আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা ,আবদুল্লাহ আল মামুন, শহীদ কাদরী, হাসান আজিজুল হক lec 4

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks বাংলা সাহিত্য


এই পর্বে যা যা থাকছে

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

আহমদ ছফা

আবদুল্লাহ আল মামুন

শহীদ কাদরী

হাসান আজিজুল হক

 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭)

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মূলত নিরীক্ষাপ্রবণ শিল্পী। তাঁর গল্পগুলোতে পুরান ঢাকার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রচিত। অনাহার, অভাব, দারিদ্র্য শোষণের শিকার হয়ে যারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে, সেসব অবহেলিত মানুষের জীবনাচরণ তাঁর গল্প উপন্যাসে উজ্জ্বলভাবে অঙ্কিত

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৩ সালে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার গোটিয়া গ্রামে (মাতুলালয়) জন্মগ্রহণ করেন পৈতৃক নিবাস চেলোপাড়া, বগুড়া। ডাকনাম- মঞ্জু।

পেশা

তিনি ১৯৬৫ সালে জগন্নাথ কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ঢাকা কলেজে আমৃত্যু অধ্যাপনা করেন

পুরস্কার

তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (মরণোত্তর)- ১৯৯৯ পান

উপন্যাস

তাঁর উপন্যাস দুটি যথা:

চিলেকোঠার সেপাই(১৯৮৭): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এটি উনসত্তরের গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত। চরিত্র: ওসমান, খিজির, আনোয়ার

খোয়াবনামা (১৯৯৬): এতে গ্রাম বাংলার নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষের জীবনালেখ্যসহ তেভাগা আন্দোলন, ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ১৯৪৩ এর মন্বন্তর, পাকিস্তান আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি ঐতিহাসিক উপাদান নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। কাৎলাহার বিলের দু'ধারের চাষী-মাঝিদের জীবনচরিত উপন্যাসের উপজীব্য।

গল্পগ্রন্থ

অন্যঘরে অন্যস্বর' (১৯৭৬): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ সালে রচিত নিরুদ্দেশ যাত্রা, উৎসব, প্রতিশোধ, যোগাযোগ, ফেরারী, অন্যঘরে অন্যস্বর ইত্যাদি গল্প নিয়ে তিনি গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেন। গল্পগ্রন্থে প্রথমবারের মতো পুরনো ঢাকার জনজীবন বিশেষত্ব পেয়েছে।

খোঁয়ারি’ (১৯৮২),

দুধেভাতে উৎপাত(১৯৮৫),

দোজখের ওম' (১৯৮৯)

গল্প

রেইনকোট’ (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক),

জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল(মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক),

ফোঁড়া’ (মার্কসীয় তত্ত্বভিত্তিক),

মিলির হাতে স্টেনগান' (স্বাধীনতা পরবর্তী বিশৃঙ্খল বাংলাদেশের প্রকৃত রূপ রূপায়িত)

প্রবন্ধগ্রন্থ

তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থটির নাম সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু(১৯৯৮): এতে ২২টি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত আছে।

মৃত্যু

তিনি জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

চিলেকোঠার সেপাই' উপন্যাসের পরিচয়

উনসত্তরের গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মহাকাব্যিক উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই' (১৯৮৭) উপন্যাসের নায়ক ওসমান দেশবিভাগের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকায় এসেছে। সে এতোটাই বিচ্ছিন্ন এবং ছিন্নমূল যে চিলেকোঠায় বাস করাই ছিল যেন তার নিয়তি। অথচ বামপন্থী ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগ নেতা, শ্রমিক রিক্সাওয়ালা এমন কি বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে তার বিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ হয়েছে। ওসমান যেন ছোট ছোট কাহিনির সূত্রধর। কোনো বাড়ির চিলেকোঠায় বাস করেও স্বাধীনতার লক্ষ্যে গড়ে উঠা বৃহত্তর আন্দোলনের জোয়ারে সেদিন মিলিত হয়েছিল ওসমান। ওসমানের মাধ্যমে ইতিবাচক রাজনীতির উপস্থাপনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ববর্তী রূপটি ঔপন্যাসিক সার্থকভাবে তুলে এনেছেন। উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে

 

 

আহমদ ছফা

 

আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১)

বিশিষ্ট লেখক, চিন্তাবিদ সাহিত্যিক আহমদ ছফার রচনায় প্রাধান্য পেয়েছে জাতিসত্তার পরিচয়। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর প্রথাবিরোধী, নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য বুদ্ধিজীবী মহলে বিশেষ পরিচিত ছিলেন।

আহমদ ছফার সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

আহমদ ছফা ৩০ জুন, ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বিশেষ অবদান

তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে লেখক সংগ্রাম শিবিরগঠন করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা প্রতিরোধ' প্রকাশ করেন

১৯৮০ সালে কাঁটাবন বস্তিতে তিনি শিল্পী সুলতান কর্ম শিক্ষাকেন্দ্রচালু করেন।

সম্পাদনা

তিনি উত্থানপর্ব’ দাবানল(এটি তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

সম্মাননা

তিনি একুশে পদক (মরণোত্তর) পান।

উপন্যাস

তাঁর রচিত উপন্যাসসমূহ:

সূর্য তুমি সাথী' (১৯৬৭): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস

 
ওঙ্কার ' (১৯৭৫) : এটি ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে লেখা স্বাধীন বাংলাদেশ বাঙালি জাতি উত্থানের এক মনোজ্ঞ রূপায়ণ। উপন্যাসের নায়ক আবু নসরের বোবা মেয়েকে বিয়ে করে। আবু নসরের সাথে আইয়ুব খানের সম্পর্ক থাকায় সে একধরনের ক্ষমতা লাভ করে। কাহিনিসূত্র ধরেই উপন্যাসের কাহিনি গতি লাভ করেছে। এখানে আইয়ুব খানের তথাকথিত সামরিক শাসনের সমালোচনা করা হয়েছে।

একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন(১৯৮৮): আইয়ুব খান থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রচিত।

মরণ বিলাস' (১৯৯০): রাত ১২:১৩ মিনিট থেকে ভোর পর্যন্ত একান্ত সাগরেদ মাওলা বক্সের কাছে একজন মুমূর্ষু রাজনীতিবিদের সরল স্বীকারোক্তিতে ব্যক্ত হয় রাজনৈতিক জীবনের নানা উত্থান-পতন, সিঁড়ি বেয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কাহিনি। একই সাথে নেতার করুণ মিনতিও প্রকাশিত হয়েছে।

 
অলাতচক্র' (১৯৯৩): উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতে অভিবাসী বাঙালিদের নিয়ে রচিত। প্রেমের কাহিনি হলেও এতে ধ্বনিত হয়েছে উদ্বাস্তু বাঙালিদের দৈন্যদশা।

গাভী বিত্তান্ত” (১৯৯৫) : এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের প্রেক্ষাপটে রচিত ব্যাঙ্গাত্নক রচনা। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত ভিসি মিঞা মোহাম্মদ আবু জোনায়েদ (প্রতীকী চরিত্র)

অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী(১৯৯৬): উপন্যাসটিপ্রাণপূর্ণিমার চাননামে সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয়অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী'

বিহঙ্গ পুরাণ” (১৯৮৬),

পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' (১৯৯৬)

প্রবন্ধ

তাঁর প্রবন্ধগুলো:

জাগ্রত বাংলাদেশ” (১৯৭১): এটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্ৰথম গ্ৰন্থ

যদ্যপি আমার গুরু(১৯৯৭): এটি জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক প্রসঙ্গে রচিত।

বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস(১৯৭২),
বাংলা ভাষা : রাজনীতির আলোকে’ (১৯৭৫),
বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা(১৯৭৭),
'
বাঙালি মুসলমানের মন(১৯৮১),
রাজনীতির লেখা’ (১৯৯৩),
সংকটের নানা চেহারা(১৯৯৬),
বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র(২০০১),
উপলক্ষের লেখা’ (২০০১),
সেইসব লেখা(২০০৮)

অন্যান্য রচনাবলি

তাঁর অন্যান্য রচনাবলি:

গল্প :

নিহত নক্ষত্র' (১৯৬৯)

কবিতা :

জল্লাদ সময়’ (১৯৭৪),
দুঃখের দিনে দোহা' (১৯৭৫),
একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা' (১৯৭৭),
লেনিন ঘুমোবে এবার' (১৯৯৯)

অনুবাদ :

তানিয়া’ (১৯৬৭),
ফাউস্ট' (১৯৮৬)

শিশুতোষ :

দোলা আমার কনক চাপা' (১৯৬৮),
'
গোঁ-হাকিম' (১৯৭৭)

ইতিহাস গ্রন্থ :

সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস' (১৯৭৯)

মৃত্যু

তিনি ২৮ জুলাই, ২০০১ সালে মারা যান

 

 

আবদুল্লাহ আল মামুন

 

আবদুল্লাহ আল মামুন (১৯৪২-২০০৮)

আবদুল্লাহ আল মামুন ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা প্রখ্যাত নাট্যকার। তিনি সাম্রাজ্যবাদী নাটক রচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশের সমসাময়িক পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় জীবনে মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিপক্ষে তিনি জীবনভর নাট্য রচনা অব্যাহত রাখেন

আবদুল্লাহ আল মামুনের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

আবদুল্লাহ আল মামুন ১৩ জুলাই, ১৯৪২ সালে জামালপুর সদরের আমড়া পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

নাট্যসংগঠন

তিনি নাট্যসংগঠন থিয়েটার এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

মহাপরিচালক

তিনি জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (১৯৯১-২০০১) এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (২০০১) ছিলেন

পুরস্কার

তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৪), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান

প্রথম নাটক

তাঁর প্রথম প্রকাশিত নাটক শপথ ’ (১৯৬৪)

নাটকসমূহ

তাঁর রচিত নাটকসমূহ:

সুবচন নির্বাসনে’ (১৯৭৪): স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সমাজে যে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়, তাকে কেন্দ্র করেই নাটকটি রচিত।

এখনও ক্রীতদাস' (১৯৮৪): নাটকে ঢাকা শহরেরগলাচিপাবস্তির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বাক্কা মিয়ার পরিবারের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের নিম্নবর্গের মানুষের অসহায় জীবনযাপনের ইতিবৃত্ত। এতে পুরুষতান্ত্রিক, পুঁজিতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

কোকিলারা(১৯৯০): ঢাকা গাইড হাউস মিলনায়তনে ১৯ জানুয়ারি, ১৯৮৯ সালে নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় এবং গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায় ১৯৯০ সালে। নাটকটি তিন কোকিলার কাহিনি। প্রথম কোকিলা সরল বালিকা, চোর সাব্যস্ত হয়ে শেষে আত্মহত্যা করে। দ্বিতীয় কোকিলা নিরীহ প্রাণী, স্বামীর ভোগপণ্যরূপে মধ্যবিত্ত সংসারে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যায়। তৃতীয় কোকিলা প্রতিবাদী, সমাজের অন্যায় অমানবিকতার বিপক্ষে সে সর্বদা সোচ্চার। বাংলাদেশের নারীদের তিনটি রূপ তিন কোকিলা। এটি এক চরিত্রনির্ভর নাটক। ফেরদৌসী মজুমদার কোকিলা নামে এই একক অভিনয় করেন।

এখন দুঃসময়(১৯৭৫): বন্যা দুর্গত একটি গ্রামের পটভূমিতে নাটকটি রচিত।

এবার ধরা দাও(১৯৭৭),

শাহজাদীর কাল নেকাব(১৯৭৮),

চারিদিকে যুদ্ধ’ (১৯৮৩),

মেরাজ ফকিরের মা(১৯৯৭)

উপন্যাস

তাঁর রচিত উপন্যাসসমূহ:

মানব তোমার সারা জীবন(১৯৮৮),
আহ দেবদাস’ (১৯৮৯),
তাহাদের যৌবনকাল(১৯৯১),
হায় পার্বতী’ (১৯৯১),
এই চুনীলাল’ (১৯৯৩),
গুন্ডাপাণ্ডার বাবা(১৯৯৩),
খলনায়ক (১৯৯৭)

মৃত্যু

তিনি ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার), ২০০৮ সালে মারা যান।

 

শহীদ কাদরী

 

শহীদ কাদরী (১৯৪২-২০১৬)

স্বাধীন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আধুনিক কবি শহীদ কাদরী। বাংলা কবিতার পঞ্চাশ দশকের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা সাফল্য দেখা যায় তাঁর কাব্যগ্রন্থসমূহে। ১৯৪৭ পরবর্তী বাঙালি কবিদের তিনি নাগরিক জীবন সম্পর্কিত শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাংলা কবিতায় নাগরিকতা আধুনিকতাবোধের সূচনা করেছিলেন।

শহীদ কাদরীর সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

শহীদ কাদরী ১৪ আগস্ট, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার পার্কস্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন

সময়

শহীদ কাদরী মূলত ষাটের দশকের কবি ছিলেন

প্রথম কবিতা

তাঁর প্রথম কবিতা এই শীতে’ বুদ্ধদেব বসুর কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সেদিনই তাঁর মা মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার

তিনি ১৯৭৩ সালেবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' এবং ২০১১ সালেএকুশে পদক' লাভ করেন।

গ্রন্থসমূহ

শহীদ কাদরী রচিত গ্রন্থসমূহ:

উত্তরাধিকার’ (১৯৬৭): কাব্যে মোট ৪০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কবিতাগুলোর প্রতি পঙ্ক্তিতে তিনি দৃশ্যমান বস্তুকে দেখেছেন প্রবল অন্তরঙ্গে, মননের শাসনে আবেগের প্রাবল্যের যৌথ প্রচেষ্টায়। বাংলা কবিতা সত্যিকার অর্থেই আধুনিকতার চূড়ান্তমুখী হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। কাব্যের বিখ্যাত কবিতাবৃষ্টি বৃষ্টিতে'

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা(১৯৭৪),

'
কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই(১৯৭৮),

'
আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও' (২০০৯)

বিখ্যাত পক্তি

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো, যাতে সেনাবাহিনী গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে...

মৃত্যু

তিনি ২৮ আগস্ট, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী ঢাকায় সমাহিত করা হয়

 

হাসান আজিজুল হক

 

হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১)

বাংলাদেশের ছোটগল্পের ধারায় অত্যন্ত শক্তিমান লেখকরূপে স্বীকৃত হাসান আজিজুল হক। বস্তুবাদী চিন্তা-চেতনার আলোকে তিনি সমাজ জীবনের অবক্ষয়, সাম্প্রদায়িকতা, নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনের প্রকৃত রূপ, হতাশা দারিদ্র্যের নিখুঁত চিত্র নির্লিপ্ত শিল্পীর মত অঙ্কন করেছেন।

হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

হাসান আজিজুল হক ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রথম লেখা

রাজশাহী কলেজে পড়াকালীন ভাঁজপত্রচারপাতায় আমের মাহাত্ম্যবিষয়ক তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয়।

সম্পাদনা

তিনি ' অসীমান্তিক ' (১৯৯৮) নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

পুরস্কার

তিনিবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৭০), ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৭), ‘একুশে পদক’ (১৯৯৯), ‘আনন্দ পুরস্কার' (২০০৭) পান

অধ্যাপনা

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন এবং ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরবঙ্গবন্ধু চেয়ার' পদের জন্য মনোনীত হন।

গল্পগ্রন্থ

তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থগুলো:

আত্মজা একটি করবী গাছ(১৯৬৭): দেশ বিভাগের ফলে সৃষ্ট ব্যক্তিচরিত্রের নৈতিক স্খলন, সাম্প্রদায়িকতা এবং সংশ্লিষ্ট কারণে সৃষ্ট চরম হতাশা দারিদ্র্য, উত্তেজক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রচিত হয়আত্মজা একটি করবী গাছ' গল্পগ্রন্থ

নামহীন গোত্রহীন(১৯৭৫): গল্পগ্রন্থের গল্পগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক।

আমরা অপেক্ষা করছি(১৯৮৮): গল্পগ্রন্থের গল্পগুলোতে নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনের চিত্র, দারিদ্র্যের কষাঘাতে বিবর্ণ নর- নারীর প্রেমহীনতা, অসুস্থ রাজনীতির কালো থাবায় সন্তানহারা পিতার শোক ইত্যাদি বিষয় ফুটে উঠেছে।

সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য(১৯৬৪),

জীবন ঘষে আগুন’ (১৯৭৩),

পাতালে হাসপাতালে(১৯৮১),

রাঢ়বঙ্গের গল্প’ (১৯৯১),

রোদে যাবো(১৯৯৫),

মা মেয়ের সংসার’ (১৯৯৭),

বিধবাদের কথা অন্যান্য গল্প' (২০০৭)

উপন্যাস

তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসগুলো:

 
আগুনপাখি ' (২০০৬): হাসান আজিজুল হকের পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ওই এলাকার মানুষের সংগ্রামী জীবন এবং বিভেদকামী রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতার যথাযথ রূপায়ণ 'আগুনপাখি' উপন্যাস। চরিত্র: মেঝ বউ।

সাবিত্রী উপাখ্যান(২০১৩): ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন, ভারতের প্রথম নির্বাচন, ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি গঠন, জমিদারি মহাজনি প্রথা, ব্রাহ্মণধর্মীয় এক নারী ধর্ষণ নিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রচিত উপন্যাস।

 
বৃত্তায়ন’ (১৯৯১),

 
শিউলি' (২০০৬),

 
শামুক' (২০১৫)

অন্যান্য রচনাবলি

তাঁর অন্যান্য রচনাবলি:

প্রবন্ধ :

কথাসাহিত্যের কথকতা' (১৯৮১),
অপ্রকাশের ভার’ (১৯৮৮),
'
চিন্তন কণা'

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক :

একাত্তর-করতলে ছিন্নমাথা

নাটক :

চন্দর কোথায়'

শিশুসাহিত্য :

লালঘোড়া আমি' (১৯৮৪),
'
ফুটবল থেকে সাবধান' (১৯৯৮)

আত্মজীবনী :

'
ফিরে যাই, ফিরে আসি’,
উঁকি দিয়ে দিগন্ত।

মৃত্যু

দীর্ঘদিন বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগার পর, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর, হাসান আজিজুল হক তার রাজশাহীর বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সমাধিস্থ করা হয়।