DAILY SCIENCE (LEC 4)

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks দৈনন্দিন বিজ্ঞান

 

পৃথিবীর কাল্পনিক রেখাসমূহ | Imaginary lines of the earth

 

সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে কোনো একটি স্থানকে নির্দিষ্ট করতে হলে বা এর অবস্থান জানতে হলে আমাদের সবার জাগে যে বিষয়গুলো জানতে হবে তা হলো অক্ষরেখা দ্রাঘিমারেখা। দ্রাঘিমারেখার অবস্থান থেকে কোনো স্থানের সময় জানা যায়। অক্ষরেখার সাহায্যে যেমন নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে অবস্থান জানা যায় তেমনি মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে অবস্থান জানা যায়। এই টিউটরিয়ালে পৃথিবীর কাল্পনিক রেখাসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে

 

 অক্ষরেখা

·          অক্ষাংশ নির্ণয়

·          দ্রাঘিমারেখা

·          দ্রাঘিমা নির্ণয় ব্যবহার

·          গুরুত্বপূর্ণ রেখাসমূহ

·          আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা

·          প্রতিপাদ স্থান

·          দিবালোক সংরক্ষণ সময়সূচি

অক্ষরেখা (Latitude)

পৃথিবীর গোলাকৃতি কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষ (Axis) বা মেরুরেখা বলে। এই অক্ষের উত্তর- প্রান্ত বিন্দুকে উত্তর মেরু বা সুমেরু এবং দক্ষিণ-প্রান্ত বিন্দুকে দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে। একে নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা বলে। বিষুবরেখা নিরক্ষরেখা, নিরক্ষবৃত্ত, মহাবৃত্ত, গুরুবৃত্ত প্রভৃতি নামেও পরিচিত। বিষুবরেখা দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরভাগ, আফ্রিকার মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে। বিষুব রেখার উপর অবস্থিত দেশসমূহ- ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, গ্যাবন, কঙ্গো, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, সোমালিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া এবং কিরিবাতি। নিরক্ষরেখার উত্তর-দক্ষিণে পৃথিবীকে সমান দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ দিকের অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলে। এই নিরক্ষরেখাকে ° ধরে উত্তর দিকে দক্ষিণ দিকে দুই মেরু পর্যন্ত ৯০ ডিগ্রি বা এক সমকোণ ধরা হয়। পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির জন্য নিরক্ষরেখা বৃত্তাকার, তাই রেখাকে নিরক্ষবৃত্তও বলে। নিরক্ষরেখার সমান্তরাল যে রেখাগুলো রয়েছে সেগুলো হলো অক্ষরেখা। এই অক্ষরেখাগুলো আসলে কল্পনা করা হয়েছে। এদের সমাক্ষরেখা বলে। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে অবস্থিত কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে (Angular Distance) স্থানের অক্ষাংশ বলে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে অবস্থিত কোনো স্থানের অক্ষাংশকে উত্তর অক্ষাংশ এবং দক্ষিণ দিকে অবস্থিত কোনো স্থানের অক্ষাংশকে দক্ষিণ অক্ষাংশ বলে। নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ ° উত্তর মেরু বা সুমেরুর অক্ষাংশ ৯০° উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু বা কুমেরুর অক্ষাংশ ৯০° দক্ষিণ। একই গোলার্ধের একই অক্ষাংশ মানসমূহের সংযোগ রেখাকে অক্ষরেখা বলে

 

অক্ষাংশ নির্ণয় (Determining latitude)

আমরা জানি পৃথিবী বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ ৩৬০ অক্ষাংশ নির্ণয় করার জন্য গ্লোবটিকে আমরা যদি মাঝখান দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে কেটে নেই তাহলে এর মধ্যে আমরা পৃথিবীর ঠিক মধ্যবিন্দু পাব। এখন যদি আমরা কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করতে চাই তাহলে সেই মধ্যবিন্দুর সঙ্গে নির্ণেয় স্থানটির নিরক্ষরেখার () পরিপ্রেক্ষিতে যে কোণ উৎপন্ন হয় তা নির্ণয় করতে হবে। এই কোণই হলো সেই স্থানের অক্ষাংশ। যেমন- নিরক্ষীয় তল থেকে উত্তর মেরুর কৌণিক দূরত্ব বা উৎপন্ন কোণ ৯০ এটাই হলো উত্তর মেরু অক্ষাংশ। এভাবে দক্ষিণ মেরুর অক্ষাংশও ৯০ 

নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে অবস্থিত কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশকে উত্তর অক্ষাংশ এবং দক্ষিণ দিকে অবস্থিত কোনো স্থানের অক্ষাংশকে দক্ষিণ অক্ষাংশ বলে। প্রতি ডিগ্রি অক্ষাংশকে আবার মিনিট (') সেকেন্ডে (") ভাগ করা হয়। এখানে একটা কথা লক্ষ রাখতে হবে সময়ের মিনিট (') সেকেন্ড (") এবং দূরত্বের মিনিট (') সেকেন্ড (") একেবারেই আলাদা দুটি বিষয়। কয়েকটি সমাক্ষরেখা খুব বিখ্যাত। এদের একটি ২৩.° উত্তর অক্ষাংশ, একে কর্কটক্রান্তি বলে। অপরটি ২৩.° দক্ষিণ অক্ষাংশ, একে বলে মকরক্রান্তি। ৬৬.° উত্তর অক্ষাংশকে বলে সুমেরুবৃত্ত এবং ৬৬.° দক্ষিণ অক্ষাংশকে বলে কুমেরুবৃত্ত। বিষুবরেখাকে মহাবৃত্ত বা পুরুবৃত্ত বলে

অক্ষাংশ নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো হলো-
১। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে : যে যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের উন্নতি পরিমাপ করা যায় তাকে সেক্সট্যান্ট যন্ত্র বলে। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের উন্নতি কোণ নির্ণয় করে অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। কোনো স্থানের অক্ষাংশ = ৯০° - (মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি ± বিষুবলম্ব)
বিষুবলম্ব: সূর্য যেদিন যে অক্ষাংশের উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় সেটাই সেদিনের সূর্যের বিষুবলম্ব। কোনো একদিন দক্ষিণ গোলার্ধে মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি ৫০° এবং বিষুবলম্ব ১২° দক্ষিণ হলে স্থানের অক্ষাংশ হবে-
অক্ষাংশ - ৯০° - (মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি + বিষুবলম্ব) = ৯০°- (৫০° + ১২° ) = ৯০° - ৬২° = ২৮° দক্ষিণ।
স্থানটি যদি উত্তর গোলার্ধে হয় তবে উত্তরবাচক বিষুবলম্ব যোগ করতে হবে এবং দক্ষিণবাচক বিষুবলম্ব বিয়োগ করতে হবে। দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণবাচক বিষুবলম্ব যোগ এবং উত্তরবাচক বিষুবলম্ব বিয়োগ করতে হবে।

২। ধ্রুবতারার সাহায্যে অক্ষাংশ নির্ণয়: ধ্রুবতারার উন্নতি জেনে কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। এর সাহায্যে শুধু উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। নিরক্ষরেখায় ধ্রুবতারার উন্নতি ° এবং উত্তর মেরুতে ঠিক মাথার উপর ধ্রুবতারার উন্নতি ৯০° হয়। সুতরাং উত্তর গোলার্ধে কোনো স্থানের অক্ষাংশ ধ্রুবতারার উন্নতির সমান।

দ্রাঘিমারেখা (Longitude)

নিরক্ষরেখাকে ডিগ্রি, মিনিট সেকেন্ডে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগবিন্দুর উপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যে সকল রেখা কল্পনা করা হয়েছে সেগুলোই হলো দ্রাঘিমারেখা। রেখাগুলো পৃথিবীর পরিধির অর্ধেকের সমান। অর্থাৎ এক-একটি অর্ধবৃত্ত। আমরা পূর্বেই জেনেছি অক্ষরেখা দ্রাঘিমারেখাগুলো হলো কাল্পনিক। দ্রাঘিমারেখা নিয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদের জানতে হবে মূল মধ্যরেখার অবস্থান। যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের কাছে গ্রিনিচ (Greenwich) মান মন্দিরের উপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত যে মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে তাকে মূল মধ্যরেখা বলে। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা ° গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে স্থানের দ্রাঘিমা বলে। পৃথিবীর পরিধি দ্বারা উৎপন্ন কোণ ৩৬০° মূল মধ্যরেখা, এই ৩৬০° কে ° অন্তর অন্তর সমান দুই ভাগে অর্থাৎ পূর্ব পশ্চিমে ১৮০° করে ভাগ করেছে। অক্ষাংশের ন্যায় দ্রাঘিমাকেও মিনিট সেকেন্ডে ভাগ করা হয়েছে। পৃথিবী গোল বলে ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমা ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমা মূলত একই মধ্যরেখায় পড়ে। গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা থেকে ৩০° পূর্বে যে দ্রাঘিমারেখা তার উপর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত সকল স্থানের দ্রাঘিমা ৩০° পূর্ব দ্রাঘিমা

দ্রাঘিমা নির্ণয় ব্যবহার

দ্রাঘিমা নির্ণয়ের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে।

·         ১। স্থানীয় সময়ের পার্থক্য

·         ২। গ্রিনিচের সময় দ্বারা।

১। স্থানীয় সময়ের পার্থক্য : কোনো স্থানে মধ্যাহ্নে যখন সূর্য ঠিক মাথার উপর আসে সেখানে দুপুর ১২টা ধরে প্রতি মিনিট সময়ের পার্থক্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় এখন আমরা সহজেই হিসাব করতে পারি যদি কোনো স্থানে দুপুর ১২টা হয় সেখান থেকে ১০° পূর্বের কোনো স্থানের সময় হবে ১২টা + (১০ × ) মিনিট বা ১২টা ৪০ মিনিট। আবার যদি সে স্থানটি ১০° পশ্চিম দিকে হয় তাহলে সময় হবে ১২টা - (১০×) মিনিট বা ১১টা ২০ মিনিট। এভাবে মধ্যাহ্নের সময় অনুসারে দিনের অন্যান্য সময় নির্ধারণ করা যায়।

২। গ্রিনিচের সময় দ্বারা : গ্রিনিচের দ্রাঘিমা শূন্য ডিগ্রি () ধরা হয়। এখন আমরা যদি গ্রিনিচের সময় এবং অন্য কোনো স্থানের সময় জানতে পারি তাহলে দুই স্থানের সময়ের পার্থক্য অনুসারে প্রতি মিনিট সময়ের পার্থক্যে  দ্রাঘিমার পার্থক্য ধরে স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করতে পারি। গ্রিনিচের পূর্ব দিকের দেশগুলো সময়ের হিসেবে গ্রিনিচের চেয়ে এগিয়ে থাকে এবং গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলোর সময় গ্রিনিচের সময় থেকে পিছিয়ে থাকে। বাংলাদেশ গ্রিনিচ থেকে ১০° পূর্বে অবস্থিত বলে বাংলাদেশের সময় ঘণ্টা এগিয়ে। এভাবে দ্রাঘিমার সাহায্যে সময় এবং সময়ের মাধ্যমে দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়।

গুরুত্বপূর্ণ রেখাসমূহ (Important lines)

নিরক্ষরেখা: পৃথিবীর ঠিক মাঝখান দিয়ে যে রেখাটি পূর্ব-পশ্চিমে সমগ্র পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে তাকে নিরক্ষরেখা বলে। নিরক্ষরেখার অপর নাম হলো- বিষুবরেখা (Equator), ° অক্ষরেখা (° Latitude), মহাবৃত্ত (Great circle)

কর্কটক্রান্তি রেখা (Tropic of cancer): ২৩° ৩০' উত্তর অক্ষাংশ রেখাকে বলা হয় কর্কটক্রান্তি রেখা। রেখাটি উত্তর আমেরিকার দক্ষিণভাগ, আফ্রিকার উত্তর ভাগ এবং এশিয়ার দক্ষিণাংশ দিয়ে অতিক্রম করেছে। যে সকল দেশের উপর দিয়ে রেখাটি অতিক্রম করেছে, সেগুলো হলো- মেক্সিকো, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাষ্ট্র), বাহামা, পশ্চিম সাহারা, মৌরিতানিয়া, মালি, আলজেরিয়া, নাইজার, চাঁদ, লিবিয়া, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ভারত, বাংলাদেশ (মধ্যভাগ দিয়ে), মায়ানমার, চীন এবং তাইওয়ান।

মকরক্রান্তি রেখা (Tropic of capricon): ২৩° ৩০' দক্ষিণ অক্ষাংশ রেখাকে বলা হয় মকরক্রান্তি রেখা। রেখাটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ ভাগ, আফ্রিকার দক্ষিণভাগ এবং ওশেনিয়া মহাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে। যে সকল দেশের উপর দিয়ে রেখাটি অতিক্রম করেছে, সেগুলো হলো- ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা, চিলি, টোঙ্গা, ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, কুক দ্বীপপুঞ্জ (নিউজিল্যান্ড), নিউ ক্যালিডোনিয়া (ফ্রান্স)

সুমেরুবৃত্ত কুমেরুবৃত্ত : উত্তর গোলার্ধে ৬৬.° উত্তর অক্ষরেখাকে সুমেরুবৃত্ত এবং ৬৬.° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে কুমেরুবৃত্ত বলে

আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (International Date line)

যে রেখা অতিক্রম করলে দিন এবং তারিখের পরিবর্তন হয়, তাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে। রেখা অতিক্রম করে পূর্ব থেকে পশ্চিমে গেলে একদিন বিয়োগ করতে হয়। পক্ষান্তরে পশ্চিমে থেকে পূর্বে গেলে একদিন যোগ করতে হয়। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা মূলত ১৮০° দ্রাঘিমারেখা হলেও কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটি আঁকাবাঁকা। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা সম্পূর্ণভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের জলভাগের ওপর অবস্থিত। ১৮০° রেখাটি সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশ, অ্যালিউসিয়ান, ফিজি চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে গেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাকে বেরিং প্রণালীতে ১২° পূর্ব, অ্যালিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে ° পশ্চিম এবং ফিজি চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের কাছে ১১° পূর্ব দিকে বাঁকানো। রেখাটি আঁকাবাঁকা না করলে এক দ্বীপের দুই পার্শ্বে সময়ের পার্থক্য হত একদিন। স্থানীয় লোকদের সময়ের হিসেবে অসুবিধা দূর করার জন্য রেখাটি আঁকাবাঁকা করে শুধু জলভাগের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে।

প্রতিপাদ স্থান (The antipodes)

আমরা জানি পৃথিবী গোল তাই এর কোনো একটি স্থানের বিপরীত দিকে অন্য কোনো একটি স্থান রয়েছে। ভূপৃষ্ঠের কোনো বিন্দু থেকে পৃথিবীর কোনো কল্পিত ব্যাস ভূকেন্দ্র ভেদ করে অপরদিকে ভূপৃষ্ঠকে যে বিন্দুতে স্পর্শ করে সেই বিন্দুকে প্রথম বিন্দুটির প্রতিপাদ স্থান বলে কোনো বিশেষ দ্রাঘিমায় অবস্থিত স্থান সেই স্থানের বিপরীত দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত হয়। অর্থাৎ দুই দ্রাঘিমার যোগফল হবে ১৮০ যেহেতু দুই দ্রাঘিমার দূরত্ব হবে ১৮০° সেহেতু দুটির মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে (১৮০ × মিনিট ৭২০ মিনিট বা ১২ ঘণ্টা) = ১২ ঘণ্টা। ঢাকার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে।

গ্রীনিচ মানমন্দির: গ্রিনিচ মানমন্দির যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। এই মান মন্দিরের উপর দিয়ে উত্তর দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যে দ্রাঘিমা রেখা অতিক্রম করেছে তাকে মুল মধ্যরেখা বলে। রেখার মান 0° এই রেখার সময়কে প্রমাণ সময় ধরে পৃথিবীর অন্যান্য সময় গণনা করা হয়।

দিবালোক সংরক্ষণ সময়সূচি

·         উইলিয়াম উইলেট ডে-লাইট সেভিং টাইম ধারনার প্রবর্তক।

·         ১৯১৬ সালে যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম ডে-লাইট সেভিং টাইম চালু হয়।

·         বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ডে-লাইট সেভিংস সিস্টেম প্রবর্তন করা হয়েছে। দিনের বেলা সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে রাতের বেলা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ঘড়ির কাঁটা ঘন্টা এগিয়ে নেওয়া হয় ১৯ জুন ২০০৯। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ ঘড়ির কাঁটা পুনরায় ঘন্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

·         বর্তমানে বাংলাদেশ প্রমাণ সময় গ্রিনিচ সময় হতে ঘন্টা এগিয়ে (GMT+6)

 

 

পৃথিবীর গতি (The Motion of the Earth)

 

পূর্বে মনে করা হতো পৃথিবী স্থির এবং সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে, সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবী শুধু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে না, নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার উপরও আবর্তন করে। পৃথিবীর গতি দুই প্রকার। নিজ অক্ষের উপর একদিনে আবর্তন করাকে আহ্নিক গতি (Rotation) এবং কক্ষপথে এক বছরে সূর্যকে পরিক্রমণ করাকে বার্ষিক গতি (Revolution) বলে।

·          আহ্নিক গতি (Rotation)

o     আহ্নিক গতির প্রমাণ

o     আহ্নিক গতির ফল

·          বার্ষিক গতি (Revolution)

o     বার্ষিক গতির প্রমাণ

o     বার্ষিক গতির ফল

আহ্নিক গতি (Rotation)

পৃথিবী গতিশীল। পৃথিবী তার নিজের মেরুদন্ডের বা অক্ষের চারদিকে দিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতিকে দৈনিক গতি বা আহ্নিক গতি বলে। পৃথিবী তার নিজের মেরুদন্ডের উপর একবার পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ একদিন। একে সৌরদিন বলে।

পৃথিবীর আহ্নিক গতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। পৃথিবীপৃষ্ঠ পুরোপুরি গোল না হওয়ায় এর পৃষ্ঠ সর্বত্র সমান নয়। সে কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সকল স্থানের আবর্তন বেগও সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি। এজন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশি। ঘণ্টায় প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার। ঢাকায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ ১৬০০ কিলোমিটার। যত মেরুর দিকে যাবে আবর্তনের বেগ তত কমতে থাকে এবং মেরুদ্বয়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়।

 

পৃথিবীর আবর্তন গতি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না বা তা অনুভব করি না। এর কারণ হলো:

·         ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করার কারণে মানুষ, জীবজন্তু, বায়ুমণ্ডল প্রভৃতি পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে আবর্তন করছে, তাই আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না।

·         ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত সকল বন্ধুকে পৃথিবী অভিকর্ষ বল যারা নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করছে, তাই আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।

·         পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় আমরা এত বেশি ক্ষুদ্র যে এই গতি অনুভব করি না বা ছিটকে পড়ি না।

·         পৃথিবীর প্রতিটি স্থানের আবর্তন গতি সুনির্দিষ্ট তাই আমরা গতি অনুভব করি না।

·         দু'টি বস্তুর মধ্যে একটি যদি দাঁড়িয়ে থাকে এবং অন্যটি যদি চলতে থাকে তাহলে বোঝা যায় তার গতি আছে। এভাবে পৃথিবীর সামনে স্থির বা সমান কোনো বন্ধু নেই যার সাপেক্ষে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি।

আহ্নিক গতির প্রমাণ

পৃথিবী যে নিজের মেরুদন্ডের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে তার প্রমাণ হলো:

·         মহাকাশযানের পাঠানো ছবিপৃথিবী থেকে যেসব উপগ্রহ মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে সেগুলোর প্রেরিত ছবি থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। ছবিগুলোই পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির সর্বাধুনিক নির্ভুল প্রমাণ।

·         পৃথিবীর আকৃতিকোনো নমনীয় বস্তু যদি নিজের অক্ষের উপর লাটিমের মতো ঘুরতে থাকে তবে তার মধ্যে একই সঙ্গে কেন্দ্রমুখী (Centripetal) এবং কেন্দ্রবিমুখী (Centrifugal) বলের উদ্ভব হয়, যার প্রভাবে গোলাকৃতি বস্তুর প্রান্তদেশ কিছুটা চাপা মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত হয়। আবর্তন গতির প্রভাবেই জন্মকালে নমনীয় পৃথিবীর উত্তর দক্ষিণ মেরু একটু চাপা এবং মধ্যভাগ সামান্য স্ফীত হয়ে যায়। বিজ্ঞানী নিউটন বলেন যে, পৃথিবীর আবর্তনের ফলেই এর আকৃতি এমন হয়েছে

·         রাত-দিন হওয়াপৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানেই পর্যায়ক্রমে দিন রাত্রি হয়। অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা দিন ১২ ঘন্টা রাত পৃথিবীর আহ্নিক গতির অন্যতম প্রমাণ। আহ্নিক গতি না থাকলে পৃথিবীর একদিক চিরকাল অন্ধকারে থাকত এবং অপরদিক আলোকিত হয়ে থাকত।

·         ফেরেলের সূত্রের সাহায্যেআমরা জানি সমুদ্রস্রোত এবং বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এই বেঁকে যাওয়াটা ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত। বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের এই গতিবেগ প্রমাণ করে যে, আহ্নিক গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে

আহ্নিক গতির ফল

পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে যেসব পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই তা হলো-

১। পৃথিবীতে দিবারাত্রি সংঘটন : পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হওয়া পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি ফল। আমরা জানি পৃথিবী গোল এবং এর নিজের কোনো আলো নেই। সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয়। আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীর যেদিক সূর্যের সামনে আসে, সেদিক সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। তখন আলোকিত স্থানসমূহে দিন। আলোকিত স্থানের উল্টা দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর যেদিকটা সূর্যের বিপরীত দিকে, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেদিকটা অন্ধকার থাকে। এসব অন্ধকার স্থানে তখন রাত্রি। পৃথিবীর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের ফলে আলোকিত দিকটি অন্ধকারে আর অন্ধকারের দিকটি সূর্যের দিকে বা আলোকে চলে আসে। ফলে দিনরাত্রি পাল্টে যায়। অন্ধকার স্থানগুলো আলোকিত হওয়ার ফলে এসব স্থানে দিন হয়। আর আলোকিত স্থান অন্ধকার হয়ে যাওয়ার ফলে ঐসব স্থানে রাত হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হতে থাকে, কোনো স্থানে ১২ ঘণ্টা দিন ১২ ঘণ্টা রাত্রি হয়।

২। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি : আহ্নিক গতির ফলেই জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হচ্ছে। আমরা দেখি প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হচ্ছে না। আজকে জোয়ার যে স্থানে যে সময়ে হচ্ছে পরের দিন সেই সময়ে না হয়ে তার ৫২ মিনিট পরে হচ্ছে। এই যে সময়ের ব্যবধান সেটা আহ্নিক গতির কারণেই হচ্ছে।

৩। বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি : পৃথিবীর অভিগত গোলকের কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে অক্ষরেখাগুলোর পরিধি পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এসব কারণে পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।

৪। তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি : দিনের বেলায় সূর্যের কিরণ থাকার কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। রাত হলে তাপ বিকিরণ করে তাপমাত্রা কমে যায়। যদি আহ্নিক গতি না থাকত তাহলে এভাবে দিনের পর রাত আসত না এবং তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি হতো না। এই তাপমাত্রার তারতম্য হলো আহ্নিক গতির একটি ফল।

৫। সময় গণনা বা সময় নির্ধারণ : আহ্নিক গতির ফলে সময়ের হিসাব করতে সুবিধা হয়। একবার সম্পূর্ণ আবর্তনের সময়ের ২৪ ভাগের এক ভাগকে ঘণ্টা ধরে তার ৬০ ভাগের ভাগকে মিনিট। মিনিটের ৬০ ভাগের ভাগকে সেকেন্ড এভাবে সময় গণনা করা হয়।

৬। উদ্ভিদ প্রাণিজগৎ সৃষ্টি : পৃথিবীর আবর্তনের কারণেই পৃথিবীর সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে সূর্যালোক পড়ে এবং দিনরাত্রি হয়। উদ্ভিদ প্রাণীর জন্য সূর্যালোকই বেশি প্রয়োজন। দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাতে শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়। কোনো প্রাণী দিনে আবার কোনো প্রাণী রাতে খাদ্য সংগ্রহ করে। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে দিনরাত্রি সংঘটিত হয় তার উপরই উদ্ভিদ প্রাণিজগতের নিয়মশৃঙ্খলা অনেকখানি নির্ভর করে।

বার্ষিক গতি (Revolution)

সূর্যের মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট দিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে। পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার পৃথিবীর কক্ষপথের পরিধি ৯৩,৮০,৫১,৮২৭ কি.মি.

একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। যে সময়ে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসে সে সময়কালকে বলা হয় এক সৌরবছর (Solar Year) কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিনকে এক বছর ধরি। এতে প্রতি বছর প্রায় ঘণ্টা অতিরিক্ত থেকে যায়। অতিরিক্ত সময়ের সামঞ্জস্য আনার জন্য প্রতি বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪ ঘণ্টা বা দিন বাড়িয়ে সময়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়। এভাবে যে বছর ফেব্রুয়ারি মাসকে দিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয় এবং বছরটিকে ৩৬৬ দিন ধরা হয়। সেই বছরকে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ বলে। সাধারণত কোনো বছরকে দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগশেষ না থাকে তবে ঐসব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার (Leap Year) ধরা হয়।

বার্ষিক গতির বেগ (Speed of Revolution) : সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গড় গতিবেগ- ১৮. মাইল/ সেকেন্ড বা ৬৬,৫০০ মাইল/ঘন্টা অথবা ৩০ কি:মি:/সেকেন্ড বা ,০৬,২৬০ কিঃমিঃ/ঘন্টা। প্রচলিত তথ্যমতে , পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘণ্টায় ৬৭০০০ মাইল বেগে ঘুরে

অনুসূর (Perihelion): পৃথিবী উপবৃত্তাকার কক্ষে সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে জানুয়ারির থেকে তারিখে এমন এক অবস্থানে পৌঁছায় যেখানে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে। একে পৃথিবীর অনুসুর অবস্থান বলে।

অপসুর (Aphelion): পৃথিবী উপবৃত্তাকার কক্ষে সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে থেকে জুলাই তারিখে এমন এক অবস্থানে পৌছায় যেখানে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে।

 

বার্ষিক গতির প্রমাণ (Proofs of Revolution)

১। রাতের আকাশে নক্ষত্রদের স্থান পরিবর্তন, অন্তর্ধান পুনরাগমন : বিভিন্ন সময়ে রাতের আকাশে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নক্ষত্রগুলোর অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়। মেঘমুক্ত আকাশে কয়েকদিন পর পর লক্ষ করলে নক্ষত্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে সরে যাওয়া বোঝা যায়। এরপর একদিন এরা অদৃশ্য হয়ে যায়। ঠিক এক বছর পর এরা আদি স্থানে ফিরে আসে। থেকে পৃথিবীর যে বার্ষিক গতি আছে তা বোঝা যায়।

২। আকাশে সূর্যের পরিবর্তিত অবস্থান: বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যকে বিভিন্ন অবস্থানে দেখা যায়। সূর্য প্রতিদিন পূর্ব আকাশে একই জায়গা থেকে ওঠে না এবং পশ্চিম আকাশে একই জায়গায় অস্ত যায় না। বছরের ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়। বাকি ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে উত্তর দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়। পৃথিবী একই জায়গায় স্থির থেকে ঘুরলে প্রতিদিনই সূর্য একই জায়গায় উদিত হতো। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে ঘটনা ঘটে।

৩। বিভিন্ন গ্রহের পরিক্রমণ গতি: দুরবিনের সাহায্যে পৃথিবী থেকে দেখা গেছে সকল গ্রহ সূর্যকে পরিক্রমণ করছে। পৃথিবীও একটি গ্রহ সুতরাং এরও পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি রয়েছে।

৪। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা : আধুনিক যুগের মহাশূন্যচারীগণ মহাশূন্যযান থেকে পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি দেখেছেন।

৫। মহাকর্ষ সূত্র: সূর্যের তুলনায় পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র, সূর্য পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তাই স্বাভাবিক কারণে সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।

বার্ষিক গতির ফল (The results of Revolution)

বার্ষিক গতির ফল হলো- () দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি, () ঋতু পরিবর্তন।

দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি: পৃথিবীর দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ-

·         () পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি;

·         () পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ;

·         () পৃথিবীর অবিরাম আবর্তন পরিক্রমণ গতি;

·         () পৃথিবীর মেরুরেখার সর্বদা একই মুখে অবস্থান;

·         () পৃথিবীর কক্ষপথে

সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী আপন মেরুরেখায় কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬.° কোণে হেলে থাকে। পৃথিবী ৬৬.° কোণ করে চলার কারণে ২১এ মার্চ সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে সূর্যের কিরণ উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে। সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে ২১এ জুন পৃথিবী এমন এক জায়গায় আসে যে তখন সূর্যের রশ্মি ভূপৃষ্ঠের ২৩.° উত্তর অক্ষাংশে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে পড়ে সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকে। সে কারণে এই সময় উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য তাপমাত্রাও বেশি হয়ে থাকে। উত্তর গোলার্ধে ২১এ জুন দীর্ঘতম দিন ক্ষুদ্রতম রাত হয়। ২১এ জুন সূর্য উত্তরায়ণের শেষ সীমায় পৌঁছায়, একে কর্কটসংক্রান্তি বলে। ২৩এ সেপ্টেম্বর পুনরায় ২১এ মার্চের মতো সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেদিন সর্বত্র দিবারাত্রি সমান থাকে। ২৩এ সেপ্টেম্বর থেকে আবার সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে কিরণ বেশি দিতে থাকে। ২২এ ডিসেম্বর এমনভাবে কোণ করে থাকে তাতে দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট দিন হয়।

২২এ ডিসেম্বর সূর্য দক্ষিণায়নের শেষ সীমায় পৌঁছায়, একে মকরসংক্রান্তি বলে। সময় সূর্যের রশ্মি ২৩.° দক্ষিণ অক্ষাংশ অর্থাৎ মকরক্রান্তির উপর লম্বভাবে পতিত হয়। ২১এ মার্চ এবং ২৩এ সেপ্টেম্বর নিরক্ষরেখার উপর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। এই দুদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান হয়। সেদিনকে বিষুব (Equinox) বলে। ২১এ মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল তাই একে বাসন্ত বিষুব (Vernal equinox) বলে। ২৩এ সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল। তাই দিনকে শারদ বিষুব (Autumnal equinox) বলে।

·         ২১ জুনউত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন এবং ক্ষুদ্রতম রাত দক্ষিণ গোলার্ধে ক্ষুদ্রতম দিন এবং দীর্ঘতম রাত।

·         ২২ ডিসেম্বরউত্তর গোলার্ধে ক্ষুদ্রতম দিন এবং দীর্ঘতম রাত দক্ষিণ গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন এবং ক্ষুদ্রতম রাত।

·         ২১ মার্চপৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান

·         ২৩ সেপ্টেম্বরপৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান

ঋতু পরিবর্তন (Change of season) : তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে সারাবছরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ভাগকে এক একটি ঋতু বলে। তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে সারাবছরকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- গ্রীষ্মকাল, শরৎকাল, শীতকাল বসন্তকাল। আমরা জানি, সমগ্র পৃথিবীকে দুটো গোলার্ধে ভাগ করা হয়েছে। নিরক্ষরেখার উপরের দিকের অংশকে উত্তর গোলার্ধ এবং নিচের দিকের অংশকে দক্ষিণ গোলার্ধ ধরা হয়। উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল। আবার উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল। তেমনি উত্তর গোলার্ধে যখন বসন্তকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শরৎকাল। আবার উত্তর গোলার্ধে যখন শরৎকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন বসন্তকাল। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান উত্তর গোলার্ধে। এখানে জুন মাসের দিকে গরম বেশি অনুভূত হয়। এই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল।

 

 

 

অনুশীলন অধ্যায়

মোট প্রশ্ন: (২৮)

. পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কত মাইল বেগে ঘুরে ? [পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের একটি বাড়ি

·         ঘন্টায় ৫৭০০০ মাইল বেগে

·         ঘন্টায় ৬৭০০০ মাইল বেগে

·         ঘন্টায় ৬২০০০ মাইল বেগে

·         ঘন্টায় ৭০০০০ মাইল বেগে

. সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর কত সময়ের প্রয়োজন হয় ? [ পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী ২০১৭]

·         ৩৬৫ দিন ঘণ্টা মিনিট

·         ৩৬৫ দিন ঘণ্টা ৪৮ মিনিট

·         ৩৬৫ দিন ঘণ্টা ৪৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড

·         ৩৬৫ দিন ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড

. পৃথিবীতে সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান হয়- [ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েল অধীনে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০১৭/ নৌপরিবহন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, মহিলা শিশুবিষয়ক, তথ্য, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ভূমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী -২০১৩ / জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী ২০১৩/প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাঃ ২০১২/ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ২০১১ ]

·         ২৩ অক্টোবর ২২ ডিসেম্বর

·         ২১ মার্চ ২৩ সেপ্টেম্বর

·         ২৩ মার্চ ২১ সেপ্টেম্বর

·         ২২ ডিসেম্বর ২৩ অক্টোবর

. বছরের সবচেয়ে বড়দিন (তারিখ) [মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অধীন জুনিয়র অডিটর-২০১৪/বিসিআইসি' সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ২০১১ (পূবালী ব্যাংক জুনিয়র অফিসারঃ ০০ ]

·         ২০ জুন

·         ২৩ জুন

·         ২১ জুন

·         ২৪ জুন

. কোন তারিখে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচাইতে বড় এবং রাত সবচাইতে ছোট হয় ? [ ৯ম বেসরকারি প্রভাষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন পরীক্ষা ২০১৩]

·         ২১ মার্চ

·         ২১ জুন

·         ২৩ জুলাই

·         ২১ সেপ্টেম্বর

. পৃথিবীর নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণনকে কি বলা হয় ? [গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালকঃ ০৩/ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক (বরিশাল বিভাগ): ০৩ ]

·         বার্ষিক গতি

·         আহ্নিক গতি

·          ঘূর্ণন গতি

·         চক্রাকার গতি

. কোনটি না থাকলে পৃথিবীর অর্ধাংশে চিরকাল দিন বিপরীত অর্ধাংশে চিরকাল রাত থাকত ? [মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকঃ ০৪/ খাদ্য অধিদপ্তরের অধীন খাদ্য পরিদর্শকঃ ০০ ]

·         বার্ষিক গতি

·         আহ্নিক গতি

·         মেরু গতি

·         মধ্যাকর্ষণ গতি

. আহ্নিক গতিতে পৃথিবী নিজ অক্ষে প্রতিনিয়ত কোন দিকে আবর্তন করছে ? [চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, ইউনিটঃ ০৯-১০ ]

·         পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে

·         পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে

·          উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে

·         দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে

. পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে সৃষ্টি হয়- [ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০১৭/কারিগরি - শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন ইনস্ট্রাক্টর (ননটেক): ০৫ ]

·         ঋতু পরিবর্তন

·         সৌরবছর

·         দিবারাত্রির সংঘটন

·         দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি

১০. ভূ-পৃষ্ঠের সৌরদীপ্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশের সংযোগ স্থলকে কি বলে ? [৩২তম বিসিএস/ ১৮ তম বিসিএস/ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক : ০৬/ বেসামরিক বিমান পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রশাসনিক কর্মকর্তাঃ ০৫ ]

·          ছায়াবৃত্ত

·          গুরুবৃত্ত

·          ঊষা

·          গোধূলি