বাংলাদেশ পরিচিতি
ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার (বিবিএস ২০২০ অনুসারে) অথবা ১,৪৮,৪৬০ বর্গকিলোমিটার (সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ২০২১ অনুসারে) । বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর, আর পূর্ব জুড়ে রয়েছে ভারত। পশ্চিমে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। তবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে মিয়ানমার । বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে হাড়িয়াভাঙ্গা নদী এবং দক্ষিণ- পূর্বে নাফ নদী ভারত ও মিয়ানমারের সীমানায় অবস্থিত। বাংলাদেশের দক্ষিণের রয়েছে বঙ্গোপসাগর যা বাংলাদেশের আয়তনকে আরো বৃদ্ধি করেছে । এই নিবন্ধে আমরা সাধারণ জ্ঞান অংশের বাংলাদেশ পরিচিতি সম্পর্কে জেনে আসব।
বাংলাদেশের অবস্থান , আয়তন ও সীমানা
বাংলাদেশের অবস্থান ও আয়তন |
উপাদান |
তথ্য |
অবস্থান |
• বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। |
আয়তন |
• ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিমি বা ৫৭,৩২০ বর্গমাইল। |
সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন |
• ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার ( ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালত স্থায়ী সালিশ আদালত-এর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ) |
বাংলাদেশের সীমানা
উপাদান |
তথ্য |
বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা |
• ৪৭১১ কিমি [ সূত্র: মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ ] |
বাংলাদেশের সর্বমোট স্থলসীমা |
• ৩৯৯৫ কিমি [ সূত্র: মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ ] |
বাংলাদেশের উপকূলের দৈর্ঘ্য |
• ৭১৬ কিমি [ সূত্র: মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ ] |
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা |
• ২০০ নটিক্যাল মাইল বা ৩৭০.৪ কি.মি. ( ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালত স্থায়ী সালিশ আদালত-এর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ) |
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা |
• ১২ নটিক্যাল মাইল বা ২২.২২ কিমি (১ নটিক্যাল মাইল = ১.১৫ মাইল বা ১.৮৫৩ কিমি) |
বাংলাদেশের সাথে যে দুটি দেশের সীমানা আছে |
• ভারত এবং মিয়ানমার |
বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমারেখার দৈর্ঘ্য |
• ৩৭১৫ কি.মি. [সূত্র: মাধ্যমিক ভূগোল ] |
বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের সীমান্ত দৈর্ঘ্য |
• ২৮০ কি.মি. [সূত্র: মাধ্যমিক ভূগোল ] |
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা |
• ৩২ টি |
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে |
• কর্কটক্রান্তি রেখা/ ট্রপিক অফ ক্যান্সার |
ভারত ও মিয়ানমার উভয়দেশের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা |
• রাঙামাটি |
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা |
• ৩ টি। (রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজা |
ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা (ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা নেই) |
• ৩০ টি |
·
বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হয় ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময়। ওই সীমানা কমিশনটি রেডক্লিফ মিশন নামে পরিচিত।
·
বাংলাদেশ ভারতের সীমানা নির্ধারণকারী নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত হাড়িয়াভাঙ্গা নদী।
·
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আয়তনে - চতুর্থ।
·
ঢাকার প্রতিপাদ স্থান - চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগর।
·
বাংলাদেশের মানচিত্র প্রথম অংকন করেন জেমস রেনেল - ১৭৮৯ সালে।
·
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলার সংখ্যা - ১৯ টি। ১৯টি উপকূলীয় জেলা হলো: কক্সবাজার, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, গোপালগঞ্জ, যেশার, ঝালকাঠি, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী।
·
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের যে রাজ্য - আরকান।
·
বাংলাদেশের সাথে ভারতের কোন সীমান্ত সংযোগ নেই - বরিশাল ও ঢাকা বিভাগ।
·
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার সাথে ভারতের সংযোগ নেই - বান্দরবন ও কক্সবাজার।
·
বাংলাদেশের প্রমাণ সময় গ্রিনিচ মান সময় অপেক্ষা - ৬ ঘন্টা এগিয়ে।
·
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমানা নির্ধারণকারী নদী - নাফ নদী।
·
বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমানা সবচেয়ে বেশি - পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির
·
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাজ্য - ২ (রাখাইন ও চিন)
·
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্য ৫ টি। যথা: * পশ্চিমবঙ্গ * মেঘালয় * আসাম * ত্রিপুরা * মিজোরাম
[ মনে রাখার শর্ট টেকনিকঃ 'আমিত্রিমেপ'। আ- আসাম, মি- মিজোরাম, ত্রি- ত্রিপুরা, মে-মেঘালয়, প- পশ্চিমবঙ্গ]
·
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা ১০টি। যথা- * মুর্শিদাবাদ , * নদীয়া , * বহরমপুর , * উত্তর চব্বিশ পরগনা , * মালদহ , * বীরভূম , * জলপাইগুড়ি , * কুচবিহার , * বারাসাত
·
তুমব্র : ঘুনধুম সীমান্ত অবস্থিত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে।
·
নেটং পাহাড়: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাইট্যংপাড়া এলাকায় অবস্থিত।
·
শাহপরীর দ্বীপ: কক্সবাজারের টেকনাফে অবস্থিত।
·
সিত্তে : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী।
·
মংডু : বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত।
·
পালংখালী সীমান্ত: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত।
·
শূন্যরেখা স্থানটি: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অবস্থিত।
·
ঘোলারচর সৈকত : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে অবস্থিত।
·
তেতুলিয়া : অবস্থিত পঞ্চগড় জেলায়।
·
বৃহত্তর সিলেটের অধিকাংশ জেলা - ভারতের আসামের সীমান্তবর্তী।
·
সিলেট বিভাগের সবকটি জেলার সাথে ভারতের সীমানা আছে।
·
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা :
আসাম: কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ, মৌলভীবাজার (৪ টি)
ত্রিপুরা: ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম। (৬টি)
মেঘালয়: নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ। (৪ টি)
ত্রিপুরা ও মিজোরাম: রাঙ্গামাটি। (১টি)
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য যেগুলোর অধিকাংশই বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত এবং ভারতের সাথে সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে যুক্ত। শিলিগুড়ি করিডোর চিকেন নেক নামে পরিচিত।
·
সেভেন সিস্টাস এর মধ্যে তিনটি রাজ্য - মনিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়।
·
ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১৬.৫ কিলোমিটার দূরে ।
·
টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে।
·
বাংলাদেশের সাথে ভারতের অর্থনীতির স্থান তিনটি। এর আয়তন প্রায় ৬.৬ বর্গ কিলোমিটার।
- দৈঘাটা (পঞ্চগড়) - ১.৬ বর্গকিলোমিটার
- মুহুরীর চর (ফেনী) - ২ বর্গকিলোমিটার
- লাঠিটিলা সিলেট- ৩ বর্গ কিলোমিটার
·
ভারত বাংলাদেশের জন্য তিন বিঘা করিডোর খুলে দেয় ২৬ জুন ১৯৯২। তিনবিঘা করিডোরের বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ি ছিটমহলটি দেয়।
·
দহগ্রামের আয়তন ছিল ৩৫ বর্গ মাইল।
·
তিন বিঘা করিডোরের মাপ ছিল- ১৭৮ মিটার × ৮৫ মিটার।
·
তিন বিঘা করিডর লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত।
·
ছিটমহল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয় ১ জুলাই ২০১৫।
·
ছিটমহল বিনিময় কার্যকর শুরু হয় ৩১ জুলাই ২০১৫।
·
বাংলাদেশ - ভারত সীমান্ত এলাকার অর্ধ মাইল এলাকা জুড়ে তৈরি করা বিশদ তথ্য সংবলিত মানচিত্র কে বলে স্ট্রিপম্যাপ।
সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তিঃ জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালত - International Tribunal for
The Law of The Sea ( ITLOS ) । দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় বাংলাদেশ ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা মামলার রায় হয় ১৪ মার্চ ২০১২। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে আমরা পেয়েছি ১,১১,৬৩১ বর্গ কিমি জলসীমা।
সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তি: নেদারল্যান্ডসের হেগের স্থায়ী সালিশি আদালত ( Permanent Court of Arbitration) এই বিরোধ নিষ্পত্তি করে। বাংলাদেশ ২০১১ সালের মে মাসে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করে হেগের আদালতে। বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা মামলার রায় হয় ৭ জুলাই, ২০১৪। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে বাংলাদেশ সর্বমোট ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশী টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরণের সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি রায়ে ১৯.৫ নটিক্যাল মাইল জায়গা জুড়ে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত আদালতের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার লাভ করে। আর ভারত পায় ৬,১৩৫ বর্গকিলোমিটার।
·
সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের ভারতীয় অংশের নাম - ডাউকি।
·
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশ - পেট্রাপোল
·
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশ - চ্যাংড়াবান্ধা।
·
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের স্থলবন্দর - বাংলাবান্ধা।
·
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের স্থলবন্দর - টেকনাফ , কক্সবাজার।
·
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমের উপজেলা - শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)।
·
বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার বলা হয় - চট্টগ্রামকে।
·
মংলা সমুদ্র বন্দর বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। যা পূর্বে খুলনার চালানা নামক স্থানে ছিল।
·
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর - কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত।
·
সর্বউত্তরের জেলা - পঞ্চগড়
·
সর্বদক্ষিণের জেলা - কক্সবাজার
·
সর্বপশ্চিমের জেলা - চাঁপাইনবাবগঞ্জ
·
সর্বপশ্চিমের জেলা - বান্দরবান
কুচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী ও ভরুঙ্গামারিতে অবস্থিত ছিল। ভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়। আর কুচবিহার একীভূত হয় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। ফলে ভারতের কিছু ভূখন্ড আসে বাংলাদেশের কাছে। আর বাংলাদেশের কিছু ভূখন্ড যায় ভারতে। এই ভূমিগুলোই হচ্ছে ছিটমহল।
শর্ট টেকনিকঃ ভারতের ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের যে সকল জেলায় অবস্থিত- ' কুলাপনী '
কু- কুড়িগ্রাম
লা- লালমনিরহাট
প- পঞ্চগড়
নী- নীলফামারী।
দহগ্রাম-আঙ্গুরপোতা ছিটমহলঃ ১৯৭২ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দহগ্রাম আঙ্গুরপোতা বাংলাদেশের একটি ছিটমহলে পরিণত হয়। দহগ্রাম-আঙ্গুরপোতা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ছিটমহল। ছিটমহলটির আয়তন ৩৫ বর্গমাইল। এই ছিটমহলের সাথে যোগাযোগের জন্য 'তিন বিঘা করিডোর' ব্যবহৃত হয়। ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ভারত বাংলাদেশের জন্য 'তিনবিঘা করিডোর' খুলে দেয়। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত তিন বিঘা করিডোরের মাপ ১৭৮ মিটার × ৮৫ মিটার। (বিনিময়ে বাংলাদেশ বেডুবাড়ী হস্তান্তর করে) উল্লেখ্য ১৯৪৭ সালে গঠিত র্যাডক্লিফ কমিশন জলপাইগুড়ি জেলার কয়েকটি থানা ভারতকে এবং কয়েকটি পাকিস্তানকে প্রদান করে। পরবর্তীতে নেহেরু-নুন ঘোষণায় বেরুবাড়ি ভারতকে এবং দহগ্রাম আঙ্গুরপোতা পাকিস্তানকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও মামলার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ছিটমহল বাসিদের নতুন পরিচয় :
·
১৯৭৪ সালের ১৬মে বাংলাদেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সই করেন। ওই বছরই বাংলাদেশের সংসদ চুক্তিটি অনুসমর্থন করলেও ভারত তা করেনি। ফলে দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা অমীমাংসিত থেকে যায়।
·
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত মে (২০১৫) ভারতের রাজ্যসভায় ও লোকসভায় ১০০তম সংবিধান সংশোধনী বিলে সীমান্ত চুক্তিটি পাস হয়। ফলে বাংলাদেশে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল (আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮ একর ও ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর) বিনিময় ও অপদখলীয় জমির হস্তান্তরে আর কোনো বাধা রইল না। তাছাড়া অমীমাংসিত ৬.১ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত হলে অবিলম্বে চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে।
·
৩০ জুন, ২০১৫ সংবিধান সংশোধন আইন (পঞ্চদশ সংশোধন) দ্বারা সমস্ত ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।
জেনে রাখা ভাল..
·
ছিটমহল বিনিময়: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় কার্যকর হয়। ৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্যরাতে। এর ফলে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পায় ছিটমহলের ৫০ হাজারের অধিক বাসিন্দা। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ লাভ করে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারত লাভ করে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল।
·
মশালডাঙ্গা ছিটমহলঃ কুড়িগ্রাম জেলায় অবস্থিত।
·
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন ভূখন্ড হিসেবে যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোর ল্যান্ড রেকর্ড (দলিল) হস্তান্তর - ১০ আগষ্ট, ২০১৫ ইং তারিখে।
বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের মুখোমুখি সমুদ্র সীমারেখায় অবস্থিত। এদেশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এদেশের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উভই উপভোগ করা যায়। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম , খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ।
·
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত : বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত যার দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) । কক্সবাজার সৈকত গড়ে ভরা জোয়ারে ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) আর নিম্ন জোয়ারে ৪০০ মিটার (১,৩০০ ফুট) প্রশস্থ। পুরো সৈকতটি বালুকাময়, এখানে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ভাটার সময়ে চোরাবালি জেগে উঠে বিধায় বিপদজনক হয়ে উঠে। উল্লেখ্য কক্সবাজারকে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী বলা হয় ।
·
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত : পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত । ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এই সৈকতটি ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
·
ইনানী সমুদ্র সৈকত : কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে ইমারজিং টাইগার হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের উপকূলভূমি ইনানী সমুদ্র সৈকত । এটি বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশের কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে ও হিমছড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী প্রবালগঠিত সমুদ্রসৈকত। পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব জায়গাটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণ।
·
পারকি সমুদ্র সৈকত : পারকি সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে “পারকি সৈকতের” দূরত্ব প্রায় ৩৫ কি.মি.। এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকী সমুদ্র সৈকত।
·
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত : গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি মুরাদপুর সৈকত নামেও পরিচিত। সমুদ্র সৈকতটিকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গা এই ঘোষণার আওতায় থাকবে।
·
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত : বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশ এর সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া নামক স্থানে অবস্থিত।
·
টেকনাফ সমুদ্র সৈকত : টেকনাফ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ, এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। টেকনাফ সমুদ্র সৈকত টেকনাফ উপদ্বীপ ম্যানগ্রোভ অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। এই সৈকতটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। উল্লেখযোগ্য ভাগগুলো হলো - শ্যামলাপুর সৈকত (বাহারছড়া সৈকত), শিলাখালী সৈকত, হাজামপাড়া সৈকত। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণে টেকনাফ শহর অবস্থিত। টেকনাফ শহর থেকে দক্ষিণ দিকে আরও প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্বে টেকনাফ সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।
·
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত : বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম বিভাগের বাঁশখালী উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এটি বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও পরিচিত। সৈকতটি বালুচরবেষ্টিত সমুদ্র সৈকত। এটিতে দুটি প্রধান পয়েন্ট রয়েছে, একটি কদমরসুল পয়েন্ট এবং অন্যটি খানখানাবাদ পয়েন্ট। সৈকতটির দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার। কক্সবাজারের পর এটিই বাংলাদেশের ২য় দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।
·
আকিলপুর সমুদ্র সৈকত : আকিলপুর সমুদ্র সৈকত সীতাকুন্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত।
·
কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত : কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপে অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকতটির দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এখানে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার দরবার, কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র যা বাংলাদেশের বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
·
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত : মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে একটি এবং সুন্দরবনের একমাত্র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত। হাড়িভাঙ্গা নদীর তীরে মান্দারবাড়িয়া বনের তীরে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুন্দর সৈকতটি অবস্থিত। এই সৈকতের উল্টোদিকে সুন্দরবন রয়েছে।
·
কটকা সমুদ্র সৈকত : কটকা সমুদ্র সৈকত খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নে অবস্থিত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মনোগ্রোভ বন সুন্দরবনের দক্ষিণ পূর্ব কোণে এই সমুদ্র সৈকতটি অবস্থিত। সৈকতটি সুন্দরবনের একটি অংশ। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত।
·
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত যা পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। এই সমুদ্র সৈকতটি লম্বায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) এবং বিস্তৃতিতে ৩ কিলোমিটার (১.৯ মাইল)। এই সৈকতের বিশেষত্ব হলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এর আরেক নাম সাগরকন্যা। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেখা যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে।
·
গঙ্গামতি সমুদ্র সৈকত : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে গঙ্গামতি সৈকতের অবস্থান। কুয়াকাটার মাত্র তিন কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। গঙ্গামতি সৈকতে দাড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মনলোভা দৃশ্য দেখা যায় ।
·
তারুয়া সমুদ্র সৈকত : তারুয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। জেলা সদর থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান।
·
লালদিয়া সমুদ্র সৈকত : লালদিয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত বলেশ্বর নদী ও বিষখালী নদীর মোহনায় এবং লালদিয়া বনের পাশে অবস্থিত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে এ সৈকত।
·
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত : শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত সমুদ্রের কোল ঘেঁষা প্রান্তিক জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ায় অবস্থিত এই সৈকত।
·
জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত : জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। পূর্বে জাহাজমারা এলাকাটি চরবগলা নামে পরিচিত ছিল।
বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। এটি ভারত মহাসাগরের অংশবিশেষ। ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত প্রায় ত্রিভূজাকৃতি একটি উপসাগর। বাংলাদেশের দক্ষিণে এই উপসাগর অবস্থিত । বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার এবং গড় গভীরতা ৮,৫০০ ফুট (সর্বোচ্চ গভীরতা ৫২৫৮ মিটার) ।
বেঙ্গল ফ্যান ও সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড :
·
বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন ফ্যান বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত যা বেঙ্গল ফ্যান বা গঙ্গা ফ্যান নামে পরিচিত।
·
সাবমেরিন ফ্যান হল সমুদ্রতলদেশে একটি ভূমিরূপ যা নদীবাহিত পলি দ্বারা ক্রমসঞ্চিত হয়ে তলদেশে শিরা উপশিরা মিলে জালের মতো বেষ্টনী তৈরি করে।
·
বঙ্গোপসাগরে তেমনি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও তাদের বিভিন্ন শাখা নদীর বাহিত পলি দ্বারা বেঙ্গল ফ্যানের সৃষ্টি করেছে। বেঙ্গল ফ্যান দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০০০ কিমি এবং প্রন্থে ১৪৩০ কিমি। এটি সর্বোচ্চ ১৬.৫ কিমি পুরো বা স্থুলো।
·
এর নিকটেই বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে বাংলাদেশ সমুদ্র সীমারেখায় অবস্থিত 'সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড' (Swatch of no ground) নামক গভীর সমুদ্র খাদ। একে আন্ডার ওয়াটার ক্যানিয়নও বলা হয়। এর গভীরতা প্রায় ৯০০ মিটার। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে সামান্য দক্ষিনে অবস্থিত।
·
এই খাদটি এতই গভীর যে এখানে সূর্যালোক ঠিক মতো প্রবেশ না করতে পারায় সমুদ্রের জল গাড় বর্ণের দেখায়। ব্রিটিশদের ধারণা ছিলো সমুদ্রের এই খাদের কোন তল নাই এজন্য বলেছিলো 'সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড'। এর প্রস্থ ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার এবং মহীসোপানের কিনারায় এ খাদের গভীরতা প্রায় ১২০০ মিটার।
·
জায়গাটি বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির অবাধ বিচরণের কারণে বিখ্যাত । তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ব্রায়াড'স তিমি, পপাস ডলফিন , ইরাবতী ডলফিন, গোলাপি পিঠকূজো ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন ও মশ্রিন পিঠের (পাখনাহীন) ইমপাইস ডলফিন ।
·
কথিত আছে, ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামক একটি ব্রিটিশ জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে এখানে ডুবে যায়। জাহাজটিতে ব্রিটিশরা ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাচ্ছিল।
বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদ: বাংলাদেশের ৭১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চলের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে অনেক সামুদ্রিক সম্পদ। এর সমুদ্র তলদেশে ৪৪২ প্রজাতির মৎস্য, ৩৩৬ প্রজাতির মলাস্কস (Mollusks), ১৯ প্রজাতির চিংড়ি, নানারকম কাঁকড়া, ম্যানগ্রোভ বনসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদ। কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় পারমাণবিক খনিজ জিরকন, মোনাজাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, রিওটাইল ও লিউকক্সেন পাওয়া গেছে। এছাড়া সমুদ্র তলদেশে রয়েছে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ।
পর্বত হল পৃথিবীর ভূত্বকের একটি উঁচু অংশ । ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের রাঙামাটি , বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই তিন জেলা পাহাড় , পর্বত ও উপত্যকা অধ্যুষিত অঞ্চল । এ কারণেই এই তিন জেলাকে একত্রে পার্বত্য চট্রগ্রাম বলা হয় । ১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হয়। জেলা সৃষ্টির পূর্বে এর নাম ছিল কার্পাস মহল । পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। উল্লেখ্য একটি করে সংসদীয় আসন রয়েছে পার্বত্য চট্রগ্রামের এই তিন জেলাতে। পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় ২ ডিসেম্বর , ১৯৯৭ । নিচে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এর দর্শনীয় স্থানগুলো উল্লেখ করা হল:
বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান :
1.
নীলগিরি
2.
নীলাচল
3.
মেঘলা
4.
শৈলপ্রপাত
5.
স্বর্ণমন্দির
6.
মিলনছড়ি
7.
চিম্বুক
8.
সাঙ্গু নদী
9.
তাজিংডং
10.
কেওক্রাডাং
11.
জাদিপাই ঝর্ণা
12.
বগালেক
13.
কাওজাদি পাহাড়
14.
মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স
15.
প্রান্তিক হ্রদ
16.
ঋজুক জলপ্রপাত
17.
নাফাখুম জলপ্রপাত
18.
দামতুয়া জলপ্রপাত
19.
আলীকদম গুহা
20.
তিন্দু পাথর ছড়া
21.
নাফাখুম , আমিয়াখুম , সাতভাইখুম
রাঙামাটির দর্শনীয় স্থান :
1.
মাইনীমুখী ভ্যালী
2.
সুভলং ঝরণা
3.
সাজেক ভ্যালী
4.
কর্ণফুলি
5.
ঝুলন্ত সেতু
6.
রাজবন বিহার
7.
কাট্রলি বিল
8.
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধি
9.
বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ
10.
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র
11.
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
12.
উপজাতীয় জাদুঘর
13.
চিৎ মরম বেীদ্ধ বিহার
14.
তিনটিলা বনবিহার
15.
ন-কাবা ছড়া ঝর্ণা
খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান :
1.
হালদাভ্যালী
2.
থ্যাগামুখ স্থলবন্দর
3.
আলুটিলা প্রাকৃতিক গুহা
4.
২ টিলা ৩ টিলা
5.
নুনছড়ি দেবতা পুকুর
6.
দীঘিনালা বনাঞ্চল
গ্রিক শব্দ ডেলটা (Δ) যা দেখতে অনেকটা বাংলা বর্ণ ব-এর মত। বিশেষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বোঝাতে এটি (ডেলটা বা ব-দ্বীপ শব্দটি) ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ মানচিত্রে সমুদ্র উপকূলবর্তী যে সকল বৃহৎ একাধিক নদীর বালির সমন্বয়ে কোটি কোটি বৎসরে গ্রিক ডেলটা বা বাংলা 'ব' এর মত ভৌগোলিক রূপ পরিগ্রহ করেছে যে সব অঞ্চলকে ব-দ্বীপ বা ডেলটা বলা হয়। স্রোতের গতিবেগ হ্রাসের ফলে নদীর মোহনায় নদীবাহিত কাদা, পলি, বালি, কাঁকড়, নুড়ি প্রভৃতি স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে যে ত্রিকোণাকৃতি ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে ব-দ্বীপ বলে। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নামক দুটি অন্যতম বৃহৎ দীর্ঘ নদী এবং তার শাখা নদী কর্তৃক বয়ে নিয়ে আসা পলি বঙ্গোপসাগর উপকূলে জমে কোটি কোটি বৎসর ধরে এই বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডের সৃষ্টি; যেটি দেখতে ডেলটা বা এর মত, তাই বাংলাদেশ ভূখণ্ডকে ব-দ্বীপ বলা হয়। সমগ্র বাংলাদেশ পৃথিবীর অনুরূপ ব-দ্বীপ সমূহের মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম। আর প্রাচীন বা মধ্যযুগের সমগ্র বাংলা বা বঙ্গকে যদি ব-দ্বীপ ধরা হয় তাহলে সেটি আয়তনে বৃহৎ। তাই বাংলাদেশকে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বলা হয়। ভূমির অবস্থা এবং গঠনের সময়ানুক্রমিক দিক হতে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়; যথা-
1.
টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ ( ৮% )
2.
প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ ( ১২% )
3.
সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি অঞ্চল ( ৮০% ) । মতান্তরে ৯০ % । বাংলাদেশের ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টির পূর্বে এখানে ছিল ‘বঙ্গ খাত ’
রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের পাহাড়ী এলাকাগুলো নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। সম্ভবত টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হবার সময় মায়ানমারের দিক হতে আগত গিরিজনি আলোড়নের ধাক্কায় ভাঁজগ্রস্ত হয়ে এ সব পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এদের টারশিয়ারি পাহাড় বলা হয়। এ পাহাড়গুলোকে আসামের লুসাই এবং মায়ানমারের আরাকান পাহাড়ের সমগোত্রীয় বলে ধারণা করা হয়। এ পাহাড়গুলো বেলে পাথর, শেল জাতীয় প্রস্তর এবং কর্দমের সংমিশ্রণে গঠিত। পাহাড়গুলোর গায়ে ক্ষুদ্র-বৃহৎ বৃক্ষরাজির বন এবং অসংখ্য ঝোপজঙ্গল রয়েছে। বাংলাদেশের এ টারশিয়ারি পাহাড়গুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ এবং (খ) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশে অবস্থিত পাহাড়সমূহ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা প্রায় ৬১০ মিটার ( প্রায় ২০০১ ফুট)। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোর মূল উপাদান বেলেপাথর , শেলপাথর , কর্দম । এখানকার পার্বত্যভূমি কৃষিকার্যের জন্য বিশেষ উপযোগী নয়। স্থানীয় অধিবাসীগণ জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে। পার্বত্য অঞ্চলে ধান, চা, আনারস প্রভৃতি জন্মে থাকে। বর্তমানে পাহাড়ের গায়ে বাবার ও তুলার চাষের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখানকার কতিপয় স্থানে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর প্রভৃতি রয়েছে। যেমন- লামা ও বান্দরবান এলাকায় লিগনাইট কয়লা ও চুনাপাথর এবং সেমুতাং এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। এ বনাঞ্চলে শাল, সেগুন, গর্জন, গজারি, কড়ই, টিক, চাম্বল প্রভৃতি বহু মূল্যবান বৃক্ষ জন্মে থাকে। এ অঞ্চলের অফুরন্ত বাঁশ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে কর্ণফুলী কাগজের কল ও রেয়ন মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ তাজিংডং এ এলাকায় অবস্থিত । মারমা ভাষায় তাজিংডং এর অর্থ ‘ গহীন অরন্যের পাহাড় ’ । স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে বিজয় । উল্লেখ , বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কেওক্রাডং বান্দরবানের রুমায় অবস্থিত ।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার , হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত ছোট বড় বিচ্ছিন্ন পাহাড়গুলো নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। সিলেট জেলার পাহাড়িয়া অঞ্চল সিলেট শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে ১৮৬ বর্গকিলোমিটার (৭২ বর্গমাইল) জুড়ে বিস্তৃত। এ পার্বত্য ভূমির উচ্চতা ৩০ হতে ৯০ মিটারের (১০০-৩০০ ফুট) বেশি নয়। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক শহরের উত্তরে প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার (২৫ বর্গমাইল) স্থান নিয়ে একটি টিলা পাহাড় অবস্থিত। এটি ছাতক পাহাড় নামে পরিচিত। এ পার্বত্য ভূমির গড় উচ্চতা ৪০ হতে ৬০ মিটার।
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত পাহাড়গুলো কোনরূপ গিরিশ্রেণি গঠন করেনি, কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে এ দুই জেলার দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। এ সব পাহাড়ের ঢালগুলো খাড়া এবং উপরিভাগ অসমান। এদের উচ্চতা ৬০ হতে প্রায় ৩১০ মিটার (২০০-১০২০ ফুট)। এদেরকে ত্রিপুরার পাহাড় বলা হয়। শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার উত্তর সীমানায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের সামান্য বিচ্ছিন্ন অংশ দেখা যায়। অনেকের ধারণা উত্তর- পূর্বাঞ্চলের এ বিক্ষিপ্ত পাহাড়গুলো খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, গারো ও লুসাই পাহাড়ের বিচ্ছিন্ন অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই এখানকার পাহাড়ের ঢালে প্রচুর চা উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ চা বাগান এ অঞ্চলেই অবস্থিত। এ অঞ্চলে আনারসও উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া এ পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ ও বেত পাওয়া যায়। এ অঞ্চল প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, চুনাপাথর, কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ অঞ্চলে পাহাড়ের স্থানীয় নাম টিলা । বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ পাহাড় গারো পাহাড় এ অঞ্চলের ময়মনসিংহে অবস্থিত ।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের সুবিশাল বরেন্দ্রভূমি, মধ্যভাগে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং কুমিল্লা জেলার লালমাই উচ্চভূমি এ অঞ্চলের অন্তর্গত। আনুমানিক ২৫ হাজার বছর আগের সময়কে প্লাইস্টোসিন যুগ বলা হয়। এই উচ্চভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা হয়; যথা- (১) বরেন্দ্র ভূমি, (২) মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং (৩) লালমাই পাহাড়।
উত্তরবঙ্গের পদ্মা, যমুনার দোয়াব অঞ্চলের মধ্যভাগে নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ সুবিশাল বরেন্দ্রভূমি অবস্থিত। এর আয়তন ৯৩২০ বর্গকিলোমিটার এবং বঙ্গ অববাহিকায় এটি সর্ববৃহৎ প্লাইস্টোসিন যুগের উঁচুভূমি। এ এলাকার ভূমি অসমতল এবং মাটি লালচে-ধূসর ও কাঁকরময়। এ 'বরেন্দ্রভূমি' প্লাবন সমভূমির ৬ মিটার (২০ ফুট) হতে ১২ মিটারের ওপরে অবস্থিত। এটি পশ্চিমে মহানন্দা ও পূর্বে করতোয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত।
উত্তরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ হতে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত এ অঞ্চল বিস্তৃত। এটি প্রাইস্টোসিনকালের দ্বিতীয় বৃহত্তম উঁচুভূমি। এ উঁচু উত্থিত অঞ্চলটির মোট আয়তন ৪১০৩ বর্গকিলোমিটার। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলের উত্তরাংশ মধুপুর গড় এবং গাজীপুর জেলার মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলের দক্ষিণাংশ ভাওয়ালের গড় নামে পরিচিত। এ গড়ের গড় উচ্চতা ৩০ মিটার। এ গড়ের পূর্ব ও দক্ষিণাংশের উচ্চতা ৬ "মিটার (২০ ফুট)। কিন্তু পশ্চিম ও উত্তর দিকের উচ্চতা ৩০ মিটার (১৯০৮ ফুট)। এ অঞ্চলটি পাহাড়ের ক্ষয়িত অংশবিশেষ। মধুপুর গড়কে অনেক বিশেষজ্ঞ 'নদী সোপান' আবার কেউ কেউ একে 'উত্থিত' বা 'বদ্বীপও' বলেন। বরেন্দ্রভূমির মত এখানকার মাটির রং দেখতে লাল এবং কঙ্করময় বলে কৃষিকাজের পক্ষে বিশেষ উপযোগী নয়। এখনও এ ভূ-ভাগ বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ এবং বাংলাদেশের গজারী বৃক্ষের কেন্দ্র। মধুপুর এলাকায় আনারস ও নানা ধরনের সবজি উৎপন্ন হয়। পানি সেচের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কিছু ধানের চাষ হয়।
লালমাই পাহাড় কুমিল্লা শহরের ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল) পশ্চিমে "অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার (১৩ বর্গমাইল)। এটি আমাদের কোন পবর্তশ্রেণির অংশ নয়। এটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ হর্স্ট (Horst) শ্রেণিভুক্ত। এ পাহাড়ের গড় উচ্চতা ২১ মিটার (৭০ ফুট)। কিন্তু স্থানবিশেষে-কোন কোন চূড়ার উচ্চতা ৪৬ মিটার (১৫০ ফুট) পর্যন্ত দেখা যায়। এ পাহাড়ের মাটি লাল এবং নুড়ি, বালি ইত্যাদি দ্বারা গঠিত বলে সমগ্র পাহাড়টি বিশেষ করে পূর্বদিক অত্যন্ত ক্ষত-বিক্ষত। এ পাহাড়ের পাদদেশে আলু, তরমুজ ইত্যাদি চাষ হয়।
এ অঞ্চল পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদ-নদী ও এদের উপনদী ও শাখা নদী বাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত উর্বর সমভূমি। । এর আয়তন ১, ২৪, ২৬৬ বর্গকিলোমিটার । এ অঞ্চলটি বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানব্যাপী অবস্থিত। এখানকার নদীগুলো প্রায়শ গতি পরিবর্তন করে, ফলে এখনও নতুন পললভূমি গঠিত হচ্ছে। এ সমভূমির গড় উচ্চতা ৯ মিটার (৩০ ফুট) কম। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি ৯ মিটার বৃদ্ধি পায় তা হলে এ সমভূমির অধিকাংশ স্থানই পানিতে ডুবে যাবে। বর্ষাকালে এ দেশের অনেক নদীতে প্লাবন হওয়ার ফলে নদী অববাহিকায় পলি পড়ে। এ অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য জলাভূমি ও বিল ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলো এ দেশের ভূপ্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। অধিকাংশ জলাভূমিতে বর্ষাকালে পানি থাকে। কিন্তু শীত ও গ্রীষ্মের প্রথমদিকে এদের অধিকাংশই শুকিয়ে যায়। বাংলাদেশে এ ধরনের অনেক বিল রয়েছে। বড় বড় বিলগুলো ভূ-আন্দোলনের সময় ভূ-পৃষ্ঠের ধস বা অবনমনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। এ সব বিলে বারো মাস পানি থাকে। রাজশাহী অঞ্চলের চলন বিল, গোপালগঞ্জের বিল; সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার হাওর ও বিল এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় হাতিয়া, সন্দ্বীপ, শাহবাজপুর এবং ভোলা প্রভৃতি দ্বীপ অবস্থিত। এ ছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে আরও ছোট ছোট দ্বীপ আছে। এ সব দ্বীপের মাটি খুবই উর্বর এবং মনুষ্যবাসের উপযোগী। এ অঞ্চলটি সর্বত্র এক রূপ নয় বলে একে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়:
·
পাদদেশীয় সমভূমি : রংপুর-দিনাজপুর
·
বন্যা প্লাবন সমভূমি: ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, সিলেট।
·
বদ্বীপ সমভূমি : ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও ঢাকা অঞ্চলের অংশবিশেষ।
·
উপকূলীয় সমভূমি : নোয়াখালী ও ফেনী নদীর নিম্ন ভাগ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমি।
·
স্রোতজ সমভূমি : খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা
বাংলাদেশের পাহাড় : চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়সমূহ আরাকান ইয়োমা পর্বতের অংশ। পাহাড়সমূহ টারশিয়ারী যুগের। পাহাড়সমূহ ভাঁজ বা ভঙ্গিল পর্বত শ্রেণীর। অবস্থান অনুসারে বাংলাদেশের টারশিয়ারী পাহাড়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব । দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়সমূহ রাঙামাটি , খাগড়াছড়ি , বান্দরবান ,কক্সবাজার এবং চট্রগ্রাম জেলায় অবস্থিত । উত্তর-পূর্ব পাহাড়সমূহ সিলেট , মৌলভীবাজার , হবিগঞ্জ , ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা জেলায় অবস্থিত ।
বাংলাদেশের পর্বত : ভাঁটির দেশ বাংলাদেশ । বাংলাদেশে শুধুমাত্র দক্ষিণ পূর্বে চট্টগ্রামে পাহাড়, উত্তর পূর্বে সিলেটে নিচু পাহাড় এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে কিছু পর্ব রয়েছে । বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং বা বিজয় । তাজিংডং মারমা শব্দ । এর অর্থ গভীর অরন্যের পাহাড় । নিচে কয়েকটির তথ্য দেওয়া হল :
উপত্যকা : দুইদিকে পাহাড় বা পর্বতের মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাকে উপত্যকা বা ভ্যালী বলে ।
জেনে রাখা ভাল....
·
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ - মহেশখালী
·
উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী রয়েছে- দশটি জেলায়
·
ইউরেনিয়াম পাওয়া যায় - সিলেট ও মেীলভীবাজার জেলায়
·
মধুপুর গড়ের আরেক নাম - নদী সোপান বা উত্থিত বদ্বীপ
·
সিলেট অববাহিকা অঞ্চলে বড় ধরনের ৫টি হাওড় আছে ।
·
মৃত বদ্বীপ অবস্থিত - কুষ্টিয়া এবং যশোরে
·
সক্রিয় বদ্বীপ অবস্থিত - বরিশাল , পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ , মাদারীপুর
·
বরেন্দ্রভূমি বলতে মূলত বোঝায় - রাজশাহী বিভাগের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে
·
ভূ-তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের প্রাচীন ভূমিরুপ গঠিত হয় - টারশিয়ারী যুগে
দ্বীপ শব্দটির উৎপত্তি হলো "দুই দিকে অপ (পানি) যার", অর্থাৎ চতুর্দিকে পানি বা জল বেষ্টিত ভূখণ্ড হতে। অতএব চারিদিকে পানি বা জল দ্বারা পরিবেষ্টিত ভূখণ্ডকে দ্বীপ বলা হয়। নিকটবর্তী একাধিক দ্বীপের গুচ্ছকে দ্বীপপুঞ্জ বলা হয়। দ্বীপ প্রধানত দুই রকমের হয়—মহাদেশীয় দ্বীপ এবং মহাসাগরীয় দ্বীপ।এছাড়া কৃত্রিম দ্বীপও রয়েছে। মহাদেশীয় দ্বীপ হল মহাদেশের কোনো অংশ সমুদ্রের পানিতে ডুবে গিয়ে কিছু অংশ যদি স্থল দেখা যায় সেটা। আর মহাসাগরেরর মাঝে, স্থলের সংযোগ নাই এমন দ্বীপ হল মহাসাগরীয় দ্বীপ। নিচে বাংলাদেশের কয়েকটি দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হল :
বাংলাদেশে মোট ৬টি বাতিঘর রয়েছে। এগুলো হলোঃ কুতুবদিয়া বাতিঘর, সেন্টমার্টিন বাতিঘর, কক্সবাজার বাতিঘর, নরম্যানস পয়েন্ট বাতিঘর, পতেঙ্গা বাতিঘর এবং হিরণ পয়েন্ট বাতিঘর।
দুবলার চর [Dublar Char] :
·
সুন্দরবনের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত।
·
মৎস্য আহরণ, শুটকী উৎপাদন এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর জন্য বিখ্যাত।
·
দুবলার চরের অপর নাম জাফর পয়েন্ট।
ভাসানচর : ভাসানচর নোয়াখালীর মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে ওঠা একটি চর। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত জেলার চর ও জালিয়ার চর এই দুই দ্বীপ মিলিয়ে এর নামকরণ করা হয় ভাসানচর। বর্তমানে এর আয়তন ২৫ বর্গমাইল (২৫ বর্গ কিলোমিটার) সাময়িকভাবে স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরে স্থাপন করা হয়েছে ১৪৪০টি ক্লাস্টার হাউস ও ১২০টি শেল্টার স্টেশন। ১ লাখ ৩ হাজার দুই শত জন রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য বর্তমানে শতভাগ প্রস্তুত ভাসানচর। উল্লেখ্য এ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত:
·
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত জলপ্রপাত।
·
অবস্থান: মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়।
·
পানির উৎস: সীমান্তের ওপারে অবস্থিত বড়লেখা থানার পাখুরিয়া পাহাড় থেকে।
·
উচ্চতা: ২৫০ ফুট
হামহাম জলপ্রপাত:
·
বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত। বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় প্রাকৃতিক জলপ্রপাত হামহাম অবস্থিত।
·
২০১০ সালে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক এটি আবিষ্কার করেন।
·
এ জলপ্রপাতের অপর নাম 'চিতা'।
ঝরনা [Fountain/Spring] :
·
গরম পানির ঝরনা : সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে
·
শীতল পানির ঝরনা: কক্সবাজারের হিমছড়ি
জেনে রাখা ভাল..
·
ঋজুক জলপ্রপাত → রুমা, বান্দরবান।
·
নাফাখুম জলপ্রপাত → বান্দরবান
·
আমিয়াখুম জলপ্রপাত → বান্দরবান
·
খৈয়াছড়া ঝর্ণা → মিরসরাই চট্টগ্রাম
·
শুভলং ঝর্ণা → রাঙ্গামাটি
ইকোপার্ক :
·
সীতাকুন্ড ইকোপার্ক (দেশের প্রথম ইকোপার্ক) - চট্টগ্রাম
·
মুরাইছরা ইকোপার্ক (দেশের দ্বিতীয় ইকোপার্ক) - কুলাউড়া, মৌলভীবাজার
·
বাঁশখালী ইকোপার্ক - চট্টগ্রাম
·
মধুটিলা ইকোপার্ক - নালিতাবাড়ী, শেরপুর
·
অরুনিমা ইকোপার্ক - কালিয়া, নড়াইল
·
মধুপুর ইকোপার্ক - টাংগাইল
·
ধানসিঁড়ি ইকোপার্ক - তাজপুর, দিনাজপুর
·
টিলাগড় ইকোপার্ক - সিলেট
·
মাধবকুন্ড ইকোপার্ক - বড়লেখা , মৌলভীবাজার
·
কুয়াকাটা ইকোপার্ক - পটুয়াখালী
·
রাজেশপুর ইকোপার্ক - কুমিল্লা
সম্প্রতি ঢাকার তুরাগ নদীকে হাইকোর্ট 'জীবন্ত সত্তা' বা 'লিভিং এনটিটি' বলে ঘোষণা করেছেন। 'গাবখান চ্যানেল' বাংলাদেশের ঝালকাঠী জেলায় অবস্থিত। গুরুত্বের বিচারে এ চ্যানেলটিকে বাংলায় সুয়েজ খাল বলা হয়।
জেনে রাখা ভাল..
·
প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরী গড়ে উঠেছিল - করতোয়া নদীর তীরে।
·
বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী প্রণালী সুরমা - মেঘনা নদী প্রণালী যার দৈর্ঘ্য ৬৬৯ কিলোমিটার।
·
টিপাইমুখ বাঁধ অবস্থিত - বরাক নদীতে।
·
খাগড়াছড়ির দুঃখ - চেঙ্গী নদী।
·
কুমিল্লার দুঃখ - গোমতী নদী।
·
বাংলার দুঃখ - দমোদর নদ।
·
বৃহত্তম নদী বন্দর - নারায়ণগঞ্জ।
·
বৃহত্তম নদী কেন্দ্র - চাঁদপুর।
·
নদীবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিদ্যা - Potomology.
·
বাংলাদেশ-মায়ানমারকে বিভক্তকারী নদী- নাফ।
·
বাংলাদেশ ভারত বিভক্তকারী নদী - হাড়িয়াভাঙ্গা।
·
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ - জাহাজ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত।
·
নদীর নামে জেলা - ফেনী।
·
পদ্মা নদী প্রবাহিত হয় - নেপাল, চীন, ভারত, বাংলাদেশ দিয়ে।
·
বহ্মপুত্র প্রবাহিত হয় - তিব্বত, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ দিয়ে।
·
এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম - চিত্রা নদীর তীরে।
·
মহিলা নদী - দিনাজপুরে।
·
বাকল্যান্ড বাঁধ অবস্থিত - বুড়িগঙ্গায়।
·
সুরমা ও কুশিয়ারা ভারত সীমান্তের নাম - বরাক, তুইভাই।
·
মংলা নদী বন্দর - পশুর নদীর তীরে।
·
পায়রা বন্দর - পায়রা নদীর তীরে।
টিপাইমুখ বাঁধ : উৎপত্তিস্থলে মেঘনা নদীর নাম বরাক। বাংলাদেশের সিলেট সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিমি পূর্বে ভারতের মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ নামক স্থানে বরাক ও তুইভাই নদীর সংযোগস্থলে ভারত সরকার একটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ : বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করা হয়েছে । কাপ্তাই হ্রদ হলো কর্ণফুলী নদীতে ১৯৫৬ সালে বাঁধ দেওয়ার ফলে সৃষ্ট এক কৃত্রিম হ্রদ। রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর ভূমি নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ বিস্তৃত। বাংলাদেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত কাপ্তাই হ্রদে ।
DND বাঁধ : DND বা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা বাঁধ নির্মাণ করা হয় ঢাকা শহরকে রক্ষার জন্য। ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে ১৯৬৮ সালে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
তিস্তা বাঁধ : তিস্তা বাঁধ হলো বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলায় হাতিবান্ধা উপজেলাধীন দুয়ানি নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত একটি বাঁধের নাম। ১৯৭৯ সালে বাঁধটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে সার্বিক বাঁধের কাজের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে। এ বাঁধের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ প্রদানের জন্য ব্যারেজ প্রকল্প গ্রহণ হলেও বর্তমানে তিস্তায় পানি শূন্যতার। কারণে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প প্রায় অকার্যকর।
·
বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল 'চলনবিল'। চলনবিলের মধ্য দিয়ে আত্রাই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
·
নদী, বিল ও হাওড় বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের উৎস। বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের প্রধান উৎস চলনবিল।
·
ডাকাতিয়া বিলকে 'পশ্চিমা বাহিনী নদী' বলা হয়।
·
ফয়'স লেক হলো কৃত্রিম হ্রদ, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত।
·
প্রান্তিক লেক অবস্থিত - হলুদিয়া, বান্দরবান।
·
বগালেক অবস্থিত - বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলা হতে ২০ কি.মি. দূরে।
·
'রামসার সাইট' হলো বিশ্বব্যাপী জীব পরিবেশ রক্ষার একটি সম্মিলিত প্রয়াস যা ১৯৭১ সালে ইরানের রামসারে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বাংলাদেশের রামসার স্থান ক্রমানুসারেঃ ১. সুন্দরবন, ২. হাকালুকি হাওর, ৩. টাঙ্গুয়ার হাওর।
·
সরকার ঘোষিত দেশের প্রথম মৎস্য অভয়াশ্রম জাতীয় 'হাইল হাওড়' মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। হাইল হাওড়ের মোট আয়তন ১০ হাজার হেক্টর।
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি :
·
বাংলাদেশ প্রথম মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতের সাথে।
·
ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯ মার্চ, ১৯৭২ সালে ভারতের নয়াদিল্লীতে।
·
ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির মেয়াদ ছিল ২৫ বছর। ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ১৮ মার্চ, ১৯৯৭।
·
ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধী।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি :
·
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৬ মে ১৯৭৪ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে।
·
বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধী।
·
বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত চুক্তির বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশ ভারতকে বেডুবাড়ী হস্তান্তর করবে এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে তিনবিঘা করিডোর।
বাংলাদেশ-ভারত পানিচুক্তি :
·
ভারত সরকার বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উজানে পানি প্রত্যাহারের জন্য ভারতের মনোহরপুর নামক স্থানে গঙ্গা নদীতে ১৯৬১ সালে ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করে।
·
ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের সীমান্ত হতে ১৬.৫ কি.মি.দূরত্বে অবস্থিত।
·
ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
·
এখন পর্যন্ত ফারাক্কার ওপর ৫টি ভারত-বাংলাদেশ পানিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যথা-
ক) ১৯৭৫ সালে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে অন্তবর্তীকালীন চুক্তি।
খ) ১৯৭৭ সালে ৫ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি।
গ) ১৯৮২ সালে ২ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি।
ঘ) ১৯৮৫ সালে ৩ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি।
ঙ) ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লীতে স্বাক্ষরিত ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি।
·
১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজশাহী থেকে মরণ ফাঁদ ফারাক্কা অভিমুখে লং মার্চ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি :
·
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭।
·
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পাহাড়ি জনগণ পক্ষে বা উপজাতিদের প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর করেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (শন্তু লারমা)।
·
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭।
·
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয় ২৭ মে, ১৯৯৮। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন।
কতিপয় চুক্তি স্বাক্ষর ও বাংলাদেশ :
·
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি: ৪ অক্টোবর, ১৯৭২
·
বাংলাদেশ-ভারত নৌ-ট্রানজিট চুক্তি: ১ নভেম্বর, ১৯৭২
·
NPT
চুক্তি: ৩১ আগস্ট, ১৯৭৯
·
পরমাণু পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি: ১৯৯৬ সাল ১২৯ তম দেশ
·
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সাথে HANA চুক্তি : ১৯৯৮
·
বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্থল সীমান্ত চুক্তি: ১৯৯৮
·
বাংলাদেশ কিয়োটো প্রটোকল: ২০০১ সাল
·
স্থল মাইন চুক্তি বা অটোয়া চুক্তি: ১৯৯৯ সালের ১২৬ তম দেশ
দ্বি-পাক্ষিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি : ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে প্রথম দ্বি-পাক্ষিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ১০০টি পণ্য শুল্কমুক্ত ভুটানের বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম দেশ হিসেবে ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তাই চুক্তির দিন হিসেবে ৬ ডিসেম্বর বেছে নেয়া হয়।
সাম্প্রতিক চুক্তি ও সনদ : বাংলাদেশ জাতিসংঘের পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করে - ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ । বাংলাদেশ UN ESCAP'র কাগজবিহীন বাণিজ্য সহজীকরণ কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করে - ২৯ আগস্ট ২০১৭
বাংলাদেশ ভারত দ্বিপাক্ষিক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন ২০২০ :
·
বাণিজ্য, জ্বালানি, কৃষিসহ সাত খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।
·
এর কিছু সময় পরই অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের অংশ হিসেবে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়েছে।
·
সই হওয়া সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে হাইড্রোকার্বনে সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা, কৃষি খাতে সহযোগিতা, নয়াদিল্লি জাদুঘরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতা, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চালু, বাংলাদেশ-ভারত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরামের ট্রাম্প অব রেফারেন্স এবং বরিশালে সুয়ারেজ প্রকল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক।
·
বাংলাদেশের পক্ষে সংশ্লিষ্ট সাত মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সচিব বা শীর্ষ কর্মকর্তা আর ভারতের পক্ষে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী সই করেন।
·
'কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প' এর অংশ হিসেবে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী হাইড্রোপাওয়ার স্টেশন নামের এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রাথমিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৮০ মেগাওয়াট। পরবর্তীতে এর উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়।
·
ভারতের আসাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় হতে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি। কর্ণফুলী নদী পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৯৬২ সালে চালু করা হয়।
·
'শোলাকিয়া ঈদ জামাত' বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঐতিহ্যবাহী এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈশা খান মসনদ-ই-আলার জনৈক বংশধর দেওয়ান হায়বত খান কর্তৃক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থাপিত হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। কথিত আছে যে, এখানে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় ১৭৫০ সালে।