এই
পর্বে যা যা থাকছে
আনিসুজ্জামান
আল মাহমুদ
সৈয়দ শামসুল
হক
জহির রায়হান
আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামান (১৯৩৭-২০২০)
বাংলাদেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও মনস্বী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেছেন শিকাগো ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুজ্জামান উচ্চমানের গবেষণা ও সাবলীল গদ্য রচনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক (২০১৮)।
আনিসুজ্জামানের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় (পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট গ্রাম) জন্মগ্রহণ করেন। |
পিতা-মাতা |
তাঁর পিতার নাম ডা. এ.টি.এম মোয়াজ্জেম ও মাতার নাম সৈয়দা খাতুন । |
পুরস্কার ও সম্মাননা |
তিনি দাউদ পুরস্কার (১৯৬৫), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭০), একুশে পদক (১৯৮৫), আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৩, ২১০৭), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট (২০০৫), ভারত সরকারের পদ্মভূষণ (২০১৪), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৫), ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদকসহ (২০১৮) বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। |
সাহিত্যকর্ম |
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সাহিত্যকর্মসমূহ: |
কাল নিরবধি |
আনিসুজ্জামানের ‘কাল নিরবধি' (২০০৩) একটি স্মৃতিকথা। এটি ২১ নভেম্বর, ১৯৯৭ থেকে ২৮ আগস্ট, ১৯৯৮ পর্যন্ত ‘ভোরের কাগজ' পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে এবং ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ থেকে ৮ মার্চ, ২০০২ পর্যন্ত ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। এ স্মৃতিকথার শুরু আনিসুজ্জামানের পূর্বপুরুষের জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে এবং শেষ হয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনার মাধ্যমে। |
মৃত্যু |
আনিসুজ্জামান ২০২০ সালের ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। |
আল মাহমুদ
আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯)
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। প্রথম পর্যায়ে তিনি গ্রামবাংলার গণমানুষের প্রবহমান জীবনধারা ও তার পটভূমি থেকে কাব্য রচনার উপাদান সংগ্রহ করেন, পরবর্তীতে তাঁর কবিতায় শহুরে জীবনের ছায়াপাত ঘটে। তিনি কবিতায় বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্য ও লোকশব্দ ব্যবহারে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) প্রতিষ্ঠিত ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ প্রকাশিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে এ পত্রিকা বন্ধ করা হয় এবং সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয় । জেলে থাকাকালে তিনি মার্কসবাদী আদর্শকে পরিত্যাগ করে ইসলামি আদর্শ গ্রহণ করেন ।
আল মাহমুদের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
আল মাহমুদ ১১ জুলাই, ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । |
প্রকৃত নাম |
তাঁর প্রকৃত নাম মির আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ |
শিক্ষাগত যোগ্যতা |
তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা- মাধ্যমিক পাস |
পেশা |
বঙ্গবন্ধুর সুপারিশে তিনি শিল্পকলা একাডেমির অফিসার পদে যোগদান করেন এবং ১৯৯৩ সালে পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক কর্ণফুলি' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন । |
পুরস্কার |
তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), একুশে পদক (১৯৮৭) পান । |
কাব্যগ্রন্থ |
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো : |
উপন্যাস |
তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো: |
গল্পগ্রন্থ |
তাঁর গল্পগ্রন্থসমূহ: |
বিখ্যাত পঙক্তি |
“আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে |
মৃত্যু |
তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সালে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে শুক্রবার রাত ১১:০৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। |
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬)
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সক্রিয় প্রখ্যাত সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক । ষাট-সত্তরের দশকে যখন যৌনতা চরম লজ্জার বিষয় তখনই তিনি যৌনগন্ধী সাহিত্য রচনা করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক' বলা হয়।
সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
সৈয়দ শামসুল হক ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । |
তাঁর স্ত্রী |
প্রখ্যাত লেখিকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক তাঁর স্ত্রী । |
সব্যসাচী লেখক |
তাঁকে সব্যসাচী লেখক নামে অভিহিত করা হয়। সব্যসাচী অর্থ- যার ডান বাম দুই হাত সমানভাবে চলে। যে লেখক সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধ বিচরণ করেন, তাকেই সব্যসাচী লেখক বলে। কিন্তু সে বিচারে সৈয়দ শামসুল হক সব্যসাচী লেখক নন। তিনি ও তাঁর সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ তাকে সব্যসাচী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার গ্রন্থগুলো তাঁর ভাইয়ের লক্ষ্মীবাজারের সব্যসাচী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতো। সে দিক থেকেই তাকে সব্যসাচীর লেখক বলা হয়। |
পুরস্কার |
তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' পান (এ পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী)। এছাড়াও তিনি ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৯), ‘একুশে পদক' (১৯৮৪), ‘স্বাধীনতা পুরস্কার' (২০০০) লাভ করেন। |
উপন্যাস |
তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো: |
কাব্যগ্রন্থ |
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো: |
কাব্যনাট্য |
কাব্যনাট্য: |
প্রবন্ধ |
‘হৃৎকলমের টানে' (১৯৯১) |
শিশুতোষ |
‘সীমান্তের সিংহাসন’, ‘আনু বড় হয়', ‘হডসনের বন্দুক' |
গল্প |
‘তাস' (১৯৫৪), |
মৃত্যু |
তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। (কবির ইচ্ছানুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়) |
জহির রায়হান
জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২)
প্রখ্যাত কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ছিলেন ভাষাসৈনিক। তিনি প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর রচিত সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে ও সামরিক জান্তার গণহত্যার চিত্র চিত্রিত করা হয় এবং জনগণকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয় ।
জহির রায়হানের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
জহির রায়হান ১৯ আগস্ট, ১৯৩৫ সালে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। |
প্রকৃত নাম |
তাঁর প্রকৃত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাকনাম- জাফর । |
বিশেষ পরিচিতি |
শহীদুল্লা কায়সার তাঁর ভাই। চিত্রনায়িকা কোহিনুর আক্তার সুচন্দা তার স্ত্রী । |
ভাষা আন্দোলন |
জহির রায়হান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। |
সাংবাদিকতা |
ছাত্রজীবনে তিনি সাহিত্য মাসিক 'প্রবাহ' (১৯৫৬) এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ এক্সপ্রেস' পত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন । |
রাজনীতি |
১৯৫১-৫৭ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এ সময় কমরেড মনি সিংহের দেয়া রাজনৈতিক নাম ‘ রায়হান’ গ্রহণ করেন । |
পরিচালক |
১৯৫৬ সালে 'জাগো হুয়া সাবেরা' ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। |
পুরস্কার |
তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার- ১৯৭২ (মরণোত্তর) পান। |
উপন্যাস |
তাঁর উপন্যাসসমূহ: |
চলচ্চিত্র |
তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো: |
গল্পগ্রন্থ |
তাঁর গল্পগ্রন্থটির নাম ‘সূর্যগ্রহণ' (১৯৫৫)। |
গল্পসমূহ |
তাঁর রচিত গল্পসমূহ: |
‘একুশের গল্প’ |
বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত ভাষা আন্দোলনভিত্তিক বিখ্যাত ছোটগল্প 'একুশের গল্প'। এ গল্পের প্রধান চরিত্র ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র তপু। জন্ম থেকেই তার একটি পা ছোট ছিল। সে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের মিছিলে যোগ দেয় এবং মিলিটারির গুলি তার কপালে আঘাত করলে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শাসকশ্রেণি তার লাশ পর্যন্ত গায়েব করে। চার বছর পর তপুর সহপাঠীর রুমমেট একটি কঙ্কাল নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখতে পায় কঙ্কালের একটি পা ছোট এবং কপালে ছিদ্র। সাথে সাথে ছাত্রটি তা তপুর বন্ধুদের দেখায়। তপুর বন্ধুর কঙ্কালটি পরীক্ষা করে দেখে এটি তপুরই কঙ্কাল। এভাবেই তপু আবার কঙ্কাল হয়ে বন্ধুদের মাঝে ফিরে আসে। |
মৃত্যু |
তিনি ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে মিরপুরে গিয়ে নিজেই নিখোঁজ হন। তাঁর লাশও পাওয়া যায়নি । |