কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল (LEC 13)

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks বাংলা ব্যাকরণ

 

কারক বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল


কারক বিভক্তি বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অনেকে এটিকে সহজ মনে করে ভুল করে থাকেন। আবার অনেকে ভালভাবে বুঝতে পারেন না এর কারণ প্রচলিত নিয়মে কারক নির্ণয়। আজ আমরা আপনাদের সাথে এমন একটি কারক বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল শেয়ার করব যা আপনি কোথাও এবং কখনও দেখেন নি। মূলত পদ্ধতিটি ডব্লিউ থ্রি ক্লাসরুমের আবিষ্কার এর মাধ্যমে সহজ অথচ শতভাগ নির্ভুলভাবে কারক নির্ণয় করা যায়। কারক বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল নামক পদ্ধতিটি আমরা আলোচনার শেষ প্রান্তে শেয়ার করেছি। এর আগে আমরা আপনাকে ধাপে ধাপে কারক বিভক্তি নির্ণয় সম্পর্কে আগ্রহী,কৌতুহলী এবং প্রস্তুত করে তুলতে চাই। আর তাই আমরা আপনাকে বলব এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে মনোযোগের সহিত পড়ুন। আশা করছি এই আর্টিকেল পড়া শেষে আপনার আর কখন কোথাও কারক বিভক্তি নির্ণয়ে ভুল হবে না চলুন তাহলে শুরু যাক।

 

Table of Content 

 

 কারক কী কেন

 কারকের প্রকারভেদ

 কারকের প্রয়োজনীয়তা

 সম্বন্ধ পদ

 সম্বোধন

 বিভক্তি

 শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি

 ক্রিয়া বিভক্তি

 কর্তৃকারক

 কর্মকারক

 করণকারক

 সম্প্রদান কারক

 অপাদান কারক

 অধিকরণ কারক

 কারক বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ নির্ভুল উপায়

 বিভক্তি নির্ণয়ের নিয়ম

 কারক নির্ণয়ের অভিন্ন উপায়

 

কারক কী কেন

'কারক' শব্দের অর্থ- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে কারক" হলো (কৃ + ণক) ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন উপকরণ অর্থাৎ ব্যাক্তি,স্থান,কাল প্রভৃতির দরকার হয়।এদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের যে সম্পর্ক তাকেই কারক বলে। সুতরাং বলা যায়বাক্যের অন্তর্ভুক্ত ক্রিয়াপদের সাথে অন্যান্য পদের যে প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ তাকে কারক বলে।

 

কারকের প্রকারভেদ

ক্রিয়াপদের সাথে অন্যান্য পদের যে প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ তা ছয় প্রকারের হতে পারে। যেমন- রাষ্ট্রপতি ঢাকায় রাজকোষ থেকে নিজ হাতে গরিবদেরকে অর্থ প্রদান করছেন। বাক্যটি বিশ্লেষণ করলে ক্রিয়াপদের সাথে অন্যান্য পদের ছয় প্রকার সম্পর্ক বেরিয়ে আসে।

 কে দান করছেন?- রাষ্ট্রপতি (কর্তৃকারক)
 কি দান করছেন? অর্থ (কর্মকারক)
 কিসের দ্বারা দান করছেন? নিজ হাতে (করণকারক)
 কাকে দান করছেন? গরিবদেরকে (সম্প্রদান কারক )
 কোথেকে দান করছেন?- রাজকোষ থেকে (অপাদান কারক)
 কোথায় দান করছেন?- ঢাকায় (অধিকরণ কারক।)

রাষ্ট্রপতি, অর্থ, নিজ হাতে, গরিবদেরকে, রাজকোষ থেকে,ঢাকায়- এই ছয়টি পদের সাথে প্রদান করছেন ক্রিয়ার বিভিন্ন সম্পর্ক রয়েছে। এভাবে ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্য সর্বনাম পদের ছয় প্রকারের সম্পর্ক হতে পারে। তাই কারক ছয় প্রকার। যথা

. কর্তৃকারক
. কর্মকারক
. করণকারক
. সম্প্রদান কারক
. অপাদান কারক

. অধিকরণ কারক

বাংলা ব্যাকরণে কারক সম্বন্ধে ব্যাকরণবিদগণের মধ্যে বিতর্ক আছে। রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী বাংলায় মাত্র তিনটি- কর্তা, কর্ম অন্য একটি কারকের কথা বলেন। যতীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় কর্তা কর্ম ছাড়া অন্য সব কারক স্বীকার করেননি। তবে সম্প্রদান কারক ছাড়া অন্য পাঁচটি কারকের কথা অধিকাংশ ব্যাকরণবিদ মেনে নিয়েছেন। যেহেতু বাংলা ব্যাকরণ সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণে রচিত; এজন্য আলোচনার সময় সম্প্রদান কারককে বাদ দেয়া হয়নি।

 

কারকের প্রয়োজনীয়তা

বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়ে থাকে কারকের মাধ্যমেই। মাঝে মাঝে ক্রিয়াপদ ছাড়াও বাক্য গঠিত হতে পারে। যেমন- সে খারাপ ছেলে। বাক্যটির মধ্যে ক্রিয়াপদ অনুল্লিখিত রয়েছে। উহা ক্রিয়াটি হলো- হয় কারক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উহা ক্রিয়াকে বিবেচনা করা হয় না। কারক বাক্যে শব্দের অন্বয় বুঝিয়ে দেয় এবং এতে বাক্যের অর্থ গঠন সুস্পষ্ট হয়ে থাকে। দিক দিয়ে বিচার করলে কারকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

 

সম্বন্ধ পদ

যে নামপদ ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে বাক্যস্থিত অন্যপদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। যেমন- পিয়ালের ভাই বাড়ি যাবে। এখানে পিয়ালের' সঙ্গে ভাই'-এর সম্পর্ক আছে, কিন্তু যাবে ক্রিয়ার সাথে সম্বন্ধ নেই। ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ পদের সম্বন্ধ নেই বলে সম্বন্ধ পদকে কারক বলা হয় না। সম্বন্ধ পদ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা :

১। অধিকার সম্বন্ধ: রাজার রাজ্য, প্রজার জমি
২। জন্ম-জনক-সম্বন্ধ : গাছের ফল, বনের কাঠ
৩। কার্যকারণ সম্বন্ধ: সূর্যের উত্তাপ, রোগের কষ্ট
৪। উপাদান সম্বন্ধ : সোনার বাটি, রুপার কাঠি
৫। গুণ সম্বন্ধ : নিমের তিক্ততা, মধুর মিষ্টতা
৬। হেতু সম্বন্ধ : রুপের দেমাক, ধনের অহংকার
৭। ব্যাপ্তি সম্বন্ধ : রোজার ছুটি, শরতের আকাশ
৮। ক্রম সম্বন্ধ : চারের ঘর, তিনের পৃষ্ঠা
৯। অংশ সম্বন্ধ : মাথার চুল, হাতির দাঁত
১০। ব্যবসায় সম্বন্ধ : আদার ব্যাপারী, পাটের গুদাম
১১। ভগ্নাংশ সম্বন্ধ : তিনের এক, পাঁচে চার
১২। কৃতি সম্মন্ধ : নজরুলের অগ্নিবীণা
১৩। আধার আধেয় : বাটির দুধ, শিশির ওষুধ
১৪। অভেদ সম্বন্ধ : জ্ঞানের আলোক, দুঃখের দহন

 

সম্বোধন

যে পদে কাউকে সম্বোধন বা আহ্বান করে কিছু বলা হয়, তাকে সম্বোধন পদ বলে। সম্বোধন শব্দটির অর্থ আহ্বান। যেমন 'ওহে, তুমি কোথায় যাচ্ছ? এই বাক্যে সম্বোধন পদ 'ওহে'-এর সঙ্গে ক্রিয়াপদ যাচ্ছ এর কোন সম্পর্ক নেই, যাচ্ছএর সম্পর্ক রয়েছে 'তুমি' শব্দের সঙ্গে। এই কারণে ওহে-এর কারক হয় না। সুতরাং সম্বন্ধ সম্বোধন পদ কারক নয়।

 

 

বিভক্তি

বাক্যের অন্তর্ভুক্ত একটি শব্দের সাথে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য শব্দের সাথে যে সকল বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত হয়, তাকে বিভক্তি বলে। যেমন পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়। বাক্যটিতে 'পাগল' এবং 'ছাগল' শব্দের সঙ্গে '' বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। যেমন -
পাগল + = পাগলে
ছাগল + = ছাগলে
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও বাক্যে ভিক্ষুক' শব্দের সাথে কে' বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। বিভক্তি দু'প্রকার। যেমন
. শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি
. ক্রিয়া বিভক্তি বা ধাতু বিভক্তি।

 

. শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি

শব্দ বা নামপদের সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি বলে। শব্দ বা নাম বিভক্তি কারক সূচিত করে বলে এর আরেক নাম কারক বিভক্তি। শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার। যেমন প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী সপ্তমী। একবচন এবং বহুবচন ভেদে শব্দ বিভক্তিগুলোর রূপগত বা আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন

 

শব্দ বিভক্তির রূপ

বিভক্তি

একবচন

বহুবচন

প্রথমা

(0) শূন্য, , , য়

রা, এরা, গুলি/ গুলো, গণ, সমূহ

দ্বিতীয়া

কে, রে, এরে

দিগকে, দেরকে, দিগেরকে, দিগেরে

তৃতীয়া

দ্বারা, দিয়া/ দিয়ে, কর্তৃক

দিগের দ্বারা, দিগ দ্বারা, দিগ কর্তৃক, দের দ্বারা, দের দিয়া, দের কর্তৃক

চতুৰ্থী

কে, রে, এরে

দিগকে, দেরকে, দিগেরকে, দিগেরে

পঞ্চমী

হইতে/হতে, থেকে, চেয়ে

দিগ হইতে, দের হইতে, দিগ থেকে, দের থেকে, দের চেয়ে

ষষ্ঠী

, এর

দিগের, দের

সপ্তমী

, য়, তে

দিগে, দিগেতে, গুলিতে/গুলোতে, গণে।

Pro Tips: বিভক্তি শুধু একবচন জানা থাকেলই চলে।একবচনের চিহ্ন দ্বারা বিভক্তি নির্ণয় করলে সব সময় সঠিক বিভক্তিই পাওয়া যায়।এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

 

বিভক্তি যোগের নিয়ম

. স্বরান্ত শব্দের পরে '' বিভক্তির রূপ হয়- 'য়' বা 'য়ে' যেমন- মেলা + য় = মেলায়,পা + = পায়ে
. স্বরান্ত শব্দের পরে '' স্থানে 'তে' বিভক্তি যুক্ত হতে পারে। যেমন- পানি + > পানি+ তে = পানিতে
. -কারান্ত বা ব্যঞ্জনান্ত শব্দের পর প্রথমায় 'রা' স্থানে 'এরা' হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির ''-এর স্থানে অনেক সময় 'এর' হয়। যেমন- বালক + এরা = বালকেরা , বালক + এর = বালকের।
. অপ্রাণিবাচক শব্দের পরে 'কে' বা 'রে' বিভক্তি হয় না, শূন্য বিভক্তি হয়। যেমন- কাগজ নাও।
. অপ্রাণিবাচক বা ইতরপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে 'রা' যুক্ত হয় না- গুলি, গুলা, গুলো হয়। যেমন- লেবুগুলো, কাঁঠালগুলা, হাঁসগুলো, ফুলগুলো।

 

. ক্রিয়া বিভক্তি

ধাতুর সাথে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে তাকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে। যেমন সে চিঠি লিখিতেছে।  বাক্যের 'লিখিতেছে' শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-
লেখা-- ক্রিয়া পদ এবং ক্রিয়া বিভক্তি- ইতেছে
লিখ ধাতু লিখ্ + ইতেছে = লিখিতেছে
এরূপ পড়ু + ইতেছে = পড়িতেছে
খেল্ + ইতেছে = খেলিতেছে
বল্ + = বলা
কাঁদ্ + = কাঁদা

 

কর্তৃকারক

যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে কর্তৃকারক বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়ার সাথে 'কে' বা 'কারা' যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা- কর্তৃকারক। যেমন সুজন ক্রিকেট খেলে।

যদি প্রশ্ন করা হয় কে ক্রিকেট খেলে? তাহলে উত্তর পাওয়া যাবে'সুজন' অতএব, 'সুজন' কর্তৃকারক।

 

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্তৃকারক চার প্রকার। যেমন () মুখ্য কর্তা, () প্রযোজক কর্তা, () প্রযোজ্য কর্তা () ব্যতিহার কর্তা।

. মুখ্য কর্তা : যে কর্তা নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে মুখ্য কর্তা বলে। যেমন- মামুন সাঁতার কাটছে।
. প্রযোজক কর্তা : যে কর্তা অন্যকে দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন করায় তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন- মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন।
. প্রযোজ্য কর্তা : প্রযোজক কর্তা যাকে দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন করায়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন রাখাল গরু চরায়।
উপরিউক্ত রাখাল গরু চরায়' বাক্যে রাখাল' প্রযোজক কর্তা এবং 'গরু' প্রযোজ্য কর্তা।
অনুরূপ শিক্ষক ছাত্রকে পড়াচ্ছেন। মা ছেলেকে দুধ খাওয়ায়।
. ব্যতিহার কর্তা : দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করলে, তাকে ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। সাপে-নেউলে লড়াই হচ্ছে। বাপে-বেটায় ঝগড়া করছে। রাজায় রাজার লড়াই, রাম-রাবণে করে রণ,উলু খাগড়ার প্রাণান্ত।

 

কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

১। প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি - সুমনবই পড়ে।
২। দ্বিতীয়া বিভক্তি- আমাকে যেতে হবে।
৩। তৃতীয়া বিভক্তি— তোমা দ্বারা  কাজ হবে না।
৪। পঞ্চমী বিভক্তি – আমা হতে  কাজ হবে না সাধন।
৫। ষষ্ঠী বিভক্তি— করিমের যাওয়া হয়নি।
৬। সপ্তমী বিভক্তি
'
' বিভক্তি— সেয়ানে সেয়ানে বেঁধেছে ঝগড়া।
য়' বিভক্তি— ঘোড়ায় ঘাস খায়।
'
তে' বিভক্তি— বুলবুলিতে ধান খেয়েছে।

 

কর্মকারক

কর্তা যা করে বা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলে। বাক্যের অন্তর্ভুক্ত ক্রিয়া পদকে ‘কি' বা 'কাকে' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা- কর্মকারক। যেমন জেলেরা মাছ ধরে।

কর্মকারকের প্রকারভেদ

কর্মকারক কয়েক প্রকারের হতে পারে। যেমন
. মুখ্য কর্ম বা বস্তুবাচক কর্ম : দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটো করে কর্ম থাকে। একটি বস্তুবাচক, অপরটি ব্যক্তিবাচক। দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মকে মুখ্য কর্ম বলে। মুখ্য কর্মে বিভক্তি যুক্ত হয় না। যেমন বাবা আমাকে জামা কিনে দিয়েছেন।
বাক্যে জামা' মুখ্য কর্ম এবং আমাকে গৌণ কর্ম। কারণ জামা' শব্দটির সাথে কোন বিভক্তি যুক্ত হয়নি।

. গৌণ কর্ম/ ব্যক্তিবাচক কর্ম : দ্বিকর্মক ক্রিয়ার ব্যক্তিবাচক কর্মকে গৌণ কর্ম বলে। যেমন তিনি আমাকে : একটি কলম উপহার দিয়েছেন। বাক্যে আমাকে গৌণ কর্ম এবং 'কলম' মুখ্য কর্ম। কারণ 'আমাকে' শব্দটির সঙ্গে কে বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

. উদ্দেশ্য কর্ম : বিভক্তিযুক্ত স্বাভাবিক কর্মকে উদ্দেশ্য কর্ম বলে। যেমন তিনি আমাকে সত্যবাদী বলেছেন।

. বিধেয় কৰ্ম : বিভক্তিহীন দ্বিতীয় অতিরিক্ত কর্মকে বিধেয় কর্ম বলে। যেমন দুধকে মোরা দুগ্ধ বলি, হলুদকে বলি হরিদ্রা। তিনি দেশকে জননী ভাবতেন।

. সমধাতুজ কর্ম : কোন কোন অকর্মক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে সেই ক্রিয়াজাত কোন শব্দকে কর্মরূপে ব্যবহার করে ক্রিয়া নিষ্পন্ন করতে হয়; এরূপ কর্মকে সমধাতুজ কর্ম বলে। যেমন সে বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছে। সে কি কান্নাই না কাঁদল। অমন নাচ নাইবা নাচলে।

 

কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

১। প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি সে ভাত খায়।
২। দ্বিতীয়া বিভক্তি— ধোপাকে কাপড় দাও।
৩। ষষ্ঠী বিভক্তি -- তোমার দেখা পেলাম না।
৪। সপ্তমী বিভক্তি জিজ্ঞাসিব জনে জনে।

বি. দ্র. কর্মকারকে সাধারণত দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়।

 

করণকারক

কর্তা যে উপায়ে বা যার দ্বারা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণকারক বলে। করণ' শব্দটির অর্থযন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। যেমন জেলেরা জাল দ্বারা মাছ ধরে। লাঙ্গল দ্বারা জমি চাষ করা হয়।

করণ কারক তিন প্রকার। যথা
. উপায়াত্মক করণ; . হেত্বার্থক করণ; . উপলক্ষণে করণ।

. উপায়াত্মক করণ : যে উপায় দ্বারা ক্রিয়া সাধিত হয়, তাকে উপায়াত্মক করণ বলে। যেমন- মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন। তার বাঁশির সুরে ঘরে থাকা দায়।

. হেত্বার্থক করণ : হেতু বা কারণ বোঝাতে হেত্বার্থক করণ হয়। যেমন আনন্দে সে হাসতে লাগল। শোকে সে বিহ্বল হয়ে গেল।

. উপলক্ষণে করণ : লক্ষণ বা চিহ্ন বোঝাতে উপলক্ষণাত্মক করণ হয়। যেমন-শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা বীরের বেশে মাঠে নামলো।

 

করণকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

১। প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি- প্রদীপ বল খেলে
২। তৃতীয়া বিভক্তি- ছুরি দিয়ে আম কাট।
৩। সপ্তমী বিভক্তি –  কলমে লেখা হয় না।
ফুলে ফুলে সাজানো বাসর
মায়ের কথা মধুতে মাথা

 

সম্প্রদান কারক

যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমন— ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

১। চতুর্থী বিভক্তি- দরিদ্রকে দান কর।
২। সপ্তমী বিভক্তি- দীনে দয়া কর। অন্ধজনে দেহ আলো। সমিতিতে চাঁদা দাও।

কোন কিছুর নিমিত্ত বোঝালে সম্প্রদান কারক হয় এবং কে' বিভক্তি থাকলে তা চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন বেলা যে পড়ে এল জলকে চল। (নিমিত্তার্থে চতুর্থী)
বিঃ দ্রঃ সম্প্রদান কারকে সাধারণত চতুর্থী বিভক্তি হয়।

 

অপাদান কারক

যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, জাত, বিচ্যুত, আরম্ভ, ভীত, উৎপন্ন, দূরীভূত, রক্ষিত ইত্যাদি হয়, তাকে অপাদান কারক বলে। অর্থাৎ, যা থেকে ক্রিয়া প্রকাশিত হয় তার নাম অপাদান কারক। যেমন

গৃহীত— মেঘ হতে বৃষ্টি হয়।
ভীতযেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়।
উৎপন্ন— জমি থেকে ধান হয়।
জাত— খেজুর রসে গুড় হয়।
বিচ্যুত— গাছ থেকে পাতা পড়ে।
দূরীভূত  দেশ থেকে সব অন্যায় দূর করে দাও।
আরম্ভ— সোমবার থেকে কাজে যোগ দাও।
রক্ষিত— বিপদ হতে রক্ষা কর।

 

অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

১। প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি মনে পড়ে সেই চৈত্র দুপুরে পাঠশালা পলায়ন।
২। দ্বিতীয়া বিভক্তি— ভূতকে আবার কিসের ভয়?
৩। ষষ্ঠী বিভক্তি এখানে সাপের ভয় আছে।
৪। সপ্তমী বিভক্তি— তিলে তৈল হয়। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। টাকায় টাকা হয়।

অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তি ছাড়াও হইতে, হতে, দিয়া, দিয়ে, থেকে, চেয়ে ইত্যাদি অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়। যেমন-

হইতে/ হতে— দূর হতে শুনি মহাসাগরের গান।
থেকে তিনি ঢাকা থেকে আসলেন।
দিয়া/ দিয়ে তার চোখ দিয়ে জল ঝরছে।
চেয়ে জননী এবং জন্মভূমি স্বর্গের চেয়ে বড়।

 

অধিকরণ কারক

ক্রিয়া সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধার (স্থান)-কে অধিকরণ কারক বলে। ক্রিয়া নিষ্পন্ন হওয়ার জন্য স্থান, কাল বিষয়ের প্রয়োজন হয়। যে স্থানে, যে কালে কিংবা যে বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়, সেক্ষেত্রে অধিকরণ কারক হয়। যেমন-

কাল (সময়)-- বিকালে সূর্য ডুবে। সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি।
আধার (স্থান) আকাশে তারার মেলা। বাগানে ফুল ফুটেছে।
বিষয় ছেলেটি অংকে দুর্বল।

অধিকরণ কারক চার প্রকার। যেমন

. কালাধিকরণ; . আধারাধিকরণ; . বিষয়াধিকরণ; . ভাবাধিকরণ

. কালাধিকরণ : যে কালে বা যে সময়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালাধিকরণ বলে। যেমন আমরা সকালে রওনা হব। পনের তারিখে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে।

. আধারাধিকরণ : ক্রিয়া সংঘটনের স্থানকে বলে আধারাধিকরণ। যেমন তিনি ঢাকায় বাস করেন। তার মুখে মধু, অন্তরে বিষ।

. বিষয়াধিকরণ : কোন বিষয়ে কিংবা কোন বিশেষ গুণে কারও দক্ষতা বা অদক্ষতা এবং ক্ষমতা অক্ষমতা বোঝালে বিষয়াধিকরণ কারক হয়। যেমন সে ইংরেজিতে ভালো কিন্তু অংকে কাঁচা। বাঙালিরা সাহসে দুর্জয়।

. ভাবাধিকরণ : কোন ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য যদি অন্য ক্রিয়ার কোনরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, তাহলে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সবসময় সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয়। যেমন সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।

 

অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

১। প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি বাবা বাড়ি নেই
২। দ্বিতীয়া বিভক্তি-হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে
৩। তৃতীয়া বিভক্তি-  পথ দিয়ে এসো না।
৪। পঞ্চমী বিভক্তি – ছাদ থেকে নদী দেখা যায়।
৫। সপ্তমী বিভক্তি তিনি বাড়িতে নেই। রাতে জ্যোৎস্না হাসে।

 

 

কারক বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ নির্ভুল উপায়

কারক বিভক্তি নির্ণয়ের ভিন্ন এক সহজ পদ্ধতি এখন আলোচনা করতে যাচ্ছি যে পদ্ধতির মাধ্যমে একদম নির্ভুলভাবে কারক নির্ণয় করা যায় কোন রকম ভুলের কোন সুযোগ নেই তবে পদ্ধতিটি আয়ত্তে আনতে প্রথমে একটু সমস্যা হলে পরবর্তীতে একদম সহজ মনে হবে এবং একেবারে নির্ভুলভাবে কারক নির্ণয় করতে পারবেন তাই নিচের এই পদ্ধতিটি আরো গভীর মনোযোগের সহিত পড়ার পরামর্শ রইলো

 

বিভক্তি নির্ণয়ের নিয়ম

যে পদের নিচে রেখাঙ্কিত পদ থাকবে বা মোটা বর্ণে লিখিত থাকবে প্রথমে লক্ষ করতে হবে যে রেখা চিহ্নিত পদের পর অনুসর্গ বিভক্তি অর্থাৎ দ্বারা/ দিয়া /কর্তৃক (৩য়) বা হইতে (হতে) / থেকে / চেয়ে/ অপেক্ষা ৫মী বিভক্তি আছে কিনা, থাকলে সেক্ষেত্রে ৩য়া বা ৫মী উল্লেখ করতে হবে। যেমন-

শাক দিয়ে মাছ ঢেকো না - ৩য়া।
শীতে গাছ থেকে পাতা ঝরে।

যদি অনুসর্গ বিভক্তি না থাকে তাহলে বিভক্তি যুক্ত পদ থেকে মূল পদ বাদ দিলে যেটুকু থাকবে সেটুকু যে বিভক্তি হয় সেটাই উল্লেখ করতে হবে।
যেমন— পাগলে কি না বলে।
পাগল বাদ দিলে থাকে
সুতরাং সপ্তমী বিভক্তি
রহিমকে যেতে হবে।
রহিম = কে অর্থাৎ ২য়া
যদি সম্প্রদান কারক হয় তবে কে = ৪র্থী
গুরুজনকে ভক্তি কর। -- ৪র্থী
লাঠির আঘাতে। --৬ষ্ঠী।
লাঠি =
যদি কোন বিভক্তি না থাকে তবে শূন্য বা ১মা হবে।
তীর বেধা পাখি। শূন্য / মা
তীর = /

 

 

কারক নির্ণয়ের অভিন্ন উপায়

প্রত্যেক কারকেরই একটি নির্দিষ্ট বিভক্তি আছে। যেমন

কর্তৃ - ১মা; ,
কর্ম -২য়া , কে
করণ- ৩য়া,দ্বারা
সম্প্রদান- ৪র্থী, কে
অপাদান - ৫মী, হইতে, থেকে
অধিকরণ --- ৭মী , , তে

বিশেষত কর্ম এবং করণকারকে সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- করিম বই পড়ে। আমরা ২য়া ৩য়া উভয় বিভক্তি যুক্ত করে দেখে নেই কোন বিভক্তিতে বাক্যটি অর্থবহ হয়। করিম বই পড়েঃ করিম বইকে পড়ে (অর্থবহ) করিম বই দ্বারা পড়ে (অর্থবহ নয়) ফলে এটি কর্মকারক। কারণ কর্মকারকের নিজস্ব বিভক্তি কে তে অর্থবহ হয়েছে।
করিম তাস খেলে।
করিম তাস কে খেলে। (অর্থবহ না)
করিম তাস দ্বারা খেলে। (অর্থবহ) সুতরাং এটি করণ।
অপাদান অধিকরণ কারকেও এভাবে সমাধান করা যাবে।
তিলে তৈল হয়।
তিল হইতে তৈল হয়। (অর্থবহ)
তিলে তৈল হয়। (অর্থবহ )
উভয় ক্ষেত্রে অর্থবহ হলে, সে ক্ষেত্রে যদি অতিথি বিভক্তিতে অর্থবহ হয় তাহলে তার গুরুত্বই প্রধান। উপরের উদাহরণে অপাদান কারক হবে। ছাদে বৃষ্টি পড়ে। এটি অপাদান কারক। কারণ ছাদ স্থান হওয়া সত্ত্বেও অপাদানের বিভক্তিতে বাক্য অর্থবহ হচ্ছে, ফলে তার অগ্রাধিকার। ছাদ হইতে বৃষ্টি পড়ে। বাক্যটি অর্থবহ। রোববার স্কুল খুলবে।
(
) রোববারে স্কুল খুলবে। (অর্থবহ) () রোববার হইতে স্কুল খুলবে (অর্থবহ)
যেহেতু সময় অধিকরণ কারকের শর্ত। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিভক্তি দিয়ে অর্থ তো হবেই, যেহেতু হইতে (অতিথি বিভক্তি) প্রয়োগেও অর্থ হচ্ছে, তখন সেক্ষেত্রে ৫মী বিভক্তির কারণে অবশ্যই অপাদান কারক হবে। ট্রেন ঢাকা ছাড়ল।
(
) ট্রেন ঢাকায় ছাড়ল (অর্থ হয় না) () ট্রেন ঢাকা হইতে ছাড়ল (অর্থবহ) সুতরাং অপাদান কারক। এমনিভাবে কারক নির্ণয় করলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হয়।
কি প্রশ্নে জবাব মিললে কর্ম? কি দ্বারা প্রশ্নে জবাব মিললে করণ কারক হয়? এমন বললে ছাত্রছাত্রীকে আগে জেনে নিতে হয় জবাবটি। কারণ-
ছেলেটি বল খেলে। কি খেলে? বল
কি দ্বারা খেলে? বল।

একই জবাব, তাহলে ছাত্রটি কোন কারক লিখবে? তার তো জানা নেই যে, এটি করণ। ফলে সে কর্ম বা করণ যে কোন একটি লিখে আসতে পারে। অথচ কর্ম লিখলে তো ভুল হবে। ফলে সে যদি বলকে খেলে। বল দ্বারা খেলে। এভাবে ব্যাখ্যা করে দেখে যে কর্ম বল তার সাথে অতিথি বিভক্তি যুক্ত হওয়ায় বাক্যটি অর্থবহ হচ্ছে, ফলে তখন করণ লিখবে এবং সঠিক জবাব হবে।