ধাতু, প্রকৃতি এবং প্রত্যয়

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি বাংলা ২য় প্ত্র

ধাতু, প্রকৃতি এবং প্রত্যয়

 

ধাতু : ক্রিয়ার মূল অংশকে ধাতু বলে। বাংলা ভাষায় বা ব্যাকরণে অনেক ক্রিয়াপদ আছে। সেই সব ক্রিয়াপদের প্রধান অংশকে ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়।

 

প্রকৃতি : যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে।

 

প্রত্যয় : শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে। 

 

ক্রিয়ামূল বলতে ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য বা মূল অংশের অন্তর্নিহিত ভাবটির দ্যোতনা [টীকা ] করে[] অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থানকে বুঝায়। ক্রিয়ামূলকে ধাতুও বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করতে মূল শব্দের পূর্বে "√" করণী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

 

 

 

মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু

যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর্‌, √চল, √দেখ্‌, √খেল,√পড়, √খা।

 

উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: () বাংলা ধাতু () সংস্কৃত ধাতু এবং () বিদেশি ধাতু

 

বাংলা ধাতু কাকে বলে :-

যেসব ধাতু সংস্কৃত থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তাকে বাংলা ধাতু বলে।যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলা ভাষায় আসেনি সেগুলো হলো বাংলা ধাতু।

 

যেমন -

 

আঁক্ + = আঁকা - কী সব আঁকাআঁকি করছ

 

দেখ্‌ + = দেখা - জাদুঘর আমার কয়েকবার দেখা।

 

কক্ + = কর - তুমি কী কর?

 

হাস + = হাসি - তোমার হাসিটি খুব সুন্দর

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

 

#.ধাতু' আরেক নাম-

ক্রিয়া

সিদ্ধধাতু

ক্রিয়া প্রকৃতি

মৌলিক ধাতু

 

#.সমধাতুজ কর্মের অপর নাম কী?

মিশ্র কর্ম

ধাতুর্থক কর্ম

জটিল কর্ম

ধ্বন্যাত্মক কর্ম

 

#.কোনটি খাটি বাংলা ধাতু ?

কৃ

টান

হাস

আট

 

#.ধাতু কয় প্রকার?

দুই

তিন

চার

পাঁচ

 

#.কোন ধাতুকেনিজন্ডধাতু বলা হয়?

সাধিত ধাতু

প্রজোজক ধাতু

সংস্কৃতমূলক ধাতু

মৌলিক ধাতু

 

সংস্কৃত ধাতু কাকে বলে :-

 

তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতুকে সংস্কৃত খাতু বলে।

 

অথবা আমরা বলতে পারি, বাংলা ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে।

 

যেমন -

 

অঙ্ক + অন = অঙ্কন : ছোটদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় কিছু প্রথম হয়েছে।

 

দৃশ + = দৃশ্য : দুর্ঘটনার মর্মান্তিক দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না।

 

কৃ + তব্য = কর্তব্য : ছাত্রদের কর্তব্য লেখাপড়া করা।

 

হস্ + = হাস্য: অকারণ হাস্য-পরিহাস ত্যাগ কর

 

বিদেশাগত ধাতু কাকে বলে :-

 

বিদেশি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বাংলা ভাষায় প্রয়োগ হয় , তাকে বিদেশাগত ধাতু বা বিদেশি ধাতু বলে।

 

প্রধানত হিন্দি এবং আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বিদেশাগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়।

 

যেমন -

 

খাট্ + বে = খাটবে - যত বেশি খাটবে ততই সুফল পাবে।

 

বিগড় + আনো  = বিগড়ানো - তোমার বিগড়ানো ছেলেকে ভালো করার সাধ্য আমার নেই। 

 

টান্ + = টানা - আমাকে নিয়ে টানাটানি করো না, আমি যাব না।

 

জম্ + আট = জমাট - অন্ধকার বেশ জমাট বেঁধেছে।

 

সাধিত ধাতু কাকে বলে :-

 

মৌলিক ধাতু বা নাম শব্দের পরে -প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়ে থাকে, তাকেই সাধিত ধাতু বলে।

 

যেমন - দেখ্‌ + = দেখা, পড়+ = পড়া, বল+ = বলা।

 

সাধিত ধাতুর সঙ্গে কাল পুরুষসূচক বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। (এখানে দেখ্‌++বর্তমান কালের সাধারণ নামপুরুষের ক্রিয়া বিভক্তি 'য়' দেখায়) এরূপ শোনায়, বসায় ইত্যাদি।

 

সাধিত ধাতুর কয় প্রকার কি কি :-

 

সাধিত ধাতু তিন প্রকার। যথা:

 

. প্রযোজক ধাতু,

 

. নাম ধাতু এবং

 

. কর্মবাচ্যের ধাতু।

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

 

#.কোনটি সাধুরীতির বৈশিষ্ট্য?

তৎসম শব্দবহুল

তদ্ভব শব্দবহুল

পরিবর্তনশীল

সহজবোধ্য

 

#.সাধুরীতির বৈশিষ্ট্য নয় কোনটি?

 

গুরুগম্ভীর তৎসম শব্দবহুল

ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে

পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত

সংক্ষিপ্ত সহজবোধ্য

 

#.সাধু চলিত নীতিতে অভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয় কোনটি ?

সর্বনাম

ক্রিয়া

অব্যয়

বিশেষন

 

#.সাধু চলিত রীতিতে অভিন্নরুপে ব্যবহৃত হয় -

অব্যয়

সম্বোধন পদ

সর্বনাম

ক্রিয়া

#.সাধু চলিত রীতির পার্থক্য সূচিত হয়-

বিশেষ্য বিশেষন

সন্ধি উপসর্গে

প্রকৃতি প্রত্যয়

ক্রিয়া সর্বনাম

 

নাম ধাতু কাকে বলে :-

বিশেষ্য, বিশেষণ অনুকার অব্যয়ের পরে -প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে নাম ধাতু বলে।

যেমন -

ঘুম্ + = ঘুমা : বাবা ঘুমাচ্ছেন।

ধমক্ + = ধমকা : আমাকে যতই ধমকাও, আমি কাজ করব না।

 

হাত্‌ + = হাতা : অন্যের পকেট হাতানো আমার স্বভাব নয়।

 

প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু

 

মৌলিক ধাতুর পরে -প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু বলে।

 

যেমন -

 

পড়্ + = পড়া : শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।

 

কর্ + = করা : সে নিজে করে না, অন্যকে দিয়ে করায়।

 

নাচ্ + = নাচা : 'ওরে ভোঁদড় ফিরে চা, খুকুর নাচন দেখে যা।

 

 

 

কর্মবাচ্যের ধাতু কাকে বলে :-

 

বাক্যে কর্তার চেয়ে কর্মের সাথে যখন ক্রিয়ার সম্পর্ক প্রধান হয়ে ওঠে, তখন সে ক্রিয়াকে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া বলে। কর্মবাচ্যের ক্রিয়ার মূলকে কর্মবাচ্যের ধাতু বলে।

 

মৌলিক ধাতুর সাথে -প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তা কর্মবাচ্যের ধাতু। যেমন :

 

কর্ + = করা : আমি তোমাকে অঙ্কটি করতে বলেছি।

 

হার্ + = হারা : বইটি হারিয়ে ফেলেছি।

 

খা + ওয়া = খাওয়া : তোমার খাওয়া হলে আমাকে বলো।

 

যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু.

যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু হল সেই ধাতু যা বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধনাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে মৌলিক ধাতু (যেমন: কর্, দে, , পা, খা) যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ

·        বিশেষ্যের সাথে মৌলিক ধাতু: "ভয় কর্" (ভয় একটি বিশেষ্য এবং কর্ একটি মৌলিক ধাতু)

·        বিশেষণের সাথে মৌলিক ধাতু: "ভালো হ্" (ভালো একটি বিশেষণ এবং হ্ একটি মৌলিক ধাতু)

·        ধনাত্মক অব্যয়ের সাথে মৌলিক ধাতু: "মার খা" (মার একটি ধনাত্মক অব্যয় এবং খা একটি মৌলিক ধাতু)

অন্যান্য উদাহরণপূজা কর্‌, রাজি , কষ্ট পা, শাস্তি দে.

 

 

প্রাতিপাদিক

 

প্রতিপাদিক হলো বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দ এবং বিভক্তিহীন তবে প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়া-প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ ক্রিয়ামূল গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক

 

 

নাম-প্রাতিপাদিক

বিভক্তহীন প্রত্যয়হীন কিংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে 

 

 

ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক

বিভক্তহীন প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: কর্‌ + = করা + কে = করাকে

 

মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু

যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর্‌, √চল, √দেখ্‌, √খেল,√পড়, √খা।

 

উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: () বাংলা ধাতু () সংস্কৃত ধাতু এবং () বিদেশি ধাতু

 

 

প্রকৃতি

প্রকৃতি : যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে।

 

প্রকৃতি দুই প্রকার : নাম প্রকৃতি ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু।

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

#.'ভাবুক' এর প্রকৃতি প্রত্যয় কোনটি?

ভাব্ + উক = বাংলা কৃৎপ্রত্যয়

ভাব + উক = কৃৎপ্রত্যয়

ভাব + উক = সংস্কৃত

ভাব + ওক = তদ্ধিত প্রত্যয়

 

#.'শ্রাব্য' শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয়ঃ

শ্রু +

শ্রু +

শ্রু+ ব্য

শ্র +

 

#.‘জয়' শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয়-

জি+

+অচ

+অউ

জি+

 

#.‘প্রেমশব্দটির প্রকৃতি প্রত্যয়-

প্রে +

প্রিয় +

প্রিয় + ইমন

প্রেম + +

 

#.‘উক্তিশব্দের প্রকৃতি প্রত্যয়-

উক+তি

বচ+তিন

বচ+তি

উদ+তি

 

নাম প্রকৃতি

নাম প্রকৃতি : হাতল, ফুলেল, মুখর শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা পাইহাত + = হাতল (বাঁট), -

 

ফুল + এল = ফুলেল (ফুলজাত) এবং মুখ + = মুখর (বাচাল) এখানে হাত, ফুল মুখ শব্দগুলোকে বলা হয় প্রকৃতি বা মূল অংশ। এগুলোর নাম প্রকৃতি।

 

ক্রিয়া প্রকৃতি

ক্রিয়া প্রকৃতি : আবার চলন্ত, জমা লিখিত শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা পাইচল্‌+অন্ত= চলন্ত (চলমান), √জম্ + [ = জমা (সঞ্চিত) এবংলিখ্ + ইত লিখিত (যা লেখা হয়েছে) এখানে চল্, জম্ লিখ্ = তিনটি ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়ার মূল অংশ। এগুলোকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু

 

 

প্রত্যয়

প্রত্যয় : শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে। কয়েকটি শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় বিশ্লেষণ করে দেখানো হলো

 

 

 

বাংলা শব্দ গঠনে দুই প্রকার প্রত্যয় পাওয়া যায় : . তদ্ধিত প্রত্যয় . কৃৎ প্রত্যয়

 

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

 

#.প্রত্যয়ের কাজ কী?

বাক্যস্থিত শব্দে অন্বয় স্থাপন

নতুন শব্দ গঠন

সমস্যমান পদ নির্ণয়

উচ্চারণ শ্রুতিমধুর করা

 

#.‘ছাত্রীকোন প্রত্যয়ের উদাহরণ?

কৃৎ

সংস্কৃত

তদ্ধিত

বাংলা কৃৎ

বাংলা প্রত্যয়

#.মূল ক্রিয়ার (এক দল) ধাতুর সাথে কোন প্রত্যয় যোগে প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু গঠিত হয়?

' প্রত্যয় যোগে

' প্রত্যয় যোগে

' প্রত্যয় যোগে

' প্রত্যয় যোগে

 

#.কোনটি তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ?

পড়ুয়া

রাখাল

ঘরোয়া

চলন্ত

 

#.একই ধরণের প্রত্যয়ের উদাহরণ কোনটি?

রাখাল ,ঢাকাই

চলন্ত, জেলে

নিভন্ত ' পাঠক

নায়ক, পাবনাই

 

তদ্ধিত প্রত্যয়

তদ্ধিত প্রত্যয় : শব্দমূল বা নাম প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন-হাতল, ফুলেল মুখর শব্দের যথাক্রমে , এল এবং তদ্ধিত প্রত্যয়

 

 

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

. -প্রত্যয়

() অবজ্ঞার্থে : চোর + চোরা, কেষ্ট + = কেষ্টা।

 

() বৃহদার্থে : ডিঙি + = ডিঙা (সপ্তডিঙা মধুকর)

 

() সদৃশ অর্থে : বাঘ+=বাঘা, হাত + =হাতা। এরূপ : কাল - কালা (চিকন কালা), কানকানা

 

() ‘তাতে আছেবাতার আছে' অর্থে : জল + =জলা, গোদ + =গোদা। এরূপ : রোগ -রোগা, : চাল- চালা, লুন-লুনা>লোনা

 

() সমষ্টি অর্থে : বিশবিশা, বাইশ-বাইশা (মাসের বাইশা> বাইশে।

 

() স্বার্থে : জট+=জটা, চোখ-চোখা, চাকচাকা

 

() ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে : হাজির - হাজিরা, চাষ-চাষা।

 

() জাত আগত অর্থে : মহিষ ভইস-ভয়সা (ঘি), দখিন-দখিনা> দখনে (হাওয়া)

 

. আই-প্রত্যয়

 

() ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে : বড়+আই=বড়াই, চড়া +আই=চড়াই।

 

() আদরার্থে : কানু+আই=কানাই, নিম+আই=নিমাই।

 

() স্ত্রী বা পুরুষবাচক শব্দের বিপরীত বোঝাতে : বোন+আই= বোনাই, ননদ-নন্দাই, জেঠা-জেঠাই (মা) () জাত অর্থে : ঢাকা+আই=ঢাকাই (জামদানি), পাবনা-পাবনাই (শাড়ি)

 

() সমগুণবাচক বিশেষ্য গঠনে : মিঠা +আই=মিঠাই।

 

() বিশেষণ গঠনে : চোর চোরাই (মাল), মোগল-মোগলাই (পরোটা)

 

. আমি/আম/আমো / মি 2 -প্রত্যয়

 

() ভাব অর্থে : ইতর+আমি =ইতরামি, পাগল+ আমি = পাগলামি, চোর+আমি =চোরামি, বাঁদর+আমি =বাঁদরামি, ফাজিল +আমো=ফাজলামো () বৃত্তি (জীবিকা) অর্থে : ঠক+আমো=ঠকামো (ঠকের বৃত্তি বা ভাব), , ঘর+আমি=ঘরামি

 

() নিন্দা জ্ঞাপন : জেঠা+আমি-জেঠামি, ছেলে+আমি=ছেলেমি।

 

. /-প্রত্যয়

 

() ভাব অর্থে : বাহাদুর + = বাহাদুরি, উমেদার-উমেদারি।

 

() বৃত্তি বা ব্যবসায় অর্থে : ডাক্তার-ডাক্তারি, মোক্তার-মোক্তারি, পোদ্দার-পোদ্দারি, ব্যাপার- ব্যাপারি, চাষ-চাষি

 

() মালিক অর্থে : জমিদার-জমিদারি, দোকান-দোকানি।

 

() জাত, আগত বা সম্বন্ধ বোঝাতে : ভাগলপুর-ভাগলপুরি, মাদ্রাজ -মাদ্রাজি, রেশম-রেশমি,

 

. ইয়া> -প্রত্যয়

 

সরকারসরকারি (সম্বন্ধ বাচক)

 

() তৎকালীনতা বোঝাতে : সেকাল + -সেকেলে, একাল+=একেলে, ভাদর +ইয়া = ভাদরিয়া> ভাদুরে (কইমাছ)

 

() উপকরণ বোঝাতে : পাথর - পাথরিয়া পাথুরে, মাটিমেটে, বালি- বেলে।

 

() উপজীবিকা অর্থে : জাল-জালিয়া জেলে, মোট-মুটে।

 

() নৈপুণ্য বোঝাতে : খুন-খুনিয়া খুনে, দেমাক-দেমাকে, না (নৌকা) – নাইয়া নেয়ে

 

() অব্যয়জাত বিশেষণ গঠনে : টনটনটনটনে (জ্ঞান), কনকনকনকনে (শীত), গনগনগনগনে (আগুন), চকচকচকচকে (জুতা)

 

. উয়া> -প্রত্যয়

 

() রোগগ্রস্ত অর্থে : জ্বর + উয়া = জ্বরুয়া জ্বরো। বাত+উয়া=বাতুয়া> বেতো (ঘোড়া)

 

() যুক্ত অর্থে : টাকটেকো

 

() সেই উপকরণে নির্মিত অর্থে : খড়খড়ো (খড়োঘর)

 

() জাত অর্থে : ধানধেনো

 

() সংশ্লিষ্ট অর্থে : মাঠ-মেঠো, গাঁ-গাঁইয়া গেঁয়ো :

 

() উপজীবিকা অর্থে : মাছ-মাছুয়া> মেছো

 

() বিশেষণ গঠনে : দাঁত-দেঁতো (হাসি), ছাঁদ-ছেঁদো (কথা), তেল-তেলো> তেলা (মাথা), কুঁজ- কুঁজো (লোক)

 

. -প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : ঢাল + = ঢালু, কল+= =কলু।

 

. উক-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : লাজ-লাজুক, মিশ-মিশুক, মিথ্যা-মিথ্যুক

 

. আরি/আরী/আরু-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : ভিখ-ভিখারি, শাঁখ-শাখারি, বোমা-বোমারু

 

১০. আলি/আলো/আলি/আলী>এল-প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনে : দাঁত-দাঁতাল, লাঠি-লাঠিয়াল> লেঠেল, তেজ-তেজাল, ধার-ধারাল, শাঁস-শাঁসাল, জমক-জমকালো, দুধ দুধাল > দুধেল, হিম-হিমেল, চতুর চতুরালি, ঘটকঘটকালি, সিঁদ-সিঁদেল, গাঁজা-গেঁজেল।

 

১১. উরিয়া>উড়িয়া/উড়ে/রে-প্রত্যয় : হাট-হাটুরিয়া> হাটুরে, সাপ সাপুড়িয়া সাপুড়ে, কাঠ-কাঠুরে।

 

১২. উড়-প্রত্যয় : অর্থহীনভাবে : লেজ-লেজুড়

 

১৩. উয়া/ওয়া>-প্রত্যয় : সম্পর্কিত অর্থে : ঘর+ওয়া = ঘরোয়া, জল+ উয়া=জলুয়া>জলো (দুধ) ১৪. আটিয়া / টেপ্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : তামা-তামাটিয়া> তামাটে, ঝগড়া-ঝগড়াটে, ভাড়াভাড়াটে, রোগা-রোগাটে

 

১৫. অট>-প্রত্যয় : স্বার্থে : ভরা ভরাট, জমা-জমাট।

 

১৬. লা-প্রত্যয় : () বিশেষণ গঠনে : মেঘ-মেঘলা

 

() স্বার্থে : এক-একলা, আধ-আধলা

 

 

তৎসম বা সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়

ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন্, , প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যে সমস্ত শব্দ গঠিত হয়, সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় এখানে কতগুলো সংস্কৃত ' তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ দেয়া হলো

 

কয়েকটি সাধারণ সূত্র

 

. যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ ()-প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যথানগর+ষ্ণ=নাগর, মধুর +ষ্ণ= =মাধুর্য।

 

বৃদ্ধি : () -স্থানে , () , -স্থানে , () , -স্থানে এবং () -স্থানে আর হওয়াকে বৃদ্ধি বলে।

 

.যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ () প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার প্রাতিপদিকের অন্ত্যস্বরের -কারও -কারে পরিণত হয়। + সন্ধিতেঅবহয়। যথাগুরু+ষ্ণ=গৌরব, লঘু+ষ্ণ =লাঘব, শিশু +ষ্ণ=শৈশব, মধু +ষ্ণ=মাধব, মনু + ষ্ণ=মানব।

 

. দুটি শব্দের দ্বারা গঠিত সমাসবদ্ধ শব্দের অথবা উপসর্গযুক্ত শব্দের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে উপসর্গসহ শব্দের বা শব্দ দুটির মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যথা

 

পরলোক + ষ্ণিক =পারলৌকিক।

 

সুভগ+ষ্ণ্য=সৌভাগ্য।

 

পঞ্চভূত+ষ্ণিক=পাঞ্চভৌতিক

 

সর্বভূমি+ ষ্ণ=সার্বভৌম

 

ব্যতিক্রম : ‘বর্ষশব্দ পরপদ হলে পূর্বপদের সংখ্যাবাচক শব্দের মূল স্বরের বৃদ্ধি হয় না। যথাদ্বিবর্ষ + ষ্ণিক= দ্বিবার্ষিক। সংখ্যাবাচক শব্দ না থাকলেও নিয়মমতো মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমনবর্ষ + ষ্ণিক=বার্ষিক।

 

. ‘প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকের অন্তে স্থিত , , এবং -এর লোপ হয়। যথাসম্+ =সাম্য, কবি + =কাব্য, মধুর + =মাধুর্য, প্রাচী+=প্রাচ্য।

 

ব্যতিক্রম : সভা+=সভ্য (‘সাভ্য' নয়)

 

বিশেষ নিয়মে : পর-পরকীয়, স্ব-স্বকীয়, রাজা-রাজকীয়

 

১০. বতুপ্ (বৎ) এবং মতুপ্ (মৎ)-প্রত্যয় [প্রথমার এক বচনে যথাক্রমেবান্ এবংমান্হয়] : বিশেষণ গঠনে : গুণ+বতুপ্=গুণবান, দয়া+বতুপ্ = দয়াবান শ্রী+মতুপ্=শ্রীমান, বুদ্ধি+মতুপ্=বুদ্ধিমান

 

১১. বিন (বী) প্রত্যয় : আছে অর্থে বিশেষণ গঠনে মেধা+বিন্=মেধাবী, মায়া+বিন্ = মায়াবী, তেজঃ+বিন্= তেজস্বী, যশঃ +বিন্=যশস্বী।

 

১২. -প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে

 

মধু+=মধুর, মুখ+=মুখর।

 

১৩. -প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে

 

শীত + = শীতল, বস += বৎসল।

 

১৪. () প্রত্যয়

 

() অপত্য অর্থে: মনু+ষ্ণ =মানব, যদু +ষ্ণ=যাদব।

 

() উপাসক অর্থে: শিব+ ষ্ণ= শৈব, জিন+ষ্ণ=জৈন। এরূপ : শক্তি-শাক্ত, বুদ্ধ-বৌদ্ধ,

 

) ভাব অর্থে : শিশু +ষ্ণ = শৈশব, গুরু+ষ্ণ =গৌরব, কিশোর+ষ্ণ=কৈশোর।

 

) সম্পর্ক বোঝাতে : পৃথিবী+ ষ্ণ = পার্থিব, দেব+ষ্ণ=দৈব, চিত্র (একটি নক্ষত্রের নাম)+ ষ্ণ=চৈত্র।

 

 

 

বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়

. ওয়ালা > আলা (হিন্দি) : বাড়ি-বাড়িওয়ালা (মালিক অর্থে), দিল্লি-দিল্লিওয়ালা (অধিবাসী অর্থে), মাছ-মাছওয়ালা (বৃত্তি অর্থে), দুধ-দুধওয়ালা (বৃত্তি অর্থে)

 

ওয়ান>আন (হিন্দি) : গাড়ি-গাড়োয়ান, দার -দারোয়ান

 

. আনা>আনি (হিন্দি) : মুনশি-মুনশিয়ানা, বিবি-বিবিআনা, হিন্দু-হিন্দুয়ানি 

 

8. সা (হিন্দি) : পানি-পানসা> পানসে, একএকসা, কাল (কাল) – কালসা> কালসে।

 

.গর> কর (ফারসি) : কারিগর, বাজিকর, সওদাগর

 

. দার (ফারসি) : তাঁবেদার, খবরদার, বুটিদার, দেনাদার, চৌকিদার, পাহারাদার

 

.বাজ (দক্ষ অর্থেফারসি) : কলমবাজ, ধড়িবাজ, ধোঁকাবাজ, গলাবাজ+=গলাবাজি (বিশেষ্য)

 

.বন্দি (বন্দ্-ফারসি) : জবানবন্দি, সারিবন্দি, নজরবন্দি, কোমরবন্দ।

 

. সই : মতো অর্থে : জুতসই, মানানসই, চলনসই, টেকসই। ১০. পনা : মতো অর্থে : গিন্নীপনা, বেহায়াপনা

 

দ্রষ্টব্য : ‘টিপসইনামসইশব্দ দুটোরসইপ্রত্যয় নয়। এটিসহি’ (অর্থ-স্বাক্ষর) শব্দ থেকে উৎপন্ন () সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়

 

ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন্, , প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যে সমস্ত শব্দ গঠিত হয়, সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় এখানে কতগুলো সংস্কৃত ' তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ দেয়া হলো

 

 

কৃৎ প্রত্যয়

কৃৎ প্রত্যয় : ধাতু বা ক্রিয়া প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলে কৃৎ প্রত্যয় উদাহরণে চলন্ত, জমা লিখিত শব্দের যথাক্রমে অন্ত, এবং ইত কৃৎ প্রত্যয়।

 

তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয় তদ্ধিতান্ত শব্দ এবং কৃৎ প্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয় কৃদন্ত শব্দ যেমনহাতল, ফুলেল মুখর তদ্ধিতান্ত শব্দ এবং চলন্ত, জমা লিখিত কৃদন্ত শব্দ

 

তোমরা লক্ষ করেছ যে, ক্রিয়ামূলকে বলা হয় ধাতু, আর ধাতুর সঙ্গে পুরুষ কালবাচক বিভক্তি যোগ করে গঠন করা হয় ক্রিয়াপদ। ধাতুর সঙ্গে যখন কোনো ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ তৈরি হয়, তখন () ক্রিয়ামূল বা ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা প্রকৃতি; আর () ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে বলে কৃৎ-প্রত্যয়। যেমন- চল্ (ক্রিয়া প্রকৃতি)+ অন (কৃৎ-প্রত্যয়)= চলন (বিশেষ্য পদ) চল্ (ক্রিয়া প্রকৃতি) + অন্ত (কৃৎ-প্রত্যয়)=চলন্ত (বিশেষণ পদ

 

প্রকৃতি' কথাটি বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগেচিহ্ন ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতি চিহ্নটি ব্যবহার করলেপ্রকৃতি' শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। যেমন -√পড়+ উয়া =পড়ুয়া।নাচ্+উনে = নাচুনে

 

কৃৎ-প্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। যেমনওপরের উদাহরণেপড়ুয়া' নাচুনেকৃদন্ত পদ

 

তৎসম বা সংস্কৃত প্রকৃতির সঙ্গেও অনুরূপভাবে কৃৎ-প্রত্যয় যোগে কৃদন্ত পদ সাধিত হয়। যেমনগম্+অন=গমন, √কৃ+তব্য=কর্তব্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃৎ-প্রত্যয় যোগ করলে কৃৎ-প্রকৃতির আদিস্বর পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তনকে বলা হয় গুণ বৃদ্ধি

 

. গুণ : () , -স্থলে , () , -স্থলে এবং () -স্থলে অর্ হয়। যেমন - √চিন্+=চেনা ( স্থলে হলো); (নী+=নেওয়া ( স্থলে ); ' √ধু+ =ধোয়া ( স্থলে ) ; কৃ+তা = করতা> কর্তা ( স্থলে অর্)

 

. বৃদ্ধি : () -স্থলে , () -স্থলে , () স্থলে এবং () -স্থলে আর্ হয়। যেমনপচ্ + (ণক) - পাচক (পচ-এর স্থলে’); শিশু+ (ষ্ণ) = শৈশব ( স্থলে ); যুব+ - = অন= যৌবন ( স্থলে ); কৃ+ঘ্যণ= কার্য ( স্থলে আর্)

 

 

কৃৎ-প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন : বাংলা

. () শূন্য-প্রত্যয় : কোনো প্রকার প্রত্যয়-চিহ্ন ব্যতিরেকেই কিছু ক্রিয়া-প্রকৃতি বিশেষ্য বিশেষণ পদ রূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এরূপ স্থলে () শূন্য প্রত্যয় ধরা হয়। যেমন মোকদ্দমায় তোমার জিত্ হবে না, হার্ হবে। গ্রামে খুব ধব্ পাকড় চলছে।

 

. -প্রত্যয় : কেবল ভাববাচ্যে -প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন - √ধর্+ =ধর, √মার +=মার। আধুনিক বাংলায় -প্রত্যয় সর্বত্র উচ্চারিত হয় না। যেমন – √হার্ + =হার, √জিত্ + = জিত।কোনো কোনো সময় -প্রত্যয়যুক্ত কৃদন্ত শব্দের দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। যেমন (আসন্ন সম্ভাব্যতা অর্থে দ্বিত্বপ্রাপ্ত) √কাঁদ্ + কাঁদকাঁদ (চেহারা) এরূপ - √পড়+=পড়পড়, √মর্+=মরমর (অবস্থা) ইত্যাদি। কখনো কখনো দ্বিত্বপ্রাপ্ত কৃদন্ত পদে -প্রত্যয় হয়। যেমন – √ডু+= ডুবুডুবু।উড়+ = উড়ুউডু।

 

৩।অনু-প্রত্যয় : ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনেঅনপ্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন – √কাঁদ্ + অন= কাঁদন (কান্নার ভাব) এরূপনাচন, বাড়ন, ঝুলন, দোলন

 

বিশেষ নিয়ম

 

() -কারান্ত ধাতুর সঙ্গে অন্ স্থলেওনহয়। যেমন -√খা+অন=খাওন, √ছা+অন=ছাওন, √দে+অন=দেওন () -কারান্ত প্রযোজক (ণিজন্ত ধাতুর পরেআনপ্রত্যয় যুক্ত হলেআনোহয়। যেমনজানা+আন= - জানানো। এরূপশোনানো, ভাসানো।

 

. অনা-প্রত্যয় : √দুল্‌+ অনা= দুলনা> দোলনা।খেল্‌+ অনা=খেলনা।

 

. অনি (বিকল্পে) উনি-প্রত্যয় : √চির্+অনি=চিরনি>চিরুনি। বাঁধ + অনি =বাঁধনি বাঁধুনি।আঁট+অনি=আঁটনি> আঁটুনি

 

. অন্ত-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনেঅন্তপ্রত্যয় হয়। যেমন - √উড়+অন্ত =উড়ন্ত, √ডুর্+অন্ত=ডুবন্ত।

 

. অক-প্রত্যয় : √মুড়+অক=মোড়ক।ঝল্+অক=ঝলক।

 

. -প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনেপ্রত্যয় হয়। যেমনপড়+=পড়া (পড়া বই) এরূপ রাঁধ (বিশেষ্য), রাঁধা (বিশেষণ), কেনা, বেচা, ফোটা ইত্যাদি . আই-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনেআই প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- চড়ু+আই = চড়াই সিল+আই=সিলাই> সেলাই

 

১০. আও-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনেআওপ্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- √পাকড়+আও= পাকড়াও, √চড় +আও=চড়াও।

 

১১. আন (আনো) প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযোজক ধাতু কর্মবাচ্যের ধাতুর পরেআন/আনো' প্ৰত্যয় হয় যেমন – √চাল্‌ =আন =চালান/চালানো।মান্+ আন = মানান/মানানো।

 

১২. আনি -প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযুক্ত হয়। যেমনজান্ + আনি=জানানি, √শুন্+আনি=শুনানি, - √উড় + আনি=উড়ানি, √উড়+উনি=উড়ুনি।

 

১৩. আরি বা আরী বিকল্পে রি/উরি-প্রত্যয় : যেমন – / ডুর্+আরি / উরি-ডুবুরী। এরূপধুনারী, পূজারী ইত্যাদি

 

১৪. আল-প্রত্যয় : √মাত্+আল = মাতাল, মিশ্+আল =মিশাল।

 

১৫. -প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনেপ্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। যথা- 1 -Vভাজ্‌+ = ভাজি, √বেড়+= বেড়ি।

 

১৬. ইয়া > ইয়ে-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ইয়া/ ইয়ে প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন - √মর্ +ইয়া=মরিয়া (মরতে প্রস্তুত), √বল্ + ইয়ে=বলিয়ে (বাকপটু) এরূপনাচিয়ে, গাইয়ে, লিখিয়ে, বাজিয়ে, কইয়ে ইত্যাদি।

 

১৭. -প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনেপ্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। যথা – √ডাক্ + = ডাকু, ঝাড় + = ঝাড়ু, √উড়+= উড়ু (দ্বিত্ব উড়ুউড়ু)

 

১৮. ‘উয়াবিকল্পে '' · প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনেউয়াএবংপ্রত্যয় হয়। যথা – √পড় + - উয়া= পড়ুয়া > পড়ো, √উড়+ উয়া= উড়ুয়া > উড়ো, √উড়+ +উড়ো (চিঠি) ১৯. তা-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনেতাপ্রত্যয় হয়। যেমন – √ফির্+তা = ফিরতা> ফেরতা, √পড় + তা= পড়তা, √বহ্+ তা = বহতা

 

২০. তি-প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনেতি' প্রত্যয় হয়। যেমনঘাট্+তি=ঘাটতি, √বাড়+তি=বাড়তি। এরূপকাটতি, উঠতি ইত্যাদি।

 

২১. না-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনেনাপ্রত্যয় যুক্ত হয় যেমনরাধ+না=রাধনা> রান্না। এরূপ-ঝরনা ইত্যাদি।

 

 

 

কৃৎ-প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন : সংস্কৃত

 

. অনট্প্রত্যয় : (‘' ইৎ (বিলুপ্ত) হয়, ‘অনথাকে) : √নী+অন= √নী+অন>নে+অন (গুণসূত্রে) = নয়ন, √শু+ অনট্= √শু+অন (গুণ সন্ধির ফলে) = শ্রবণ। এরূপস্থান, ভোজন, নর্তন, দর্শন ইত্যাদি।

 

. ক্ত-প্রত্যয় ('ক্' ইৎ '' থাকে) : √জ্ঞা+ক্ত (জ্ঞা+) = জ্ঞাত, √খ্যা+ক্ত=খ্যাত।

 

বিশেষ নিয়ম

 

() ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে নিম্নলিখিত ধাতুর অন্ত্যস্বরকার হয়। যেমনপঠ+ক্ত=(পঠ++) পঠিত। এরূপলিখিত, বিদিত, বেষ্টিত, চলিত, পতিত, লুণ্ঠিত, ক্ষুধিত, শিক্ষিত ইত্যাদি =

 

() ক্ত প্রত্যয় যুক্ত হলে, ধাতুর অন্তস্থিতস্থলেহয়। যেমন- √সিচ্+ক্ত=(সিক্‌+) সিক্ত। এরূপ-√মুচ্+ক্ত=মুক্ত, Vভুজ্‌+ক্ত=ভুক্ত।

 

() ছাড়া ক্ত প্রত্যয় পরে থাকলে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। এখানে এরূপ কয়েকটি প্রকৃতিপ্রত্যয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো। যেমন- √গম্ +ক্ত গত, √গ্ৰন্থ +ক্ত গ্রথিত, √চুর্+ক্ত চূর্ণ, = = √ছিদ্+ক্ত=ছিন্ন, √জন্+ক্ত=জাত, √দা+ক্ত=দত্ত, √দহ্+ক্ত=দগ্ধ, √বচ্+ক্ত=উক্ত, √বপ্‌+ক্ত=উপ্ত, √মুহ্+ক্ত=মুগ্ধ, √ষুধ+ক্ত=যুদ্ধ, √+ক্ত=লব্ধ, √স্বপ্+ক্ত=সুপ্ত, √সৃ+ক্ত=সৃষ্ট, √হন্+ক্ত= হত ইত্যাদি। . ক্তি-প্রত্যয় (‘' ইৎতি' থাকে) : √গম্+ ক্তি=√গম্+তি=গতি (এখানেলোপ হয়েছে)

 

:

 

বিশেষ নিয়ম

 

() ক্তি-প্রত্যয় যোগ করলে কোনো কোনো ধাতুর অন্ত ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যথা- √মন্+ক্তি=মতি, √রম্+ক্তি=রতি

 

() কোনো কোনো ধাতুর উপধা -কারের বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ -কার হয়। যেমনশ্রম্+ক্তি=শ্রান্তি (সন্ধিসূত্রে মন), √শম্+ক্তি=শান্তি

 

() ‘এবংস্থলেহয়। যেমন -√বচ্+ক্তি=উক্তি, √মুচ্+ক্তি=মুক্তি, √ভজ্‌+ক্তি=ভক্তি।কাঁদ্ + না কাঁদনা > কান্না,

 

() নিপাতনে সিদ্ধ : √গৈ+ক্তি=গীতি, √সিধ+ক্তি=সিদ্ধি, √বুধ+ক্তি=বুদ্ধি, √শক্‌+ক্তি=শক্তি। . তব্য অনীয় প্রত্যয় : কর্ম ভাববাচ্যের ধাতুর পরে () তব্য () অনীয় প্রত্যয় হয়

 

() তব্য : √কৃ+তব্য=কর্তব্য, √দা+তব্য=দাতব্য, পিঠ+ = পঠিতব্য। +তব্য=' () অনীয় : √কৃ+অনীয়=করণীয়, রক্ষ্+অনীয় = রক্ষণীয়। এরূপ-দর্শনীয়, পানীয়, শ্রবণীয়, পালনীয় ইত্যাদি।

 

. তৃচ্-প্রত্যয় (‘' ইৎতৃথাকে) : প্রথমা একবচনেতৃস্থলেতাহয় যেমন- √দা+তৃচ্=√দা+তৃ=√দা+তা= দাতামা+তৃচ্=মাতা, √ক্রী+তৃচ্= =ক্রেতা। বিশেষ নিয়মে : √ষুধ +তৃচ=Vযুধ+তা=যোদ্ধা।

 

. ণকপ্রত্যয় (‘' ইৎঅক' থাকে) : (পর্+ণক=√পত্+অক=পাঠক। মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়েস্থানেহয়েছে। যেমন-√নী=ণক=(নৈ+অক-প্রথম স্বরের বৃদ্ধি) নায়ক, /গৈ+ণক=গায়ক, √লিখ্+ণক= লেখক ইত্যাদি

 

 

 

বিশেষ নিয়ম

 

() ণক-প্রত্যয় পরে থাকলে ণিজন্ত ধাতুরকারের লোপ হয়। যেমন – i+ণক=পূজক। এরূপ- জনক, চালক, স্তাবক।

 

() -কারান্ত ধাতুর পরে ণক প্রত্যয় হলে ধাতুর শেষেয়আসে। যথা-√দা+ণক=দায়ক, বি- √ধা+ণক=বিধায়ক

 

. ঘাণ-প্রত্যয় [,ইৎ, (-ফলা) থাকে] : কর্ম ভাববাচ্যে ঘ্য হয়। যথা- √কৃ+ঘ্য=কাৰ্য্য কাৰ্য, √ধৃ+ঘ্য=ধার্য। এরূপ -পরিহার্য, বাচ্য, ভোজ্য, যোগ্য, হাস্য ইত্যাদি

 

(দ্রষ্টব্য : আধুনিক বাংলা বানানে রেফ++=র্য্য হয় না, র্য হয়।)

 

. -প্রত্যয় : কর্ম ভাববাচ্যে যোগ্যতা ঔচিত্য অর্থেপ্রত্যয় প্রযুক্ত হয়।যুক্ত হলে -কারান্ত ধাতুর -কার স্থলে -কারান্ত হয় এবং’ ‘য়হয়। যেমন - √দা +=দা>দে+যয় দেয়।

 

হা+=হেয়

 

এরূপবিধেয়, অজেয়, পরিমেয়, অনুমেয় ইত্যাদি।

 

বিশেষ নিয়ম : ব্যঞ্জনান্ত ধাতুরপ্রত্যয় স্থলে -ফলা হয়। যথা-√গম্+=গম্য, √লভ্+=লভ্য। . ণিনপ্রত্যয় ( ইৎ, ইণ থাকে, ইন্‌ ‘'-কার হয়) : √গ্রহ + ণিন=গ্রাহী, √পা+ণিন=পায়ী। এরূপ- কারী, দ্রোহী, সত্যবাদী, ভাবী, স্থায়ী, গামী। কিন্তুণিন' যুক্ত হলেহনধাতুর স্থলেঘাত' হয়। যথা - -√হণ্+ণিন=আত্মঘাতী। আত্ম-V

 

১০. ইন্ প্রত্যয় (ইন্)=-কার হয়) : √শ্রম্+ইন্=শ্রমী

 

১১. অল্-প্রত্যয় ( ইৎ, থাকে) : (জি+অল্-জয়, √ক্ষি+অল্ = ক্ষয়। এরূপ-ভয়, নিচয়, বিনয়, ভেদ, বিলয়। ব্যতিক্রম : √হণ্+=বধ

 

কৃদন্ত বিশেষণ গঠনে কতিপয় কৃৎ-প্রত্যয়

 

. ইষ্ণু-প্রত্যয় : √চল্‌+ইষ্ণু = চলিষ্ণু। এরূপ ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।

 

. বর-প্রত্যয় : √ঈশ্+বর=ঈশ্বর, Vভাস্+বর =ভাস্বর। এরূপ-নশ্বর, স্থাবর।

 

. -প্রত্যয় : √হিন+স্+=হিংস্র, Vনম্+=নম্র।

 

. উক/উক-প্রত্যয় : √ভু+উক=(ভৌ+উক) =ভাবুক, জাগ্‌+উক=(জাগর+উক) জাগরূক

 

. শানচ্-প্রত্যয় (‘ইৎ, ‘আনবিকল্পে 'মান' থাকে) : √দীপ্‌+ শানচ্=দীপ্যমান। এরূপ - √চল্‌+শানচ্=চলমান, √বৃধ+শানচ্=বর্ধমান . ঘঞ-প্রত্যয় [(কৃদন্ত বিশেষ্য গঠনে), ঘৃ এবং ইৎ, ‘থাকে] : √বস্+ঘঞ্=বাস, √যুজ্+ঘঞ= :

 

যোগ, √ক্রুধ+ঘঞ=ক্রোধ, , √খুদ্+ঘঞ=খেদ, , √ভিদ্+ঘঞ=ভেদ।

 

বিশেষ নিয়ম : √ত্য+ঘঞ=ত্যাগ, √পচ্ +=পাক, /শুচ্+ঘঞ=শোক

 

 

 

কিন্তু, নিন্দি+ +অন=নন্দন। এক্ষেত্রে যোগেনন্দনাহয় না।