আনিসুজ্জামান, আল মাহমুদ ,সৈয়দ শামসুল হক , জহির রায়হান lec 5

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks বাংলা সাহিত্য

 

এই পর্বে যা যা থাকছে

আনিসুজ্জামান

আল মাহমুদ

সৈয়দ শামসুল হক

জহির রায়হান

 

আনিসুজ্জামান

আনিসুজ্জামান (১৯৩৭-২০২০)

বাংলাদেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, গবেষক, প্রাবন্ধিক মনস্বী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেছেন শিকাগো লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুজ্জামান উচ্চমানের গবেষণা সাবলীল গদ্য রচনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক (২০১৮)

আনিসুজ্জামানের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় (পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট গ্রাম) জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা-মাতা

তাঁর পিতার নাম ডা. .টি.এম মোয়াজ্জেম মাতার নাম সৈয়দা খাতুন

পুরস্কার সম্মাননা

তিনি দাউদ পুরস্কার (১৯৬৫), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭০), একুশে পদক (১৯৮৫), আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৩, ২১০৭), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট (২০০৫), ভারত সরকারের পদ্মভূষণ (২০১৪), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৫), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদকসহ (২০১৮) বহু পুরস্কার সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সাহিত্যকর্ম

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সাহিত্যকর্মসমূহ:

মুসলিম মানস বাংলা সাহিত্য(১৯৬৪),

মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্র(১৯৬৯),

স্বরূপের সন্ধানে’ (১৯৭৬),

আঠারো শতকের চিঠি(১৯৮৩),

পুরোনো বাংলা গদ্য(১৯৮৪),

বাঙালি নারী : সাহিত্যে সমাজে(২০০০),

'
বাঙালি সংস্কৃতি অন্যান্য’ ,

ইহজাগতিকতা অন্যান্য,

সংস্কৃতি সংস্কৃতি সাধক’ ,

চেনা মানুষের মুখ,

আমার একাত্তর(১৯৯৭),

আমার চোখে(১৯৯৯),

কাল নিরবধি(২০০৩),

মুক্তির সংগ্রাম(২০১২),

'
বিপুলা পৃথিবীইত্যাদি

কাল নিরবধি

আনিসুজ্জামানের কাল নিরবধি(২০০৩) একটি স্মৃতিকথা। এটি ২১ নভেম্বর, ১৯৯৭ থেকে ২৮ আগস্ট, ১৯৯৮ পর্যন্তভোরের কাগজ' পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে এবং ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ থেকে মার্চ, ২০০২ পর্যন্তপ্রথম আলোপত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। স্মৃতিকথার শুরু আনিসুজ্জামানের পূর্বপুরুষের জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে এবং শেষ হয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনার মাধ্যমে।

মৃত্যু

আনিসুজ্জামান ২০২০ সালের ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন।

 

আল মাহমুদ

 

আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯)

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। প্রথম পর্যায়ে তিনি গ্রামবাংলার গণমানুষের প্রবহমান জীবনধারা তার পটভূমি থেকে কাব্য রচনার উপাদান সংগ্রহ করেন, পরবর্তীতে তাঁর কবিতায় শহুরে জীবনের ছায়াপাত ঘটে। তিনি কবিতায় বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্য লোকশব্দ ব্যবহারে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) প্রতিষ্ঠিত দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে পত্রিকা বন্ধ করা হয় এবং সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয় জেলে থাকাকালে তিনি মার্কসবাদী আদর্শকে পরিত্যাগ করে ইসলামি আদর্শ গ্রহণ করেন

আল মাহমুদের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

আল মাহমুদ ১১ জুলাই, ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন

প্রকৃত নাম

তাঁর প্রকৃত নাম মির আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ

শিক্ষাগত যোগ্যতা

তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতামাধ্যমিক পাস

পেশা

বঙ্গবন্ধুর সুপারিশে তিনি শিল্পকলা একাডেমির অফিসার পদে যোগদান করেন এবং ১৯৯৩ সালে পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিতদৈনিক কর্ণফুলি' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন

পুরস্কার

তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), একুশে পদক (১৯৮৭) পান

কাব্যগ্রন্থ

তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো :

লোক লোকান্তর(১৯৬৩): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।

সোনালী কাবিন(১৯৭৩): এটির প্রথমে নাম ছিলোঅবগাহনের শব্দ পরে তিনি এটির নামকরণ করেনসোনালী কাবিন গ্রামীণ আবহে রচিত ৪৪টি কবিতার সংকলনে কাব্যগ্রন্থে তাঁর কবি প্রতিভা নিশ্চিত হয়েছে। এতে প্রকাশ পেয়েছে বঞ্চিতের ক্ষোভ, শ্রমিকের ঘাম, কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদগোল্ডেন কাবিন' নামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয়।

কালের কলস’ (১৯৬৬),

মায়াবী পর্দা দুলে উঠো(১৯৬৯),

অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না(১৯৮০),

পাখির কাছে ফুলের কাছে(১৯৮০),

বখতিয়ারের ঘোড়া’ (১৯৮৪),

দোয়েল দয়িতা(১৯৯৭),

প্রেমের কবিতা(২০০২),

দ্বিতীয় ভাঙ্গন’ (২০০২)

উপন্যাস

তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো:

ডাহুকী’ (১৯৯২),

'
কবি কোলাহল ’ (১৯৯৩),

উপমহাদেশ’ (১৯৯৩),

আগুনের মেয়ে(১৯৯৫),

চেহারার চতুরঙ্গ’ (২০০০),

কাবিলের বোন(২০০১)

গল্পগ্রন্থ

তাঁর গল্পগ্রন্থসমূহ:

পানকৌড়ির রক্ত’ (১৯৭৫),

সৌরভের কাছে পরাজিত(১৯৮৩),

গন্ধবণিক’ (১৯৮৬),

ময়ূরীর মুখ(১৯৯৪)

বিখ্যাত পঙক্তি

আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।” (নোলক)

মৃত্যু

তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সালে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে শুক্রবার রাত ১১:০৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।

সৈয়দ শামসুল হক

 

সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬)

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সক্রিয় প্রখ্যাত সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ষাট-সত্তরের দশকে যখন যৌনতা চরম লজ্জার বিষয় তখনই তিনি যৌনগন্ধী সাহিত্য রচনা করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে সব্যসাচী লেখক' বলা হয়।

 

সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

সৈয়দ শামসুল হক ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন

তাঁর স্ত্রী

প্রখ্যাত লেখিকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক তাঁর স্ত্রী

সব্যসাচী লেখক

তাঁকে সব্যসাচী লেখক নামে অভিহিত করা হয়। সব্যসাচী অর্থ- যার ডান বাম দুই হাত সমানভাবে চলে। যে লেখক সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধ বিচরণ করেন, তাকেই সব্যসাচী লেখক বলে। কিন্তু সে বিচারে সৈয়দ শামসুল হক সব্যসাচী লেখক নন। তিনি তাঁর সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ তাকে সব্যসাচী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার গ্রন্থগুলো তাঁর ভাইয়ের লক্ষ্মীবাজারের সব্যসাচী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতো। সে দিক থেকেই তাকে সব্যসাচীর লেখক বলা হয়।

পুরস্কার

তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সেবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' পান ( পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী) এছাড়াও তিনিআদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৯), ‘একুশে পদক' (১৯৮৪), ‘স্বাধীনতা পুরস্কার' (২০০০) লাভ করেন।

উপন্যাস

তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো:

দেয়ালের দেশ': এটি তাঁর প্রথম উপন্যাস  নিষিদ্ধ লোবান(১৯৮১): এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। উপন্যাসটিগেরিলা' নামে চলচ্চিত্রায়িত করেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ

নীলদংশন(১৯৮১): এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস

খেলারাম খেলে যা' (১৯৭৯) : আত্মসুখ সন্ধানী ভোগবাদী চেতনার চরিত্র বাবর আলীর মস্তিষ্ককোষে ক্রিয়াশীল ফ্রয়েডীয় লিবিডোর একাধিপত্যের কাহিনি এর বিষয়। যৌন সুরসুরি উপন্যাসে বিদ্যমান থাকায় একেপিনআপ নভেল' বলা হয়। ধরনের উপন্যাসকে হুমায়ুন আজাদঅপন্যাসবলেছেন।

এক মহিলার ছবি’ (১৯৫৯),

অনুপম দিন(১৯৬২),

সীমানা ছাড়িয়ে(১৯৬৪),

দ্বিতীয় দিনের কাহিনী(১৯৮৪),

আয়না বিবির পালা(১৯৮৫),

স্তব্ধতার অনুবাদ(১৯৮৭),

বৃষ্টি বিদ্রোহীগণ(১৯৮৯),

ত্রাহি’ (১৯৮৯),

'
তুমি সেই তরবারি(১৯৮৯),

মৃগয়ায় কালক্ষেপণ’ ,

অন্য এক আলিখান’ ,

একমুঠো জন্মভূমি,

আলোর জন্য’ ,

রাজার সুন্দরী

কাব্যগ্রন্থ

তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো:

পরানের গহীন ভিতর(১৯৮০): এটি আঞ্চলিক ভাষারীতিতে রচিত।

একদা এক রাজ্যে(১৯৬১),

বিরতিহীন উৎসব(১৯৬৯),

বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা(১৯৭০),

'
প্রতিধ্বনিগণ(১৯৭৩),

অপর পুরুষ(১৯৭৮),

আমি জন্মগ্রহণ করিনি(১৯৯০),

ধ্বংসস্তূপে কবি নগর(২০০৯),

নাভিমূলে ভষ্মাধার'

কাব্যনাট্য

কাব্যনাট্য:

পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়(১৯৭৬) : এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাব্যনাট্য। এর রচনাকাল মে থেকে ১৩ জুন, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড শহরে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনীর গ্রামে প্রবেশের ঘটনা নাটকে স্থান পেয়েছে।

নূরলদীনের সারা জীবন(১৯৮২) : ১৭৮৩ সালের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সামন্তবাদ বিরোধী কৃষক নেতা নূরলদীনের সংগ্রাম নিয়ে রচিত নাটক। নাটকের বিখ্যাত উক্তি- ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়'

গণনায়ক’ (১৯৭৬),

এখানে এখন(১৯৮৮),

ঈর্ষা

প্রবন্ধ

হৃৎকলমের টানে(১৯৯১)

শিশুতোষ

সীমান্তের সিংহাসন’, ‘আনু বড় হয়', ‘হডসনের বন্দুক'

গল্প

তাস(১৯৫৪),

শীত বিকেল(১৯৫৯),

রক্তগোলাপ(১৯৬৪),

আনন্দের মৃত্যু(১৯৬৭),

প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান(১৯৮২),

জলেশ্বরীর গল্পগুলো(১৯৯০)

মৃত্যু

তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। (কবির ইচ্ছানুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়)

 

জহির রায়হান

 

জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২)

প্রখ্যাত কথাশিল্পী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ছিলেন ভাষাসৈনিক। তিনি প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর রচিত সাহিত্যকর্ম চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে সামরিক জান্তার গণহত্যার চিত্র চিত্রিত করা হয় এবং জনগণকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়

জহির রায়হানের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান

সাহিত্যিক তথ্য

জন্ম

জহির রায়হান ১৯ আগস্ট, ১৯৩৫ সালে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রকৃত নাম

তাঁর প্রকৃত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাকনামজাফর 

বিশেষ পরিচিতি

শহীদুল্লা কায়সার তাঁর ভাই। চিত্রনায়িকা কোহিনুর আক্তার সুচন্দা তার স্ত্রী

ভাষা আন্দোলন

জহির রায়হান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।

সাংবাদিকতা

ছাত্রজীবনে তিনি সাহিত্য মাসিক 'প্রবাহ' (১৯৫৬) এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস' পত্রিকার সম্পাদনা প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ১৯৫০ সালেযুগের আলো' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন

রাজনীতি

১৯৫১-৫৭ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সময় কমরেড মনি সিংহের দেয়া রাজনৈতিক নাম রায়হানগ্রহণ করেন

পরিচালক

১৯৫৬ সালে 'জাগো হুয়া সাবেরাছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন।

পুরস্কার

তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার- ১৯৭২ (মরণোত্তর) পান।

উপন্যাস

তাঁর উপন্যাসসমূহ:

শেষ বিকেলের মেয়ে(১৯৬০): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এটিসাপ্তাহিক বিজলী' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়

হাজার বছর ধরে (১৯৬৪): আবহমান বাংলার জীবন জনপদ এর প্রতিপাদ্য। তিনি উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালেআদমজী সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন। জহির রায়হানের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবংজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার' লাভ করেন। চরিত্র - টুনি, মন্তু, মকবুল।

আরেক ফাল্গুন’ (১৯৬৮): ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ হয়ে ১৯৫৫ সালে বর্তমান শহিদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন পর্যন্ত চলমান আন্দোলন, জনতার সম্মিলন, ছাত্র/ছাত্রীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, তাদের প্রেম-প্রণয় ইত্যাদি উপন্যাসের মূল বিষয়। এটি ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস

আর কত দিন(১৯৭০): মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ের অস্থির সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনমুখর প্রেক্ষাপটে আসন্ন যুদ্ধের একটি ভয়াবহ সম্ভাবনা, যুদ্ধকালীন বাস্তবতা, লাঞ্ছিত মানবতার আর্তি, শান্তি ভালোবাসার জন্য মানুষের চিরন্তন অন্বেষা উপন্যাসের মূল উপজীব্য। ইভা তপু উপন্যাসের শাশ্বত শান্তি ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক

তৃষ্ণা’ (১৯৬২),

বরফ গলা নদী' (১৯৬৯),

কয়েকটি মৃত্যু' (১৯৬৫)

চলচ্চিত্র

তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো:

কখনো আসে নি’ (১৯৬১): এটি তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র

সঙ্গম(১৯৬৪): এটি বাংলাদেশের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র।

জীবন থেকে নেয়া” (১৯৭০): এটি ভাষা আন্দোলনভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রথম এই চলচ্চিত্রেই জাতীয় সংগীত বাজানো হয়

কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩): এটি নিগার পুরস্কার লাভ করে

'
বাহানা(১৯৬৫): এটি ছিল উর্দু ভাষায় নির্মিত তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি।

Let there be Light : 
প্রামান্যচিত্র।

Stop Genocide: 
বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামান্যচিত্র। এটি ১৯৭১ সালে জহির রায়হান কলকাতা থেকে তৈরি করেন।

সোনার কাজল(১৯৬২),

'
বেহুলা(১৯৬৬),

'
আনোয়ার' (১৯৬৭)

গল্পগ্রন্থ

তাঁর গল্পগ্রন্থটির নাম সূর্যগ্রহণ(১৯৫৫)

গল্পসমূহ

তাঁর রচিত গল্পসমূহ:

সূর্যগ্রহণ’: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত তসলিম নামক যুবকের পরিবারের মর্মবিদারক কাহিনি নিয়ে রচিত।

একুশের গল্প’: ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে এটি রচিত।

বাঁধ’: গ্রামীণ পটভূমিতে পীরদের ভণ্ডামি নিয়ে রচিত।

একুশের গল্প

বিখ্যাত ঔপন্যাসিক চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত ভাষা আন্দোলনভিত্তিক বিখ্যাত ছোটগল্প 'একুশের গল্প' গল্পের প্রধান চরিত্র ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র তপু। জন্ম থেকেই তার একটি পা ছোট ছিল। সে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের মিছিলে যোগ দেয় এবং মিলিটারির গুলি তার কপালে আঘাত করলে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শাসকশ্রেণি তার লাশ পর্যন্ত গায়েব করে। চার বছর পর তপুর সহপাঠীর রুমমেট একটি কঙ্কাল নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখতে পায় কঙ্কালের একটি পা ছোট এবং কপালে ছিদ্র। সাথে সাথে ছাত্রটি তা তপুর বন্ধুদের দেখায়। তপুর বন্ধুর কঙ্কালটি পরীক্ষা করে দেখে এটি তপুরই কঙ্কাল। এভাবেই তপু আবার কঙ্কাল হয়ে বন্ধুদের মাঝে ফিরে আসে।

মৃত্যু

তিনি ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে মিরপুরে গিয়ে নিজেই নিখোঁজ হন। তাঁর লাশও পাওয়া যায়নি