বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ (মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি বাংলা সাহিত্য পাঠ

লেখক-পরিচিতি

আধুনিক বাংলা কবিতার অগ্রদূত মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫এ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মাতা জাহ্নবী দেবী। মায়ের তত্ত্বাবধানে গ্রামেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। মধুসূদন ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার হিন্দু কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তি হন। সেখানে ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সাহিত্য-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে । ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে তিনি পিতৃপ্রদত্ত নামের শুরুতে ‘মাইকেল' শব্দ যোগ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁকে হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরের বিশপ্‌স কলেজে ভর্তি হতে হয়। সেখানেই তিনি গ্রিক, লাতিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষার সুযোগ পান। মধুসূদন বহু ভাষায় দক্ষ ছিলেন । ইংরেজি ও সংস্কৃতসহ ফরাসি, জার্মান এবং ইতালীয় ভাষাতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

হিন্দু কলেজে ছাত্রাবস্থায় তাঁর সাহিত্যচর্চার মাধ্যম ছিল ইংরেজি ভাষা। কিন্তু বিদেশি ভাষার মোহ থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মাতৃভাষার কাছে ফিরে আসেন। মধুসূদন-পূর্ব হাজার বছরের বাংলা কবিতার ছন্দ ছিল পয়ার। একটি চরণের শেষে আর একটি চরণের মিল ছিল ওই ছন্দের অনড় প্রথা। মধুসূদন বাংলা কবিতার এ প্রথাকে ভেঙে দিলেন। তাঁর প্রবর্তিত ছন্দকে বলা হয় ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ'। তবে এটি বাংলা অক্ষরবৃত্ত ছন্দেরই নবরূপায়ণ। বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেটেরও প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলা নাটকের উদ্ভবযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার তিনি। আধুনিক নাটক ‘শর্মিষ্ঠা, ‘পদ্মাবতী' ও ‘কৃষ্ণকুমারী এবং প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা?” ও ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলো হলো : 'তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য', ‘মেঘনাদবধ-কাব্য, ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য, ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি' । ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯এ জুন কলকাতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করেন ।

 

মূল কবিতা

 

“এতক্ষণে- অরিন্দম কহিলা বিষাদে-

জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল

 রক্ষঃপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব

 এ কাজ, নিকষা সতী তোমার জননী,

 সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ? শূলিশম্ভুনিভ

 কুম্ভকর্ণ? ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী! 

নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?

 চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?

 কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরু জন তুমি

 পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,

পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,

লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।

উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃথা এ সাধনা,

ধীমান্! রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে

 তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে 

অনুরোধ?” উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-

হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!

 রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে

 আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে ! 

স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে;

 পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি

 ধূলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে

 কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে?

 কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে 

করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে; 

যায় কি সে কভু, প্ৰভু, পঙ্কিল সলিলে,

 শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,

 কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে 

মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,

 অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে ।

 ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ; নহিলে 

অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে? 

কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রথা ?

 নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে

 এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া

 এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে,

 বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি! 

দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ, 

রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কী দেখি 

ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে?

নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগভে পশিল 

দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে । 

তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে

বনবাসী! হে বিধাতঃ, নন্দন-কাননে

 ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্ৰফুল্ল কমলে

 কীটবাস? কহ তাত, সহিব কেমনে 

হেন অপমান আমি,— ভ্রাতৃ-পুত্র তব?

 তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?”

 মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশিরঃ ফণী, 

মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী

রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;

নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে 

তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা 

এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি! 

বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে 

পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি 

বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে !

 রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী 

তেঁই আমি । পরদোষে কে চাহে মজিতে?”

 রুষিলা বাসবত্রাস। গম্ভীরে যেমতি 

নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্ৰ কোপি, 

কহিলা বীরেন্দ্র বলী,—“ধর্মপথগামী, 

হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে 

তুমি; – কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,

 জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,—এ সকলে দিলা 

জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি 

পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি 

নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা! 

এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে? 

কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,

 হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে ? 

গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি। 

[নির্বাচিত অংশ]

 

শব্দার্থ টীকা

 

বিভীষণ - রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর। রাম-রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী। রামের ভক্তি।

এতক্ষণে’– অরিন্দম কহিলা - রুদ্ধদ্বার নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ যে পথপ্রদর্শক বিভীষণ, তা অনুধাবন করে বিস্মিত ও বিপন্ন মেঘনাদের প্রতিক্রিয়া ।

অরিন্দম - অরি বা শত্রুকে দমন করে যে। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।

পশিল - প্রবেশ করল।

রক্ষঃপুরে - রাক্ষসদের পুরীতে বা নগরে। এখানে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ।

রক্ষঃশ্রেষ্ঠ - রাক্ষসকুলের শ্রেষ্ঠ, রাবণ

তাত -  পিতা। এখানে পিতৃব্য বা চাচা অর্থে ।

নিকষা - রাবণের মা।

শূলীশম্ভুনিভ -  শূলপাণি মহাদেবের মতো ।

কুম্ভকৰ্ণ - রাবণের মধ্যম সহোদর ।

বাসববিজয়ী - দেবতাদের রাজা ইন্দ্ৰ বা বাসবকে জয় করেছে যে। এখানে মেঘনাদ । একই কারণে মেঘনাদের অপর নাম ইন্দ্রজিৎ ।

তস্কর - চোর । 

গঞ্জি - তিরস্কার করি ।

রামানুজ - রাম+অনুজ = রামানুজ। এখানে রামের অনুজ লক্ষ্মণকে বোঝানো

হয়েছে। 

শমন-ভবনে - যমালয়ে ।

ভঞ্জিব আহবে - যুদ্ধদ্বারা বিনষ্ট করব ।

আহবে - যুদ্ধে।

ধীমান্ - ধীসম্পন্ন। জ্ঞানী।

রাঘব  - রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান । এখানে রামচন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে ।

রাঘবদাস - রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ ।

রাবণি - রাবণের পুত্র। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।

স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে - বিধাতা চাঁদকে নিশ্চল আকাশে স্থাপন করেছেন।

বিধু - চাঁদ।

স্থাণু - নিশ্চল।

রক্ষোরথী - রক্ষকুলের বীর।

রথী - রথচালক। রথচালনার মাধ্যমে যুদ্ধ করে যে।

শৈবালদলের ধাম - পুকুর। বদ্ধ জলাশয় ।

শৈবাল - শেওলা ।

মৃগেন্দ্র কেশরী - কেশরযুক্ত পশুরাজ সিংহ ।

মৃগেন্দ্ৰ - পশুরাজ সিংহ ।

কেশরী - কেশরযুক্ত প্রাণী । সিংহ।

মহারথী - মহাবীর। শ্রেষ্ঠ বীর।

মহারথীপ্রথা - শ্রেষ্ঠ বীরদের আচরণ-প্রথা ।

সৌমিত্রি - লক্ষ্মণ । সুমিত্রার গর্ভজাত সন্তান বলে লক্ষ্মণের অপর নাম সৌমিত্রি।

নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার - লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থান। এখানে যজ্ঞ করে মেঘনাদ যুদ্ধে যেত। ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে নিরস্ত্র মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা বৈশ্বানর বা অগ্নিদেবের পূজারত অবস্থায় লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে নিহত হয় ৷ 

প্রগল্‌ভে - নিৰ্ভীক চিত্তে ।

দম্ভী - দম্ভ করে যে। দাম্ভিক। 

নন্দন কানন - স্বর্গের উদ্যান।

মহামন্ত্র বলে যথা নম্রশিরঃ ফণী - মন্ত্রপূত সাপ যেমন মাথা নত করে।

লক্ষি - লক্ষ করে।

ভর্ৎস - ভর্ৎসনা বা তিরস্কার করছ।

মজাইলা - বিপদগ্রস্ত করলে ।

বসুধা - পৃথিবী ।

তেঁই - তজ্জন্য । সেহেতু।

রুষিলা - রাগান্বিত হলো ৷

বাসবত্রাস - বাসবের ভয়ের কারণ যে মেঘনাদ ।

মন্ত্র - শব্দ। ধ্বনি।

জীমূতেন্দ্ৰ - মেঘের ডাক বা আওয়াজ ।

বলী - বলবান। বীর।

জলাঞ্জলি - সম্পূর্ণ পরিত্যাগ।

শাস্ত্রে বলে, পরঃ পরঃ সদা! - শাস্ত্রমতে গুণহীন হলেও নির্গুণ স্বজনই শ্রেয়, কেননা গুণবান হলেও পর সর্বদা পরই থেকে যায় ৷

নীচ - হীন। নিকৃষ্ট। ইতর।

দুর্মতি - অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি ।

 

পাঠ-পরিচিতি

 

“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাদবধ-কাব্যে-র ‘বধো' (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। সর্বমোট নয়টি সর্গে বিন্যস্ত ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে'র ষষ্ঠ সর্গে লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসী বীর মেঘনাদের। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন। যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। মায়া দেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়, লক্ষ্মণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশে সমর্থ হয়। কপট লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশ যে মায়াবলে সম্পন্ন হয়েছে, বুঝতে বিলম্ব ঘটে না তার। ইতোমধ্যে লক্ষ্মণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করে লক্ষ্মণের কাছে। কিন্তু লক্ষ্মণ তাকে সময় না দিয়ে আক্রমণ করে। এ সময়ই অকস্মাৎ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারের দিকে চোখ পড়ে মেঘনাদের; দেখতে পায় বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণকে মুহূর্তে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। খুল্লতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেই নাটকীয় ভাষ্যই “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ অংশে সংকলিত হয়েছে। এ অংশে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা। জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরুত্বের কথা যেমন এখানে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বলে ।

উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাল্মীকি-রামায়ণকে নবমূল্য দান করেছেন এ কাব্যে। মানবকেন্দ্রিকতাই রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সারকথা। ওই নবজাগরণের প্রেরণাতেই রামায়ণের রাম-লক্ষ্মণ মধুসূদনের লেখনীতে হীনরূপে এবং রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত। দেবতাদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত রাম-লক্ষ্মণ নয়, পুরাণের রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদের প্রতিই মধুসূদনের মমতা ও শ্রদ্ধা ।

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কাব্যাংশটি ১৪ মাত্রার অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পক্তির চরণান্তের মিলহীনতার কারণে এ ছন্দ ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ' নামে সমধিক পরিচিত। এ কাব্যাংশের প্রতিটি পক্তি ১৪ মাত্রায় এবং ৮ + ৬ মাত্রার দুটি পর্বে বিন্যস্ত। লক্ষ করার বিষয় যে, এখানে দুই পঙ্ক্তির চরণান্তিক মিলই কেবল পরিহার করা হয়নি, যতিপাত বা বিরামচিহ্নের স্বাধীন ব্যবহারও হয়েছে বিষয় বা বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে। এ কারণে ভাবপ্রকাশের প্রবহমানতাও কাব্যাংশটির ছন্দের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।

 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

 

১. শমন-ভবন কী?

 

ক. দেবালয়

খ. যমালয়

গ. যজ্ঞাগার

ঘ. বাসবালয়

 

২. 'হায় তাত উচিত কি তব এ কাজ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

 

ক. কুম্ভকর্ণের সহায়তা

খ. লক্ষ্মণের প্রবেশ

গ. বিভীষণের সহায়তা

ঘ. রামচন্দ্রের আজা

 

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।

 

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউল একটি সফল অপারেশনের পর তারাপুর গ্রামে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পার্শ্ববর্তী গ্রামের রাজাকার ইদ্রিস তথ্যটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে জানিয়ে দিল। হানাদার বাহিনী এসে কমান্ডার মতিউলকে মেরে ফেলে। মতিউল প্রতিরোধের সুযোগ পর্যন্ত পেলেন না।

 

৩. উদ্দীপকের ইদ্রিস চরিত্রটি "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ' কবিতার কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে?

 

ক. কুম্ভকর্ণের

খ. বিভীষণের

গ. লক্ষ্মণের

ঘ. রামের

 

৪. উক্ত চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ চরণগুলো হলো-

 

i. নিজ গৃহপথ, তাত দেখাও তস্করে?

ii. রাঘব দাস আমি; কী প্রকারে/তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব।

iii. গতি যাই নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।

 

নিচের কোনটি ঠিক?

 

ক. i ও ii

খ. ii ও iii

গ. i ও iii

ঘ. i , ii ও iii

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

 

শপথ নিয়েও পলাশির প্রান্তরে প্রধান সেনাপতি মির জাফর যুদ্ধে অংশ নেননি। রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, জগৎশেঠ যুদ্ধে অসহযোগিতা করেছেন। মোহনলাল ও মিরমর্দান বিশ্বাসঘাতক হননি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছেন। মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছে।

 

ক. কাকে রাবণি বলা হয়েছে?

খ. 'প্রফুল্ল কমলে কীটবাস' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকটি "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ" কবিতার সঙ্গে যে দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটি "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ" কবিতার আংশিক রূপায়ণ মাত্র- মূল্যায়ন কর।