ব্যাকটেরিয়া | Bacteria
ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব। ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রথম অণুজীব। ১৬৭৫ সালে এ্যান্টনি ভ্যন লিউয়েন হুক প্রথম ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। জীবজগতে এরা সর্বাপেক্ষা সরল, ক্ষুদ্রতম। ১টি ব্যাকটেরিয়া ১টি কোষ দ্বারা গঠিত। ব্যাকটেরিয়া মাটি, জল,আম্লিক উষ্ণ ঝরনা,তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং ভূত্বকের গভীর জীবমণ্ডলে বাস করে। ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদ ও প্রাণীর সাথে মিথোজীবী ও পরজীবী সংসর্গেও বাস করে। বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া এখন ও চিহ্নিত হয়নি । মাইক্রোবায়োলজির যে শাখায় ব্যাকটেরিয়া নিয়ে অধ্যয়ন করা হয় তাকে ব্যাকটেরিওলজি বলে।
Table of
Content
·
কারভেদ
·
ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব
·
ব্যবহার
প্রকারভেদ
ব্যাকটেরিয়া কোষ গোলাকার, দণ্ডাকার, কমা আকার, প্যাঁচানো ইত্যাদি নানা ধরণের হতে পারে। দেহের আকার আকৃতির ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়া সাত প্রকার ৷ যথা:
·
ক) কক্কাস : কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া কোষের আকৃতি গোলাকার। এরা কক্কাস ব্যাকটেরিয়া। এরা এককভাবে অথবা দলবেঁধে থাকতে পারে, যেমন- নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।
·
খ) ব্যাসিলাস : এরা দেখতে লম্বা দণ্ডের ন্যায়। ধনুষ্টংকার, রক্তামাশয় ইত্যাদি রোগ এরা সৃষ্টি করে।
·
গ) কমা : এরা বাঁকা দণ্ডের ন্যায় আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। মানুষের কলেরা রোগের ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের।
·
ঘ) স্পাইরিলাম: এ ধরণের ব্যাকটোরিয়ার আকৃতি প্যাচানো।
·
ঙ) স্টিলেট বা তারকাকার : এরা দেখতে অনেকটা তারার ন্যায় ।
·
চ) বর্গাকৃতির : এদের গঠন চার বাহুবিশিষ্ট ।
·
ছ) বহুরূপী : এরা সুনির্দিষ্ট আকার বিহীন ।
রঞ্জনের ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়া দুই প্রকার ৷ যথা:
·
ক) গ্রাম পজিটিভ : যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্টাল ভায়োলেট রং ধরে রাখে সে সমস্ত ব্যাকটেরিয়াকে গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া বলে ।
·
খ) গ্রাম নেগেটিভ : যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্টাল ভায়োলেট রং ধরে ধরে রাখতে পারে না সে সমস্ত ব্যাকটেরিয়াকে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বলে ।
ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য
·
এরা এককোষীয় এবং আণুবীক্ষণিক ।
·
এরা আদিকোষ/ প্রাককেন্দ্রিক (Prokaryotic).
·
এরা পরজীবী, মৃতজীবী বা স্বনির্ভর হতে পারে।
·
সাধারণত দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় এরা বংশ বৃদ্ধি করে।
·
ফায ভাইরাসের প্রতি এরা খুবই সংবেদনশীল ।
·
এদের অধিকাংশই খনিজ লবণ জারিত করে শক্তি সংগ্রহ করে ।
·
কতক ব্যাকটেরিয়া অবায়বীয় অর্থাৎ অক্সিজেন থাকলে বাঁচতে পারে না। কতক সুবিধাবাদী অবায়বীয় অর্থাৎ অক্সিজেনের উপস্থিতিতেও বাঁচতে পারে । কতক বাধ্যতামূলক বায়বীয় অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না ।
·
ব্যাকটেরিয়া প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এন্ডোস্পোর বা অন্তরেণু গঠন করে । এ অবস্থায় এরা ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে ।
·
মানুষের দেহে যতগুলো কোষ আছে, এর থেকে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ১০-১০০ গুণ বেশি
·
যেসব অণুজীব রোগ সৃষ্টি করে তাদের বলা হয় প্যাথজোনিক।
·
প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া: যে সকল ব্যাকরেটিয়া রোগ সৃষ্টি করে, তাদেরকে প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বলা হয়।
·
অ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়া: যে সকল ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া বাচতে পারে না, তাদের অ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়া বলে।
·
অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া: যে সকল ব্যক্টেরিয়া বায়ুর উপস্থিতি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে, তাদের অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া বলে।
·
ফেকালটেটিভ ব্যাকটেরিয়া: যে সকল ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কিন্তু অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়াও বাঁচতে পারে, তাদের ফ্যাকালটেটিভ ব্যাকটেরিয়া বলে।
·
প্রাণিদেহে জীবাণুজাত বিষ নিষ্ক্রিয়কারী রাসায়নিক পদার্থের নাম অ্যান্টিবডি।
·
নিষ্পিষ্ট মসলায় লবণ মিশিয়ে অনেকদিন রাখা যায় কেন: লবণ পচনকারী জীবাণুর বংশ বিস্তার রোধ করে।
ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব
1.
চামড়া শিল্পে: চামড়া থেকে লোম ছাড়ানোর কাজে Bacillus-এর বিভিন্ন প্রজাতি ব্যবহৃত হয়।
2.
দুগ্ধ শিল্পে: যেমন দুধ থেকে দই তৈরি করে থাকে Lactobacillus এবং Streptococcus নামক ব্যাকটেরিয়া।
3.
অ্যালকোহল ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
4.
অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে: যেমন- Bacillus subtlis থেকে সাবটিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়।
5.
ভ্যাক্সিন তৈরি: B.C.G., D.PT. টিটেনাস টক্সয়েড (TT) ইত্যাদি ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
6.
ইনসুলিন তৈরিতে: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে ইনসুলিন অল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
7.
বায়োগ্যাস উৎপাদনে: ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতায় আবর্জনা ও গোবর থেকে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয়।
8.
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (M.S.G.) বা টেস্টিং সল্ট তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
9.
পাট গাছ থেকে আঁশ ছাড়ানো: পাট গাছ থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। পাট গাছ থেকে এ আঁশ সংগ্রহে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাটের আঁশ সংগ্রহ করতে সাহায্য করে Clostridium pectinovorum
নামক ব্যাকটেরিয়া ।
10.
ব্যাকটেরিয়া জীন প্রকৌশলের মূল ভিত্তি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবের কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য পাওয়ার জন্য জীনগত পরিবর্তনের কাজে ব্যাকটেরিয়াকে ব্যবহার করা হয় ।
11.
একমাত্র ব্যাকটেরিয়াই প্রকৃতি থেকে মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে।
12.
মৃত জীবদেহ ও আর্বজনা পঁচাতে ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে।
ব্যবহার
·
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরীতে : ব্যাকটেরিয়া হতে সাবটিলিন, পলিমিক্সিন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয় ।
·
ব্যাকটেরিয়া হতে যেসব প্রতিষেধক/ টীকা /ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়:
·
প্রতিষেধক |
·
রোগ |
ভ্যাকসিনের নাম |
যক্ষ্মা |
B.C.G |
ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, হেপাটাইটিস-বি, Haemophylus
influenzae ঘটিত মেনিনজাইটিস |
Pentavaccine |
ধনুষ্টংকার |
T.T |
টাইফয়েড |
টাইফয়েড ভ্যাকসিন |
Polio |
Polio |
·
Oral Polio Vaccine কোন ধরনের: Live attenuated, Subunit ও Toxoid.
·
যক্ষ্মার টিকা: যক্ষ্মা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে দেয়া হয় বিসিজি (Bacillus Calmatte
Guerin) টিকা। অন্যদিকে ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি ও টিটেনাসের প্রতিষেধক হিসেবে ডিপিটি (DPT) টিকা দেয়া হয়। আর টিটি (Tetanus Toxoid) প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয় টিটেনাস রোগ থেকে রক্ষার জন্য।
·
ইপিআই কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগের সংখ্যা বর্তমানে ১০টি যথা: যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস বি, পোলিও মাইলাইটিস, হাম, নিউমোনিয়া, রুবেলা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি (২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী)। নিউমোনিয়া ও রুবেলা ২০১০ থেকে শুরু হয়েছে।
·
আমাদের অগ্রে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে: Escherichia coli.
·
চা, তামাক, কফি প্রক্রিয়াকরণে কোন অণুজীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে: ব্যাকটেরিয়া।
·
পাট হতে আশ ছড়াতে, চামড়া হতে লোম ছড়াতে, দুধ হতে মাখন, দই, পনির তৈরিতে কোন অণুজীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে: ব্যাকটেরিয়া।
·
সমুদ্রের পানিতে ভাসমান তেল কিভাবে অপসারণ করা হয়: তেল খাদক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে।
·
কোন ব্যাকটেরিয়া ভিনেগার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়: Acetobacter xylinum
·
কোন ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটিক এসিড প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়: Bacillus lacticacidi
·
কোন ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিটোন প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়: Clostridium
acetobutylicum
·
নাইট্রোজেন নিয়ে নাইট্রোজেন যৌগ গঠন করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে: Azotobacter, Pseudomonas,
Clostridium.
·
শীম জাতীয় উদ্ভিদে কোন ধরণের ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেনকে নাইট্রেটে পরিণত করে: Rhizobium
ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টরোগ
·
ব্যাকটেরিয়া প্রাণিদেহে কি কি রোগ সৃষ্টি করে: গরু মহিষের যক্ষ্মা, ভেড়ার অ্যানথ্রাক্স, ইদুরের প্লেগ এবং মুরগীর কলেরা রোগ ইত্যাদি।
·
ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের কি কি রোগ সৃষ্টি করে: গমের টুন্ডুরোগ, ধানের ব্রাইট, আখের আঠাঝড়া রোগ, টম্যাটোর ক্যাংকার, আলুর পচা রোগ, ভূট্টার বোটা পচা রোগ ইত্যাদি।
·
ব্যাকটেরিয়া মানুষের কি কি রোগ সৃষ্টি করে:
·
রোগ |
ব্যাকটেরিয়া |
রোগ বিস্তারের মাধ্যম |
যক্ষ্মা |
Mycobacterium
tuberculosis |
বায়ু |
নিউমোনিয়া |
Streptococcus
pneumoniae |
বায়ু |
ডিপথেরিয়া |
Corynebacterium
diptheriae |
বায়ু |
হুপিংকাশি |
Bordetella pertussis |
বায়ু |
মেনিনজাইটিস |
Neisseria
meningitidis |
বায়ু |
গনোরিয়া |
Neisseria
gonorrhoeae |
যৌন |
সিফিলিস |
Treponema pallidum |
যৌন |
টাইফয়েড |
Salmonella typhi |
খাদ্য, পানি |
প্যারাটাইফয়েড |
Salmonella paratyphi |
খাদ্য, পানি |
কলেরা |
Vibrio cholerae |
খাদ্য, পানি |
রক্ত আমাশয় |
Shigella dysenteriae |
খাদ্য, পানি |
কুষ্ঠ / লেপ্রোসি |
Mycobacterium leprae |
দীর্ঘদিন রোগীর সংস্পর্শে |
ধনুস্টংকার |
Clostirdium tetani |
ক্ষতস্থান দিয়ে |
প্লেগ |
Yersenia pestis |
ইঁদুর |
Leishmaniasis (কালাজ্বর) |
||
Pertusis(হুপিংকফ) |
||
Tuberculosis |
·
নিউমোনিয়া: ফুসফুসের প্রদাহকে নিউমোনিয়া বলে।
নিউমোনিয়ার কারণ:
ক) ব্যাকটেরিয়া: স্টেপটোকক্কাস, স্টেফাইলোকক্কাস ইত্যাদি।
খ) ভাইরাস: ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি।
গ) কৃমি: গোলকৃমি।
·
ডিপথেরিয়া রোগে দেহের কোন অংশ আক্রান্ত হয়: গলা।
·
কুষ্ঠরোগের লক্ষণ: ত্বকে বিশেষ ধরনের ক্ষতে ব্যথাহীনতা।
·
নানা প্রকার টাটকা ও সংরক্ষিত খাদ্য দ্রব্যের পচন ঘটায়: ব্যাকটেরিয়া।
·
দুধ দহনের পর বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা টক হয়ে যায় কেন: দুধের ল্যাক্টোজ থাকে। দুধের ব্যাক্টোরিয়া ল্যাক্টোজকে ল্যাকটিক এসিডে পরিণত করে। ফলে দুধ টক হয়।
লাইভ ভ্যাকসিন:
১. হাম/মিসেল্স
২. মাম্পস
৩. রুবেলা
৪. যক্ষা (টিউবারকুলোসিস/ টিবি)
৫. টাইফয়েড
৬. ভ্যারিসেলা (বসন্ত)
৭. পোলিও
৮. ইয়োলো ফিভার / পীত জ্বর
৯. ইনফ্লুয়েঞ্জা
রক্ত আমাশয়ের জীবাণুর নাম: রক্ত আমাশয়ের প্রধান কারণ হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যার নাম শিগেলা যা দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ হলো-পেটে তীব্র মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, অল্প অল্প করে বার বার পায়খানা, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া এবং মলদ্বারে তীব্র ব্যাথা হওয়া।
পাস্তুরায়ন: দুধকে জীবানুমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে পাস্তুরায়ন বলে। এ প্রক্রিয়ায় দুধকে ৩ মিনিট ধরে ১৪০০-১৫০° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে হঠাৎ ৫০° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় নামিয়ে আনলে দুধ জীবাণুমুক্ত হয়। তাপমাত্রা ৫০° সেলসিয়াস এর নিচে রাখলে অন্তত দুদিন দুধ ভাল থাকে। ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর এ প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারকের নামানুসারে এ পদ্ধতির নামকরণ করা হয়েছে 'পাস্তুরায়ন'।
ভাইরাস | Virus
ভাইরাস, রিকেটস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের অণুজীব আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা অধিকাংশই আমাদের উপকার করে। তবে কিছু কিছু অণুজীব আছে যারা আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে। তেমনি একটা অণুজীব ভাইরাস সম্পর্কে আজকে আমরা জানব । ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ । যার অর্থ বিষ। ১৮৯২ সালে ভাইরাস আবিষ্কার করেন - রুশ জীবাণুবিদ আইভানোভস্কি। প্রাণীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভাইরাস - Herpes virus এবং সবচেয়ে ছোট ভাইরাস - Polio virus । ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসদেরকে দেখা যায় না। এরা সরলতম জীব। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, প্লাজমালেমা, সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছুই নেই। ভাইরাসের নিজস্ব কোনো বিপাকীয় এনজাইম নেই। তাই ভাইরাস দেহকে অকোষীয়ও বলা হয়। এরা শুধুমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক এসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত। এদের আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক এসিড বের হয়ে গেলে এরা জীবনের সকল লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবদেহে যেইমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক এসিডকে একত্র করা হয়, তখনি এরা জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এরা জীবনের কোন লক্ষণ দেখায় না। এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবি। ভাইরাসদের মধ্যে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস একটি পরিচিত ভাইরাস। ভাইরাস গোলাকার, দণ্ডাকার, ব্যাঙাচির ন্যায় ও পাউরুটির ন্যায় হতে পারে। ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। বসন্ত, হাম, সর্দি ইত্যাদি বায়ুবাহিত রোগ। ধানের টুংরো ও তামাকের মোজায়েক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়। যে সকল প্রাণী এক মানবদেহ থেকে অন্য মানবদেহে রোগ জীবাণু বহন করে, তাকে ভেক্টর বলে ।
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
·
ভাইরাস হল অতি আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রাসায়নিক বস্তু যা প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড দ্বারা গঠিত।
·
পোষক দেহের অত্যন্তরে সক্রিয় হয় এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে। পোষক দেহের বাহিরে জড় পদার্থের ন্যায় অবস্থান করে।
·
ভাইরাসকে জীব ও জড়ের যোগসূত্র স্থাপনকারী বলা হয় কারণ ভাইরাসে জীব ও জড় উভয়ের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
·
এতে DNA বা RNA আছে।
·
জীব কোষের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
·
পরিব্যক্তি দেখা যায়।
·
জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটতে দেখা যায় ।
·
কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লী, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস, সজীব অঙ্গাণু ও বিপাকীয় এনজাইম নেই। তাই এটি অকোষীয় রাসায়নিক বস্তু।
·
জৈবনিক কার্যকলাপ সজীব কোষের বাহিরে হতে পারে না।
·
ব্যাকটেরিওফাজ: এক ধরনের ভাইরাস যা ব্যাক্টরিয়ার দেহে পরজীবী হিসাবে বাস করে।
ভাইরাস ঘটিত রোগ
ভাইরাস উদ্ভিদের দেহে যেসব রোগ তৈরি করে:
·
তামাক, শিম, পাট, পেঁপের মোজাইক রোগ
·
ধানের ডোয়ার্ফ বা বামন
·
ধানের টুংগো রোগ
·
টমেটোর বুশিস্ট্যান্ড রোগ
·
কলার বানচি টপ রোগ
ভাইরাস প্রাণিদেহে যেসব রোগ তৈরি করে:
গরু, ভেড়া, ছাগল, শুকুর মহিষের পা ও মুখের ঘা, গরুর বসন্ত রোগ তৈরি করে। এছাড়া মুরগীর রাণীক্ষেত, কুকুরের জলাতংক, গবাদিপশুর ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ ।
ভাইরাস মানবদেহে যেসব রোগ তৈরি করে:
·
বসন্ত : বসন্তরোগ দু'ধরনের - জলবসন্ত (Chicken Pox) ও গুটি বসন্ত- (Small Pox)। উভয় রোগই ভাইরাসের কারণে হয়
·
গুটি বসন্ত : Varicella Zoster ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় - জলবসন্ত।
·
জল বসন্ত : Variola Virus এর কারণে সৃষ্টি হয়- গুটি বসন্ত (Small Pox)।
·
জন্ডিস (হেপাটাইটিস)
·
জলাতঙ্ক : জলাতঙ্ক (Rabies) হল ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ (অর্থাৎ যে রোগ টি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়)। র্যাবিস ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়। র্যাবিস ভাইরাসকে স্ট্রিট ভাইরাস ও (Street virus) বলা হয় । এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে। কুকুর, সিংহ, বাঘ, বেজি, শিয়াল, বিড়াল ইত্যাদির কামড় থেকে জলাতঙ্ক হতে পারে । জলাতঙ্কের টিকা ও রোগজীবাণুতত্ত্ব আবিষ্কার করেন - লুইপাস্তর।
·
এইডস
·
সার্স : SARS এর পূর্ণরুপ -Severe Acute
Respiratory Syndrome. এটি হংকং ভাইরাস নামে পরিচিত ।
·
পোলিও : পোলিও ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় পোলিও রোগ। পোলিও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে দূষিত খাদ্য ও পানি দ্বারা । ১৯৫৪ সালে পোলিও ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করেন- যুক্তরাষ্ট্রের জেনাস সক।
·
হাম : রুবেলা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় হাম। হাম একটি বায়ুবাহিত রোগ। হাম (Measles) হলো লাইভ ভ্যাক্সিন (live vaccine)।
·
হার্পিস : হার্পিস ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ হার্পিস রোগ।
·
মাম্পস : প্যারামিক্সো ভাইরাস ফ্যামিলির ভাইরাসের কারণে মাম্পস হয়। মাম্পস হলো ভাইরাসজনিত প্যারোটিড নামের লালাগ্রন্থির প্রদাহ। এটি অত্যন্ত সংক্রামক (ছোঁয়াচে)। হাঁচি-কাশির (ড্রপলেট) মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এর ফলে জ্বর, মাথা ব্যথার সঙ্গে কানের সামনে ও নিচে বা চোয়ালের ওপরে দুই পাশে লালাগ্রন্থি ফুলে যায়, খাবার গিলতে বা চিবাতে ব্যথা হতে পারে।
·
চিকুনগুনিয়া : চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। প্রধানত Aedes aegypti ও Aedes albopictus মশকীর কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। মানবদেহ থেকে মশা ও মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
·
ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) : ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমিত হয় বায়ুর মাধ্যমে ।
·
ডেঙ্গু : ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গি ভাইরাস । এটি ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবার ও ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত এক ধরনের আরএনএ(RNA) ভাইরাস। এ কারণে এটি ফ্ল্যাভি ভাইরাস নামে ও পরিচিত । ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্ল্যাভি ভাইরাসের বাহক এডিস (Aedes aegypti) নামক মশকী। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হলো উচ্চজ্বর, পেশী, হাড় ও মাথা ব্যথা, র্যাশ, শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে রক্তপাত হতে পারে। এ রোগে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। Aedes aegypti ( এডিস মশা ) পীতজ্বরের জীবাণুও বহন করে। একই মশা ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক। এছাড়া কিউলেক্স মশা ফাইলেরিয়া ; অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে।
·
পীতজ্বর : ইয়েলো ফিভার ভাইরাসের (Yellow Fever Virus) কারণে সৃষ্ট রোগ পীতজ্বর।
·
ভাইরাল ডায়রিয়া
·
চোখ ওঠা : এটি ও ভাইরাস জনিত রোগ ।
·
সাধারণ ঠান্ডা
·
কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ১৯) : করোনা ভাইরাস হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতর বংশবৃদ্ধি করতে পারে। COVID-19 হলো একটি RNA virus.
·
কয়েক প্রকার ক্যান্সার যেমন- সার্ভিকাল ক্যান্সার , কাপোসি সারকোমা
ভাইরাস ঘটিত পশু-পাখির রোগ :
·
বার্ড-ফ্লু : Avian Influenza ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় - হাঁস মুরগির বার্ড ফ্লু।
·
ক্যানাইন ডিস্টেম্পার
·
ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিসিজ
ভাইরাস আমাদের যেসব উপকারে লাগে:
·
টীকা তৈরিঃ বসন্ত, পোলিও, জলাতঙ্ক, জন্ডিস রোগের টীকা ভাইরাস হতে তৈরি করা হয়।
·
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যাক্টেরিওফাজ ব্যবহৃত করা হয়।
·
জেনেটিক প্রকৌশলে বাহক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
AIDS
AIDS কবে প্রথম ধরা পড়ে: ১৯৮১ সালের ৫ জুন আমেরিকার জর্জি রাজ্যের আটলান্টার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল সর্বপথম এইডস আবিষ্কার করেন।
·
AIDS এর পূর্ণরূপ: Acquired
Immuno Deficiency syndrome.
·
AIDS এর জন্য কোন ভাইরাস দায়ী: HIV ভাইরাস (Human Immunodeficiency
Virus).
কোন রোগে শরীরের ইমিউনিটি (immunity) নষ্ট হয়: AIDS এর জন্য দায়ী ভাইরাস HIV ভাইরাস (Human Immunodeficiency
Virus). যা মানবদেহের শ্বেতকণিকার ম্যাক্রোফায এবং T-cell লিম্ফোসাইটকে আক্রমণ ও ধ্বংস করে। এর ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (immunity) একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।
AIDS কিভাবে ছড়ায়: এইডস্ প্রধানত তিন ভাবে ছড়ায়ঃ
·
HIV+ve রোগীর রক্ত কোন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে। যেমনঃ এইডস রোগীর রক্তগ্রহণ, এইডস রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার করা ইত্যাদি।
·
HIV+ve রোগীর সাথে যৌন সংগম।
·
HIV+ve মায়ের কাছ থেকে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এইডস ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এইচআইভি (HIV) সংক্রমণের সর্বশেষ পর্যায়। এ ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দেয় ফলে রোগীর একমাত্র পরিণতি মৃত্যু।
·
৫ জুন ১৯৮১ বিশ্বের প্রথম এইডস রোগী চিহ্নিত করা হয় - যুক্তরাষ্ট্রে।
·
বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী চিহ্নিত করা হয়-১৯৮৯ সালে।
·
HIV এইডস আক্রমণ ও ধ্বংস করে- শ্বেত রক্তকণিকার ম্যাক্রোফাজ এবং T-Cell লিম্ফোসাইটকে।
·
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই আক্রান্ত হতে পারে- নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়ায়।
·
পেনিসিলিন, বা অন্য কোনো ওষুধ দ্বারা সারানো সম্ভব নয় - এইডস।
·
এইডস চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা কার্যকর ঔষধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় লোকের মৃত্যু অবধারিত বলে এটি ঘাতক ব্যাধি নামে পরিচিত।
·
মানবদেহে HIV ভাইরাস প্রবেশ করার পর শরীরে এইডস-এর লক্ষণ প্রকাশ পায় - ৬ মাস থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
·
এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই।
·
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তার লক্ষণগুলো হলো- শরীরের ওজন অতি কত দ্রুত হ্রাস পায়। দীর্ঘদিন (২ মাসেরও বেশি সময়) ধরে পাতলা পায়খানা: পুনঃপুন জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া; অতিরিক্ত অবসাদ অনুভব করা; শুকনা কাশি হওয়া।
·
মানবদেহে HIV বেশি থাকে- রক্ত, বীর্য ও বুকের দুধে ।
·
AIDS রোগী মৃত্যুর কারণ কি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বলে বিভিন্ন রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। এতেই রোগীর মৃত্যু হয়।
জন্ডিস বা হেপাটাইটিস
এটি আসলে কোন রোগ নয় , এটি রোগের লক্ষণ মাত্র । হেপাটাইটিস A, B, C, D ও E ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগীর লিভার বড় হয় ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেরোসিস হয়ে যায়। একে হেপাটাইটিস রোগ বলে। এ রোগের ফলে রোগীর প্রস্রাব চোখের সাদা অংশের রঙ হলদে হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে জন্ডিস বলে।
·
জন্ডিস বা হেপাটাইটিস এর কারণ: Hepatitis A, B, C, D, E
virus.
·
হেপাটাইটিস- A, B,
C, D, E এর মধ্যে শুধু হেপাটাইটিস B-ই হলো DNA ভাইরাস আর অন্যগুলো RNA ভাইরাস।
·
কোন হেপাটাইটিস ভাইরাস গর্ভবতী মহিলাদের হেপাটাইটিস এর জন্য দায়ী: Hepatitis E.
·
হেপাটাইটিস ভাইরাস বেশি খারাপ: হেপাটাইটিস B, C (chronic hepatitis) এর জন্য দায়ী।
·
খাদ্য, পানির মাধ্যমে ছড়ায় কোন Hepatitis ভাইরাস: Hepatitis A, E.
·
রক্ত ও যৌন সংগমের মাধ্যমে ছড়ায় কোন Hepatitis ভাইরাস: Hepatitis B, C, D.
·
Chronic Hepatitis হলে ক্ষতি হয়: লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।
আরো কয়েকটি ভাইরাস
সোয়াইন ফ্লু : সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সোয়াইন ফ্লু শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। H₁N₁ এবং H5N₁ ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় সোয়াইন ফ্লু রোগ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় মানুষ ও শুকুর।
নিপাহ ভাইরাস : নিপা ভাইরাসকে বলে জুনটিক ভাইরাস, অর্থাৎ পশুর থেকে মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসের বাহক বলা হয় বাদুড়কে। ফ্লাইং ফক্স (বৈজ্ঞানিক নাম পিটারোপাস মিডিয়াস) নামে এক ফলভোজী বাদুড় এই ভাইরাসের বাহক। বাদুড় থেকে কুকুর, বিড়াল, ছাগল, ঘোড়া বা ভেড়ার শরীরের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আক্রান্ত পশুদের দেহের অবশিষ্টাংশ, বা মলমূত্র থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
জিকা ভাইরাস : জিকা ভাইরাস ( ইংরেজি Zika virus) হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবারের ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি RNA ভাইরাস। এটি আসলে সংক্রামক নয়। মূলত ২ ধরনের এডিস মশা Aedes aegypti ও Aedes albopictus দিয়ে এই ভাইরাস ছড়ায়। জিকা ভাইরাসের নামকরণ করা হয় উগান্ডার জিকা বনের নামানুসারে। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম আবিষ্কৃত হয়।
ইবোলা ভাইরাস : এ ভাইরাসের নামকরণ করা হয়- ইবোলা নদীর নাম অনুসারে। এ ভাইরাস প্রথম দেখা দেয়- গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (১৯৭৬ সালে)। ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কার করেন বেলজিয়ামের চিকিৎসক ডা. পিটার কিয়োট (২৭ বছর বয়সে)। সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহতম ভাইরাস হলো ইবোলা। কঙ্গোর ইবোলা নদী এর উৎপত্তিস্থল হলেও মধ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশ লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়ায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় যাদের মধ্য থেকে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইবোলা নদীর নাম অনুসারে ইবোলা ভাইরাস নামকরণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে বেলজিয়ামের চিকিৎসক ডা. পিটার কিয়োট ২৭ বছর বয়সে সর্বপ্রথম এ ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এ ভাইরাসের ভ্যাকসিনের নাম ভি এসভি এবো। সাধারণত ইবোলা আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর লক্ষণ দেখা যায়। এর লক্ষণগুলো হলো জ্বর, গলা ব্যথা, পেশির ব্যথা এবং মাথা ধরা। এখন পর্যন্ত এ ধরনের রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
অনুশীলন অধ্যায়
১. নীচের কোনটি ভাইরাসের (VIRUS) জন্য সত্য নয় ? [৩৭তম বিসিএস ]
·
ডি. এন. এ বা আর. এন. এ থাকে
·
শুধুমাত্র জীবদেহের অভ্যন্তরে সংখ্যা বৃদ্ধি করে
·
স্ফটিক দানায় রূপান্তরিত (CRYSTALIZATION)
·
রাইবোজোম
(Ribosome) থাকে ।
২. ভাইরাস জনিত রোগ নয় কোনটি ? [৩৬তম বি.সি.এস ]
·
জণ্ডিস
·
এইডস
·
নিউমোনিয়া
·
চোখ ওঠা
৩. COVID-19 একটি- [ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষা-২০২১ ]
·
RNA ভাইরাস
·
DNA ভাইরাস
·
ব্যাকটেরিয়া
·
ছত্রাক
৪. এডিস মশা কিসের জীবাণু বহন করে ? [ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী/পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ২০১৮ ]
·
ডায়রিয়ায়
·
যক্ষ্মা
·
ম্যালেরিয়া
·
ডেঙ্গুজ্বর
৫. Ebola কী ? [পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ২০১৮ ]
·
ভাইরাস
·
ব্যাকটেরিয়া
·
রোগ
·
ফসলের
৬. ‘চিকনগুনিয়া কিসের মাধ্যমে ছড়ায় ? [প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ইট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল, কম্পিউটার, সিভিল ও ইলেক্ট্রনিভ) টিটিসি ২০১৮/ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স ২০১৮ ]
·
এডিস মশার মাধ্যমে
·
পানির মাধ্যমে
·
বানরের মাধ্যমে
·
বাতাসের মাধ্যমে
৭. এইডস রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস কোনটি ? [নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স ২০১৮ ]
·
Herpes simplex
·
Picorna virus
·
Coxsachie virus
·
Human immunodeficiency virus
৮. হেপাটাইটিস (জন্ডিস) রোগের প্রধান কারণ- [স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সিং সেবা অধিদপ্তরের মিডওয়াইফ ২০১৭/থানা নির্বাচন অফিসার : ০৪/ বাংলাদেশ কর্মকমিশন সচিবালয়ের সহকারী পরিচালকঃ ০৬ ]
·
ভাইরাস
·
ছত্রাক
·
ব্যাকটেরিয়া
·
কোনটিই নয়
৯. কোনটি ছোয়াচে রোগ নয় ? [স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সিং সেবা অধিদপ্তরের মিডওয়াইফ ২০১৭ ]
·
মাস
·
AIDS
·
যক্ষ্মা
·
স্ক্যাবিস
(Scabies)
১০. নিম্নের কোনটি ছোঁয়াচে রোগ নয় ? [স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সিং সেবা অধিদপ্তরের মিডওয়াইফ ২০১৭/মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অধীন অডিটর -২০১৪ ]
·
এইডস
·
যক্ষ্মা
·
বসন্ত
·
প্লেগ