মহাকাশ অভিযান | Space
Expedition
সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমান রাশিয়া সর্বপ্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে এবং সর্বপ্রথম পুরুষ ও নারীকে মহাকাশে পাঠায়। ফলে রাষ্ট্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে মহাকাশ অভিযান প্রতিযোগিতায় এগিয়ে ছিল। সেই প্রতিযোগিতায় বাঁধ সাধে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । তারা ১৯৬০-এর দশকে মহাকাশ অভিযানে অংশ নেয় । ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে প্রথম মানুষ পাঠিয়ে এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। একই সময়ে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান ও চীন সীমিত উৎক্ষেপণ ক্ষমতা অর্জন করছিল।
মহাশূন্য যাত্রার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
·
স্পুটনিক-
I ( Sputnik-I ) : মহাশূন্যযাত্রার প্রথম পদক্ষেপটির সূচনা হয়েছে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। এই যাত্রার সূচনা করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাশূন্যে স্পুটনিক-১ নামক কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। এটি মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। স্পুটনিক শব্দের অর্থ Fellow Travellers (ভ্রমণসঙ্গী)।
·
স্পুটনিক-II
( Sputnik-II ) : জীবন্ত প্রাণী বহনকারী প্রথম মহাশূন্যযান। সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মিত এ মহাশূন্যযানের যাত্রী ছিল লাইকা (Laika) নামের একটি কুকুর।
·
স্কোর
[Score] : মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ।
·
লুনা-২ [Luna-2] : চন্দ্রপৃষ্ঠকে স্পর্শকারী প্রথম মহাশূন্যযান।
·
লুনা-৩ [Luna-3] : প্রথম উপগ্রহ যা চাঁদের অদৃশ্যমান অংশের ছবি পাঠায়।
·
ভস্টক-১ [Vostoc-1] : মানুষ নিয়ে যাওয়া প্রথম মহাশূন্য যাত্রা। পৃথিবীর প্রথম মহাশূন্যচারী মানুষ হলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন (Yuri Gagarin)। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল তিনি পৃথিবীকে পরিক্রমণ করেন।
·
স্টক-৬ [Stock-6] : প্রথম মহিলা মহাশূন্যচারীবাহী মহাশূন্যযান। এই মহিলা ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেলানটিনা তেরেসকোভা (valentina tereshkova) । ১৯৬৩ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মহাশূন্য যাত্রা করেন।
·
ইনটেলসেট-১ (Intelset-1 ) : বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পাঠানো প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ। পরবর্তীতে উপগ্রহটির নামকরণ করা হয় Early Bird.
·
ভেনেরা-৩ [Venera-3 ] : শুক্র গ্রহে অবতরণকারী প্রথম মহাশূন্যযান। ১৯৬৫ সালের ১৬ নভেম্বর এটি শুক্রগ্রহে অবতরণ করে।
·
লুনা-৯ [Luna-9] : প্রথম সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণকারী (Soft landing) মহাশূন্য অনুসন্ধানী যান।
·
সয়োজ-৪ [ Soyage-4] : প্রথম পরীক্ষামূলক স্পেস স্টেশন।
·
অ্যাপোলো-১১ ( Apollo-11 ) : এই চন্দ্রযানের মাধ্যমে মহাশূন্যচারী নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong) ১৯৬৯ সালের ২০ জুন প্রথম মানুষ হিসাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রথম পা রাখেন। তার ৮ মিনিট পর এডুইন অলড্রিন তাঁকে অনুসরণ করেন।
·
মারস-২ [ Mars-2 ] : মঙ্গলগ্রহে অবতরণকারী প্রথম মহাশূন্য অনুসন্ধানী যান। (Space Probe)
·
পায়োনিয়ার [
Pioneer ] : প্রথম মহাশূন্য অনুসন্ধানীযান যা বহস্পতি গ্রহে খুব নিকট হতে ছবি তুলতে সক্ষম হয়।
·
ল্যান্ডসেট-১ : রিমোট সেনসিং বা দূর অনুধাবনের জন্য পাঠানো প্রথম উপগ্রহ।
·
অ্যাপোলো-সায়োজ টেস্ট প্রজেক্ট ( Apollo Soyuz test Project )
: আন্তর্জাতিক যোগসূত্র স্থাপনের জন্য মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম উপগ্রহ।
·
ভয়েজার (
Vovager ) : বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন এবং পুটোর কক্ষপথে প্রেরিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাশূন্যযান।
·
ভাইকিং
[Viking] : মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো মার্কিন মহাশূন্য অনুসন্ধানী যান।
·
গ্যালিলিও [
Galileo] : পৃথিবী থেকে পাঠানো বৃহস্পতির একটি কৃত্রিম উপগ্রহ ।
·
পাথ ফাইন্ডার [Pathfinder] : 'পাথ ফাইন্ডার' হল মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রেরিত একটি মার্কিন নভোযান। 'পাথ ফাইভারের সাথে পাঠানো রোবটের নাম 'সোজানার'। রোবটটিকে পাঠানো হয়েছিল মঙ্গলগ্রহের শিলারাশি পরীক্ষা ও চিত্র প্রেরণের জন্য।
·
চন্দ্রযান-১ [ Chandrayaan-1 ] : প্রথম ভারতীয় চন্দ্রযান হিসাবে ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে।
·
দেশভিত্তিক প্রথম সফল মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ
দেশ |
উপগ্রহ |
সময়কাল |
রাশিয়া |
স্পুটনিক-১ [Sputunik-1] |
৪ অক্টোবর, ১৯৫৭ |
যুক্তরাষ্ট্র |
এক্সপ্লোরার-১ [Explorer-1] |
১৯৫৮ |
ফ্রান্স |
এস্টেরিক্স [Asterix] |
১৯৬৫ |
জাপান |
ওসুমি [Osumi] |
১৯৭০ |
চীন |
ডং ফং হং-১ [ Dong Fong Hong-1] |
১৯৭০ |
যুক্তরাজ্য |
প্রোসপেরো এক্স-৩ [Prospero X-3] |
১৯৭১ |
ভারত |
রোহিনি-১ [Rohini-1] |
১৯৮০ |
ইউক্রেন |
সিক-১ [Sich-1] |
১৯৯৫ |
ইরান |
উমিদ (Omid) [ইংরেজি নাম Hope ] |
২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ |
দেশভিত্তিক প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ
·
রাশিয়া ১২ এপ্রিল, ১৯৬১ সালে মহাশূন্যয্যন ভস্টক-১ এ করে প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করেন । এতে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন ইউরি গ্যাগারিন । রাশিয়ার মহাশূন্যচারীদের বলা হয় Cosmonaut ।
·
যুক্তরাষ্ট্র ৫মে , ১৯৬১ সালে মহাশূন্যয্যন মার্কারি-রেডস্টোন-৩ এ করে প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করেন । এতে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন অ্যালান শেফার্ড । যুক্তরাষ্ট্রের মহাশূন্যচারীদের বলা হয় Astronaut ।
·
চীন ১৫ অক্টোবর, ২০০৩ সালে মহাশূন্যয্যন শেনঝিউ-৫ এ করে প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করেন । এতে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন ইয়াং লিওই । চীনের মহাশূন্যচারীদের বলা হয় Taikonaut ।
হাবল টেলিস্কোপ [Hubble Space Telescope ]
মহাশূন্য বিভিন্ন চিত্রগ্রহণ গ্রহণের জন্য ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়। এই টেলিস্কোপটি নাসা [NASA] এবং ইসা [ESA] এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়।
ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ [Event Horizon Telescope ] :
পৃথিবী থেকে 55 মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত গ্যালাক্সি M87 এর কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোলের ছবি Event Horizon Telescope এর মাধ্যমে উঠানো হয়।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র [International Space
Station]
পৃথিবীর নিম্নকক্ষে স্থাপিত একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ মহাকাশ স্টেশন। এটি আকার এত বড় যে, এটি পৃথিবী থেকে খালি চোখে দৃশ্যমান হতে পারে।
আকার : |
৫১ মিটার × ১০৯ মিটার × ২০মিটার |
ওজন : |
৩৬৯,৯১৪ কেজি |
নির্মাণকাল |
১৯৯৮-২০১১ খ্রিস্টাব্দ |
নির্মাতা : |
·
National Aeronautics and Space Administration (NASA) ·
European Space Agency (ESA) ·
Russian Federal Space Agency (RKA) ·
Japan Aerospace Exploration Agency (JAXA) ·
Canadian Space Agency (CSA). |
স্কাইল্যাব : |
মার্কিন মহাকাশ স্টেশন। |
মির : |
রুশ মহাকাশ স্টেশন। |
স্পেস শাটল : |
স্পেস শাটল বহুবার মহাশূন্যচারীদের নিয়ে মহাকাশে যায় এবং ফিরে আসে। এর প্রধান সুবিধা হল এটি বার বার ব্যবহার করা যায়। |
কলম্বিয়া : |
নাসার একটি বিধ্বস্ত স্পেস শাটল। |
V-SAT : |
·
'VSAT' এর পূর্ণরূপ Very Small Aparture
Terminal ·
ভূ-পৃষ্ঠ তে স্যাটেলাইটে যোগাযোগ করার জন্য VSAT ব্যবহার করা হয়। |
দূর অনুধাবন ( Remote sensing ) |
উপগ্রহের সাহায্যে দূর থেকে ভূমণ্ডলের অবলোকন। |
মহাশূন্যে পর্যটক : |
·
মহাকাশে প্রথম পর্যটক মার্কিন ধনকুবের ডেনিস টিটো [Dennis Tito] ·
মহাকাশে প্রথম নারী পর্যটক ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিনি আনুশেহ আনসারি [Anousheh Ansaril ] |
প্রথম ও বৃহত্তম মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র: বাইকনুর কসমোড্রেম বিশ্বের প্রথম ও বৃহত্তম মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এটি কাজাখস্তানের মরুভূমিতে অবস্থিত। কাজাখ সরকারের কাছ থেকে রাশিয়ানরা ২০৫০ সাল পর্যন্ত এটি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫০ সালে এটি নির্মাণ করে।
আমরা এটা জনি যে চাঁদ যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তেমন পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এভাবে একটা সময় চাঁদ, সূর্য, পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে একই সরলরেখায় আসে এবং ঐ সরলরেখায বরাবর কিছু সময়ের জন্য চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে যদি পৃথিবী অবস্থান করে ,তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদে পড়ে। এ সময় পৃথিবীর ছায়ার জন্য বা পৃথিবী ভেদ করে চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, ফলে চাঁদকে তখন কিছু সময়ের জন্য দেখা যায় না। এ ঘটনার কারণে যদি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে চাঁদকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য দেখা না যায় তখন একে সংক্ষেপে চন্দ্রগ্রহণ বলে। তবে অন্য কোন কারণে যেমন- আবহাওয়াজনিত কারণে চাঁদকে দেখা না গেলে সেটা চন্দ্রগ্রহণ বলে বিবেচিত হবে না । পূর্ণিমার তিথিতে এ ঘটনা ঘটে। এই সময় পৃথিবী, সূর্যকে আংশিক ঢেকে নিলে পৃথিবীর জন্য চাঁদকে আংশিক দেখা যায় না একে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলে। আর পৃথিবী সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে নিলে পৃথিবীর জন্য চাঁদকে পুরোপুরি দেখা যায় না একে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে। চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ যদি পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে, ফলে চাঁদ স্বাভাবিকের চাইতে বড় ও উজ্জল দেখা যায়। এ কারণে একে সুপারমুন বলা হয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ এবং সূর্য পৃথিবীর দুই পাশে যদি ঠিক এক লাইনে অবস্থান করে তখন তাকে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বলে। চন্দ্রগ্রহণের সময় যদিও পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে ঢেকে ফেলে তারপর ও কিছুটা সূর্যরশ্মি চাঁদের ওপর গিয়ে পড়ে। চাঁদে পৌঁছানোর জন্য ওই সূর্যরশ্মিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এই যাবার পথে সূর্যের নীল রশ্মির বেশিরভাগ বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়ে যায়। ফলে এই প্রক্রিয়ার সময় চাঁদকে লাল দেখায় এবং এই রক্তিম চাঁদকে অনেকসময় নাম দেয়া হয়
"ব্লাড মুন"। চাঁদের তুলনায় পৃথিবীর ব্যাস অনেক বেশি হওয়ায়, পৃথিবীর ঐ ব্যাসের পথ অতিক্রম করতে চাঁদের অনেকটা সময় লাগে। এই জন্য সূর্যগ্রহনের স্থায়ীত্ত্ব কয়েক মিনিট হলেও চন্দ্রগ্রহণের স্থায়ীত্ত্ব ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
আমরা এটা জনি যে সূর্য নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে , সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরছে । আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরছে । এভাবে একটা সময় চাঁদ, সূর্য, পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে একই সরলরেখায় আসে এবং ঐ সরলরেখায বরাবর কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে যদি চাঁদ এসে পড়ে ,তখন পৃথিবী থেকে সূর্যকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে দেখা যায় না । এই ঘটনাকেই সূর্যগ্রহণ বলা হয়। অমাবস্যার পরে বা অমাবস্যার তিথিতে নতুন চাঁদ উঠার সময় এ ঘটনা ঘটে। পৃথিবীতে প্রতি বছর অন্তত দুই থেকে পাচঁটি সূর্যগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে শূন্য থেকে দুইটি সূর্যগ্রহণ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ যদি সূর্যকে সম্পূর্ণরুপে ঢেকে ফেলতে পারে অর্থাৎ পৃথিবী থেকে চাঁদের জন্য সূর্যকে একেবারেই দেখা না যায় , তখন একে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ বলা হয় । পূর্ণ সূর্যগ্রহণে সূর্য পুরো ঢাকা পড়ে যায় বলে সৌরমুকুট দেখা যায়। তবে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ যদি সূর্যকে আংশিক ঢেকে রাখে তখন একে আংশিক সূর্যগ্রহণ বলা হয় । কিন্তু চাঁদের কৌণিক ব্যাস সূর্যের চেয়ে ছোট হলে হবে বলয় গ্রহণ। অমাবস্যার সময়ে সূর্যগ্রহণ হয় তবে সব অমাবস্যায় সূর্যগ্রহণ হয় না, কারণ চাঁদ ভূ-কক্ষের সাথে ৫ ডিগ্রী হেলে থাকে।
সৌরজগৎ | Solar System
সূর্য এবং তার গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, অসংখ্য ধূমকেতু ও অগণিত উল্কা নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত । সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রহগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সৌরজগতের যাবতীয় গ্রহ-উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। সূর্যকে ভিত্তি করে সৌরজগতের যাবতীয় কাজ-কর্ম চলে। এই মহাবিশ্বের বিশালতার মধ্যে সৌরজগৎ নিতান্তই ছোট।
আবিষ্কার : প্রাচীনকাল হতে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরিতেছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় অব্দে জ্যোতির্বিদ অ্যারিস্টর্কাস (Aristarchus) প্রথম প্রস্তাব করেন, 'পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করিতেছে' কিন্তু অ্যারিস্টর্কাস এর কথা মানুষ বিশ্বাস করেনি। 'সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করিতেছে'- ষোড়শ শতাব্দীতে নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicolaus Copernicus) গাণিতিক মডেলসহ এ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যা Heliocentrism নামে পরিচিত।
সূর্য
সূর্য (Sun): সূর্য একটি নক্ষত্র। এটি একটি মাঝারি আকারের হলুদ বর্ণের নক্ষত্র। এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার এবং ভর প্রায় ১.৯৯×১০১৩ কিলোগ্রাম। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্ক। সূর্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহের তাপ ও আলোর মূল উৎস সূর্য। সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী চির অন্ধকার থাকত এবং পৃথিবীতে জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগতের কিছুই বাঁচত না। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। সূর্য থেকে গ্রহগুলো দূরত্ব অনুযায়ী পর পর যেভাবে রয়েছে তা হলো বুধ (Mercury), শুক্র (Venus), পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus) এবং নেপচুন (Neptune)। গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি এবং ছোট বুধ। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি বেশ উজ্জ্বল এবং কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই দেখা যায়। ইউরেনাস ও নেপচুন এতটা কম উজ্জ্বল যে দূরবীক্ষণ ছাড়া এদের দেখা যায় না।
·
গতিবেগ : গ্যালাক্সিতে সূর্যের গতিবেগ ২২০ কি:মি:/ সেকেন্ড।
·
উপাদান : সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন, আসলে মোট ভরের তিন চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেনের পরেই সবচেয়ে প্রাচুর্য্যময় মৌল হিলিয়াম। উপাদানগুলোর মধ্যে হাইড্রোজেন ৯১.২%, হিলিয়াম ৮.৭%, অন্যান্য ০.১%।
·
ব্যাস : ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কি:মি। ব্যাসে সূর্য পৃথিবীর ১০৯ গুণ এবং চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ বড়।
·
আয়তন : আয়তনে সূর্য পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুণ বড় এবং চাঁদের চেয়ে ২ কোটি ৩০ লক্ষ গুণ বড়।
·
বয়স : ৫০০০ মিলিয়ন বৎসর
·
তাপমাত্রা : কেন্দ্রভাগেঃ প্রায় ১৫০,০০০,০০০° সে । পৃষ্ঠভাগেঃ প্রায় ৬,০০০° সে.।
·
আবর্তন : সূর্য নিজ অক্ষের উপর এক বার আবর্তন করতে ২৫ দিন সময় লাগে।
·
সৌরকলঙ্ক : সূর্যপৃষ্ঠের যে সব স্থানের তাপমাত্রা এর পার্শ্ববর্তী স্থান অপেক্ষা কম, পৃথিবী থেকে সে স্থানগুলো কালো দেখায়, তাদের সৌরকলঙ্ক বলে। সৌর কলঙ্কগুলোকে সর্বপ্রথম গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন।
·
সৌর ঝলক : সৌর ঝলক হল সূর্য থেকে উৎক্ষিপ্ত চার্জযুক্ত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। সূর্য সাধারণত প্রতি ৩-৪ বছরে একবার কয়েকটন পরিমাণ চার্জযুক্ত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম আলোর ঝলকানিসহ মহাশূন্যে ছুঁড়ে দেয় যা ৫ কোটি কি.মি. জুড়ে বিস্তৃত হয়। সৌর ঝলকের কারণে পৃথিবীতে বেশকিছু সমস্যা বিশেষ করে চৌম্বক ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে টেলিফোন সংযোগ, বৈদ্যুতিক তার ও ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটতে পারে।
গ্রহ
সৌরজগতের গ্রহ ৮টি। সূর্য থেকে সৌরজগতের গ্রহগুলো দূরত্ব অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে অবস্থান করছে। পৃথিবী (Earth) ছাড়া অন্যান্য সকল গ্রহ এবং উপগ্রহের নাম গ্রিক বা রোমান পৌরাণিক কাহিনী হতে নেওয়া হয়েছে।
1.
বুধ
(Mercury): রোমান বাণিজ্য দেবতার নামানুসারে
2.
শুক্র
(Venus): রোমান ভালবাসা এবং সৌন্দর্যের দেবীর নামানুসারে
3.
পৃথিবী
(Earth): .......
4.
মঙ্গল
(Mars): রোমান যুদ্ধদেবতার নামানুসারে।
5.
বৃহস্পতি
(Jupiter): রোমান দেবতাদের রাজার নামানুসারে।
6.
শনি
(Saturn): রোমান কৃষি দেবতার নামানুসারে।
7.
ইউরেনাস
(Uranus): রোমান স্বর্গের দেবতার নামানুসারে।
8.
নেপচুন
(Neptune): রোমান সমুদ্র দেবতার নামানুসারে।
বামন গ্রহ : বামন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ছোটো আকার বা খর্বাকৃতি। অর্থাৎ বামন গ্রহ বলতে বোঝায় ছোটো আকৃতির গ্রহ। এগুলো এমন একটি গ্রহীয়-ভরযুক্ত বস্তু যা গ্রহগুলির মতো মহাকাশে সেটির অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না, আবার যা একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহও নয়। অর্থাৎ, বামন গ্রহগুলি সূর্যকে প্রত্যক্ষভাবে প্রদক্ষিণ করে এবং নির্দিষ্ট আকার পাওয়ার জন্য এগুলির ভর যথেষ্টই রয়েছে। সৌরজগতে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত এমন ৫টি বামন গ্রহ রয়েছে। যথাঃ
১. সেরেস (Ceres)
২. প্লুটো (Pluto)
৩. হাউমিয়া (Haumea)
৪. মেকমেক (Makemake)
৫. এরিস (Eris)
উপগ্রহ : সৌরজগতের সর্বমোট ৪৯টি উপগ্রহ আছে। শনির সর্বাধিক ২২টি উপগ্রহ আছে। বুধ ও শুক্রের কোন উপগ্রহ নেই। পৃথিবীর ১টি, মঙ্গলের ২টি, বৃহস্পতির ১৬টি, ইউরেনাসের ৫টি, নেপচুনের ২টি এবং প্লুটোর ১টি উপগ্রহ রয়েছে। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ বৃহস্পতির গ্যানিমেড এবং সবচেয়ে ছোট উপগ্রহ বৃহস্পতির লেডা ।
উপগ্রহগুলোর আকারের ক্রম:
গ্যানিমেড > টাইটান > ক্যালিস্টা > লো > চাঁদ > ..... > লেডা
গ্রহাণুপুঞ্জ : মঙ্গল গ্রহের পর ৫৬.৩১ কোটি কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গ্রহ নেই । এই বিস্তীর্ণ মহাশূন্যে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জ্যোতিষ্ক রয়েছে। ১.৬ কিলোমিটার থেকে ৮০৫ কিলোমিটার ব্যাস সম্পন্ন এ সব জ্যোতিষ্ককে গ্রহাণু বলে। বিজ্ঞানীগণ এরূপ সহস্রাধিক গ্রহাণুর কক্ষপথ সুনির্দিষ্ট করেছেন। দলবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে এগুলোকে একত্রিতভাবে গ্রহাণুপুঞ্জ বলে।
বুধ (Mercury): বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। এটি সৌরজগতের দ্রুততম গ্রহ। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার; এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার। সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকায় সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে সবসময় একে দেখা যায় না। সৌরজগতের গ্রহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন। সুতরাং বুধ গ্রহে ৮৮ দিনে এক বছর হয়। বুধের মাধ্যাকর্ষণ বল এত কম যে এটি কোনো বায়ুমন্ডল ধরে রাখতে পারে না। এখানে নেই মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস ও পানি। সুতরাং প্রাণির অস্তিত্ব নেই। ১৯৭৪ সালে মার্কিন মহাশূন্যযান মেরিনার-১০ বুধের যে ছবি পাঠায় তা থেকে দেখা যায় যে, বুধের উপরিতল একদম চাঁদের মতো। ভূত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা এবং এবড়ো-থেবড়ো। এখানে আছে অসংখ্য পাহাড় ও সমতলভূমি। বুধের কোনো উপগ্রহ নেই।
শুক্র (Venus): শুক্র পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ। একে 'পৃথিবীর জমজ গ্রহ' বলা হয়। বুধের মতো শুক্র গ্রহকেও ভোরের আকাশে শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা হিসেবে দেখা যায়। শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা আসলে কোনো তারা নয়। কিন্তু নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে বলেই আমরা একে ভুল করে তারা বলি। শুক্র গ্রহটি ঘন মেঘে ঢাকা। তাই এর উপরিভাগ থেকে সূর্যকে কখনই দেখা যায় না। শুক্রের মেঘাচ্ছন্ন বায়ুমন্ডল প্রধানত কার্বন ডাইঅক্সাইডের তৈরি। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ। সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার। এর দিন ও রাতের মধ্যে আলোর বিশেষ কোনো তারতম্য হয় না। এখানে বৃষ্টি হয় তবে এসিড বৃষ্টি। শুক্রের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার। সূর্যকে ঘুরে আসতে শুক্রের সময় লাগে ২২৫ দিন। সুতরাং শুক্রে ২২৫ দিনে এক বছর। শুক্রের কোনো উপগ্রহ নেই। সকল গ্রহ এদের নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্বে পাক খেলেও একমাত্র শুক্র গ্রহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাক খায়।
পৃথিবী (Earth): পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। সূর্য থেকে দূরত্বের ক্রম অনুসারে পৃথিবী সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ৯৩ মিলিয়ন মাইল বা ১৫ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলোমিটার। সূর্য হতে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সে. বা ৮.৩২ মিনিট । পৃথিবী একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। তাই এখানে ৩৬৫ দিনে এক বছর। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ (ইটালিয়ান ভাষায় লুনা) । পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের একবার ঘুরতে সময় লাগে ২৯ দিন। আয়তন এবং ব্যাসে পৃথিবী চাঁদের চেয়ে যথাক্রমে ৫০ গুণ এবং ৪ গুণ বড় । পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩,৮১,৫০০ কিমি বা ২,৩৮,৪৩৭ মাইল। পৃথিবী থেকে চাঁদের সর্বনিম্ন দূরত্ব ৩,৫৬,৩২৯ কি:মি: বা ২.২২,৭০৫ মাইল এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব ৪,০৬,৬৭১ কিমি: বা ২.৫২,৫৯০ মাইল। চাঁদ হতে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগবে প্রায় ১.৩ সেকেন্ড। পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার বায়ুমন্ডলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও তাপমাত্রা রয়েছে যা উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বসবাসের উপযোগী। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে।
মঙ্গল (Mars): মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী। বছরের অধিকাংশ সময় একে দেখা যায়। খালি চোখে মঙ্গল গ্রহকে লালচে দেখায় কারণ মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে খুবই স্বল্প পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এ গ্রহের পাথরগুলো মরচে পড়ে গেছে । মঙ্গল গ্রহের আকাশের রঙ গোলাপী। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক। এই গ্রহে দিনরাত্রির পরিমাণ পৃথিবীর প্রায় সমান। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান কার্বন ডাইঅক্সাইড (৯৯%)। এ গ্রহে অক্সিজেন ও পানির পরিমাণ খুবই কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি (শতকরা ৯৯ ভাগ) যে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মঙ্গলে ফোবোস ও ডিমোস নামে দুটি উপগ্রহ রয়েছে।
বৃহস্পতি (Jupiter): বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম গ্রহ। সবচেয়ে বড় গ্রহ বলে একে গ্রহরাজ বলা হয়। এর ব্যাস ১,৪২,৮০০ কিলোমিটার। আয়তনে বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০ গুণ বড়। এটি সূর্য থেকে প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে। তাই পৃথিবীর সাতাশ ভাগের একভাগ তাপ পায়। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি। বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে তাপমাত্রা খুবই কম এবং অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি (প্রায় ৩০,০০০° সেলসিয়াস)। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির সময় লাগে ৪,৩৩১ দিন বা প্রায় ১২ বছর । বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৭৯টি। এর প্রধান উপগ্রহ লো, ইউরোপা, গ্যানিমেড ও ক্যালিস্টো। এ গ্রহে জীবের অস্তিত্ব নেই।
শনি (Saturn): শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। এটি গ্যাসের তৈরি বিশাল এক গোলক। এর ব্যাস ১,২০,০০০ কিলোমিটার। শনির ভূত্বক বরফে ঢাকা। এর বায়ুমন্ডলে আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মিশ্রণ, মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে শনির সময় লাগে পৃথিবীর প্রায় ২৯.৫ বছরের সমান। শনি গ্রহকে ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার বলয় এবং এর ৮২টি উপগ্রহ আছে। শনির প্রধান উপগ্রহ টাইটান, হুয়া, ডাইওন, ক্যাপিটাস, টেথ্রিস।
ইউরেনাস (Uranus): ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। এটি সৌরজগতের শীতলতম গ্রহ। ইউরেনাসকে সবুজ গ্রহ বলা হয় কারণ এটির বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উপস্থিত হওয়ায় এটিকে সবুজ রঙের দেখা যায়। এ গ্রহটি সূর্য থেকে ২৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এ গ্রহের সময় লাগে ৮৪ বছর। এ গ্রহের গড় ব্যাস ৪৯,০০০ কিলোমিটার। এ গ্রহটি হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত, আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অধিক। শনির মতো ইউরেনাসেরও কয়েকটি বলয় আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে শনির বলয়ের ন্যায় এ বলয়গুলো উজ্জ্বল নয়। এর উপগ্রহ সংখ্যা ২৭টি। মিরিন্ডা, এরিয়েল, আম্ব্রিয়েল, টাইটানিয়া এবং ওবেরন ইউরেনাসের ৫টি উপগ্রহ।
নেপচুন (Neptune): নেপচুন সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। এখানে সূর্যের আলো ও তাপ খুব কম। এর ব্যাস ৪৮,৪০০ কিলোমিটার। এ গ্রহ আয়তনে প্রায় ৭২টি পৃথিবীর সমান এবং ভর ১৭টি পৃথিবীর ভরের সমান। এর বায়ুমণ্ডলে বেশিরভাগই মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। এর উপগ্রহ সংখ্যা ১৪টি। ট্রাইটন ও নেরাইড নেপচুনের দুইটি উপগ্রহ । গ্রহসমূহের মধ্যে নেপচুনের সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে নেপচুনের সময় লাগে ১৬৫ বছর।
প্লুটো [Pluto] : ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট প্লুটো গ্রহের মর্যাদা হারায়। প্লুটোকে বর্তমানে 'বামন গ্রহ' (dwarf planet) এর মর্যাদা দেওয়া হয়। প্লুটোর উপগ্রহের নাম ক্যারন।
অনুশীলন অধ্যায়
১. মহাকাশে প্রথম আনন্দ ভ্রমণকারী কে ? [দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো সহকারী পরিচালকঃ ০১ ]
·
নেইল আর্মস্ট্রং
·
ডেনিস টিটো
·
মাইকেল কলিন্স
·
ইউরি গ্যাগারিন
২. রাশিয়ার মহাকাশ উৎক্ষেপক কেন্দ্র ‘বাইকনুর কসমিড্রম' কোথায় অবস্থিত ? [সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এস্টিমেটর ২০১৯ ]
·
কাজাখস্তান
·
উজবেকিস্তান
·
তাজাকিস্তান
·
কিরগিজিস্তান
৩. কোন দেশ প্রথম রকেট আবিষ্কার করে ? [পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মেডিকেল অফিসারঃ ৮৪ ]
·
যুক্তরাষ্ট্র
·
রাশিয়া
·
চীন
·
জাপান
৪. প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উড্ডয়ন করে কোন দেশ ? [প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাঃ২০১২ ]
·
যুক্তরাষ্ট্র
·
রাশিয়া
·
চীন
·
জাপান
৫. মহাশূন্য প্রথম নভোচারী একজন – [জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অধীন সহকারী সচিবঃ ৯৬ ]
·
আমেরিকান
·
ব্রিটিশ
·
ফরাসি
·
রাশিয়ান
৬. ‘Sputnik' is the name of : [ IFIC ব্যাংক প্রবেশনারী অফিসারঃ ৯৬]
·
A comet
·
An American space object
·
The first space satellite
·
None of the above
৭. মহাশূন্যে উৎক্ষিপ্ত প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম কি ? [চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, খ ইউনিটঃ ০৭-০৮/ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, খ ইউনিটঃ ০৫-০৬/ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বাস্থ্য সহকারীঃ ০৪ ]
·
অ্যাপোলো
·
চ্যালেঞ্জার
·
স্পুটনিক
·
এক্সপ্লোরার
৮. স্পুটনিক-১ কখন ভূ-উপগ্রহ কক্ষপথে সাফল্যজনকভাবে নিক্ষেপ করা হয় ? [সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন থানা ও জেলা সমাজসেবা অফিসারঃ ৯৯ ]
·
১৯৫৭ সালে
·
১৯৬০ সালে
·
১৯৬৬ সালে
·
১৯৬৯ সালে
৯. কোন সনে প্রথম নভোযান আকাশে পাঠানো হয় ? [রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অফিসারঃ ৯৯ ]
·
১৯৫৭
·
১৯৫৯
·
১৯৬১
·
১৯৬৩
১০. মহাশূন্য প্রথম কোন দেশ কুকুর লাইকা পাঠায় ? [পরিকল্পনা এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালকঃ ০৬ ]
·
যুক্তরাষ্ট্র
·
রাশিয়া
·
জাপান