ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের যে কোনো পরিবর্তনকেই বলে পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণ প্রধানত চার প্রকার যথাঃ ১. বায়ুদূষণ ২. পানিদূষণ ৩. মাটিদূষণ ৪. শব্দদূষণ । দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে নিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি মোকাবেলা করে সুস্থ পরিবেশ সুরক্ষা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ এর মতই। বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ সমূহ নিম্নরুপ:
পরিবেশ সম্পর্কিত কিছু তথ্য :
বায়ু দূষণের কারণ :
সর্বোচ্চ সহনীয় বায়ুদূষণের মাত্রা (মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার) :
বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ :
পলিথিন ব্যবহার ক্ষতিকর: ইথিলিনের একাধিক অণু রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে যে বড় অণু গঠন করে তাই পলিথিন। এটি একটি জটিল যৌগ। এ জটিল যৌগ পানি বা মাটির সাথে বিক্রিয়া করে না। ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে বা পানিতে পচে না। ফলে এটি দীর্ঘকাল অপরিবর্তিত থেকে মাটি, পানি তথা পরিবেশের ক্ষতি করে।
শব্দদূষণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। শব্দ পরিমাপের একক ডেসিবল। ডেসিবলের মাত্রা ১ থেকে ১৬০ হতে পারে। ১ থেকে ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত সহনীয়, ৬০ থেকে ১০০ ডেসিবল পর্যন্ত বিরক্তিকর এবং ১০০ থেকে ১৬০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ শ্রবণশক্তির জন্য ক্ষতিকর। ১০৫ ডিবি এর বেশি মাত্রার শব্দ দূষণ হলে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে।
তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণ মানুষের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর এক ধরনের অদৃশ্য দূষণ। তেজস্ক্রিয়তার উৎস সূর্য ও মহাশূন্য, যেখান থেকে তা পৃথিবীতে পৌঁছে। ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তার অধিকাংশ বিকরিত হয় বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে, বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী থেকে।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস উভয়ই বাংলাদেশের ভয়াবহ ও নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় প্রতি পাঁচ বছরে এ দুর্যোগ মহা প্রলয়ঙ্করী রূপে দেখা দেয়। ছোটখাট আকারে প্রতি বছরতো লেগেই আছে। এর আঘাত সবচেয়ে বেশি আসে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে। হাজার হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ এ ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আসছে। বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ব্যাপকতা প্রমাণ করে দুর্যোগের পূর্ব সতর্কীকরণ ও ঝুঁকিহ্রাসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান কৌশল হওয়া উচিত। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য দুর্যোগপূর্ব পূর্বাভাস ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কৌশল গ্রহণ করেছে । স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে আগাম সতর্কবার্তা জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে উপকূলে আমাদের ৭৬,১৪০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় অনুরূপ স্বেচ্ছাসেবক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মানুষসহ সব প্রাণীর জন্য পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশই হলো প্রাণের ধারক ও বাহক। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মানুষ, উদ্ভিদ বা প্রাণীর উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। প্রতিটি জীবই বাঁচার জন্য নিজ নিজ পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে। সে পরিবেশই যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না যায় তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা জীবের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। নিচে পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হল ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞানুযায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে এমন একটা অবস্থাকে বোঝায় যখন কোন ঘটনা কোন জনপদে বা এলাকায় যথেষ্ট মাত্রায় ধ্বংস ও প্রাণহানি ঘটায়, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যহত করে, স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করে - যা মোকাবিলা করার জন্য ঐ জনগোষ্ঠী বা এলাকার বাইরে থেকে অসাধারণ সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে সাড়া দেবার জরুরী প্রয়োজন দেখা দেয়।
মানব-সৃষ্ট দুর্যোগগুলো মানুষের দ্বারা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্যে প্রয়োজন আধুনিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও পূর্ব প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরী। কারণ স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার দুর্যোগকালীন জরুরী তৎপরতা রক্ষা করতে পারে বহু মূল্যবান প্রাণ, কমাতে পারে অসুস্থতা ও পঙ্গুত্বের মাত্রা, এবং প্রতিরোধ করতে পারে রোগব্যাধির বিস্তার এই লক্ষ্যে চতুর্থ পঞ্চপার্বিক পরিকল্পনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য খাতে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবেলায় (Emergency Perparedness and Response) নামে একটি প্রকল্প (১৯৯২-৯৬) হাতে নেয়। ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রণীত/ প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচীর (১৯৯৮- ২০০৩) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবেলার জন্য এ যাবৎ গৃহীত উদ্যোগগুলো হচ্ছেঃ
দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্লিনিক কর্মীদের করণীয়ঃ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দ্রুত চিকিৎসা ত্রাণ শুরু করার জন্য প্রয়োজন হয় মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতির উপর একটি তাৎক্ষণিক রিপোর্ট যেখানে জরুরী ঔষধপত্র ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রাথমিক মজুদ ও সম্ভাব্য চাহিদা, আঘাত, অসুস্থ্যতা ও মৃত্যুর প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করতে হবে এবং রিপোর্টটি নিকটস্থ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পৌঁছাতে হবে। ক্রমান্বয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রেরণ, ঔষধের মজুদ ও বিতরণ, মেডিকেল টিমের কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচীকে জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে আশ্রয় শিবিরে অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র বা ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিমের সাহায্যে উপদ্রুত জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনতে হবে। এ কাজে ক্লিনিক কর্মী, তত্ত্বাবধায়ক ও ব্যবস্থাপকদের সমন্বিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দুর্যোগের মোকাবেলায় কমিউনিটি গ্রুপের করণীয়ঃ উদ্ভূত দুর্যোগ পরিস্থিতির আলোকে গ্রুপের সদস্যবৃন্দ জরুরীসভা আহ্বান করে তাদের করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। গ্রুপ তাদের আওতাভুক্ত জনগোষ্ঠীর দুর্যোগকালীন জরুরী স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা অব্যাহত রাখার স্বার্থে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করবেন এবং ক্লিনিক কর্মী, এনজিও কর্মী, ইউনিয়ন তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে চিকিৎসা ও ত্রাণ তৎপরতার সমন্বয় সাধন করবেন। দুর্যোগপূর্ব ও দুর্যোগ উত্তর উভয় সময়ে গ্রুপ আওতাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে উদ্ধার কার্য, পুনর্বাসন, ত্রাণ তৎপরতা ও চিকিৎসা সেবা কর্মসূচীতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মূলত প্রকৃতি প্রদত্ত। তাই সম্পূর্ণভাবে এ দুর্যোগকে মোকোবিলা করা সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের বিপরীতে কতটুকু প্রতিরোধ, প্রস্তুতি, সাড়াদান ও পুনরুদ্ধার করা যায় তাই বিবেচ্য বিষয়। অতীতে দুর্যোগ সংঘটনের পরপরই ব্যাপক ত্রাণকার্য পরিচালনা করাকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলা হতো। বর্তমানে ত্রাণকার্য সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি উপাদান মাত্র। দুর্যোগপূর্ব কিছু কার্যকলাপ যেমন- দুর্যোগে প্রতিরোধ ও পূর্বপ্রস্তুতি দুর্যোগ মোকাবিলার মুখ্য উপাদান। দুর্যোগ সংগঠনের সূচনামাত্রই সাড়াদান, পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। সাড়াদান বলতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া, তল্লাশি ও উদ্ধার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে বুঝায়। দুর্যোগে সম্পদ, পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ইত্যাদির যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা পুননির্মাণের মাধ্যমে দুর্যোগপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনাকেই পুনরুদ্ধার বোঝায়। সার্বিকভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যায়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
প্রধান কার্যাবলি দুর্যোগ ঝুঁকি হাস, জরুরি সাড়া প্রদান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; জরুরি মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ডাটাবেস প্রস্তুত ও সংরক্ষণ; দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ এবং এর সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন; বৈদেশিক সূত্র হতে প্রাপ্ত খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি মানবিক সহায়তা ব্যবহার ও বিতরণ বিষয়ে সমন্বয় সাধন; শরণার্থী বিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয় সাধন: কাজের বিনিময়ে খাদ্য (গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার) কর্মসূচি, গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টেস্ট রিলিফ) ভিজিএফ, জিআর সাহায্য এবং এ ধরনের অন্যান্য কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মানবিক সহায়তা প্রদান; অতি দরিদ্রদের ঝুঁকি হ্রাসকল্পে বছরের বিভিন্ন সময়ে কর্মাভাবকালে (Lean Period) কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান যার মাধ্যমে দুর্যোগ প্রতিরোধ দুর্যোগের প্রস্তুতি, দুর্যোগের সাড়াদান ও পুনরুদ্ধার ইত্যাদি কার্যক্রম করা হয় বা করা যায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান উদ্দেশ্য ৩টি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্র: দুর্যোগ মোকাবিলা বলতে দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগপরবর্তী সময়ের কার্যক্রমকে বোঝায় ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপাদান: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখ্য উপাদান তিনটি যথাঃ প্রতিরোধ , প্রশমন , পূর্ব প্রস্তুতি ।
প্রতিরোধ (Prevention) : প্রাকৃতিক দূর্যোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে প্রতিরোধ কার্যক্রম সফলতা বয়ে আনতে পারে। দুর্যোগ প্রতিরোধের কাঠামোগত এবং অবকাঠামোগত প্রশমনের ব্যবস্থা রয়েছে। কাঠামোগত প্রশমনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নির্মাণ কার্যক্রম যথা- বেড়িবাঁধ তৈরি, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পাকা ও মজবুত ঘরবাড়ি তৈরি, নদী খনন ইত্যাদি বাস্তবায়নকেই বোঝায়। কাঠামোগত দুর্যোগ প্রশমন খুবই ব্যয়বহুল, যা অনেক দরিদ্র দেশের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অবকাঠামোগত দূর্যোগ প্রতিরোধ যেমন- প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি, পূর্বপ্রস্তুতি ইত্যাদি কার্যক্রম স্বল্প ব্যয়ে করা সম্ভব।
প্রশমন (Mitigation) : দুর্যোগের দীর্ঘস্থায়ী হ্রাস এবং দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতিকেই দুর্যোগ প্রশমন বলে। মজবুত পাকা ভবন নির্মাণ, শস্য বহুমুখীকরণ, ভূমি ব্যবহারে বিপর্যয় হ্রাসের কৌশল নির্ধারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোক স্থানান্তর। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন ইত্যাদি কার্যক্রম দুর্যোগ প্রশমনের আওতাভুক্ত। দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগ প্রশমন ব্যয়বহুল হলেও সরকার সীমিত সম্পদের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পূর্বপ্রস্তুতি (Preparedness) : দূর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি বলতে দুর্যোগপূর্ব সময়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাসমূহকে বোঝায়। আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, জরুরি অবস্থ্য মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ড্রিল বা ভূমিকা অভিনয় এবং রাস্তাঘাট, যানবাহন, বেতার যন্ত্র ইত্যাদি দুর্যোগের পূর্বে প্রস্তুত রাখা দুর্যোগ প্রস্তুতির অন্তর্ভুক্ত।
সাড়াদান (Response) : সাড়াদান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি অংশ মাত্র। দুর্যোগের পরপরই উপযুক্ত সাড়াদানের প্রয়োজন হয়। সাড়াদান বলতে নিরাপদ স্থানে অপসারণ, তল্লাশি ও উদ্ধার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে বোঝায়।
পুনরুদ্ধার (Recovery) : দুর্যোগে সম্পদ, পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ইত্যাদির যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা পুননির্মাণের মাধ্যমে দুর্যোগপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনাকেই পুনরুদ্ধার বোঝায়। এক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাহায্য ও সহায়তার প্রয়োজন হয়।
উন্নয়ন (Development) : ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্যোগপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পরপরই ঐ এলাকার উন্নয়ন কাজে হাত দিতে হয়। উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নেওয়ার পূর্বে ভৌগোলিক ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের উপর লক্ষ রাখতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, খরা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদিকে তাৎক্ষণিক মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আবহাওয়ার তথ্যভিত্তিক সময়মতো পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ। এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জন্য সরকারি পেশাভিত্তিক দপ্তর হিসেবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর কাজ করে থাকে। পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণার জন্য সরকারি আর একটি সংস্থা হচ্ছে স্পারসো। স্পারসো ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে মেঘচিত্র সরবরাহ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরকে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণে সহায়তা করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবহাওয়ার উপাত্ত সংগ্রহ করে, রাডার চিত্র নিয়ে অঙ্কন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কীকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বন্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস দান ও প্রচারের ব্যবস্থা করে থাকে। যদিও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো কলাকৌশল অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি, তথাপি রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়। জরুরি পরিস্থিতিতে আর্তদের চিকিৎসা, উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কাজে আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ বেসামরিক প্রশাসনকে সব রকম সাহায্য ও সহযোগিতা দান করে থাকেন। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন দুর্যোগ সংক্রান্ত সংকেতসমূহ প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাসমূহ যেমন- অক্সফাম, ডিজাস্টার ফোরাম, কেয়ার বাংলাদেশ, কারিতাস, প্রশিকা, সিসিডিবি, বিডিপিসি (বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্র) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে প্রতিরোধ কার্যক্রম সফলতা বয়ে আনতে পারে। দুর্যোগ প্রতিরোধে কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত প্রশমনের ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নে অবকাঠামোগত প্রস্তুতিগুলো উল্লেখ করা হলো:
(ক) উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান।
(খ) ব্যাপক গণসচেতনতা
(গ) পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ ইত্যাদি।
অবকাঠামোগত প্রশমন অতি অল্প খরচে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সুতরাং বলা যায়, কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এক, সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন: বাংলাদেশের সকল প্রকার দুর্যোগ প্রশমনে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। স্বাধীনতার পর থেকে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাস্তবায়নের অভাবে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়নি।
দুই, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ: ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন। জনসংখ্যা বহুল আমাদের এই দেশে দুর্যোগ কবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
তিন, বাঁধ নির্মাণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ: উপকূলীয় এলাকায় নতুন নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার মাধ্যমে আমরা লোকালয়গুলোকে দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা করতে পারি। এছাড়া পুরাতন বাধগুলোর যথাযথ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। অনেক বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে ক্ষয় যাওয়ার কারণে আইলার সময় সেগুলো ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যস্তুহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ লোক। আজও যারা ফিরতে পারেনি তাদের ভিটেমাটিতে। এ সকল দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর সমস্যা থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বাধা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।
চার, পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা: দুর্যোগকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের একটি জরুরি শর্ত হলো সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। এই লক্ষ্যে প্রথমেই সতর্কীকরণের সময়সীমা দীর্ঘমেয়াদি করা প্রয়োজন যাতে সতর্কবার্তা শুনে জনগণ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারে। জনগণ যেন সতর্কীকরণের ভাষা বুঝতে পারে এবং এর উপর আস্থা রাখতে পারে সে ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
পাঁচ, পয়ঃনিষ্কাশন ও নিরাপদ খাবার পানি: বন্যাজনিত দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতির অন্যতম পদক্ষেপ হলো, প্রয়োজনীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে উঁচু জমিতে, বন্যা হতে গৃহপালিত পশু-পাখীদের রক্ষা করার জন্য, নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রে টিউবওয়েল স্থাপন করা প্রয়োজন। দুর্যোগ এলাকায় অনেক টিউবওয়েল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে থাকে। এই টিউবওয়েলগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করতে হবে। পুকুর খনন এবং পুরাতন পুকুরগুলো সংস্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা স্থানীয় পর্যায়ে জলাধার হিসেবে কাজ করবে। খাল বা পুকুর পুনঃসংস্কার কার্যক্রম একদিকে বন্যা ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে, অন্যদিকে তা সেচ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করবে।
ছয়, সচেতনতা সৃষ্টি ও দুর্যোগ বীমা: কার্যকরী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় সরকার, এনজিও, সিবিও এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করে দুর্যোগ বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমাজের অসহায় জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধীদেরকে দুর্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ও তা প্রদর্শন ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে। তাছাড়া স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অধ্যায় সংযোজন করা যেতে পারে।
সাত, বনায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ : বন সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগের অভাব, স্থানীয় পায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা এবং সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশের বনজ সম্পদ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। আর এই কারণে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই বনের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও তাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা অতি জরুরি।
আট, আঞ্চলিক সহযোগিতা: প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪টি নদীর সংযোগ রয়েছে। তিনটি আন্তর্জাতিক নদীর নেটওয়ার্ক প্রতিবছর বাংলাদেশে বন্যা বয়ে নিয়ে আসে। এসব নদীর ৯০ শতাংশের বেশি প্রবাহ এলাকা (১.৮ মিলিয়ন বর্গ কি.মি.) বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত, বেশির ভাগই ভারতে। এ সমস্ত সীমানা অতিক্রমকারী নদীর প্রবাহ-ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া অনেক বন্যার উৎস থাকে ভারতে। আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমসাময়িক বিজ্ঞানসম্মত উপাত্ত ও তথ্য (যেমন, বৃষ্টিপাত) আদান-প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
নয়, ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ: জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে শহর হতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। জরুরি দুর্যোগে মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে স্থানীয় পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো (UDMCs/ Union disaster management committeey) সন্তোষজনকভাবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। UDMC গঠিত হয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, এনজিও কর্মকর্তা, দুর্যোগের বিপর্যন্ত গ্রুপের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের সমন্বয়ে। স্বাভাবিক সময়ে এ কমিটি একটি করে মিটিং করে এবং দুর্যোগ কালীন সময়ে একাধিক মিটিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
দশ, দায়-দায়িত্ব বণ্টন: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত ও যথাযথভাবে বণ্টন করে দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া জরুরি ব্যবস্থাপনার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবস্থা অবশ্যই পুনঃপরীক্ষিত ও সময়োপযোগী হওয়া উচিত। মাঠ পর্যায়ে দুর্যোগ বিষয়ক ফোকাল পয়েন্টগুলো শক্তিশালী করতে হবে।
এগার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটি ভিত্তিক প্রক্রিয়া: দুর্যোগের সময় জরুরি ব্যবস্থাপনার সাথে সমগ্র জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা একান্ত প্রয়োজন। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। স্থানীয় প্রশাসনের জোর তৎপরতার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বার, ত্রাণ কার্যক্রম: যেকোনো ত্রাণ এবং পুনর্বাসনে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে দুর্যোগের ফলে বিভিন্ন খাতে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব ও চাহিদা নিরূপণ করা। আমাদের দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় Standing Order for Disaster (SODS) রয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রমের শুধু ব্যবস্থাপনার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর সচেনতা ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার যেমন, সরকার, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।
তের, খাদ্য নিরাপত্তা: বন্যা চলাকালীন ও বন্যা পরবর্তী উভয় সময়ে খাদ্য বাজার স্থিতিশীল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কমপক্ষে ৩-৪ মাসের জন্য খাদ্যশস্য সরকারিভাবে মজুদ রাখতে হয়। সিডরের ক্ষয়ক্ষতি বাদ দিলে শুধু ২০০৭ সালে বন্যার ফলে প্রাথমিক হিসাব মতে খাদ্যশস্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চাইতে প্রায় ৮- ১০ লক্ষ টন কম উৎপাদিত হয়।
চৌদ্দ, দুর্যোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা: দুর্যোগে আক্রান্ত জনগাষ্ঠেীর জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সামগ্রিকভাবে স্ব স্ব জেলার সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার প্রধান কার্যালয় হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এই দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালনের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো স্থানীয় জনগণকে উজ্জীবিত করতে পারে এবং স্থানীয় যুবকদের সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করে তার মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকরভাবে দুর্যোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব। দুর্যোগে চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে জরুরি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে (যেমন, সন্তান প্রসব, পরিবাহিত রোগবালাই ইত্যাদি) জরুরি ঔষধ ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
পনের, স্টোকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: সরকার সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও, সিবিএ এবং নাগরিক সমাজের লোকদের বন্যায় সহযোগিতার মতো বন্যা পুনর্বাসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে পারে। ত্রাণ সামগ্রীর সুষ্ঠ বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। সকল টেকহাল্ডোরের মাঝে অবাধ তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে একটি দক্ষ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।
ষোল, পুনর্বাসন কার্যক্রম: দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পুনর্বাসন কার্যক্রমের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে আমাদের মতো দেশে সরকারের আর্থিক ক্ষমতার চাইতে পুনর্বাসনের সম্ভাব্য ব্যয় অনেক বেশি হয়ে থাকে। শুধু সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্নমুখী নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি একান্ত প্রয়োজন। দুর্যোগ পরবর্তী টার্গেট গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে অতি দরিদ্র (ultra poor) জনগোষ্ঠী, যাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির (যেমন- ভিজিডি, ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফ ইত্যাদি) আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এরপর উৎপাদক শ্রেণী ইত্যাদি বিতরণ কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। এরপর ক্ষতিগ্রস্থ মজুর শ্রমিকদের এবং ছোট শিল্প উদ্যোক্তাদের বিবেচনা করা যেতে পারে।
সতের, দুর্যোগে উপযোগী ঘরবাড়ি ও বাঁধ নির্মাণ: বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংঘটিত হওয়াকে রোধ করা যাবে না। তবে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এটাই হল মূল কথা। উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বহু বাড়িঘরই ঢেউটিনের তৈরি। এ কারণে ঢেউটিনের তৈরি বাড়িঘর ভেঙ্গে দিয়ে আহত নিহত হওয়ার ঘটনা অনেক হয়। এ ক্ষেত্রে বাতাসের গতি ও জলোচ্ছাসের; উচ্চতা বিবেচনা করে ঢেউটিন বা বাঁশের বাড়িঘরের পরিবর্তে উপকূলীয় জনগণকে ইটের বাড়িঘর তৈরিতে উৎসাহ দিতে হবে এবং সেইসঙ্গে এই ধরনের বাড়ি নির্মাণের জন্য সাহায্য সহায়তাও প্রদান করতে হবে। তাছাড়া দুর্যোগকালীন খাদ্যদ্রব্য মজুদ ও টর্নেডো থেকে বাঁচার জন্য ভূগর্ভস্থ ঘর নির্মাণেরও উদ্যোগ নিতে হবে। এই লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণ সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।
আঠার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি : বিপর্যয় মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি এবং বেসরকারি এই উভয় ধরনের বিনিয়োগ বাড়ানো। সরকারকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থানেক সুযোগ সৃষ্টি করাতে হবে। এছাড়া দাতাগাষ্ঠেীর কাছ থেকে আশ্বাসে পাওয়া। কারণ যা দ্রুত ছাড় করা এবং বেসরকারি খাতকে পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা সরকারের আরও একটি জরুরি করণীয়।
উনিশ, দুর্যোগ মোকাবেলা তহবিল গঠন ও স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার: দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য বিপুল অর্থের যোগানের স্থায়ী উৎসের জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর উপর নির্ভরশীলতার মানসিকতা কমাতে হবে এবং এই মানসিকতা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি তহবিল ও গবেষণা সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানীয় সম্পদ আহরণ এবং তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সুষ্ঠু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকারের বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই।
বিশ, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও সমন্বিত উদ্যোগ : বিশ্ব উষ্ণায়নের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল বাংলাদেশে সিডরের মত দুর্যোগের আঘাত। জলবায়ুর দ্রুত ও আকষ্মিক পরিবর্তনের জন্য মানুষ দায়ী। কাজেই এ সমস্যা বৈশ্বিকভাবে সবাই মিলে এর মোকাবেলা করতে হবে। বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহার এক অপরিকল্পিত শিল্পায়ন বিস্তারের ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীতে উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো এর জন্য দায়ী হলেও এর শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই সকলকে পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্যে কিয়োটো প্রটোকলের বাস্তবায়নে আরও জোর তৎপরতা ও বাস্তবমুখী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
একুশ, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ করনীয়: উপকূলীয় অঞ্চল বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই অঞ্চলের নদীবন্দর, সামুদ্রিক সম্পদ, মৎস্য, লবণ, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এই অঞ্চলকে রক্ষার ব্যবস্থা না করা হলে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সহ সব ক্ষেত্রে এর দারুণ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এইজন্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই লক্ষ্যে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক নিয়মের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে দুর্যোগে এখন মনুষ্য সৃষ্ট বলে মনে করা হয়। তাছাড়া বন্যা ও জলোচ্ছাস রাজনৈতিক সীমারেখা মানে না। এদেশের অস্তিত্ব বজায় রাখার স্বার্থে নদীর আন্তসীমান্ত গতিপথে সুষম প্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্যা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য আদানপ্রদানও একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। আবার উন্নত দেশগুলোর বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণের ফলে সমগ্র বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য পরিবেশ রক্ষায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক ও বিশ্ব সহযোগিতা বাড়ানো একান্ত প্রয়াজেন। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের পাশাপাশি ত্রাণ কর্মকান্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট করার মাধ্যমেই দেশে সুষ্ঠু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্ভব।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে দুর্যোগের আগে বেশি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় তবে এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে প্রতিরোধ কার্যক্রম সফলতা বয়ে আনতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোকাবেলায় যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হচ্ছে:
ক. বেড়িবাঁধ নির্মাণ: সাধারণত নদী ও উপকূলবর্তী এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে বেশি পতিত হয়। তাই উপকূলবর্তী জনগণ, সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দুর্যোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
খ. আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ: দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলগুলোতে সাধারণত ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় নেই। দুর্যোগ পূর্ববর্তী সময়ে এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দুর্যোগে প্রতিরোধে সহায়তা করা যায়।
গ. ঘরবাড়ি নির্মাণ পদ্ধতি: ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে যে রকম করা সঠিক হবে না। তাই ঘরবাড়ি নির্মাণ পদ্ধতি অবলম্বন করে দুর্যোগ পূর্ববর্তী সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
ঘ. নদী খনন: নদী খনন ব্যবস্থাটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার পূর্ববর্তী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। যেসব এলাকা প্রতিবছর বন্যার দ্বারা প্লাবিত হয়ে নদ-নদী, খাল-বিল, পলি-বালি, কাদায় ভরে যায়। সেসব এলাকার নদ-নদী খনন বা ড্রেজিং করে নদীর প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হয় যেন বন্যার সময় নদী বেশি ধারণ করতে পারে।
ঙ. প্রশিক্ষণ প্রদান: প্রতিরোধ একটি দুর্যোগে পূর্ববর্তী মোকাবেলা। তাই দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের জনগণকে পূর্ব থেকেই দুর্যোগের ভয়াবহতা ও দুর্যোগকালীন কী করণীয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হয় যেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
চ. দুর্যোগ পুনরুদ্ধার : ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাকরণ ও ত্রাণ বা আহত মানুষের যন্ত্রণা উপশমের ব্যবস্থা গ্রহণ চিকিৎসা, খাদ্য ও বস্ত্র ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ।
-পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা:
-দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করা,
-ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য, পানীয়, ঔষধ ও সেবা প্রদান,
-ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য সাহায্য প্রদান, প্রয়োজনে বিদেশি সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ,
-ক্ষতিগ্রস্তদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা,
-ক্ষতিগ্রস্তরা ঋণগ্রস্ত থাকলে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা প্রভৃতি।
(ক) প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ/ব্যবস্থা:
প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন নির্ভর পদ্ধতির পরিবর্তে একটি যুগোপযোগী ও সমন্বিত সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় ঝুঁকি হ্রাস ও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
আইসিটি নির্ভর মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ ভূমিকম্পের ঝুঁকিমুক্ত নগরায়নের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভূমিকম্পজনিত বিপদাপন্নতা এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের বড় তিনটি শহর যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট এর মাইক্রোজোনেশন ম্যাপিং তৈরি করা হয়েছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ আরো ৬টি শহর যথা: ময়মনসিংহ, টাংগাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং রংপুরের মাইক্রোজেনেশন ম্যাপ তৈরির কাজ ২০১৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবার কথা ছিল। বর্তমান ঢাকা ও চট্টগ্রামের সকল বিল্ডিং এর ওপর জরিপ করে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে আমেরিকান রেডক্রস্/IFRC-র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস হতে উপকূলীয় জনগণের জনমাল এর ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং দুর্যোগের আগাম সংকেত প্রদান নির্বিঘ্ন করার নিমিত্ত 'ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি' (সিপিপি)-র ১১৬টি VHF ও ৪০টি HF প্রতিস্থাপন করে Wireless Network শক্তিশালী করা হয়েছে।
(খ) আইন, নীতি, বিধি ও চুক্তি সংক্রান্ত পদক্ষেপ/ব্যবস্থা:
কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত এবং দুর্যোগের ঝুঁকি প্রশমনের লক্ষ্যে এর ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, জাতীয় স্থানীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ণ, দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ ও মৌলিক অধিকার রক্ষার চাহিদা পুরণকল্পে যথাযথ আইনি কাঠামো দেয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ অনুমোদন;
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে উক্ত স্থায়ী আদেশাবলীতে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ভূমিকম্প, সুনামি ও অগ্নিকান্ডের মত আপদগুলো অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলে ২০১০ সালে স্ট্যান্ডিং অর্ডাস অন ডিসাস্টার্স (এসওডি) সংশোধন: উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভাগ/ সংস্থা/ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১১ অনুমোদন;
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালার খসড়া চূড়ান্তকরণ: বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান; সার্কভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে দুর্যোগ বিষয়ক তথ্য বিশেষভাবে প্রশমন, পূর্বপ্রস্তুতি, জরুরি সাড়াদান, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্যাদি আদান প্রদানের জন্য একটি নেটওয়ার্কভিত্তিক প্লাটফর্ম তৈরীর লক্ষ্যে নয়াদিল্লীতে অবস্থিত সার্ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (SDMC) কর্তৃক "South Asian Disaster Knowledge Network (SADKN)" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ অংশের জন্য "Bangladesh Disaster Knowledge Network (BDKN)" বাস্তবায়নের নিমিত্ত চুক্তি স্বাক্ষর;
বাংলাদেশ Asian Disaster Reduction Centre (ADRC), Regional Integrated Multi-Hazard Early Warning System (RIMES), Asian Ministerial Conference on Disaster Reduction (AMCDR) are INSARAG (International Search and Rescue Advisory Group) এর সদস্যপদ গ্রহণ।
(গ) পরিকল্পনা প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ/ব্যবস্থা: জাপানের কোবেতে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিশ্ব সম্মেলনে গৃহিত "হিউগো ফ্রেমওয়ার্ক ফর এ্যাকশন" এর অংগীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদন।
(ঘ) সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ২০১৫-৩০: ২০১৫ সালের ১৪ থেকে ১৮ মার্চ তারিখে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো জাপানের সেন্দাইতে দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের কৌশল পত্র গ্রহণ করে যা সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ২০১৫-৩০ নামে পরিচিত।
রাষ্ট্রগুলোর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি ও পরিকল্পনা সমন্বিতকরণের মা Disaster Mia এ্যাকশন ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (SAARC Plan of Action for Disaster Management তৈরিতে সহায়তা প্রদানঃ সিলেট সীমান্তে সক্রিয় ডাউকি ফল্ট এর অবস্থান ও টাংগাইলের মধুপুর ফল্ট এর অবস্থান এবং উত্তরপূর্বে সীমান্ত সংলগ্ন ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ানে প্লেট এর সংযোগস্থল হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের আশংকামুক্ত নয়। তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া। রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও টাংগাইলের ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরির কাজ চলমান। ভূমিকম্পসছ দুর্যোগে পরবর্তী অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য জাতীয় সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ঘূর্ণিকড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ, তিতাস, টিএন্ডটি, ওয়াসা এব কন্টিনজেন্সী প্রান প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহরের ৫০টি ওয়ার্ডের রিস্ক প্রোফাইল ও কন্টিনজেন্সি প্লান তৈরী সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের জন্যও কন্টিনজেন্সি প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছাসজনিত বন্যার স্থানভিত্তিক গভীরতার তথ্য নির্ভর ইনআনন্ডেশন ম্যাপ/রিস্ক ম্যাপ ফর স্টর্ম সার্জ তৈরিঃ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা প্রদান; শহরাঞ্চলে ভূমিকম্প মোকাবেলায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন্য সমন্বিত চিকিৎসা সেবা কর্মপরিকল্পনা ও হাসপাতালের অবকাঠামোগত বিপদাপন্নতা নিরুপন সহায়িকা প্রদান: পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় "ক্লাইমেট প্রফিং গাইডলাইন ফর ফিশারিজ এন্ড লাইভস্টক সেক্টর" এবং "ট্রেনিং ম্যানুয়াল অন কোস্টাল জোন ভলনারেবিলিটি টু ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন" প্রস্তুত করণ।
বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিপ্রবণ দেশ। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা অন্যতম। আগাম সর্তকবার্তা দুর্যোগের ঝুঁকি বা ক্ষয় ক্ষতি হ্রাসে অত্যন্ত সহায়ক। দুর্যোগের আগাম বার্তা প্রদানে ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতীতের চেয়ে বর্তমানে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে অনেক হ্রাস পেয়েছে। এ লক্ষ্যে নিম্নে বর্ণিত তিনটি পদ্ধতিতে দুর্যোগে বার্তা প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে;
(ক) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুর্যোগ বার্তা প্রচার পদ্ধতি : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুর্যোগে বার্তা প্রচার পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ অক্ষরবিশিষ্ট বার্তা সাফল্যজনক প্রচার করার পর গ্রামীনফোন নেটওয়ার্ক-এর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন- এর মাধ্যমে ৮০ অক্ষরবিশিষ্ট বার্তা প্রচার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ১২০ অক্ষরবিশিষ্ট বার্তা বাংলাভাষায় প্রচার করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
(খ) Interactive Voice Response: আবহাওয়া ও দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য ও আগাম সতর্কবার্তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য দেশের সকল মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে ইন্টারেকটিভ ভয়েস রেসপন্স (IVR) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন থেকে যে কেউ ১০৯৪১ নম্বরে ডায়াল করে এ সংক্রান্ত updated তথ্যাবলি যে কোন সময় পেতে পারছেন। IVR পদ্ধতিটি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে এগারো কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন গ্রাহক IVR- এর সুবিধা ভোগ করছেন। ২০১৩ সালে IVR-এর মাধ্যমে দুর্যোগ সংক্রান্ত এক লক্ষেরও বেশি অনুসন্ধানের জবাব দেয়া হয়েছে।
(গ) SMS: মোবাইল ক্ষুদ্র বার্তা মন্ত্রণালয়ের (১) দুর্যোগের সকল কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত (২) অভ্যন্তরীণ সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত (৩) গণসচেতনতা এবং প্রচার মাধ্যমের সাথে জড়িত কর্মকর্তাগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সহায়তা করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে যে কোন ক্ষুদ্র বার্তা যে কোন মোবাইল ব্যবহারকারীকে খুব অল্প সময়ে পাঠানো সম্ভব। এই লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছে। ২০১৩ সালে দুর্যোগ বিষয়ক তথ্য স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে পৌঁছে দিতে মোবাইল খুদে বার্তা-র ব্যবহার করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র স্থাপন: দুর্যোগের আগাম বার্তা দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের কাছে সহজে এবং দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোর মাধ্যমে জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায়, যে কোন দুর্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াদান বিশেষতঃ আগাম সতর্ক সংকেত প্রচার সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ সাড়াদান কেন্দ্রগুলো যেমন- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন্যা পূর্বাভাস এবং জিওলোজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইত্যাদি এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার নিমিত্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সিডিএমপির এব সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র (DMIC) স্থাপিত হয়েছে। কেন্দ্রটিতে প্রয়োজনীয় ICT Equipment, Software Develop করা হয়েছে। তবে GIS & Remote Sensing ইত্যাদি প্রযুক্তি সংযোজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেন্দ্রটি হতে দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে ৪৮৫টি উপজেলায় ও সকল জেলায় যথাক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের সাথে Network স্থাপন করা হয়েছে।