস্থাপনাধীনে রক্ত দান করলে
চামড়া কাটা ফাটা না হলে বা সুস্থ থাকলে এবং মিউকাস মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ না হলে বা শুকালে তার মধ্যে দিয়ে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে না। কারণ যেসব কোষের সাথে এইচআইভি ভাইরাসের সংযুক্তি ঘটে সেগুলো চামড়ার উপরিভাগে বা মুখের টিস্যুতে থাকে না।
থুথু, চোখের পানি বা প্রস্রাবে এইডস্ ছড়ায় কি: থুথু, চোখের পানিতে এক ধরনের অম্ল ও জীবাণুনাশক এনজাইম থাকে, এজন্য এগুলোতে এইডস্ জীবাণু কম থাকে। এ কারণে থুথু, চোখের পানি বা প্রস্রাবে এইডস্ ছড়ায় না। তবে এগুলোতে যদি রক্ত মেশানো থাকে (যেমন- জিহ্বায় কাটা বা দাঁতের রক্ত মেশানো থুথু ইত্যাদি) তখন রক্তের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
কি কি কারণে বাংলাদেশে এইচআইভি বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে:
1.
প্রতিবেশী দেশগুলোতে এইচআইভি সংক্রমণের উচ্চ প্রকোপ।
2.
এইচআইভি সংক্রমণ এবং সংক্রমণের উপায়সমূহ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব
3.
বিবাহ-পূর্ব ও বিবাহ বহির্ভূত অরক্ষিত যৌন আচরণ।
4.
কনডম ব্যবহারের নিম্ন হার।
5.
যৌনকর্মীর সংখ্যাধিক্য যাদের অনেকেই নিরাপদ যৌন আচরণ মেনে চলে না।
6.
বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে নিয়োজিতদের মধ্যে এসটিআই-র প্রকোপ
7.
শহর এলাকায় সমকামিতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি
8.
সিরিঞ্জ ভাগাভাগি করে শিরায় মাদক দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশেষ করে যারা ইনজেকশন পেথিড্রিন ও টিডিজেসিক গ্রহণ করেন ও
9.
রুটিন এইচআইভি স্ক্রীনিং এর জন্য অধিকাংশ ব্লাড ব্যাংকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব।
যে রোগে শরীরের ইমিউনিটি নষ্ট হয়ে যায় সে রোগের নাম কিঃ 'এইডস'। এইডস একটি মরণ ব্যাধি। এটি হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত লক্ষণ।
AIDS: এইডস অপ্রতিরোধযোগ্য ভয়ংকর এক সংক্রামক ব্যাধি। AIDS (Acquired Immune
Deficiency Syndrome); অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতির লক্ষণ সমষ্টি' অর্থাৎ এইডস জন্মগত নয়। HIV (Human
Immunodeficiency Virus) নামক ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। ফলে কোনো রোগের জীবাণু, যেমন- যক্ষা, ডায়রিয়া ইত্যাদি সহজে আক্রমণ করতে পারে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায় রোগী ক্রমে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এইডস-এর কোনো চিকিৎসা নেই কিংবা এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম AIDS ধরা পড়ে।
কিভাবে এইচআইভি/এইডস ছড়ায় :
1.
আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিলার সাথে অরক্ষিত যৌন মিলনের মাধ্যমে।
2.
আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে।
3.
আক্রান্ত ব্যক্তির সিরিজ, রেজার, ব্লেড বা ক্ষুর জীবাণুমুক্ত না করে পুনরায় ব্যবহার করলে।
4.
আক্রান্ত মা থেকে গর্ভাবস্থায় প্রসবকালে অথবা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে এই রোগ ছড়ায়।
অনুশীলন
অধ্যায়
১. অ্যানোডে কোন বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় ? [৪০তম বিসিএস ]
·
জারণ
·
বিজারণ
·
প্রশমন
·
পানি যোজন
২. সাধারণ ড্রাইসেলে ইলেকট্রোড হিসাবে থাকে --- [১০ম বিসিএস ]
·
তামার দণ্ড ও দস্তার দণ্ড
·
তামার পাত ও দস্তার পাত
·
কার্বন দণ্ড ও দস্তার কৌটা
·
তামার দণ্ড ও দস্তার কৌটা
৩. ব্যাটারির ক্যাপাসিটি পরিমাপ করা হয় - দ্বারা । [বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির নার্স এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স-এর ফোরম্যান ২০১৯ ]
·
Weighl
·
Ampere-hour
·
Volt
·
Ampere
৪. কোনটি ব্যাটারীতে ব্যবহৃত হয় ? [বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির নার্স এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স-এর ফোরম্যান ২০১৯ ]
·
HNO3
·
H2SO4
·
HCl
·
HF
৫. শুষ্ক কোষে কে ইলেকট্রন দান করে ? [প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক(ঢাকা বিভাগ) ০২ ]
·
দস্তার খোল
·
কার্বন দণ্ড
·
ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড
·
কয়লার গুঁড়া
৬. শুষ্ক কোষে কার্বন দণ্ডের চারপাশে থাকে- [গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ১৯ ]
·
জিংক ক্লোরাইড ও কার্বন পাউডার
·
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও কার্বন পাউডার
·
দস্তা চূর্ণ ও কার্বন পাউডার
·
ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ও কার্বন পাউডার
৭. ড্রাইসেল ব্যাটারীর তড়িৎচ্চালক বল কত ? [প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পার্সোনাল অফিসারঃ ০৪ ]
·
১.৫ ভোল্ট
·
১.১ ভোল্ট
·
২ ভোল্ট
·
৫ ভোল্ট
৮. ব্যাটারী থেকে কোন ধরনের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় ? [গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রকৌশলী, মেকানিক্যাল এন্ড পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ৯৯/ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অধীন সহকারী সচিবঃ ৯৬ ]
·
D.C
·
A.C
·
E.C
·
T.C
৯. সাধারণ স্টোরেজ ব্যাটারীতে সীসার ইলেকট্রোডের সঙ্গে যে তরলটি ব্যবহৃত হয় তা হলো- [১৩ তম বিসিএস ]
·
নাইট্রিক এসিড
·
সালফিউরিক এসিড
·
এমোনিয়াম ক্লোরাইড
·
হাইড্রোক্লোরিক এসিড
১০. গাড়ির ব্যাটারীতে ব্যবহৃত এসিড— [১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন -স্কুল পর্যায় (সেটঃ ০৩) : ২০১৯/শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন কারিগরী শিক্ষা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরঃ ০৫ ]
·
HNO3
·
HCl
·
H2SO4
·
H3PO4