সুকান্ত ভট্টাচার্য,শামসুদ্দীন আবুল কালাম,রশীদ করীম, মুনীর চৌধুরী, LEC 7

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks বাংলা সাহিত্য

 এই পর্বে যা যা থাকছে

সুকান্ত ভট্টাচার্য

শামসুদ্দীন আবুল কালাম

রশীদ করীম

মুনীর চৌধুরী

 

 

সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

১৫ আগস্ট, ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা- ৩০ শ্রাবণ, ১৩৩৩) কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিট, কালীঘাটে (মাতুলালয়) জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে

উপাধি

তিনি বামপন্থি মার্কসবাদী বিপ্লবী কবি হিসেবে খ্যাত হলেও কিশোর কবি' হিসেবে পরিচিত।

সম্পাদনা

তিনি ছিলেন দৈনিক পত্রিকা স্বাধীনতা' কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

কাব্যগ্রন্থ

তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থসমূহের নাম:

 
ছাড়পত্র ' (১৯৪৭): এটি কবির মৃত্যুর তিনমাস পরে প্রকাশিত হয়। কাব্যের অন্যতম কবিতা ছাড়পত্র আঠারো বছর বয়স শোষিত মানুষের জীবন-যন্ত্রনা, বিক্ষোভ বিদ্রোহ, অনাচার বৈষম্যের প্রতিবাদ কাব্যের প্রধান বিষয়বস্তু।

ঘুম নেই' (১৯৫০),
'
পূর্বাভাস' (১৯৫০),
মিঠেকড়া’ (১৯৫১),
অভিযান’ (১৯৫৩),
হরতাল' (১৯৬২),
গীতিগুচ্ছ’ (১৯৬৫)

সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা

আকাল’ (১৯৪৩) : পঞ্চাশের মন্বন্তর সংকলনের কবিতাগুলোর মূল প্রেরণা। ১৯৬৬ সালে সুভাস মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকাসহ এর নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এটি ছিল জীবিত অবস্থায় প্রকাশিত তাঁর একমাত্র গ্রন্থ

বিখ্যাত কবিতা

আঠারো বছর বয়স'  কবিতাটি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ পঙক্তি

. ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। (মহাজীবন)

. 'কবি সে, ছবি আঁকার অভ্যাস ছিল না ছোট বয়সে,
অথচ শিল্পি বলে সে- পেল শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের সম্মান।' (এক যে ছিল)

. 'বন্ধু তোমার ছাড় উদ্বেগ, সুতীক্ষ্ণ কর চিত্ত,
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত' (উদ্যোগ)

. এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি,
নবজাতকের কাছে আমার দৃঢ় অঙ্গীকার' (ছাড়পত্র)

. এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের' (ছাড়পত্র)

. অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি,
জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি'

মৃত্যু

তিনি ১৪ মে, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা- ২৯ বৈশাখ, ১৩৫৪) যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে যাদবপুর টিবি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। (তিনি মাত্র ২০ বছর মাস জীবিত ছিলেন)

 

শামসুদ্দীন আবুল কালাম

 

শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬-১৯৯৭)

বাংলাদেশের একটি বিশেষ এলাকার জীবনপ্রবাহকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম প্রাণবন্তরূপে পরিবেশন করে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষ ছিল তাঁর সাহিত্যের প্রধান উপজীব্য এবং এসকল মানুষের প্রতি ছিল প্রগাঢ় সহানুভূতি। তাঁর গল্প- উপন্যাসে সমকালীন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সামাজিক সংকট চিত্রিত হয়েছে।

শামসুদ্দীন আবুল কালামের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

শামসুদ্দীন আবুল কালাম আগস্ট, ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ঝালকাঠি জেলার নলছিটির কামদেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন

প্রকৃত নাম

তাঁর প্রকৃত নাম আবুল কালাম শামসুদ্দীন  দৈনিক আজাদপত্রিকার সম্পাদকের নাম তাঁর নামের সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি ১৯৫৫ সালে পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে শামসুদ্দীন আবুল কালাম' নামে পরিচিত হন

সম্পাদনা

তিনি মাহেনও (১৯৪৯) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

পুরস্কার

তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' পান।

উপন্যাস

তাঁর উপন্যাসগুলো:

আলমনগরের উপকথা(১৯৫৪): সামন্তবাদ ধনতন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং উভয়ের দ্বন্দ্বের ফলে গণচেতনার প্রকাশই উপন্যাসের মূল বিষয়।

কাশবনের কন্যা (১৯৫৪): উপন্যাসে বরিশাল অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, লোকজীবন, গ্রামীণ দিগন্ত ফটোগ্রাফিকভাবে চিত্রায়িত। গ্রামে দুঃখ-দারিদ্র্য থাকলেও গ্রামই সুখের স্বর্গ,সমস্ত বিশ্বাসের আধার। চরিত্র : শিকদার, হোসেন, মেহেরজান, জোবেদা।

জায়জঙ্গল (১৯৭৩) : এতে সুন্দরবনের জনবিরল বনজঙ্গলঘেরা পরিবেশ চিত্রায়িত হয়েছে। উপন্যাসের পটভূমি সুন্দরবন হলেও চরিত্রগুলো অঞ্চলের নয়, সবাই সেটেলার। জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের চাপে তারা পিতৃপুরুষের নিবাসভূমি ছেড়ে সমুদ্র তীরবর্তী শ্বাপদসংকুল সুন্দরবন অঞ্চলে বাস করতে বাধ্য হয়েছে।

সমুদ্র বাসর(১৯৮৬): বৃহত্তর বরিশাল জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী জনজীবনকে কেন্দ্র করে রচিত উপন্যাস।

দুই মহল' (১৯৫৫),
জীবনকাব্য(১৯৫৬),
কাঞ্চনমালা (১৯৬১),
মনের মতো ঠাঁই(১৯৮৫),
যার সাথে যার (১৯৮৬),
নবান্ন (১৯৮৭),
কাঞ্চনগ্রাম(১৯৯৮)

গল্পগ্রন্থ

তাঁর গল্পগ্রন্থসমূহ:

অনেক দিনের আশা(১৯৫২),
ঢেউ(১৯৫৩),
পথ জানা নেই(১৯৫৩),
দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫),
শাহের বানু (১৯৫৭),
পুঁই ডালিমের কাব্য(১৯৮৭)

মৃত্যু

তিনি ১০ জানুয়ারি, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালির রোমে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকায় সমাহিত করা হয়

 

 

রশীদ করীম

 

 

রশীদ করীম (১৯২৫-২০১১)

প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক রশীদ করীম নাগরিক জীবন-ইতিহাস-নগর সমাজের সমন্বয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের বহুমুখী পরিচয় বিধৃত করেছেন। সমাজ মনস্কতা, মধ্যবিত্তের মনস্তত্ত্ব টানাপোড়েন তাঁর উপন্যাসের উপজীব্য

রশীদ করীমের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

রশীদ করীম ১৪ আগস্ট, ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন কথাসাহিত্যিক আবু রুশদ তাঁর ভাই

প্রথম গল্প

তাঁর রচিত প্রথম গল্প আয়েশা ১৯৪২ সালে সওগাতপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

পুরস্কার সম্মাননা

তিনি আদমজী পুরস্কার (১৯৬১), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭২), একুশে পদক (১৯৮৪), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯১) পান

উপন্যাস

তাঁর রচিত উপন্যাসসমূহ:

উত্তম পুরুষ(১৯৬১): এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, যা দেশবিভাগের প্রেক্ষাপটে রচিত। প্রধান চরিত্র শাকেরকে ঘিরে সেলিনা, অনিমা, শেখর, মুশতাক ইত্যাদি চরিত্র আবর্তিত এবং এদের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় কোথাও কোথাও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। নগরজীবনের বৈশিষ্ট্য অবলম্বনে উপন্যাসটি রচিত। পুরো উপন্যাসে শাকের তিনটি নারী চরিত্রের নৈকট্য লাভ করে। কিন্তু তাদের পাওয়ার পথে আসে বিভিন্ন ধরনের বাঁধা। উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬১ সালে আদমজী পুরস্কার' পান।

প্রসন্ন পাষাণ(১৯৬৩): প্রধান চরিত্র তিশনা উপন্যাসের কথক। উত্তম পুরুষের বর্ণনায় উপন্যাসটি রূপায়িত। চরিত্রঃ তিশনা, কামিল, আলিম

আমার যত গ্লানি(১৯৭৩): স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিক অস্থিরতাকে আশ্রয় করে তিনি এটি রচনা করেন। এতে ১৯৪৭ সাল থেকে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালের মধ্যকার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঢাকার একটি বহুজাতিক ফার্মের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির এরফান চৌধুরী। অফিসের পর ক্লাবে বসে মদপান নারীসঙ্গ বিশেষত মধ্যবয়সী সুন্দরী আয়েশার সাথে সময় কাটানো তার কাজ। তবে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে আত্মকেন্দ্রিক এরফান সময়টাকে অস্বীকার করতে পারেনি। ব্যক্তিজীবনে নায়ক এরফান অন্তর্গতভাবে দহন হবার ফলে সামাজিক কঠিন বাস্তবতার কাছে বারংবার পরাজিত হয়। কিন্তু অন্তরাত্মাকে সজাগ রাখে বলে শেষ অবধি সে অপরাজিত থাকে। অপরাজেয় মানসিকতাই উপন্যাসের মূলসুর

প্রেম একটি লাল গোলাপ(১৯৭৮): উমর চরিত্রের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের চাকরিজীবী, মধ্যবিত্ত জীবনের হীনমন্যতা, নিজ চরিত্রে নিহিত যৌবন বিকারের কাহিনি ফুটে উঠেছে।

সাধারণ লোকের কাহিনি(১৯৮২),
 
শ্যামা ' (১৯৮৪),
সোনার পাথর বাটি ,
 
খাঁচায় ’,
মায়ের কাছে যাচ্ছি',
পদতলে রক্ত,
বড়ই নিঃসঙ্গ,
লাঞ্চবাক্স' (১৯৯৩)

প্রবন্ধগ্রন্থ

তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ সমূহ :

আর এক দৃষ্টিকোন,
অতীত হয় নূতন পুনরায়,
মনের গহনে তোমার মুরতিখানি

গল্পগ্রন্থ

গল্পগ্রন্থপ্রথম প্রেম

আত্মজীবনী

আত্মজীবনীজীবন মরণ(১৯৯৯)

মৃত্যু

তিনি ১৯৯২ সালে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন এবং ২৬ নভেম্বর, ২০১১ সালে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক সেন্টারে মারা যান

 

মুনীর চৌধুরী

 

মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১)

বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, অসাধারণ বক্তা, সৃজনশীল নাট্যকার, তীক্ষ্ণধী সমালোচক সফল অনুবাদক মুনীর চৌধুরী। সাহিত্য, ধ্বনিতত্ত্বের গবেষণা তুলনামূলক সমালোচনায় তিনি রেখে গেছেন অনন্য পাণ্ডিত্য উৎকর্ষের ছাপ। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক নাটক নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ।

মুনীর চৌধুরীর সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

মুনীর চৌধুরী ২৭ নভেম্বর, ১৯২৫ সালে মানিকগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন পৈতৃক নিবাস- নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার গোপাইরবাগ গ্রামে।

পুরো নাম

পুরো নাম আবু নায়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী  অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তার ভাই এবং ফেরদৌসী মজুমদার তার বোন।

রবীন্দ্রসংগীত প্রচার

২২ জুন, ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন জাতীয় পরিষদে এক বিবৃতিতে রেডিও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন।

বর্ণমালা সংস্কার

১৯৬৮ সালে বাংলা বর্ণমালা সংস্কার পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন।

পুরস্কার সম্মাননা

তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২), . দাউদ পুরস্কার (১৯৬৫) পান। তিনি ১৯৬৬ সালে 'সিতারা- -ইমতিয়াজ' খেতাব লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭১ এর মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আহূত অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে খেতাব বর্জন করেন

বাংলা টাইপ রাইটার

প্রথম বাংলা টাইপ রাইটার নির্মাণ করেন মুনীর চৌধুরী। এটি মুনীর অপটিমা নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে এটি উদ্ভাবন করেন

নাটক

তাঁর রচিত নাটকগুলো:

রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২): এটি তাঁর রচিত প্রথম নাটক। ১৭৬১ সালের পানিপথের ৩য় যুদ্ধের কাহিনি এর উপজীব্য। নাট্যকার ইতিহাস থেকে এর কাহিনি গ্রহণ করেননি, কায়কোবাদ রচিত মহাশ্মশান থেকে এর কাহিনি গ্রহণ করেছেন। এই নাটকটির জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। চরিত্র: জোহরা, ইব্রাহীম কার্দি।

কবর(১৯৬৬): এটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। মুনীর চৌধুরী ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার কারণে ১৯৫২-৫৪ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন। বামপন্থী লেখক রণেশ দাশগুপ্তের অনুরোধে মুনীর চৌধুরী নাটকটি ১৯৫৩ সালের ১৭ জানুয়ারি কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় রচনা করেন। ১৯৫৩ সালে কারাগারেই ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় ফণী চক্রবর্তীর নির্দেশনায় রাজবন্দীদের দ্বারা এটি প্রথম মঞ্চায়ন করা হয় কারাভ্যন্তরেই। এটি একুশের পটভূমিতে রচিত প্রথম নাটক। ১৯৫৬ সালে প্রথম প্রকাশ্যে নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের একুশ উদযাপন উপলক্ষে ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে দৈনিক সংবাদ' পত্রিকার আজাদী সংখ্যায় প্রথম ছাপা হয়। পরবর্তীতে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি' সংকলনের দ্বিতীয় সংস্করণে নাটকটি পুনর্মুদ্রিত হয়।

'
মানুষ(১৯৪৭): ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে রচিত। নাট্যকার এখানে ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবিকতাকে স্থান দিয়েছেন।

নষ্ট ছেলে(১৯৫০): এটি রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ নাটক

দণ্ডকারণ্য(১৯৬৬): এতে তিনটি নাটক আছে। যথা: দণ্ড,দণ্ডধর, দণ্ডকারণ্য।

রাজার জন্মদিন(১৯৪৬),

'
চিঠি(১৯৬৬),

পলাশী ব্যারাক অন্যান্য' (১৯৬৯)

অনূদিত নাটক

তাঁর অনূদিত নাটকগুলো:

কেউ কিছু বলতে পারে না(১৯৬৭): এটি জর্জ বার্নাড ' You never can tell এর অনুবাদ

রূপার কৌটা(১৯৬৯): এটি গলস ওয়ার্দির The Silver Box থেকে অনূদিত

মুখরা রমণী বশীকরণ(১৯৭০): এটি শেক্সপিয়রের Taming of the Shrew এর অনুবাদ

প্রবন্ধ

তাঁর রচিত প্রবন্ধগুলো:

মীর মানস(১৯৬৫): এর জন্য তিনি ১৯৬৫ সালে দাউদ পুরস্কার লাভ করেন।

তুলনামূলক সমালোচনা(১৯৬৯),

বাংলা গদ্যরীতি(১৯৭০)

মৃত্যু

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।

 

বিয়োগান্তক নাটক হিসেবে রক্তাক্ত প্রান্তর' এর পরিচয়

সাহিত্যকর্মে, বিশেষভাবে নাটকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ যখন তার পরিণতিতে প্রধান চরিত্রের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনে তখন তাকে সাধারণভাবে বিয়োগান্তক নাটক বলে ১৭৬১ সালের পানিপথের (বর্তমান ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের অন্তর্গত প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্র) ৩য় যুদ্ধের কাহিনি এর উপজীব্য। প্রশিক্ষিত মুসলিম যোদ্ধা ইব্রাহীম কার্দি মুসলিম শিবিরে চাকরি না পেয়ে মারাঠা কর্তৃক চাকরি পায় এবং সমাদৃত হয়। যুদ্ধ শুরু হলে ইব্রাহীম কার্দির স্ত্রী জোহরা মন্নুবেগ ছদ্মনাম ধারণ করে এসে স্বামীকে মুসলিম শিবিরে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। ইব্রাহীম কার্দি বিশ্বাসঘাতকতা না করে মারাঠাদের জন্য যুদ্ধে জীবন দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। নায়ক ইব্রাহীম কার্দির মৃত্যু নাটকটিকে ট্র্যাজিক করে তোলে। এটি ঐতিহাসিক নাটক নয়, ইতিহাস-আশ্রিত ট্র্যাজিক নাটক। নাটকের বিখ্যাত উক্তি- মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।'

'কবর' নাটক এর পরিচয়

মার্কিন নাট্যকার Irwin Shaw রচিত Bury The Dead (১৯৩৬) নাটকের অনুসরণে মুনীর চৌধুরী এদেশীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবর' নাটকটি রচনা করেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে পাকিস্তান সরকার মুনীর চৌধুরীকে ১৯৫২ সালে আটক করে জেলে প্রেরণ করে। জেলে থাকা অবস্থায় বামপন্থী লেখক রণেশ দাশগুপ্তের অনুরোধে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে তিনি ১৭ জানুয়ারি, ১৯৫৩ সালে নাটকটি রচনা করেন। ১৯৫৩ সালে কারাগারেই রাজবন্দীদের দ্বারা এটি প্রথম মঞ্চায়ন করা হয়। কবর' নাটকে দেখা যায়, রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবীর মিছিলে পুলিশ গুলি করে এবং কারফিউ জারি করে। রাতের আঁধারে বাংলার দামাল ছেলেদের গুলিবিদ্ধ লাশ গুম করার দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ইন্সপেক্টর হাফিজ নেতাকে। ছিন্নভিন্ন লাশ কবরস্থ না করে মাটিচাপা দেয়ার সিদ্ধান্তে বাধা দেয় গোর-খোদক মুর্দা ফকির। পরবর্তীতে লাশগুলো জিন্দা হয়ে কবরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। উল্লেখ্য, এতে কোনো নারী চরিত্র নেই