বিশ্বে বহু ধর্মের অনুসারী রয়েছে। ধর্ম মানুষের জীবনে নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, এবং রীতিনীতির ধারণা দান করে।
বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম:
·
খ্রিস্টধর্ম: বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম, যার প্রায় ২.৪ বিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। খ্রিস্টধর্মীরা যীশু খ্রীষ্টকে ঈশ্বরের পুত্র এবং মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে।
·
ইসলাম: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার প্রায় ১.৯ বিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। মুসলমানরা আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-কে তার শেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস করে।
·
হিন্দুধর্ম: বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার প্রায় ১.২ বিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। হিন্দুরা ব্রহ্মকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর হিসেবে বিশ্বাস করে এবং কর্মফল, পুনর্জন্ম এবং মোক্ষের ধারণায় বিশ্বাস করে।
·
বৌদ্ধধর্ম: বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম, যার প্রায় ৫০০ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। বৌদ্ধরা সিদ্ধার্থ গৌতম (বুদ্ধ) কে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বাস করে এবং তার শিক্ষা অনুসরণ করে।
·
শিখধর্ম: ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভূত একটি ধর্ম, যার প্রায় ৩০ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। শিখরা একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং দশজন গুরুর শিক্ষা অনুসরণ করে।
প্রাক ইসলামিক আরবে একেশ্বরবাদীদের হানিফ বলা হত। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, হযরত আদম (আ) হলেন প্রথম মানব ও আল্লাহর নবী এবং হযরত মুহম্মদ (স) হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল।
মহানবী হযরত মুহম্মাদ (স) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন সত্যবাদী এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী। সেজন্য তাঁকে আল আমীন বলা হতো। পঁচিশ বছর বয়সে তিনি বিবি খাদিজা (রা)কে বিবাহ করেন। তিনি মক্কার নিকটবর্তী হেরা গুহায় ধ্যান করতেন। চল্লিশ বছর বয়সে ৬১০ সালে ২৭ রমজান রাতে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। ওহী হিসেবে প্রথম নাযিল হয়েছিল সূরা আলাক এর পাঁচটি আয়াত। তাঁর কাছে প্রেরিত আল্লাহর প্রত্যাদেশগুলোর সংকলিত রূপ হল মহাগ্রন্থ আলকুরআন। এটি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।
মক্কার কাফের ও কুরাইশদের অত্যাচারে তিনি ৬২২ সালে মদিনায় হিজরত করেন এবং তথায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। পৌত্তলিকদের সাথে তাঁর বদর (১৫ মার্চ, ৬২৪), ওহুদ (২১ মার্চ, ৬২৫), খন্দক (এপ্রিল, ৬২৭) প্রভৃতি যুদ্ধ হয়। তিনি কুরাইশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি করেন ৬২৮ সালের মার্চে এবং মক্কা বিজয় করেন ৬৩০ সালে। ৬৩২ সালের ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন।
হুদায়বিয়ার সন্ধি: মক্কার অদূরবর্তী হুদায়বিয়া নামক স্থানে মুসলমান ও কুরাইশদের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। হিজরতের ৬ বছর পর অর্থাৎ ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মুহানবী (সা:) এর সাথে ১৪০০ সাহাবী ছিল। কুরাইশদের পক্ষে সুহাইল বিন আমর সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসেন। পবিত্র কোরআনে এই ঘটনাকে "ফাতুহম মুবীন" বলা হয়।
ইয়ামামার যুদ্ধ: খলিফা হযরত আবু বকর (রা:) এর সময় নবুয়্যত দাবিদার ও পবিত্র কোরআনের অপব্যাখ্যা প্রচারকারী মুসায়লামার সাথে আকাবার বালুকায় প্রান্তরে ৬৩৩ খ্রি: যে যুদ্ধটি হয়েছিল তাকে ইয়ামামার যুদ্ধ বলা হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানদের প্রায় ৭০ জন হাফেজ শহীদ হন। ফলে কোরআন সংকলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। এ যুদ্ধে মুসায়লামা মুসলমান সেনা ওয়াহশির হাতে নিহত হয়।
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন : মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ হল পবিত্র কুরআন। এটি লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। পবিত্র শবে কদর রাতে এটি পৃথিবীতে নাযিল হয়। ওহীর মাধ্যমে সমগ্র কুরআন নাযিল হয়েছিল ২৩ বছর ধরে। ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ শহীদ হলে কুরআন সংকলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পৃথিবীর সকল ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ কুরআন শরীফ। পবিত্র কুরআনে মোট সূরার সংখ্যা ১১৪টি। এর মধ্যে দীর্ঘতম সূরার নাম সূরা বাকারা।
হাদিস : হাদিস শব্দের অর্থ কথা বা বাণী। মহানবী (স)-এর কথা, কর্ম ও আচার- আচরণের সংকলনই হাদিস। সিহাহ সিত্তাহ নামে হাদিসের ছয়টি বিশুদ্ধ প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও পঠিত গ্রন্থ্য সহীহ বুখারী।
হিজরী সাল গণনা : দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এর আমলে হিজরি সাল গণনা শুরু হয়। মহানবীর হিজরতের বছর ৬২২ সালকে হিজরি ১ম সাল ধরে হিজরী সাল প্রবর্তন করা হয়।
মহানবী (সা) এর বংশধর : মহানবী (স)-এর পুত্রগণ অকালে মারা যান এবং চার কন্যা মহানবী (সা এর জীবদ্দশায় বেঁচেছিলেন। এরা হলেন জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা । বর্তমানে মহানবীর বংশধরগণ জর্ডানে ক্ষমতাসীন রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
খোলাফায়ে রাশেদীন ও বিখ্যাত সাহাবাগণ : মহানবী (স) প্রতিষ্ঠিত প্রথম চারজন বিখ্যাত সাহাবীর শাসনামল খোলাফায়ে রাশেদীন নামে পরিচিত। এ সময় রাজধানী ছিল মদিনা। ইসলামের প্রথম খলিফা হলেন হযরত আবু বকর (রা)। তাঁর সময়ে ধর্মযুদ্ধ রিদ্ধা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তিনি সকল ইসলাম বিদ্রোহীকে কঠোর হস্তে দমন করেন। তাঁকে ইসলামে প্রাণকর্তা বলা হয়। তিনি ৬৩২ সালে মহানবী (স) এর ওফাতের পর খলিফা হন। তিনি সর্বপ্রথম ইসলামী মুদ্রা প্রচলন করেন । ৬৩৪ সালে তিনি স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করেন।
খলিফা হযরত ওমর (রা) ৬৩৪ সালে খলিফা নির্বাচিত হন। তাঁর আমলে মুসলিম সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে। তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তাঁর সময়কালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় মুসলমানদের বিজয় সম্পন্ন হয় ।
৬৪৪ সালে হযরত ওমর (রা) এর শাহাদাৎ বরণের পর হযরত উসমান (রা) খলিফা হন। ৬৫৬ সালে হযরত আলী (রা) শাহাদাৎ বরণ করেন । মুসলমানরা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। মহানবী (স) এর সভাকবির মর্যাদা লাভ করেন হযরত হাসান (রা ) । হযরত ইমাম হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত কারবালা অবস্থিত ইউফ্রেটিস নদীর তীবে।
পবিত্র স্থান : মুসলমানদের পবিত্র স্থান হল মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেম। জেরুজালেম নগরী মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের পবিত্রস্থান। এটিকে তিন ধর্মের মিলনকেন্দ্র বলা হয়। রিদ্দা হল একটি স্থানের নাম। মক্কার কাবা শরীফ, মদিনার মসজিদে নববী এবং জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ বা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের পবিত্র উপাসনালয়। এছাড়া কারবালা, কুফা, সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থান মুসলমানদের নিকট মর্যাদাপূর্ণ। এছাড়া হেবরানে বেশ কয়েকজন নবীর মাজার রয়েছে - হযরত ইব্রাহীম (আ), হযরত ইসহাক (আ), হযরত ইয়াকুব (আ) এর মাজার।
উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন হযরত মুয়াবিয়া। তিনি ইসলামের ইতিহাসে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রবর্তক। এ সময়ে রাজধানী ছিল দামেস্ক। তিনি ইসলামী শাসকদের মধ্যে প্রথম রাজা।
উমাইয়া বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা খলিফা আবদুল মালিক। যাকে রাজপিতা বা রাজেন্দ্র (father of the kings) বলা হয়। তার সুযোগ্য চার পুত্র প্রথম ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রিঃ), সুলাইমান (৭১৫-৭১৭ খ্রি:), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-৭২৪ খ্রি:), হিশাম (৭২৪-৭৪৩ খ্রি:) খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। খলিফা সুলাইমানের মৃত্যুর পর তার মনোনয়নকৃত তারই চাচাতো ভাই 'ওমর ইবনে আবদুল আজিজ' খিলাফত লাভ করেন। তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের ভিত্তিতে শাসনকার্য চালান বলে তাকে ইসলামের "পঞ্চম খলিফা" বা "উমাইয়ার সাধক"ও বলা হয়। তিনি ৭২০ খ্রিষ্টাব্দে আততায়ীর হাতে নিহত হন। তাকে দ্বিতীয় ওমরও বলা হয়।
ইসলামের ইতিহাসে উমাইয়া বংশের ৯০ বছরের শাসনামল সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানের মৃত্যুর মাধ্যমে পতনের পর আব্বাসীয় শাসনামলের উদ্ভব হয়। এই শাসনকালকে ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়। ৭৫০ খ্রি: থেকে ১২৫৮ খ্রি: পর্যন্ত প্রায় ৫০৮ বছরের শাসনামলে ৩৭ জন খলিফা শাসনকার্য চালান। এই আমলের প্রথম খলিফা আস সাফ্ফাহ এবং সর্বশেষ খলিফা আল মুতাসিম বিল্লাহ। আব্বাসীয় খলিফাদের প্রথম রাজধানী ছিল বাগদাদে।
বায়তুল হিকমা: ইসলামের অন্যতম খলিফা হারুন-অর-রশীদ এর পুত্র দ্বিতীয় খলিফা আবদুল্লাহ ওরফে আল মামুন ৮৩০ খ্রীষ্টাব্দে বাগদাদে একটি শিক্ষা গবেষণাগার প্রতিষ্ঠান "বায়তুল হিকমা" (Bayt-ul-Hikma or A House of Wisdom) প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে গ্রীক ভাষা ছাড়া সংস্কৃত, পারস্য, সিরীয় প্রভৃতি ভাষায় লিখিত পুস্তকাদি অনুবাদ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে তিনটি বিভাগ ছিল গ্রন্থাগার, শিক্ষায়তন এবং অনুবাদ ব্যুরো। এর মহাপরিচালক ছিলেন হুনাইন ইবনে ইসহাক। আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটে ১২৫৮ সালে হালাকু খানের হাতে। হালাকু খান ১২৫৮ সালে বাগদাদ নগরী ধ্বংস করেন। পরবর্তীতে আব্বাসীয়গণ কায়রোতে রাজধানী স্থাপন করেন।
হালাকু খান : হালাকু খান ছিলেন মোঙ্গল জাতির একটি শাখা ইলখানি বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের পৌত্র ও টুলি খানের পুত্র। | তিনি আব্বাসীয় সর্বশেষ খলিফা মুতাসিম বিল্লাহকে ১২৫৮ সালে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেন। তিনিই বাগদাদ নগরী ধ্বংসের নেতৃত্ব দেন। সে সময় ২০ লাখ লোকের মধ্যে ১৬ লাখ লোকের প্রাণ দিতে হয়। সে সময় শহরের পথে রক্তের স্রোত বয়ে চলল এবং তাইগ্রিস নদীর পানি মাইলের পর মাইল রক্তের ধারায় লালে লাল হয়ে গিয়েছিল।
বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্ম হল হিন্দু ধর্ম। হিন্দু ফারসি শব্দ। এ ধর্মমতের কোন প্রবর্তক নেই, নেই কোন শুরুর দিন তারিখ। এজন্য একে সনাতন ধর্ম বলা হয়। হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম বেদ। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত। পবিত্র বেদের বিস্ময়কর প্রকাশের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মানুসারীগণ ধর্মকে পেয়েছে। বেদের চারটি খন্ড রয়েছে ঋকবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। প্রত্যেক বেদের দুটি অংশ রয়েছে সংহিতা ও ব্রাহ্মণ। সংহিতা ভাগে রয়েছে মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ ভাগে রয়েছে মন্ত্রের অর্থ ব্যবহার নির্দেশ। হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে সাহিত্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় ঋকবেদের শ্লোকসমূহে। হিন্দুধর্মের অন্যান্য গ্রন্থগুলো হল উপনিষদ, স্মৃতিশাস্ত্র, পুরাণ, শ্রীমদ্ভগবদগীতা, রামায়ণ, মহাভারত । কাশী, গয়া, বৃন্দাবন, সীতাকুন্ড তাদের পুণ্যস্থান। বর্ণপ্রথা অনুসারে হিন্দুধর্মে চারটি প্রধান বর্ণ রয়েছে-
·
ব্রাহ্মণ : ধর্মগুরু ও পৌরহিত্য সাধন
·
ক্ষত্রিয় : দেশরক্ষা
·
বৈশ্য : ব্যবসা বাণিজ্য
·
শুদ্র : কায়িক শ্রম তথা সেবা প্রদান
হিন্দুধর্মে প্রধান তিন দেবতা হচ্ছে-
·
ব্রহ্মা: ব্রহ্মা প্রধান দেবতা। ব্রহ্মা সৃজনকর্তা। পত্নী হলেন স্বরস্বতী । স্বরস্বতী বিদ্যা বা জ্ঞানের প্রতীক।
·
বিষ্ণু : সৃষ্টির রক্ষাকারী ও পালনকর্তা। পত্নী হলেন লক্ষ্মী। লক্ষ্মী সম্পদ ও সৌভাগ্যের প্রতীক। বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হল শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় জন্মগ্রহণ করেন, তার মামার নাম কংস ।
·
শিব : সৃষ্টির সংহার বা বিনাশকারী । মহাদের নামে পরিচিত। পত্নী হলেন কালী বা দুর্গা। দুর্গা শক্তির প্রতীক। কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী ও স্বরস্বতী শিব-দুর্গার পুত্র-কন্যা।
শিখ শব্দটির উৎপত্তি পাঞ্জাবী ভাষার শিখনা শব্দ থেকে। গুরু নানকের অনুসারীদের শিখ বলা হয়ে থাকে। গুরু নানক জন্মগ্রহণ করেন ১৪৬৯ সালের ১৫ এপ্রিল বর্তমান পাকিস্তানের লাহোর নগরীর অনতিদূরে তালওয়ান্দি গ্রামে হিন্দু পিতামাতার গৃহে। গুরু গোবিন্দ সিং হলেন শিখ ধর্মের দশম গুরু। তিনি পুরুষদের জন্য সিং এবং মহিলাদের জন্য কাউর পদবী ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
গুরুগ্রন্থ 'সাহিব' হল শিখ ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে গুরু নানক ও পরবর্তী গুরুগণের প্রণীত স্ত্রোতগীতসমূহ।
শিখ উপাসনাগার বিখ্যাত স্বর্নমন্দির অমৃতসর শহরে অবস্থিত। এটি গোল্ডেন টেম্পল নামে পরিচিত। গুরু অর্জুন দাসের সময় এর নির্মাণ শুরু হয়। এর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন প্রখ্যাত মুসলিম সাধক পীর মির মোহামম্মদ খাঁ (২৮ ডিসেম্বর, ১৫৮৮)। ১৫৭১ সালে গুরু অমর দাসের সাথে সম্রাট আকবর সাক্ষাৎ করে শিখ ধর্মপ্রসারে ভূমিকা রাখেন।
একেশ্বরবাদী ধর্মসমূহের মধ্যে ইহুদী ধর্ম প্রথম ও প্রাচীনতম। প্রাচীন হিব্রুজাতির এবং এর উত্তরপুরুষদের অনুসৃত এক ঈশ্বরকেন্দ্রিক বিশ্বাসকে ইহুদী ধর্ম বলা হয়ে থাকে। পাঁচ খন্ডের ইতুসী ধর্মগ্রন্থ 'তাওরাত' অনুযায়ী ইহুলি জাতির আদিপিতা ইব্রাহীম (আ) । (হযরত ইব্রাহীম (আ) এর মাজার হেবরনে । তাঁর পুত্র ইসহাক এবং ইসহাকের পুত্র ইয়াকুবের নাম স্বর্গীয় দূত কর্তৃক ইস্রাইল করা হয়। সেই থেকে ইয়াকুবের স্বজাতি ইস্রাইলী বংশধর হিসেবে পরিচিত। ইয়াকুবের পুত্র ইউসুফের সময় থেকে ইস্রাইলিগণ মিশরে বসবাস করতে থাকে।
ইহুদী ধর্মের প্রবর্তক হলেন হযরত মুসা (আ)। তিনি সিনাই পর্বত শিখরে ঈশ্বর থেকে প্রত্যাদেশ 'দশ আজ্ঞা' লাভ করেন। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট অংশই ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ। আর নিউ টেস্টামেন্ট অংশ খ্রিস্টানদের পবিত্র বাইবেল। ইহুদীরা শনিবার পূর্ণ বিশ্রামে থেকে প্রভুর উপাসনা ও আরাধনা করে। একে সাব্বাৎ বলে। সিনাগগ হল ইহুদিদের ধর্মীয় উপাসনাগার। ইহুদীদের পবিত্র উপাসনাগার বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ জেরুজালেমে অবস্থিত। ইহুদীরা এর নাম দিয়েছে টেম্পল মাউন্ট। নবী সলোমান এটি প্রথম নির্মাণ করেন। এটি প্রথম ধ্বংস করেন রাজা নেবুচাদনেজার। আবার নির্মাণের পর রোমান সম্রাট টাইটাস ৭০ খ্রিস্টাব্দে এটি দ্বিতীয়বার ধ্বংস করেন। নবী সলোমানের নির্মিত মন্দিরের একটি দেয়াল মন্দিরটির অতীত ঐশ্বর্য্যের প্রতীকরণে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এই দেয়ালটিকে বিলাপের দেয়াল বা (Wailing wall) নামে আখ্যায়িত করা হয়। জেরুজালেম মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী কর্তৃক সমাদৃত এবং তিন ধর্মের মিলনকেন্দ্র।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামানব গৌতম বুদ্ধ নেপালের কপিলাবস্তুতে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর পিতা রাজা শুদ্ধোধন এবং মাতা রানী মহামায়া কথিত যে, রাজরানী কপিলাবস্তু থেকে ১২ ক্রোশ দূরে পিত্রালয়ে সন্তান প্রসবের গমনপথে ’লুম্বিনি ' অরোণ্যাদ্যানে বুদ্ধকে প্রসব করেন। শাক্য বংশে জন্মগ্রহণকারী গৌতমের বাল্যনাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৯ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। তিনি বুদ্ধগয়া নামক স্থানে নিরঞ্জনা নদীর তীরে এক অশ্বত্থতলায় ধ্যান-নিমগ্নতার মধ্যে 'সম্বোধি' জ্ঞান লাভ করেন। অশ্বত্থগাছটির নামকরণ করা হয় বোধিবৃক্ষ। ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বুদ্ধ গঙ্গার উত্তরপাড়ের বারানসীর কুশীনগরের এক শালবনে উত্তরীয় শয়ানে এক বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ৮০ বছর বয়সে প্রাণত্যাগ করেন।
বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা অহিংসা পরম ধর্ম । বুদ্ধ সাধনার মাধ্যমে চারটি সত্যের সন্ধান পেয়েছেন দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখ নিরোধ এবং দুঃখ নিরোধের উপায়। তিনি মানুষকে পঞ্চশীল পালনের উপদেশ দিয়েছেন জীব হত্যা না করা, চুরি না করা, মিথ্যা থেকে বিরত থাকা, মিথ্যা কামাচারে বশীভূত না হওয়া এবং মদ্যাসক্ত না হওয়া।
অন্য ধর্মে যেখানে ধর্মীয় বিধান পালনের মাধ্যমে স্বর্গলাভ মূল লক্ষ্য, সেখানে বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের মূল লক্ষ্য হল নির্বাণ লাভ করা। রূপে, রস, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ সকল প্রকার দুঃখ থেকে চিরমুক্তি লাভ করে বিমুক্ত সুখের অধিকারী হওয়াকে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ হল বর্তমান জনমে পরম সুখ লাভ ।
বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক। এটি পালি ভাষায় রচিত। প্যাগোডা হল বৌদ্ধদের মন্দির। বুদ্ধগয়া, সারনাথ তাদের পুণ্যস্থান । পাকিস্তানের তক্ষশীলা পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত বেীদ্ধধর্মের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান ।
জীবহত্যার বিরোধীতায় হিন্দুর মধ্য থেকে জৈন ধর্মের উৎপত্তি। জৈন শব্দ দ্বারা হিংসা, ক্রোধ, লোভ, লালসা ও জাগতিক আকর্ষণ থেকে মুক্তি পেয়ে কঠোর কৃচ্ছতাধারী হওয়ার পথানুসন্ধানকেই বুঝায়। এটি মুখ্যত ভারতের বিহারে উৎপত্তি লাভ করে।
জৈনধর্মে তীর্থঙ্কর হলেন ধর্মগুরু। চব্বিশজন তীর্থঙ্করের প্রথমজন হলেন রসভাদেব বা রিশাভা। ত্রয়োবিংশ তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ (পরেশনাথ) এবং চতুর্বিংশ তীর্থঙ্কর মহাবীর (ভদ্রামনা)। রসভাদেব দৃশ্যত জৈনধর্মের প্রবর্তক হলেও মহাবীর জৈনধর্মের প্রকৃত প্রবর্তক সিদ্ধপুরুষ। মহাবীর ভারতের বিহারের পাটনা নগরীর নিকটবর্তী কুন্ডগ্রামে খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৯ এর ১৩ চৈত্র শুক্লপক্ষের রাত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রাজা সিদ্ধার্থ ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশজাত জনতাপুত্রা গোত্রের শাসক। তাঁর মাতার নাম ত্রিশলা।
জৈন ধর্ম দুটি ধারায় বিভক্ত – স্বেতাস্বর ও দিগম্বর। জৈনদের সুনির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থ নেই। ৪৫টি প্রামাণিক ধর্মবিধি রচনাকে তারা অনুসরণ করে। এগুলো অ্যাঙ্গাস, প্রাকিরানাকাস, চিদাসূত্র নামে পরিচিত।
ইতিহাসখ্যাত বেথেলহাম প্যালেস্টাইনে অবস্থিত। এখানে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এক গোশালায় জন্মগ্রহণ করেন। যীশুর মাতার নাম মেরি। মেরি ও যোসেফের গ্রামের বাড়ি নাজেরাথে । প্যালেস্টাইন ছিল ইহুদী অধ্যুষিত এবং যিশুর ধর্মমত প্রচারের কারণে ক্ষুদ্ধ ইহুদীরা তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতা ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগ আনে। রোমান সম্রাট অগাস্টাস সিজারের গভর্নর পন্টাস পাইলেটের অন্যায় বিচার আদেশে যিশুকে ক্রুশে পেরেক এঁটে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ হল নিউ টেস্টামেন্ট বা বাইবেল। এটি প্রথম হিব্রু ভাষায় লেখা হয়। নিউ টেস্টামেন্টের ২৭টি পুস্তকের মধ্যে চারটি পুস্তক গোস্পেল বা সুসমাচার নামে পরিচিত। এগুলো লিখেছিলেন মথি, মার্ক লুক ও যোহন - লিখার সময়কাল ৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১০ খ্রিস্টাব্দ।
খ্রিস্টান ধর্মাবলীগণ দুটি ধারায় বিভক্ত ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট ও অর্থোডক্স। ক্যাথলিকগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ। ক্যাথলিকদের ধর্মরাষ্ট্র হল ভ্যর্টিক্যান । খ্রিস্টান ক্যাথলিক চার্চের বর্তমান প্রধান হলেন গোপ দ্বিতীয় ফ্রান্সিস। তাঁর জন্ম আর্জেন্টিনায়, সুইস গার্ড গোপের নিরাপত্তা বিধান করে।
জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) ছিলেন খ্রিস্টধর্মের সংস্কারক। তিনি তাঁর মতবাদ জনপ্রিয় করার জন্য জার্মান ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। তিনি রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে নিজস্ব ভাবধারার খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন। তাঁর এ আন্দোলনকে রিফর্মেশন বলা হয়। তার অনুসারীগণ প্রটেস্ট্যান্ট নামে পরিচিত। ক্যাথলিক ধারার এক বিশ্বাসযোগ্য বিকল্পরূপে প্রটেস্ট্যান্টইজমে পূর্ণতা দিয়েছেন জিন ক্যালভিন। ১৫২০ সালে মার্টিন লুথার 'ব্যবিলিয়ান ক্যাপটিভিটি' নামক পুস্তক রচনা করে প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের দৃঢ়ভিত্তি প্রদান করেন।
খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মউৎসবগুলো হল : ক্রিস্টমাস, ইপিপানি, ইস্টার সানডে, গুড ফ্রাইডে। এছাড়া রয়েছে হলি উইক - যার অন্তর্ভুক্ত পাম সানডে, পেশন প্লেয়স, ইস্টার ডে, লেন্ট, এসসেসন ডে। জেরুজালেম খ্রিস্টানদের পবিত্র নগরী এবং জর্ডান নদী পবিত্র নদী।
মহাদেশ বলতে পৃথিবীর বড় ভূখণ্ডগুলোকে বোঝায়। পৃথিবীকে সাধারণত ৭টি মহাদেশে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো: এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া, ও অ্যান্টার্কটিকা। এশিয়া মহাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জনবহুল মহাদেশ। এখানে চীন, ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জনবহুল দেশ রয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের সপ্তম এবং দক্ষিণতম মহাদেশ। এটি বরফ ও তুষারে ঢাকা এবং এখানে স্থায়ী জনবসতি নেই। তাছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহকে একত্রে ওশেনিয়া বা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে । কারণ দ্বীপসমূহকে পার্শ্ববর্তী মহাদেশের অন্তর্গত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীর ভূখণ্ডগুলোকে মহাদেশ নামে পৃথক করার চারটি মডেল রয়েছে যথাঃ চার মহাদেশ , পাঁচ মহাদেশ , ছয় মহাদেশ ও সাত মহাদেশ মডেল । চীন, ভারত, বাংলাদেশ , পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পশ্চিম ইউরোপের কিছু অংশ এবং ইংরেজি ভাষাভাষী জনসংখ্যার দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, এবং যুক্তরাজ্য এ সাত মহাদেশ মডেল শিখানো হয়।
·
এশিয়া মহাদেশ : এশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জনবহুল মহাদেশ। এটি ভূপৃষ্ঠের ৮.৬% এবং স্থলভাগের ৩০% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন ৪,৪৫,৭৯,০০০ বর্গ কিলোমিটার । এশিয়াতে বিশ্বের ৬০%-এরও বেশি মানুষ বসবাস করে। এশিয়াতে ৪৪ টি স্বাধীন ও জাতিসংঘ ভূক্ত দেশ রয়েছে । এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম দেশ চীন এবং ক্ষুদ্রতম দেশ মালদ্বীপ । এশিয়ার সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট এভারেস্ট ( ৮৮৫০ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান মৃত সাগর ( -৪০০ মিটার ) ।
·
আফ্রিকা মহাদেশ : আফ্রিকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর স্থলভাগের ২০% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন ৩,০২,২১,০০০ বর্গ কিলোমিটার । আফ্রিকাতে বিশ্বের ১৭% মানুষ বসবাস করে। আফ্রিকাতে ৫৪ টি স্বাধীন ও জাতিসংঘ ভূক্ত দেশ রয়েছে । এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম দেশ আলজেরিয়া এবং ক্ষুদ্রতম দেশ সিচেলিস । আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্থান কিলিমাঞ্জারো ( ৫৯৬৩ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান লেক আসাল( -১৫৬ মিটার ) ।
·
উত্তর আমেরিকা মহাদেশ : উত্তর আমেরিকা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর স্থলভাগের ১৬.৫% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ২,৪২,৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার। উত্তর আমেরিকাতে ২৩ টি স্বাধীন ও জাতিসংঘ ভূক্ত দেশ রয়েছে । এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম দেশ কানাডা এবং ক্ষুদ্রতম দেশ সেন্ট কিটস এন্ড নোভিস । উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট ডেনালি ( ৬১৬৮ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান ডেথ ভ্যালি ( -৮৬ মিটার ) ।
·
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ : দক্ষিণ আমেরিকা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর স্থলভাগের ১২% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১,৭৮, ১৯০০০ বর্গ কিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকাতে ১২ টি স্বাধীন ও জাতিসংঘ ভূক্ত দেশ রয়েছে । এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল এবং ক্ষুদ্রতম দেশ সুরিনাম । দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ স্থান আকাঙ্কা গুয়া ( ৬৯৫৯ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান ভ্যালদেস পেনিনসুলা ( -৪০ মিটার ) ।
·
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ : অ্যান্টার্কটিকা জনমানবহীন মহাদেশ । এটি বরফ ও তুষারে ঢাকা এবং এখানে স্থায়ী কোন জনবসতি নেই। এটি পৃথিবীর স্থলভাগের ৮.৯% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১,৩২,০৯০০০ বর্গ কিলোমিটার। অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ স্থান ভিনসন ম্যাসিফ ( ৪৯৮৭ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান কেটলে সাব গ্লাসিয়াল ট্রেঞ্চ ( - ২৫৫৫ মিটার ) ।
·
ইউরোপ মহাদেশ : ইউরোপ পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। এটি পৃথিবীর স্থলভাগের ৬.৮% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৯৯,৩৮০০০ বর্গ কিলোমিটার। ইউরোপে ৪৮ টি স্বাধীন দেশ ও ৪৬ টি জাতিসংঘ ভূক্ত দেশ রয়েছে । এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম দেশ রাশিয়া এবং ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটি । ইউরোপের সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট এলব্রাস ( ৫৬৩৩ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান কাস্পিয়ান সাগর ( -২৮ মিটার ) ।
·
ওশেনিয়া / অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ : ওশেনিয়া, যা অস্ট্রেলিয়া নামেও পরিচিত, পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ মহাদেশ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর স্থলভাগের ৫.৮% অংশ জুড়ে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৮১,১২,০০০ বর্গ কিলোমিটার। অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ টি স্বাধীন ও জাতিসংঘ ভূক্ত দেশ রয়েছে । এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়া এবং ক্ষুদ্রতম দেশ নাউরু । অস্ট্রেলিয়ায়র সর্বোচ্চ স্থান পুসাক জায়া ( ৪৮৮৪ মিটার ) এবং সর্বনিম্ন স্থান লেক আয়ার ( - ১৬৬ মিটার ) ।
·
এশিয়া : • এশিয়া মহাদেশ আফ্রিকার ১.৫ গুণ, উত্তর আমেরিকার ১.৮২ গুণ, দক্ষিণ আমেরিকার ২.৪ গুণ, ইউরোপের ৪.১৯ গুণ, ওশেনিয়ার ৫.৭৩ গুণ এবং এন্টার্কটিকার ৩.১২ গুণ বড়।
·
ইউরোপ : • ইউরাল পর্বত , ইউরাল নদী এবং কাস্পিয়ান সাগর এশিয়াকে ইউরোপ হতে পৃথক করেছে ।
·
আফ্রিকা :
• ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত।
• এশিয়া মহাদেশকে আফ্রিকা মহাদেশ হতে পৃথক করেছে লোহিত সাগর।
• ইউরোপ মহাদেশকে আফ্রিকা মহাদেশ হতে পৃথক করেছে ভূমধ্যসাগর।
·
উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা :
• ১৪৯২ সালে ইতালির নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেন।
• ইতালিয়ান নাবিক আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে মহাদেশটির নামকরণ করা হয়।
• আমেরিকা মহাদেশকে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ হতে পৃথক করেছে আটলান্টিক মহাসাগর।
• আমেরিকা মহাদেশকে এশিয়া মহাদেশ হতে পৃথক করেছে প্রশান্ত মহাসাগর ।
·
এন্টার্কটিকা :
• মানব বসতিহীন বরফাচ্ছন্ন মহাদেশ। পৃথিবীর মোট জমাটবদ্ধ বরফের ৯০% এন্টার্কটিকা মহাদেশে রয়েছে।
• এন্টার্কটিকার প্রধান খনিজ দ্রব্য কয়লা।
·
ওশেনিয়া / অস্ট্রেলিয়া :
• পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাদেশ।
• অস্ট্রেলিয়া' শব্দের অর্থ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল।
⮚ আয়তনে বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচটি দেশ :
1.
রাশিয়া
2.
কানাডা
3.
যুক্তরাষ্ট্র
4.
চীন
5.
ব্রাজিল
⮚ জনসংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচটি দেশ :
1.
চীন
2.
ভারত
3.
যুক্তরাষ্ট্র
4.
ইন্দোনেশিয়া
5.
ব্রাজিল
⮚ আয়তনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম পাঁচটি দেশ :
1.
ভ্যাটিকান সিটি
2.
মোনাকো
3.
নাউরু
4.
টুভ্যালু
5.
পালাউ
⮚ জনসংখ্যায় বিশ্বের ক্ষুদ্রতম পাঁচটি দেশ :
1.
ভ্যাটিকান সিটি
2.
টুভ্যালু
3.
নাউরু
4.
সানম্যারিনো
5.
পালাউ
১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেখানে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। তথাপি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরেও আয়তনে পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্র হলো রাশিয়া।
⮚ জনসংখ্যার ভিত্তিতে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ও জনসংখ্যা:
1.
ইন্দোনেশিয়া ( প্রথম ) : জনসংখ্যা- ২৬ কোটি ১১ লক্ষ
2.
পাকিস্তান ( দ্বিতীয় ) : জনসংখ্যা- ১৯ কোটি ৮০ লক্ষ
3.
ভারত ( তৃতীয় ) : জনসংখ্যা- ১৮ কোটি ৯০ লক্ষ
4.
বাংলাদেশ ( চতুর্থ ) : জনসংখ্যা- ১৪ কোটি ৩৫ লক্ষ
5.
ইরান ( পঞ্চম )
6.
নাইজেরিয়া ( ষষ্ঠ )
7.
মিশর ( সপ্তম )
8.
তুরস্ক ( অষ্টম )
9.
আলজেরিয়া ( নবম )
10.
মরক্কো ( দশম )
⮚ আয়তনে বৃহত্তম মুসলিম দেশ : কাজাখাস্তান