প্রকৃতি-প্রত্যয় (LEC 16)

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks বাংলা ব্যাকরণ


প্রকৃতি-প্রত্যয় || বাংলা ব্যাকরণ

 

প্রকৃতি প্রত্যয় বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক। অথচ টপিকটিতে অনেকে গুরুত্বই দেন না। যার ফলস্বরুপ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভুল করে বসেন। এটি আসলে আমরা যত জটিল মনে করি বিষয়টি তত জটিল না। বিষয়টি মনোযোগ সহকারে পড়লে অবশ্যই এর থেকে কাঙ্ক্ষিত নম্বর উঠানো সম্ভব। আজকের পাঠে আমরা প্রকৃতি প্রত্যয়কে অত্যন্ত সহজভাবে ধাপে ধাপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেকটি ধাপ ধীরে ধীরে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলেই এই পাঠ থেকে কাঙি্ক্ষত ফলাফল পাবেন। প্রতিটি নিয়ম এবং বিশেষ করে উদাহরণগুলো ভালভাবে খেয়াল করুন।

 

ধাতু

ক্রিয়াপদের মূল অংশকে বলা হয় ধাতু বা ক্রিয়ামূল।' ক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায়।ক্রিয়াপদে থাকে ধাতু এবং ক্রিয়া-বিভক্তি। যেমন করে একটি ক্রিয়াপদ। এর দুটো অংশ নিম্নরূপ :
কর + = করে। এখানে ধাতু হচ্ছে কর এবং হচ্ছে ক্রিয়া-বিভক্তি।

 

ধাতু কত প্রকার কী কী?

ধাতু প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
. মৌলিক ধাতু
. সাধিত ধাতু
. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু

 

. মৌলিক ধাতু

যেসব ধাতু বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, সেগুলোই মৌলিক ধাতু। এগুলোকে সিদ্ধ বা স্বয়ংসিদ্ধ ধাতুও বলা হয়। যেমন- চল্, পড়, কর্, শো, , খা ইত্যাদি।

বাংলা ভাষায় 
মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
. বাংলা ধাতু: যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সোজাসুজি আসেনি, সেগুলো হলো বাংলা ধাতু। যেমন কাট্, কাঁদ, জান, নাচ্ ইত্যাদি।
. সংস্কৃত ধাতু: বাংলা ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে। যেমন- কৃ, গম্,ধৃ, গঠ, স্থা ইত্যাদি।
. বিদেশাগত ধাতু: প্রধানত হিন্দি এবং ক্বচিৎ আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বিদেশাগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলে। যেমন- ভিক্ষে মেগে খায়।  বাক্যে 'মাগ্' ধাতু হিন্দি 'মা' থেকে আগত।

কিছু ক্রিয়ামূল রয়েছে যাদের ক্রিয়ামূলের মূল ভাষা নির্ণয় করা কঠিন। ধরনের ক্রিয়ামূলকে বলা হয় অজ্ঞাতমূল ধাতু। যেমন- হের দুয়ারে দাঁড়িয়ে কে?'  বাক্যে ‘হের ধাতুটি কোন ভাষা থেকে আগত তা জানা যায় না। তাই এটি অজ্ঞাতমূল ধাতু

কয়েকটি বিদেশী ধাতুর উদাহরণ দেওয়া হলো

 

ধাতু

যে অর্থে ব্যবহৃত হয়

আট্

শক্ত করে বাঁধা

চেঁচ

চিৎকার করা

ঝুল্

দোলা

টুট্

ছিন্ন হওয়া

ফির্

পুনরাগমন

বিগড়্

নষ্ট হওয়া

ঠেল্

ঠেলা

খাট্

মেহনত করা

জম্

ঘনীভূত হওয়া

টান্

আকর্ষণ

ডর্

ভীত হওয়া

চাহ্

প্রার্থনা করা

ভিজ্

সিক্ত হওয়া

লটক্

ঝুলানো

 

. সাধিত ধাতু

মেীলিক ধাতু কিংবা কোনো কোনো নাম -শব্দের সাথে প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে সাধিত ধাতু বলে যেমন- দেখ্ + = দেখা, পড়্ + = পড়া, বল্ + = বলা ইত্যাদি

 

গঠন রীতি অর্থের দিক থেকে সাধিত ধাতু তিন প্রকার যথা :

 

. নাম ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ এবং অনুকার অব্যয়ের পরে প্রত্যয় যোগ করে যে নতুন ধাতুটি গঠিত হয় তাই, নাম ধাতু। যেমন- সে ঘুমাচ্ছে। আমাকে ধমকিও না। বেত (বিশেষ্য) + (প্রত্যয়) = বেতা (নামধাতু) শিক্ষক ছাত্রটিকে বেতাচ্ছেন।

. প্রযোজক ধাতু: মৌলিক ধাতুর পরে প্রেরণার্থ (অপরকে নিয়োজিত করা অর্থে) প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু গঠিত হয়। যেমন- += করা। পড়+ = পড়া। তিনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন।

. কর্মবাচ্যের ধাতু: মৌলিক ধাতুর সাথে প্রত্যয় যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু সাধিত হয়। এটি বাক্যমধ্যস্থ কর্মপদের অনুসারী ক্রিয়ার ধাতু
(
ধাতুকে প্রযোজক ধাতুর অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়) যেমন- দেখ্+ = দেখা (কর্মবাচ্যের ধাতু) কাজটি ভালো দেখায় না। যেমন- হার্+= হারা। 'যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর।'

 

. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু

বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে কর, দে, পা, খা, ছাড় ইত্যাদি মৌলিক ধাতু সংযুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয়, তাই যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু। যেমন যোগ(বিশেষ্য)+কর্ (ধাতু)= যোগ কর (সংযোগমূলক ধাতু) তিনের সাথে পাঁচ যোগ কর।

 

প্রকৃতি

ক্রিয়াবাচক কিংবা নামবাচক শব্দের মূলকে প্রকৃতি বলে। এটি শব্দের অবিভাজ্য মৌলিক অংশ।
প্রকৃতি দুই প্রকার যথা :
. ধাতু বা ক্রিয়া প্রকৃতি
. নাম প্রকৃতি বা প্রাতিপদিক

ক্রিয়াবাচক শব্দের মূলকে ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু বলে এবং নামবাচক শব্দের মূলকে নাম প্রকৃতি বা প্রাতিপদিক বলে। প্রকৃতি কথাটি বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতি চিহ্নটি ব্যবহার করলে প্রকৃতি শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। যথা পড়ু + উয়া পড়ুয়া। নাচ্ + উনে = নাচনে। অর্থাৎ প্রকৃতির শেষে যুক্ত শব্দ খণ্ডই প্রত্যয়।

 

প্রত্যয়

ধাতু, শব্দ বা অব্যয়ের শেষে যে সকল বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন কাঁদ্ + অন = কাঁদন, রেশম + রেশমী। এখানে কাঁদ রেশম এগুলো প্রকৃতি এবং অন, এগুলো প্রত্যয়। শব্দ কিংবা পদ থেকে প্রত্যয় বিভক্তি বাদ দিলে প্রকৃতি অংশ পাওয়া যায়।

 

প্রকৃতি প্রত্যয়ের পার্থক্য

প্রকৃতি প্রত্যয়ের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলে এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান যথা-

. প্রকৃতি হচ্ছে ক্রিয়া শব্দের মূল অংশ যাকে আর ভেঙে ছোট করা যায় না যথা-কর্ , খেল্ , চিল্ ইত্যাদি। অপরদিকে প্রত্যয় হলো প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যথা --- গম , ইত্যাদি।
. প্রকৃতির নিজস্ব অর্থ আছে কিন্তু প্রত্যয়ের নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
. প্রকৃতির অবস্থান প্রত্যয়ের পূর্বে কিন্তু প্রত্যয়ের অবস্থান প্রকৃতির পরে

প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা

প্রত্যয় বাংলা ভাষার শব্দ গঠনের অন্যতম পদ্ধতি। এটি কখনো ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে, আবার কখনো শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে। যেমন- ডুব্ + অন্ত = ডুবন্ত, গোলাপ + = গোলাপী। এখানে ডুব ধাতুর সাথে অন্ত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ডুবন্ত এবং গোলাপ শব্দের সাথে ' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গোলাপী' শব্দ গঠিত হয়েছে। ধাতু স্বরূপে ব্যবহৃত হতে পারে না, এর সাথে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যখন নতুন শব্দ গঠিত হয় তখন তা কথাবার্তায় প্রয়োগ হয়ে থাকে। এছাড়া প্রত্যয়ের সাহায্যে নতুন নতুন শব্দ গঠিত হয়ে বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সমৃদ্ধি সাধিত হয়। থেকেই অনুধাবন করা যায়, বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

 

প্রত্যয়ের প্রকারভেদ

প্রত্যয়কে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(
) কৃৎপ্রত্যয়
(
) তদ্ধিত প্রত্যয়।

 

কৃৎপ্রত্যয় :

ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতুর সাথে যে সকল প্রত্যয় যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে, তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে।
ধাতুর পরে কৃৎ-প্রত্যয়যোগে যে শব্দ গঠিত হয় তাকে কৃদন্ত শব্দ বলে। যেমন, পড় + = পড়া (কৃদন্ত শব্দ)
যথা চল্ + অন্ত = চলন্ত,খেল্ + = খেলা ইত্যাদি।এখানে যথাক্রমে অন্ত কৃৎপ্রত্যয়।

কৃৎপ্রত্যয় দু'প্রকার। যথা :
(
) খাঁটি বাংলা কৃৎপ্রত্যয়
(
) সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়

. খাঁটি বাংলা কৃৎপ্রত্যয়

খাঁটি বাংলা কৃৎপ্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন:

১। -প্রত্যয় : কেবল ভাববাচ্যে -প্রত্যয় যুক্ত হয়। এটি একটি লুপ্ত প্রত্যয়।যেমন-
চল্ + = চল
হার্ + = হার
ধর্ + = ধর
বল্ + = বল
ডাক্ + = ডাক
ছাড়ু + = ছাড়

-প্রত্যয় যুক্ত হলে কোন কোন স্থানে স্বরের গুণ হয়। যেমন- খুঁজ্ + = খোঁজ,ঝুঁক্ + ঝোঁক

২। অন-প্রত্যয়: ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে অন-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
চল্ + অন = চলন
বাঁধ + অন = বাঁধন
ঝুল্ + অন = ঝুলন
দুল্ + অন দুলন >দোলন
নাচ্ + অন = নাচন

-কারান্ত ধাতুর সাথে অন স্থানে ওন হয়। যেমন না + ওন = নাওন ,খা + ওন = খাওন কখনও কখনও অন-প্রত্যয় দ্বারা বস্তুবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন
ঝাড়ু + অন = ঝাড়ন (যা দিয়ে ঝাড়া হয়)
মাজ্ + অন = মাজন (যা দিয়ে মাজা হয়)

৩। অনা-প্রত্যয় : অনা-প্রত্যয় অন-প্রত্যয়ের একটি প্রসারিত রূপ। ভাববাচ্যে এবং কর্মবাচ্যে অনা-প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন
খেল্ + অনা = খেলনা
ঢাক্ + অনা =ঢাকনা
বাজ্ + অনা = বাজনা
রাঁধ + অনা = রাধনা > রান্না
দুল্ + অনা = দুলনা > দোলনা

৪। অনি (উনি)-প্রত্যয় : ভাববাচ্যে প্রত্যয় হয়। যেমন
নাচ্ + অনি = নাচুনি > নাচুনি
কাঁপ্ + অনি = কাঁপনি > কাঁপুনি
চাহ্ + অনি = চাহনি > চাহুনি
বক্ + অনি = বকনি> বকুনি
গাঁথ্ + অনি = গাঁথনি >গাঁথুনি
চির্ + অনি = চিরনি >চিরুনি

৫। -প্রত্যয় : ভাববাচ্যে কর্মবাচ্যে -প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন-
কাঁদ্ + = কাঁদা
হাস্ + = হাসা
কর্ + = করা
বাচ্ + = বাঁচা
খেল্ + = খেলা
পড়ু + = পড়া

৬। আন-প্রত্যয় : ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বিশেষণ গঠনের জন্য আন-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
বাঁধ + আন = বাঁধান > বাঁধানো
উডু + আন = উড়ান > উড়ানো
চাপ্ + আন = চালান > চালানো
জ্বাল + আন = জ্বালান > জ্বালানো
শুন্ + আন = শুনান > শুনানো

৭। আনি-প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে আনি-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
ভাঙ্ + আনি = ভাঙানি
শুন্ + আনি = শুনানি
জান্ + আনি = জানানি
রাঙ্ + আনি = রাঙানি
পিট্ + আনি = পিটানি

৮। অক-প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে অক-প্রত্যয় যোগ করা হয়। যেমন---
ঘট্ + অক = ঘটক
ফল্ + অক = ফলক
ঝল্ + অক = ঝলক
টন্ + অক = টনক
চডু + অক = চড়ক
পাঠ + অক = পাঠক
দুল্ + অক = দোলক
মুডু + অক = মোড়ক

৯। অল-প্রত্যয় : যেমন-
ফাট্ + অল = ফাটল
পিছ্ + অল = পিছল

১০। আল-প্রত্যয় : বিশেষ্য অথবা বিশেষণ পদ গঠনে আল-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন
মিশ্ + আল = মিশাল
রাখ্ + আল = রাখাল
নাগ্ + আল = নাগাল
মাত্ + আল = মাতাল

১১। অন্ত-প্রত্যয় : বর্তমান কালের কর্তৃবাচ্যে হচ্ছে, করছে এরূপ অর্থে ধাতুর শেষে অন্ত-প্রত্যয় যুক্ত হয়। প্রত্যয় দ্বারা গঠিত শব্দগুলো কৃদন্ত বিশেষণ। যেমন
ডুব্ + অন্ত = ডুবন্ত
ফল্ + অন্ত = ফলন্ত
ফুট্ + অন্ত = ফুটন্ত
উড্ + অন্ত = উড়ন্ত
জ্বল্ + অন্ত =জ্বলন্ত
ভাস + অন্ত = ভাসন্ত
চল্ + অন্ত = চলন্ত
ঝুল্ + অন্ত = ঝুলন্ত
ঘুম্ + অন্ত = ঘুমন্ত
পড় + অন্ত = পড়ন্ত
জী + অন্ত = জীয়ন্ত > জ্যান্ত
বাড়ু + অন্ত = বাড়ন্ত

১২। আই-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে আই-প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন
লডু + আই =লড়াই
বডু + আই =বড়াই
খাড়ু + আই = খাড়াই
সিল্ + আই = সিলাই > সেলাই
চডু + আই = চড়াই
মাড় + আই = মাড়াই
পিট্ + আই = পিটাই
খুদ্ + আই = খুদাই > খোদাই
ঝাল + আই = ঝালাই
বাছ্ + আই = বাছাই

১৩। আও-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে আও-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন
চড়ু + আও = চড়াও
পাকড় + আও = পাকড়াও
ছাড়ু + আও = ছাড়াও
বাড়ু + আও = বাড়াও

১৪। -প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে -প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন
হাস্ + = হাসি
ছুট্ + = ছুটি
ফাঁস্ + = ফাঁসি
ঝাপ্ + = ঝাঁপি
ভাজ্ + = ভাজি

১৫। ইয়া (ইয়ে) প্রত্যয় : বিশেষণ পদ গঠনে ইয়ে-প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন
কহ + ইয়ে = কহিয়ে > কইয়ে
বল্ + ইয়ে = বলিয়ে
নাচ্ + ইয়ে = নাচিয়ে
গাহ্ + ইয়ে = গাহিয়ে
পড় + ইয়ে = পড়িয়ে
বাজ্ + ইয়ে = বাজিয়ে
কর্ + ইয়ে = করিয়ে
খেল্ + ইয়ে = খেলিয়ে
লিখ্ + ইয়ে = লিখিয়ে
কর + ইয়ে = করিয়ে

১৬। ইত-প্রত্যয় : বিশেষণ পদ গঠনে ইত-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
চপ্ + ইত = চলিত
মথ্ + ইত = মথিত
শান্ + ইত = শানিত
পাল্ + ইত= পালিত
দল্ + ইত = দলিত

১৭। আরী/ আরি-প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে আরী-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
পূজ্ + আরী = পূজারী
ভিখ্ + আরী = ভিখারী
ডুর্ + আরী = ডুবারী > ডুবুরী
শাঁখ্ + আরি = শাখারি

১৮। আরু-প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে আরু-প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন
খোঁজ্ + আরু = খোঁজারু
খা + উয়া = খাউয়া > খাওয়া
সাঁত + আরু = সাঁতারু
ডুব্ + আরু = ডুবারু

১৯। -প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ পদ গঠনে -প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন-
ডাক্ + = ডাকু
উডু + = উড়ু
ঝাড় + = ঝাড়ু

২০। উয়া-প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ পদ গঠনে উয়া-প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন
উড্ + উয়া = উড়ুয়া > উড়ো
পড় + উয়া = পড়ুয়া পড়ো

২১। উক-প্রত্যয় : যেমন
লাজ্ + উক = লাজুক
মিশ্ + উক = মিশুক
ভাব্ + উক = ভাবুক
চুম্ + উক = চুমুক

২২। উনি প্রত্যয় : যেমন
রাধ + উনি = রাঁধুনি
কাঁদ্ + উনি = কাঁদুনি
চাল্ + উনি = চালুনি
বক্ + উনি = বকুনি

২৩। কাপ্রত্যয় : যেমন
কোঁচ্ + কা = কোঁচকা
হেঁচ্ + কা = হেঁচকা

২৪। কি-প্রত্যয় : যেমন-
মুচ্ + কি = মুচকি
ফুট্ + কি = ফুটকি
মুড্ + কি = মুড়কি
সড় + কি = সড়কি

২৫। তাপ্রত্যয় : যেমন---
বহ্ + তা = বহতা
পড়ু + তা = পড়তা
ফিক্ +তা = ফিরতা

২৬। তি-প্রত্যয় : যেমন
বাড়ু + তি = বাড়তি
ঘাট্ + তি = ঘাটতি
কাট্ + তি = কাটতি
উঠু + তি = উঠতি

২৭। না--প্রত্যয় : যেমন-
কাঁদ্ + না = কাঁদনা > কান্না
মাগ্ + না = মাগনা
দুল + না = দুলনা > দোলনা
রাধ + না = রাধনা > রান্না
ঝর্ + না = ঝরনা

. সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়

সংস্কৃত ধাতুর সাথে যে সকল সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন সংস্কৃত শব্দ গঠিত হয়, তাকে তৎসম বা সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় বলে।

সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন:

১। ণক (অক)-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্যে ধাতুর শেষে ণক (অক) প্রত্যয় হয়। প্রত্যয় দ্বারা গঠিত পদটি বিশেষ্য পদ হয়।যেমন-
গৈ + ণক (অক) = গায়ক
লিখ + ণক (অক) = লিখক > লেখক
শাস্ + ণক (অক) = শাসক
যজ্ + ণক (অক) = যাজক
জন + ণক (অক) = জনক
সম্ + ণক (অক) = স্মারক
পঠ + ণক (অক) = পাঠক
গ্ৰহ্ + ণক (অক) = গ্রাহক
সম্ + পদি + ণক ( অক) = সম্পাদক

২। অনট-প্রত্যয় ( ইৎ হয়, অন থাকে) : কর্তৃবাচ্য ভাববাচ্য ছাড়া সকল কারক বাচ্যেই প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য পদ হয়। যেমন
চল্ + অনট = চলন
গম্ + অনট = গমন
ভুজ্ + অনট = ভুজন > ভোজন
দা + অনট > দা + অন = দান
নী + অনট = নী + অন > নে+ অন = নয়ন
পত + অনট = পতন
ভ্রম + অনট = ভ্রমণ

৩। তব্য-প্রত্যয় : ভাববাচ্যে কর্মবাচ্যে ঔচিতার্থে ধাতুর পরে প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন
বচ্ + তব্য = বক্তব্য
কৃ + তব্য = কর্তব্য
মন্ + তব্য = মন্তব্য
দা + তব্য = দাতব্য
ধৃ + তব্য =ধর্তব্য
গম্ + তব্য = গন্তব্য
জ্ঞা + তব্য = জ্ঞাতব্য
ভু + তব্য = ভবিতব্য
পঠ + তব্য = পঠিতব্য
দৃশ্ + তব্য = দ্রষ্টব্য

৪। ক্ত-প্রত্যয় ( ইৎ হয় এবং থাকে) : অতীতকালে কর্মবাচ্যে ধাতুর পরে ক্ত-প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন
কৃ + ক্ত = কৃত
স্না + ক্ত = স্নাত
তপ্ + ক্ত = তপ্ত
তৃপ্ + ক্ত = তৃপ্ত
খ্যা + ক্ত = খ্যাত
শু + ক্ত = শু
জ্ঞা + ক্ত = জ্ঞাত
গম্ + ক্ত = গত
দীপ্ + ক্ত =দীপ্ত
পঠ + ক্ত = পঠিত

৫। ক্তি-প্রত্যয় ('' ইৎ হয় এবং থাকে) : যেমন
গম্ + ক্তি = গতি
শ্রম্ + ক্তি = শ্রান্তি
মুচ্ + ক্তি = মুক্তি
মন্ + ক্তি = মতি

৬। অনীয়-প্রত্যয় : ভাববাচ্যে এবং কর্মবাচ্যে ঔচিতার্থে কিংবা যোগ্যতার্থে অনীয়' প্রত্যয় হয়। যেমন
দৃশ + অনীয় = দর্শনীয়
রক্ষ + অনীয় = রক্ষণীয়
পা + অনীয় = পানীয়
পাল্ + অনীয় = পালনীয়
কৃ + অনীয় = করণীয়

৭। তৃচ-প্রত্যয় ( ইৎ হয় এবং তৃ থাকে) : প্রথমা একবচনে ‘তৃ স্থানে তা হয়। যেমন
মা + তৃচ = মাতা
ক্রী + তৃচ = ক্রেতা
দা + তৃচ = দাতা

৮। ' ()-প্রত্যয় : যেমন
লভ + যঞ = লাভ
পঠ + ঘঞ = পাঠ
যুজ + ঘঞ = যোগ
পচ্ + ঘঞ = পাক
+ ঘঞ = ভোজ
অব্ + + ঘঞ = অবতার
ত্যা + ঘঞ = ত্যাগ
বদ্ + ঘঞ = বাদ
প্র + কৃ + ঘঞ = প্রকার

৯। শানচ-প্রত্যয় ('' এবং '' ইৎ হয় এবং আন/ মান থাকে): ক্রিয়ার কাজ চলছে এরূপ অর্থে শানচ প্রত্যয় হয়। যেমন-
চল্ + শানচ = চলমান
দীপ্ + শানচ = দীপ্যমান
বৃধ + শানচ = বর্ধমান

১০। ণ্যৎ-প্রত্যয় ('' '' ইৎ হয় এবং থাকে) : ভাববাচ্যে কর্মবাচ্যে -কারান্ত ব্যঞ্জন বর্ণাস্ত ধাতুরপরে ণ্যৎ হয়। যেমন-
হস্ + ণ্যৎ = হাস্য
কৃ+ ণ্যৎ = কার্য
ভুজ + ণ্যৎ = ভোজ্য
বহ + ণ্যৎ = বাহ্য
ধৃ+ ণ্যৎ = ধার্য

১১। অল-প্রত্যয় ( ইৎ হয়, থাকে) : যেমন-
ভি + অল = ভয়
জি + অল = জয়
ক্ষি + অল = ক্ষয়

১২। ইষ্ণু-প্রত্যয় : শীল' অর্থে ধাতুর পরে ইষ্ণু প্রত্যয় হয়। কৃদন্ত শব্দটি বিশেষণ পদ হয়। যেমন
সহ + ইষ্ণু = সহিষ্ণু
বৃধ + ইষ্ণু = বর্ধিষ্ণু
চল্ + ইষ্ণু = চলিষ্ণু
ক্ষি + ইষ্ণু = ক্ষয়িষ্ণু

১৩। ইত-প্রত্যয় : ভাববাচ্যে এবং কর্মবাচ্যে ইত প্রত্যয় হয়। কৃদন্ত শব্দ ক্রিয়া বিশেষণ। যেমন
পঠু + ইত = পঠিত
লিথ্ + ইত = লিখিত
ঘট্ + ইত = ঘটিত
রক্ষ + ইত = রক্ষিত
নিন্দ্ + ইত= নন্দিত
পত্ + ইত = পতিত

১৪। ইন-প্রত্যয়: ইন= -কার হয়। যেমন-
অনু + রাগ + ইন = অনুরাগী
শ্রম + ইন = শ্রমী

১৫। অৎ (শতু)-প্রত্যয় : বর্তমান কর্তৃবাচ্যে প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন পদটি বিশেষণ পদ হয়। যেমন-
মহ্ + অৎ = মহৎ
অস্ + অৎ = অসৎ
ভূ+ = ভবিষ্যৎ
জি + অৎ = জীবৎ

১৬। আলু-প্রত্যয় : শীল' অর্থে কর্তৃবাচ্যে ধাতুর পরে প্রত্যয় হয়। নিষ্পন্ন শব্দটি বিশেষণ পদ হয়। যেমন-
নি-দ্রা + আলু = নিদ্রালু
তন্ -দ্রা + আলু = তন্দ্রালু

১৭। বর-প্রত্যয় : নিষ্পন্ন শব্দটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন-
ভাস্ + বর = ভাস্বর
ঈশ্ + বর = ঈশ্বর
স্থা + বর = স্থাবর
নশ্ + বর = নশ্বর

১৮। -প্রত্যয় : নিষ্পন্ন পদটি বিশেষণ পদ হয়। যেমন-
নিম্ + র্ =নম্র
হিন্ + র্ = হিংস্র

১৯। -প্রত্যয় : নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন-
+ = পাত্র
অস্ + = অত্র
নী + = নেত্র
বস্ + = বস্ত্র

২০। -প্রত্যয় : কর্ম ভাববাচ্যে ঔচিত্য যোগ্যতা অর্থে প্রত্যয় যুক্ত হয়। '' যুক্ত হলে -কারান্ত ধাতুর কার স্থলে -কারান্ত হয় এবং য়' তে পরিণত হয়। যেমন---- দা + > দে + >য় = দেয়

 

তদ্ধিত প্রত্যয়

বিভক্তিহীন নাম শব্দ বা নাম প্রকৃতির পরে যে সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন-

বোকা + আমি = বোকামি
মিথ্যা + উক = মিথ্যুক
শিকার + = শিকারী

বোকা, মিথ্যা, শিকার'শব্দগুলোর সাথে যথাক্রমে আমি, উক এবং প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে।
বাংলা ভাষায় 
তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার। যেমন- . বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়; . সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়; . বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়।

 

প্রাতিপদিক

বিভক্তিহীন নাম শব্দকে প্রাতিপদিক বলে।যথা- লাজ + উক = লাজুক, বড় + আই = বড়াই। এখানে লাজ, বড়- শব্দগুলোর সাথে কোনো শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয় নি।তাই এগুলো প্রাতিপদিক। প্রাতিপদিক তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি। এজন্য এর অপর নাম নাম প্রকৃতি'

 

. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

খাঁটি বাংলা নাম শব্দের সাথে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাকে বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন :

১। -প্রত্যয় :
হাত + = হাতা
থাল + = থালা
চোর + = চোরা
চাল + = চালা
ডিঙি + = ডিঙা
কেষ্ট + = কেষ্টা
পাগল + = পাগলা
জঙ্গল + = জঙ্গলা
চোখ + = চোখা
বাঘ + = বাঘা

২। আই-প্রত্যয় :
বড় + আই = বড়াই
নিম + আই = নিমাই
ঢাকা + আই = ঢাকাই
বোন + আই = বোনাই
পাবনা + আই = পাবনাই
ননদ + আই = ননদাই
মিঠা + আই = মিঠাই
জ্যাঠা + আই = জ্যাঠাই
চোর + আই = চোরাই
মোগল + আই = মোগলাই
লড় + আই = লড়াই
বোঝা + আই = বোঝাই

৩। আমি (মি)-প্রত্যয় :
জেঠা + আমি = জেঠামি
ঘর + আমি = ঘরামি
ভণ্ড + আমি = ভণ্ডামি
দুষ্ট + আমি = দুষ্টামি
ছেলে + আমি = ছেলেমি
পাকা + আমি = পাকামি
পাগল + আমি = পাগলামি
নোংরা + আমি = নোংরামি

৪। আল-প্রত্যয় :
দাঁত + আল = দাঁতাল
লাঠি + আল = লাঠিয়াল
ধার + আল = ধারাল

৫। আলি/আলী-প্রত্যয় :
ঘটক + আলি = ঘটকালি
মিতা + আলি = মিতালি
রুপা + আলি = রুপালি
মেয়ে + আলি = মেয়েলি
সোনা + আলি = সোনালি
গোড়া + আলি = গোড়ালি

৬। আর-প্রত্যয় :
ভাঁড় + আর = ভাঁড়ার
গাঁও + আর = গোঁয়ার

৭। আরি-প্রত্যয় :
মাঝ + আরি = মাঝারি
শাঁখা + আরি = শাঁখারি
জুয়া + আরি = জুয়ারি
ভিখ + আরি = ভিখারি
ঝি + আরি = ঝিয়ারি
রকম + আরি = রকমারি

৮। আরু-প্রত্যয়:
বোমা + আরু = বোমারু
দিশ + আরু = দিশারু

৯। আনি-প্রত্যয় :
নাক + আনি = নাকানি
তল + আনি = তলানি
বাবু + আনি = বাবুয়ানি

১০। -প্রত্যয় :
ঢোল + = ঢোলি
চালাক + = চালাকি
পোদ্দার + = পোদ্দারি

১১। -প্রত্যয় :
মজলিস + = মজলিসী
বিলাত + =বিলাতী
মোক্তার + = মোক্তারী
বেনারস + = বেনারসী
রেশম + = রেশমী
শিকার + = শিকারী
দরদ + = দরদী
হিসাব + = হিসাবী

১২। ইয়া> -প্রত্যয় :
বালি + ইয়া = বালিয়া >বেলে
মাটি + ইয়া = মাটিয়া > মেটে
জাল + ইয়া =জালিয়া > জেলে
পাথর + ইয়া =পাথরিয়া > পাথুরে
শহর + ইয়া = শহরিয়া > শহুরে
আটাশ + ইয়া = আটাশিয়া >আটাশে
মুট + ইয়া = মুটিয়া > মুটে
একুশ + = একুশে
একাল + = একালে
সেকাল + = সেকালে

১৩। উয়া > -প্রত্যয় :
মাছ + উয়া = মাছুয়া > মেছো
বন + উয়া = বনুয়া> বুনো

১৪। -প্রত্যয়:
সাঁতার + = সাঁতারু

১৫। উক-প্রত্যয় :
হিংসা + উক= হিংসুক
পেট + উক = পেটুক
মিথ্যা + উক = মিথ্যুক
লাজ + উক = লাজুক

১৬। উলি-প্রত্যয় : আধ + উলি = আধুলি

১৭। অই-প্রত্যয় :
দশ + অই = দশই
আঠার + অই = আঠারই
ষোল + অই = ষোলই

১৮। অন-প্রত্যয় :
দাঁত + অন = দাঁতন
পিছ + অন = পিছন
নানা + অন = নানান

১৯। পনা/পানা-প্রত্যয় :
দুরন্ত + পনা = দুরন্তপনা
মেয়েলি + পনা = মেয়েলিপনা
বেহায়া + পনা = বেহায়াপনা

২০। , লা-প্রত্যয় :
আধ + লা = আধলা
মেঘ + লা = মেঘলা

২১। চা, ছা, , সা-প্রত্যয় :
লাল + চা = লালচা > লালচে
আব + ছা= আবছা
মুখ + = মুখস > মুখোস
খোল + = খোলস
পানি + সা = পানিসা > পানসে

২২। , টিয়া > টে-প্রত্যয় :
জমা + = জমাট
ক্ষ্যাপা + টিয়া = ক্ষ্যাপাটিয়া > ক্ষ্যাপাটে
ঘোলা + টিয়া = ঘোলাটিয়া > ঘোলাটে
ভরা + = ভরাট
তামা + টিয়া =তামাটিয়া > তামাটে
রোগা + টিয়া = রোগাটিয়া > রোগাটে

 

. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়

১। অক-প্রত্যয় :
মূল + অক = মূলক
পদ + অক =পদক
আৰ্দ্ৰ + অক = আৰ্দ্ৰক

২। আল-প্রত্যয় :
রস + আল রসাল
শাঁস + আল = শাঁসাল

৩। ইক-প্রত্যয় :
ধর্ম + ইক = ধার্মিক
ব্যক্তি + ইক = ব্যক্তিক
বেদ + ইক = বৈদিক

৪। ইমন (ইমা)-প্রত্যয় :
মহৎ + ইমন (ইমা) = মহিমা
নীল + ইমন (ইমা) = নীলিমা
লঘু + ইমন (ইমা) = লঘিমা

৫। ইল-প্রত্যয় :
পঙ্ক + ইল = পঙ্কিল
জটা + ইল = জটিল
ঊর্মি + ইল = ঊর্মিল

৬। ইন্ঠ-প্রত্যয় :
গুরু + ইষ্ঠ = গরিষ্ঠ
বল + ইষ্ঠ = বলিষ্ঠ
লঘু + ইষ্ঠ = লঘিষ্ঠ
বৃদ্ধ + ইষ্ঠ = বর্ধিষ্ঠ > জ্যেষ্ঠ

৭। ইয়প্রত্যয় :
রাষ্ট্র + ইয় = রাষ্ট্রীয়

৮। ইতপ্রত্যয় :
কুসুম + ইত = কুসুমিত
কণ্টক + ইত = কণ্টকিত
তরঙ্গ + ইত = তরঙ্গিত
ক্ষুধা + ইত = ক্ষুধিত
দুঃখ + ইত = দুঃখিত
পুষ্প + ইত = পুষ্পিত
ব্যর্থ + ইত = ব্যথিত

৯। ষ্ণিক (ইক)-প্রত্যয় :
সাহিত্য + ষ্ণিক = সাহিত্যিক
সপ্তাহ + ষ্ণিক = সাপ্তাহিক
ইতিহাস + ষ্ণিক = ঐতিহাসিক
বিজ্ঞান + ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক
ধর্ম + ষ্ণিক = ধার্মিক
পথ + ষ্ণিক = পথিক
নৌ + ষ্ণিক = নাবিক
দেহ + ষ্ণিক = দৈহিক
সংবাদ + ষ্ণিক = সাংবাদিক
বর্ষ + ষ্ণিক = বার্ষিক
বিমান + ষ্ণিক = বৈমানিক
সময় + ষ্ণিক = সাময়িক
নগর + ষ্ণিক = নাগরিক

এরূপ
মাস -মাসিক
দর্শন দার্শনিক
বিষয় - বৈষয়িক
শরীর -শারীরিক
নীতি - নৈতিক
সমাজ - সামাজিক
দিন - দৈনিক

১০। ষ্ণীয় (ঈয়)প্রত্যয় :
মানব + ষ্ণীয় = মানবীয়
রাজক + ষ্ণীয় = রাজকীয়
রাষ্ট্র + ষ্ণীয় = রাষ্ট্রীয়
জল + ষ্ণীয় = জলীয়
শরৎ + ষ্ণীয় = শারদীয় > সারদীয়
স্থান + ষ্ণীয় = স্থানীয়
দল + ষ্ণীয় = দলীয়
স্বর্গ + ষ্ণীয় = স্বর্গীয়
দেশ + ষ্ণীয় = দেশীয়
আত্মা + ষ্ণীয় = আত্মীয়

১১। ষ্ণ ()-প্রত্যয় :
মনু + ষ্ণ = মানব
যুব + = যৌবন
দেব + ষ্ণ = দৈব
বস্তু + ষ্ণ = বাস্তব
বন্ধু + ষ্ণ = বান্ধব
তিল + ষ্ণ = তৈল
লঘু + ষ্ণ = লাঘব
শিশু + ষ্ণ = শৈশব
সূর্য + ষ্ণ = সৌর
পুত্র + ষ্ণ = পৌত্র
গুরু + ষ্ণ = গৌরব
ব্যাকরণ + ষ্ণ = বৈয়াকরণ
পুরুষ + ষ্ণ = পৌরুষ

১২। ঞ্চি ()-প্রত্যয় :
পর্বত + ষ্ণি = পার্বতি
রাবণ + ষ্ণি = রাবণি

১৩। ইতচ (ইত)-প্রত্যয় :
লজ্জা + ইতচ = লজ্জিত
ক্ষুধা + ইতচ = ক্ষুধিত
দুঃখ + ইতচ = দুঃখিত
সীমা + ইতচ = সীমিত
পল্লব + ইতচ = পল্লবিত

১৪। ষ্ণায়ণ (আয়ণ)প্রত্যয় :
নর + ষ্ণায়ণ = নারায়ণ
দ্বীপ + ষ্ণায়ণ = দ্বৈপায়ণ
রাম + ষ্ণায়ণ = রামায়ণ

১৫। তা-প্রত্যয় :
মধুর + তা = মধুরতা
মূর্খ + তা = মূর্খতা
চঞ্চল + তা = চঞ্চলতা
সাধু + তা = সাধুতা
গ্রাম্য + তা = গ্রাম্যতা
শত্রু + তা = শত্রুতা

১৬। ত্ব-প্রত্যয় :
কবি + ত্ব = কবিত্ব
প্রাচীন + ত্ব = প্রাচীনত্ব
মনুষ্য + ত্ব = মনুষ্যত্ব
লঘু + ত্ব = লঘুত্ব
গুরু + ত্ব = গুরুত্ব
নতুন + ত্ব = নতুনত্ব
প্রভু + ত্ব = প্রভুত্ব
বন্ধু + ত্ব = বন্ধুত্ব
নতুন + ত্ব = নতুনত্ব

১৭। বিন্ (বী)প্রত্যয় :
মেধা + বিন = মেধাবী
মায়া + বিন = মায়াবী
তাপস + বিন = তাপসী
তেজস + বিন = তেজস্বী

১৮। ঈন ()প্রত্যয় :
সুখ + ঈন = সুখী
শাখা + ঈন = শাখী
মান + ঈন = মানী
জ্ঞান + ঈন = জ্ঞানী

১৯। ঈয়স্/ ঈয়ান-প্রত্যয় :
বল + ঈয়স = বলীয়ান
লঘু + ঈয়স = লঘীয়ান
প্রিয় + ঈয়স + = প্রেয়সী
গুরু + ঈয়স = গরীয়ান
গুরু + ঈয়স + = গরীয়সী

২০। -প্রত্যয় :
পুত্র + = পুত্ৰক
পঞ্চ + = পঞ্চক

২১। ভর-প্রত্যয়:
বৃহৎ + তর = বৃহত্তর
দরিদ্র + তর = দরিদ্রতর
ক্ষুদ্র + তর = ক্ষুদ্রতর
উচ্চ + তর = উচ্চতর

২২। তম-প্রত্যয় :
দরিদ্র + তম = দরিদ্রতম
ক্ষুদ্র + তম = ক্ষুদ্রতম
বৃহৎ + তম = বৃহত্তম
উচ্চ + তম = উচ্চতম

২৩। -প্রত্যয় :
শীত + = শীতল
বস + = বৎসল
মাংস + = মাংসল

২৪। বতুপ- প্রত্যয় :
দয়া + বতুপ = দয়াবান
গূণ + বতুপ = গুণবান

২৫। মতুপ- প্রত্যয় :
বুদ্ধি + মতুপ= বুদ্ধিমান
শ্রী + মতুপ = শ্রীমান

 

. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়

. গর > কর-প্রত্যয় :
সওদা + গর = সওদাগর
কারি + গর = কারিগর
বাজি + কর = বাজিকর

. বাজ প্রত্যয় :
গলা + বাজ = গলাবাজ
কলম + বাজ = কলমবাজ
ধোকা + বাজ = ধোকাবাজ
চাল + বাজ = চালবাজ
ফিকির + বাজ = ফিকিরবাজ

. গিরি-প্রত্যয়:
কেরানি + গিরি = কেরানিগিরি
বাবু + গিরি = বাবুগিরি

. দার- প্রত্যয় :
মজা + দার = মজাদার
ভাগী + দার = ভাগীদার
পাহারা + দার = পাহারাদার
দেনা + দার = দেনাদার
দোকান + দার = দোকানদার
পাওনা + দার = পাওনাদার
চৌকি + দার = চৌকিদার
জমা + দার = জমাদার
জমি + দার = জমিদার
খবর + দার = খবরদার

. আনা / আনি-প্রত্যয় :
বাবু + আনা = বাবুয়ানা
মুনশী + আনা = মুনশীয়ানা
বিবি + আনা = বিবিয়ানা
হিন্দু + আনা = হিন্দুয়ানা

. বন্দী / বন্দ প্রত্যয় :
নজর + বন্দ= নজরবন্দ > নজরবন্দী
জবান + বন্দু = জবানবন্দ্ > জবানবন্দী
সারি + বন্দ্ = সারিবন্দ্> সারিবন্দী
বাক্স + বন্দ্ = বাক্সবন্দ > বাক্সবন্দী

. ওয়ালা > আলা - প্রত্যয় :
গাড়ি + ওয়ালা = গাড়িওয়ালা > গাড়িয়ালা
মাছ + ওয়ালা = মাছওয়ালা > মাছয়ালা
রিকসা + ওয়ালা = রিকসাওয়ালা > রিকসায়ালা
দুধ + ওয়ালা = দুধওয়ালা > দুধয়ালা

. ওয়ান > আন- প্রত্যয় :
কোচ + ওয়ান = কোচওয়ান
দার + ওয়ান = দারওয়ান > দারোয়ান
গাড়ি + ওয়ান = গাড়োয়ান

. খানা - প্রত্যয় :
ডাক্তার + খানা ডাক্তারখানা

১০. খোর-প্রত্যয় :
গাঁজা + খোর = গাঁজাখোর
হারাম + খোর = হারামখোর
ঘুষ + খোর = ঘুষখোর

১১. সা > সে-প্রত্যয় :
এক + সা = একসা
পানি + সা = পানিসা >পানসে

১২. পনাপ্রত্যয় :
বেহায়া + পনা = বেহায়াপনা
গিন্নী + পনা = গিন্নীপনা
ছেলে + পনা = ছেলেপনা