খাদ্য ও পুষ্টি : পানি এবং রাফেজ বা আঁশ | Water
and Roughage
পানি
আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭৫% হচ্ছে পানি। আমাদের রক্ত, মাংস স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানির প্রয়োজন। পানি কোষের গুণাবলী রক্ষা করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। শরীরের পানি ১০% কমে গেলে সংজ্ঞা লোপ পায়, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
·
মানবদেহে প্রতিদিন কতটুকু পানির প্রয়োজন: ১.৫-২.৫ লিটার। (দৈনিক পানির পরিমাণ দৈনিক পরিশ্রম, BMI প্রভৃতির উপর নির্ভর করে)
·
প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের শরীরে পানির পরিমাণ কত: একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দেহের ওজনের ৬০ শতাংশ এব মহিলার দেহের ওজনের ৫০ শতাংশ হচ্ছে পান। মহিলাদের দেহে subcutaneous মেদকলার পরিমাণ বেশি থাকায় পানির পরিমাণ পুরুষের তুলনায় কম ।
·
মানবদেহে প্রতিদিন পানির প্রয়োজন কত: মানবদেহে প্রতিদিন প্রায় ২৬০০ মিলি (প্রায় ৩ লিটার) পানির প্রয়োজন। দেহে যাবতীয় জৈব রাসায়নিক ও বিপাকীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য এ পানির প্রয়োজন।
রাফেজ বা আঁশ
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান যা প্রধানত উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। শস্যবীজ, ডাল, আলু, খোসাসমেত টাটকা ফল এবং শাক-সবজি রাফেজের প্রধান উৎস। এছাড়া শুকনা ফল, জিরা, ধনে, মটরশুঁটি প্রভৃতিতে বেশ ভালো পরিমাণ রাফেজ পাওয়া যায়। এই খাবারগুলোর দীর্ঘ তন্ত্রময় অংশকে রাফেজ বলে। রাফেজ মূলত সেলুলোজ দিয়ে তৈরি উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর। আঁশযুক্ত খাবার থেকে রাফেজ পাওয়া যায় ।
রাফেজর গুরুত্ব:
·
১. রাফেজ সরাসরি খাদ্যনালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় খাদ্যনালীর গায়ে কোনরূপ পিন্ড তৈরি না করে বলে রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
·
২. কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
·
৩. পিত্তথলির রোগ, খাদ্যনালি ও মলাশয়ের ক্যান্সার, অর্শ, অ্যাপেন্ডিকস, স্থুলতা অনেকাংশে হ্রাস করে।
·
৪. এটি পরিপাকে সহায়তা করে, পানি শোষণ করে মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
·
৫. শরীর থেকে অপাচ্য খাদ্য নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
·
৬. শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
·
৭. বার বার ক্ষুধার প্রবনতা কমায়।
·
প্রতিদিন ২০-৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
খনিজ লবণ | Mineral salts
দেহকোষ ও দেহের তরল অংশের জন্য খনিজ লবণ অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। শরীর গঠনে আমিষের পর খনিজ লবণের অবস্থান । মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম, লৌহ, সালফার, দস্তা, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়োডিন ইত্যাদি থাকে। এ উপাদানগুলো কখনো মৌলিক উপাদানরূপে মানবদেহে অবস্থান করে না, এগুলো খাদ্য ও মানবদেহে বিভিন্ন পরিমাণে অন্য পদার্থের সাথে মিলিত হয়ে নানা জৈব এবং অজৈব যৌগের লবণ তৈরি করে। খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। হাড়, দাঁত, পেশি, এনজাইম এবং হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ একটি অপরিহার্য উপাদান। স্নায়ুর উদ্দীপনা, পেশি সংকোচন, দেহকোষে পানির সাম্যতা বজায় রাখা, অম্ল ও ক্ষারের সমতাবিধান, এসব কাজে খনিজ লবণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মানবদেহে শতকরা চার ভাগ খনিজ লবণ থাকে ।
খনিজ লবণের উৎস
খনিজ লবণের উৎস। খনিজ লবণের প্রধান উৎস সবুজ শাকসবজি। দুধ, দই, ছানা, পনির, ছোট মাছ (মলা-ঢেলা), নানা রকম ডাল, সবুজ শাকসবজি, ঢেঁড়স, লাল শাক, কচু শাক ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। কলিজা, সবুজ শাকসবজি, মাংস, ডিমের কুসুম, কচু শাক ইত্যাদিতে লৌহ থাকে। দুধ, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল থেকে ফসফরাস পাওয়া যায়। খাবার লবণ, চিপস, নোনতা খাবার, পনির, বাদাম, আচার ইত্যাদিতে সোডিয়াম থাকে। মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল, কলা, আলু, আপেল ইত্যাদিতে পটাশিয়াম থাকে। আয়োডিনের উৎস হলো সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও মাছ, মাংস এবং শেওলা। প্রাণীরা প্রধানত উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণ করে খনিজ পদার্থ পায়। আমরা শাকসবজি, ফল-মূল, দুধ, ডিম, মাছ এবং পানীয় জলের মাধ্যমে আমাদের খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করি।
এক নজরে কিছু খনিজ লবণের নাম ও অভাব জনিত সমস্যাঃ
খনিজ লবণের নাম |
অভাব জনিত সমস্যা |
আয়োডিন |
গলগন্ড |
আয়রন |
রক্তশূন্যতা |
জিংক |
বন্ধ্যাত্ব, বুদ্ধিহীনতা |
ক্যালসিয়াম |
শিশুদের রিকেটস , বয়স্ক নারীদের অস্টিওম্যালাসিয়া |
সোডিয়াম |
হৃদরোগ |
পটাশিয়াম |
পেশি দুর্বলতা |
ফসফরাস |
হাড়ক্ষয় |
লৌহ (Fe)
লৌহ রক্তের একটি প্রধান উপাদান। প্রতি ১০০ ml রক্তে লৌহের পরিমাণ প্রায় ৫৫০ mg। যকৃত, প্লীহা, অস্থি মজ্জা এবং লোহিত রক্ত কণিকায় এটি সঞ্চিত থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে লোহার পরিমাণ ২-৬ গ্রাম।
উৎস: লৌহের উদ্ভিজ্জ উৎস হচ্ছে ফুলকপির পাতা, নটে শাক, নিম পাতা, ডুমুর, কাঁচা কলা, ভূট্টা, গম, বাদাম, বজরা ইত্যাদি। কচুশাকে লৌহের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । এ কারণে কচুশাক আয়রন বা লৌহের অন্যতম প্রধান উৎস। প্রাণিজ উৎস হচ্ছে মাছ, মাংস, ডিম, যকৃৎ ইত্যাদি।
কাজ: লৌহের প্রধান কাজ হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করা। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা রোগ হয়। রক্ত শূন্যতা রোগের লক্ষণ চোখ ফ্যাকাসে হওয়া, হাত পা ফোলা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।
অভাবজনিত রোগ : লোহার অভাবজনিত রোগ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া । আয়রন বা লৌহ রক্তের হিমোগ্লোবিনের অন্যতম প্রধান উপাদান। এর অভাবে হিমোগ্লোবিন এর উৎপাদন কম হয় । আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতার লক্ষণগুলির মধ্যে ক্লান্তি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ফ্যাকাশে ত্বক, ভঙ্গুর নখ এবং একটি কালশিটে বা মসৃণ জিহ্বা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, এটি হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, শিশুদের বিকাশে বিলম্ব এবং সংক্রমণের ঝুঁকির মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যালসিয়াম (Ca)
এটি প্রাণী দেহের হাড় ও দাঁতের একটি প্রধান উপাদান। মানুষের শরীরের মোট ওজনের শতকরা ২ ভাগ হচ্ছে ক্যালসিয়াম। খনিজ পদার্থের মধ্যে দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । অস্থি এবং দাঁতে ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে এর ৯০% শরীরে সঞ্চিত থাকে এবং লসিকাতে এর উপস্থিতি লক্ষণীয়।
উৎস: ক্যালসিয়ামের উদ্ভিজ্জ উৎস হলো ডাল, তিল, সয়াবিন, ফুলকপি, গাজর, পালং শাক, কচুশাক, লালশাক, কলমি শাক, বাঁধাকপি এবং ফল। প্রাণিজ উৎস হচ্ছে দুধ, ডিম, ছোট মাছ, শুটকি মাছ ইত্যাদি।
কাজ: হাড় এবং দাঁতের গঠন শক্ত রাখার জন্য ক্যালসিয়াম একটি অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। এছাড়া ক্যালসিয়াম এবং স্নায়ু ও পেশীর সঞ্চালনে সাহায্য করে।
অভাবজনিত রোগ: ক্যালসিয়াম অভাবে শিশুদের রিকেটস এবং বয়স্ক নারীদের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়। এর অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয় এবং তাদের রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে।
ফসফরাস (P)
দেহে পরিমাণের দিক থেকে খনিজ লবণগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরই ফসফরাসের স্থান। ফসফরাসও ক্যালসিয়াম এর মত হাড়ের একটি উপাদান। ফসফরাস হাড়, যকৃৎ, এবং রক্তরসে সঞ্চিত থাকে। নিউক্লিক এসিড, নিউক্লিও প্রোটিন তৈরি এবং শর্করা বিপাকের দ্বারা শক্তি উৎপাদনের প্রধান ভূমিকা রাখে। মানুষের শরীরে বেশির ভাগ ফসফেট রয়েছে হাড়ে ।
উৎস: ফসফরাসের উদ্ভিদ উৎস হচ্ছেঃ দানা শস্য, শিম, বরবটি, মটরশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি। প্রাণিজ উৎস হচ্ছেঃ ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা ইত্যাদি।
কাজ: ক্যালসিয়ামের মতো হাড় ও দাঁত গঠন করা ফসফরাসের প্রধান কাজ।
অভাব জনিত রোগ: ফসফরাসের অভাবে রিকেটস, অস্থিক্ষয়, দন্তক্ষয়- এসব রোগ দেখা দেয়। খাবারের পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকলে ফসফরাসের অভাব হয় না।
আয়োডিন
·
কোন হরমোন তৈরিতে আয়োডিনের প্রয়োজন হয়: থাইরয়েড।
·
আয়োডিনের উৎস: সামুদ্রিক উদ্ভিদ, সামুদ্রিক মাছ, কডলিভার তেল, সমুদ্র উপকূলে চরানো গরুর দুধ ও মাংস, বাঁধাকপি প্রভৃতি আয়োডিনের প্রধান উৎস। বর্তমানে আয়োডিন যুক্ত লবন আয়োডিনের অন্যতম উৎস।
·
আয়োডিনের অভাবে কি রোগ হয়: গলগণ্ড।
·
আয়োডিনের অভাব দূরীকরণে বর্তমান কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে: খাবার লবণের সাথে আয়োডিন মেশানো হয়।
·
কোন মৌল দাঁতের ক্ষয়রোধ করে: ফ্লোরাইড।
·
কোন খাবারে সবচেয়ে বেশি পটাসিয়াম পাওয়া যায়: ডাব।
·
কলায় কোন উপাদান বেশি থাকে: লৌহ, পটাসিয়াম।
·
সামুদ্রিক আয়োডিন: হাইপোথাইরয়ডিজম
(Hypothyroidism) : আয়োডিন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে। আমাদের শরীর নিজে আয়োডিন তৈরি করতে পারে না। তাই আমাদের খাবারের সঙ্গে বাইরে থেকে এটা গ্রহণ করতে হয়। সাধারণত সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। তাই সামুদ্রিক উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার যেমন- সামুদ্রিক উদ্ভিদ (যেমন শৈবাল), সামুদ্রিক মাছ (যেমন: সামুদ্রিক ইলিশ) ইত্যাদি আয়োডিন সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। আয়োডিনের অভাবে যখন শরীরে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয় না, তখন তাকে হাইপোথাইরয়ডিজম (Hypothyroidism) বলে। আয়োডিনের অভাবে প্রাথমিক এবং দৃশ্যমান লক্ষণ হলো গলগন্ড রোগ। মানবদেহের গলদেশে যে থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে, তা যখন আয়োডিনের অভাবে ফুলে যায়, তখন তাকে গলগন্ড রোগ বলা হয়।
জিংক
উৎস : জিংকের অন্যতম উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য খাবার যেমন কাঁকড়া, ঝিনুক, চিংড়ি, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বাদাম, শিম, মাশরুম ইত্যাদি। শাক–সবজিতে বিদ্যমান জিংক শরীর সহজে হজম করতে পারে না। সে জন্য নিরামিষভোজীদের অতিরিক্ত জিংক সরবরাহ করা প্রয়োজন। একজন পুরুষ ও নারীর দৈনিক যথাক্রমে ১১ ও ৮ মিলিগ্রাম জিংক প্রয়োজন।
কাজ: জিঙ্ক ত্বক ভাল রাখতে যেমন সহায়তা করে তেমনি ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে । চোখের দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতেও জিঙ্কের ভূমিকা অপরিহার্য।
অভাবজনিত রোগ : জিঙ্কের অভাবে চুল পড়ে যাওয়া, চুলের আগা ভেঙে যাওয়া কিংবা চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। নখে দেখা যেতে পারে সাদা দাগ। জিঙ্কের অভাবে দেখা দিতে পারে ক্ষুধামান্দ্য। দেহে জিঙ্কের অভাব থাকলে ক্ষত নিরাময়ে ও বিলম্ব হয় । তাছাড়া জিংকের অভাবে বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত হতে পারে । প্রয়োজনীয় বুদ্ধি লোপ পেতে পারে জিংকের অভাবে ।
সোডিয়াম
উৎস: সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের নামের তালিকা খুব দীর্ঘ। কারণ প্রায় সব খাবারই লবণ সমৃদ্ধ । আর লবণ একটি সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। কিছু উচ্চ সোডিয়াম জাতীয় খাবার যেমন আচার, পাপড়, লবণযুক্ত বিস্কুট, লবণযুক্ত মাখন, পনির ইত্যাদি ।
কাজ : সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার মৃত কোষ অপসারণ করতে সহায়তা করে। ত্বকের মধ্যে থাকা ধুলো বালি কণা দূর করতেও সহায়তা করে । এটি হজমেও সহায়তে করে । পরিমিত সোডিয়াম হৃদপিন্ড ভাল রাখে ।
অভাবজনিত সমস্যা : রক্তে সোডিয়ামের মাত্রার স্বাভাবিক পরিসীমা হল 135 থেকে 145 মিলি সমতুল্য প্রতি লিটার (mEq/L) । স্বাভাবিক মাত্রা থেকে সোডিয়াম কমে গেলে শরীরে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং এর ফলে শরীরে ফুলে যায়। এর ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে। শুধু তাই নয়, জীবনও বিপদে পড়তে পারে। গুরুতর সোডিয়ামের অভাবে কোমা হতে পারে। এটি মস্তিষ্ককে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে কারণ মস্তিষ্কের প্রদাহ স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং অন্যান্য মানসিক রোগের দিকে পরিচালিত করে।
পটাশিয়াম
উৎস: সবুজ শাক, বিনস, বাদাম ও দুগ্ধজাত খাবার পটাশিয়ামের ভালো উৎস। তাছাড়া কলা, বিটরুট , ডালিম , পালংশাক , মটরশুটি , মিষ্টি আলু , ডাবের পানি , টমেটো বা টমেটো সস ইত্যাদিতে পটাশিয়াম পাওয়া যায় । তবে পটাশিয়াম সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ডাবের পানিতে ।
কাজ : পটাশিয়াম শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে, রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে , কার্বোহাইড্রেট সঞ্চয করতে সাহায্য করে । এটি শরীরের মাংসপেশি তৈরিতে কাজে আসে। এছাড়াও শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এবং অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখতে পটাশিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করতেও সাহায্য করে এই উপাদান।
অভাবজনিত সমস্যা : পটাশিয়ামের অভাব হলে তার প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় দুর্বলতা ও ক্লান্তি। দীর্ঘদিন ধরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে শরীরে ইনসুলিন কম উৎপাদিত হয় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। এতে মাংসপেশির দুর্বলতা এবং মাংসপেশিতে ঘন ঘন টান লাগার মতো সমস্যাও তৈরি হয়। পেশি ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হচ্ছে পেশির আকস্মিক ও অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পটাশিয়ামের অভাবের কারণে পেশি ব্যথা ও পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন এক বিশেষ ধরনের জৈব যৌগ যা প্রাণিদেহে খুব অল্প পরিমানে প্রয়োজন কিন্তু এর অভাবে স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যহত হয়, তাকে ভিটামিন বলে। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনের পরিমাণ খুব সামান্য হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য ভিটামিন অত্যাবশ্যক। সুষম খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে বলে সুষম খাদ্য থেকে প্রচুর ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে নিয়মিত ভিটামিনবিহীন খাবার খেলে কিছুদিনের মধ্যে দেহে ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীকালে তা মারাত্মক আকারে স্থায়ীভাবে দেহের ক্ষতিসাধন করে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
দ্রবণীয়তার গুণ অনুসারে ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. স্নেহ জাতীয় পদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন, যেমন- এ, ডি, ই, এবং কে।
২. পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, যেমন- ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং সি।
’ভিটামিন এ ’ রেটিনল ও বিটা ক্যারোটিন রুপে পাওয়া যায়। যে খাদ্যে ভিটামিন 'এ' সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হলো গাজর।
1.
প্রাণীজ উৎসের মধ্যে ডিম, গরুর দুধ, মাখন, ছানা, দই, ঘি, যকৃৎ ও বিভিন্ন তেলসমৃদ্ধ মাছ মলা-ঢেলা মাছ, মাছের মাথা বিশেষ করে কড মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
2.
উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন: লাল শাক, কচু শাক, পুঁই শাক, পাটশাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক, পুদিনা পাতা, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি এবং বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন: আম, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে।
1.
দেহের স্বাভাবিক গঠন এবং বর্ধন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কাজ নিশ্চিত করে ।
2.
দেহের বিভিন্ন আবরণী কলা যেমন: ত্বক, চোখের কর্নিয়া ইত্যাদিকে স্বাভাবিক ও সজীব রাখে।
3.
হাড় ও দাঁতের গঠন এবং দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে।
4.
দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
5.
দেহের রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
6.
খাদ্যদ্রব্য পরিপাক ও ক্ষুধার উদ্রেক তৈরি করে ।
1.
ভিটামিন A এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। রাতকানা রোগ বোঝানোর প্রতীক Xn.
2.
ভিটামিন A এর অভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে চোখের কর্নিয়ায় আলসার হতে পারে । এ অবস্থাকে জেরপথালমিয়া (
Xerophthalmia ) বলে। এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
3.
ভিটামিন A এর অভাবে দেহের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
4.
অনেক সময় ঘা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
5.
ভিটামিন A এর অভাবে ত্বকের লোমকূপের গোড়ায় ছোট ছোট গুটি সৃষ্টি হতে পারে।
ভিটামিন বি ,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নামেও পরিচিত। ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর কাজ হলো বিশেষ বিশেষ উৎসেচকের অংশ হিসেবে আমিষ, শর্করা ও স্নেহ পদার্থকে বিশ্লিষ্ট করা এবং এদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে মুক্ত হতে সাহায্য করা । পানিতে দ্রবণীয় ১২ টি ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিন ‘বি’ কে আমরা আটটি রুপে পেয়ে থাকি । নিচে তাদের উৎস , কাজ ও অভাবজনিত রোগ নিয়ে আলোচনা যুক্ত করা হল ।
·
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
: মটরশুঁটির, কলিজা, বাদাম, তাজা ফলমূল যেমনঃ কলা, কমলা ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লেবিন): দুধ, ডিম, সেরিয়াল, টক দই, মাশরুম ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি৩ ( নিয়াসিন বা নিকোটিনিক
): মাছ, গরুর মাংস, ডিম, ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি৫ ( প্যানটোথেনিক এসিড
): গরুর মাংস, মুরগী, কলিজা, মাশরুম, ডিম, আভাকাডো ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন): পোলট্রি, মাছ, সয়াবিন ডাল, চিনাবাদাম, ওটস, কলা, দুধ ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন): ডিম, অর্গান মিট, মাছ, মাংস, বাদাম, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি৯ (ফলিক অ্যাসিড
): ব্রকলি, বাঁধাকপি, সবুজ শাকসবজি, কলিজা ইত্যাদি ।
·
ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবালামিন)
: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি ।
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর নাম ও তাদের কাজ নিম্নরুপ :
·
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
: এর প্রধান কাজ হলো শর্করা বিপাকে অংশগ্রহণ করে শক্তিমুক্ত করা। তাছাড়া স্বাভাবিক ক্ষুধা বজায় রাখতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
·
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লেবিন): অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড ও কার্বহাইড্রেটের বিপাকে অংশ নিয়ে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
·
ভিটামিন বি৩ ( নিয়াসিন বা নিকোটিনিক
): পুষ্টিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে , ডিএনএ তৈরিতে, ভালো কোলেস্টেরল, চর্বি তৈরি করতে, মাথাব্যথা, ক্লান্তি দূর করতে ভিটামিন বি৩ এর ভূমিকা রয়েছে ।
·
ভিটামিন বি৫ ( প্যানটোথেনিক এসিড
): স্ট্রেস কমাতে , হরমোন উত্তেজিত করতে , বিপাক শরীরের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে , হার্টকে সুস্থ রাখতে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
·
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন): শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
·
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন): চর্বি, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট বিপাক করতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক, চুল এবং নখকে গঠন করতে সাহায্য করে।
·
ভিটামিন বি৯ (ফলিক অ্যাসিড
): এই ভিটামিনটি স্বাস্থ্যকর নতুন কোষ তৈরি করার জন্য , রক্ত এবং তার উপাদান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পিউরিন এবং পিরিমিডিন সংশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
·
ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবালামিন)
: লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি ও উৎপাদনে সহায়তা করে। শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ভিটামিন B
complex এর নাম ও তাদের অভাবজনিত রোগ নিম্নরূপ:
·
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
: দেহে থায়ামিনের এর অভাবে বেরিবেরি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর অভাবে স্নায়ুর দুর্বলতা, মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি, খাওয়ার অরুচি, ওজনহীনতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
·
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লেবিন): এর অভাবে ঠোঁটের দু'পাশে ক্ষত দেখা দেয়, মুখে ও জিভে ঘা হয়, ত্বকে খসখসে হয়। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এর অভাবে তীব্র আলোতে চোখ খুলতে অসুবিধা হয়।
·
ভিটামিন বি৩ ( নিয়াসিন বা নিকোটিনিক
): এর অভাবে পেলেগ্রা রোগ হয়। পেলেগ্রা রোগে ত্বকে রঞ্জক পদার্থ জমতে শুরু করে এবং সূর্যের আলোয় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকে লালচে দাগ পড়ে এবং ত্বক খসখসে হয়ে যায়। এ ছাড়া জিভের রঞ্জক পদার্থ জমে জিভের এট্রোফি হয়।
·
ভিটামিন বি৫ ( প্যানটোথেনিক এসিড
): এর অভাবে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা যায় না। তবে মারাত্মকভাবে ঘাটতি থাকলে ক্লান্ত বোধ , পেটে ব্যথা , বমি করা , ক্ষুধামন্দা , হাত পা জ্বালা , ঘুমে ব্যর্থতা , আচরণে বিরক্তি, অস্থিরতা অনুভব করা এরকম লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে ।
·
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন): নিউরোপ্যাথি দেখা দেয় (স্নায়ুর অস্বাভাবিক উদ্দীপনা, স্নায়ুতন্ত্রে ক্ষত দেখা দেয়)।
·
ভিটামিন বি৭ ( ভিটামিন এইচ বা বায়োটিন
): বায়োটিনের অভাবে ক্ষুধামন্দা, অন্তঃত্বকের কিছু রোগ, চুল পড়ে যাওয়া এবং অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
·
ভিটামিন বি৯ (ফলিক অ্যাসিড
): ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়।
·
ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবালামিন)
: এর অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। স্নায়ুতন্ত্রের অবক্ষয় ঘটে ।
দেহের জন্য ভিটামিন 'সি' অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। ভিটামিন সি পানিতে দ্রবীভূত হয়, কোন তেল বা চর্বি জাতীয় পদার্থে দ্রবীভূত হয় না এবং সামান্য তাপেই নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন 'সি' দেহে জমা থাকে না তাই নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন ।
টাটকা শাকসবজি এবং টাটকা ফলে ভিটামিন 'সি' পাওয়া যায়। শাক-সবজির মধ্যে মূলা শাক, লেটুস পাতা, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, করলা ইত্যাদিতে ভিটামিন সি আছে। ফলের মধ্যে আমলকি, লেবু, কমলা লেবু, টমেটো, আনারস, পেয়ারা, ইত্যাদি ভিটামিন সি এর উৎস। শুকনো ফল ও বীজে এবং টিনজাত খাদ্যে এই ভিটামিন থাকে না।
·
ত্বক, হাড়, দাঁত ইত্যাদির কোষসমূহকে পরস্পরের সাথে জোড়া লাগিয়ে মজবুত গাঁথুনি তৈরি করে।
·
শরীরে ক্ষত পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
·
দাঁত ও মাড়ি শক্ত রাখে।
·
স্নেহ, আমিষ ও অ্যামাইনো এসিডের বিপাকীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
·
ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে।
·
রোগ প্রতিরোধ করে।
·
ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি (দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া) রোগ হয়।
·
অস্থির গঠন শক্ত ও মজবুত হতে পারে না।
·
হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায় ।
·
ত্বকে ঘা হয়, ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
·
দাঁতের মাড়ি ফুলে দাঁতের এনামেল উঠে যায়। দাঁত দুর্বল হয়ে অকালে মরে পড়ে।
·
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সহজে ঠান্ডা লাগে।
·
চর্ম রোগের জন্য দায়ী ভিটামিন সি।
·
ত্বক খসখসে হয় , চুলকায় , ত্বকে ঘা হলে সহজে শুকাতে চায় না ।
স্কার্ভি: এটি এমন একটি রোগ, যা ভিটামিন সি'র অভাবে হয়। এর লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
১. নাক, মুখ, চোয়াল দিয়ে রক্ত পড়া।
২. মাংসপেশী দূর্বল হওয়া।
৩. মাড়ি ফুলে যায়, ব্যথা হয়।
৪. ক্ষত সহজে ভালো হয় না।
৫. দাঁত পড়ে যায়।
৬. হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
৭. Micro-organism-এর আক্রমণ বেশি হয়।
উৎস: ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস সূর্যালোক। এই ভিটামিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে মুখের ত্বকে সংশ্লেষিত হয়। মানুষের দেহের ত্বকের নিচে ডাই হাইড্রোকোলেস্টেরল নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সাথে বিক্রিয়ায় ভিটামিন ডি তৈরি করে। ডিমের কুসুম , দই , ওটমিল , মাশরুম , দুধ এবং মাখন ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস। বাঁধাকপি, যকৃৎ এবং তেলসমৃদ্ধ মাছের ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
কাজ: হাড় ও দাঁতের অপরিহার্য উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। ভিটামিন ডি শরীরে (অন্ত্র হতে) ক্যালসিয়াম আয়ন শোষণে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি এর পরিশোষণের জন্য স্নেহজাতীয় পদার্থ অপরিহার্য।
অভাবজনিত রোগ:
1.
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ হয়।
2.
ভিটামিন ডি এর অভাবে বড়দের অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হয়।
দৈনিক চাহিদা থেকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে শরীরের ক্ষতি হয়। অধিক ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষিত হওয়ায় রক্তে এদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যে কারণে বৃক্ক (কিডনি), হৃদপিন্ড, ধমনী ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম জমা হতে থাকে।
উৎস: সব রকম উদ্ভিজ্জ ভোজ্য তেল বিশেষ করে পাম তেল ভিটামিন E এর ভালো উৎস। প্রায় সব খাবারেই কম বেশি ভিটামিন E আছে। তাছাড়া শস্যদানা তেল (Corn
oil), তুলা বীজের তেল, সূর্যমুখী বীজের তেল, লেটুসপাতা ইত্যাদিতে ভিটামিন ’ই’ পাওয়া যায়।
কাজ:
·
মানুষের শরীরে ভিটামিন E হল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেটি ধমনীতে চর্বি জমা রোধ করে এবং সুস্থ ত্বক বজায় রাখে।
·
ভিটামিন E কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর বন্ধ্যাত্ব দূর করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
·
শরীরের কিছু ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
·
খুব কম ক্ষেত্রে ভিটামিন 'ই' এর অভাব ঘটে এবং এর অভাবজনিত লক্ষণও কম।
অভাবজনিত রোগ: ভিটামিন E এর অভাবে জরায়ুর মধ্যে ভ্রুণের মৃত্যুও হতে পারে। এছাড়া হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বন্ধাত্ব দেখা দেয়। প্রজনন শক্তি হ্রাস পায়।
উৎস: সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা, পালং শাক, ডিমের কুসুম, গরুর কলিজা, টিনজাত মাছ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মানবদেহের অন্ত্রের অভ্যন্তরের ব্যাকটেরিয়া এবং যকৃতে ভিটামিন ‘কে’ পাওয়া যায় ।
কাজ
·
দেহে ভিটামিন 'কে' প্রথ্রোম্বিন নামক প্রোটিন তৈরি করে।
·
প্রথ্রোম্বিন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
·
রক্ত জমাট বাঁধার ফ্যাক্টর- II, VII, IX, X তৈরিতে সাহায্য করে।
অভাবজনিত সমস্যা : ভিটামিন 'কে' অভাবজনিত মূল সমস্যা হলো ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ না হওয়া বা বন্ধ হতে দেরি হওয়া । যকৃৎ থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়। পিত্তরস নিঃসরণে অসুবিধা হলে ভিটামিন কে-এর শোষণ কমে যায়। ভিটামিন 'কে'-এর অভাবে ত্বকের নিচে ও দেহাভ্যন্তরে যে রক্ত ক্ষরণ হয় তা বন্ধ করার ব্যবস্থা না নিলে রোগী মারা যেতে পারে। এই ভিটামিনের অভাবে অপারেশনের রোগীর রক্তক্ষরণ সহজে বন্ধ হতে চায় না। এতে রোগীর মৃত্যুর আশংকা তৈরি হয় ।
1
·
ঢেঁকি ছাটা চালে কোন ভিটামিন থাকে: ভিটামিন B1
·
দীর্ঘদিন প্রাণীজ খাবার না খেলে কোন ভিটামিনের অভাবে দেখা দেয়?
ভিটামিন B12 এই ভিটামিনের অভাবে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
·
চা পাতায় কোন ভিটামিন থাকে:
চা পাতায় থাকে ক্যাফেইন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (থায়ামিন, রিবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, পেন্টোথেনেট), অ্যামাইনো এসিড (থিয়ানিন), খনিজ লবন (ফ্লোরিন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ), টেনিন প্রভৃতি। ক্যাফেইন CNS বিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
·
কোন কোন ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে দেহের ক্ষতি হতে পারে: ভিটামিন A, ভিটামিন D, ভিটামিন B6.
·
মানবদেহের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কোন কোন ভিটামিন তৈরি হয়: ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ১২, বায়োটিন, ফলিক এসিড।
·
কোন কোন ভিটামিন এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে: Vit.
A, vit. C, vit. E
·
অতীতকালে নাবিকেরা স্কার্ভি রোগে ভুগতেন কেন: দীর্ঘ সময় জাহাজে অবস্থানকালে তারা তাজা শাকসবজি খেতে পারতেন না। তাই ভিটামিন সি এর অভাব দেখা দিত।
·
মরিচ ঝাল লাগে কেন: মরিচে ক্যাপসিসিন নামক ফেনল জাতীয় পদার্থের দরুণ মরিচ ঝাল লাগে।
·
আমাদের দেশের প্রাপ্ত সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এর নাম: কালো জাম ও পেয়ারা।
·
ডিমে ও দুধে কোন ভিটামিন নেই: ভিটামিন সি।
·
ভিটামিনের আধিক্যজনিত রোগকে বলে-- হাইপারভিটামিনোসিস।
·
সবুজ চা এর উপাদানটি সাধারণত কাজ করে- ফুসফুসের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে।
·
ফুলকপিতে প্রাপ্ত 'সালফোরেন' এর কাজ- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
·
অতিরিক্ত ভিটামিন সি ক্ষতিকর কারণ, তা মূত্রপথে পাথরের জন্ম দেয়।
·
ফলিক এসিডের অভাবে রক্তশূন্যতা হয়।
·
ডিমের কুসুমে আয়রন, ভিটামিন বি-২, বি-১২ এবং ডি রয়েছে।