এই পর্বে যা যা থাকছে
হাসান হাফিজুর রহমান
শামসুর রাহমান
হাসান হাফিজুর রহমান
হাসান হাফিজুর রহমান (১৯৩২-১৯৮৩)
বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমান। তাঁর রচিত সাহিত্যকর্মে জনজীবনের প্রত্যাশা, যন্ত্রণা, প্রতিবাদ ও মানুষের সংগ্রামী জীবনচেতনার প্রকাশ ঘটেছে। ১৯৬৭-তে পাকিস্তানি শাসকচক্র কর্তৃক বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার এবং পাকিস্তানের আদর্শ পরিপন্থী বলে রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদে তিনি অংশগ্রহণ করেন ।
হাসান হাফিজুর রহমানের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
হাসান হাফিজুর রহমান ১৪ জুন, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে [সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান] জামালপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস - জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি গ্রাম । |
ভাষা আন্দোলন |
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ঐ বছরই তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘অমর একুশে’ প্রকাশিত হয়। |
২১ ফেব্রুয়ারির বাংলা তারিখ |
ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল বাংলা ৮ই ফাল্গুন। |
সম্পাদনা |
তিনি ১৯৫২ সালে ‘বেগম’ পত্রিকায়, ১৯৫৩ সালে ‘সওগাত' পত্রিকায় এবং ১৯৫৫ সালে ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় এবং ১৯৬৫ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান' পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । |
মুক্তিযুদ্ধ |
১৯৭১ সালে কুমিল্লার এক গ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন । |
পুরস্কার |
তিনি ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৭), ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৭১), ‘একুশে পদক’- মরণোত্তর (১৯৮৪) লাভ করেন । |
সম্পাদিত গ্রন্থ |
তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ: |
কাব্যগ্রন্থ |
তাঁর কাব্যসমূহ: |
প্রবন্ধ |
‘আধুনিক কবি ও কবিতা' (১৯৬৫), |
গল্প |
‘আরো দু'টি মৃত্যু’ (১৯৭০) |
ভ্রমণকাহিনি |
‘সীমান্ত শিবিরে’ |
মৃত্যু |
তিনি ১৭ জানুয়ারি হার্ট, লিভার ও কিডনির চিকিৎসার জন্য রাশিয়া গমন করেন এবং ১ এপ্রিল, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে মস্কোতে মৃত্যুবরণ করেন। |
শামসুর রাহমান
শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬)
আধুনিক কবি শামসুর রাহমান, যিনি রোমান্টিকতার সাথে সমাজমনস্কতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন কাব্যধারার জন্ম দিয়েছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁর কবিতাকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। নগর জীবনের যন্ত্রণা, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ইত্যাদি তাঁর কবিতায় লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
শামসুর রাহমানের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
শামসুর রাহমান ২৪ অক্টোবর, (পারিবারিক হিসেবে ২৩ অক্টোবর) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলি গ্রাম । |
ডাকনাম |
শামসুর রাহমানের ডাকনাম- বাচ্চু । |
সাংবাদিকতা |
১৯৫৭ সালে সাংবাদিক হিসেবে ‘দৈনিক মর্নিং নিউজ'- এ কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে এটি ‘দৈনিক বাংলা’ নামে নামকরণ হয়। ১৯৭৭ সালে ‘দৈনিক বাংলা' ও সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা'র সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সরকার পরিচালিত ‘দৈনিক বাংলা’ থেকে পদত্যাগ করেন। |
ছদ্মনাম |
মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কলকাতার ‘দেশ' পত্রিকায় ‘মজলুম আদিব' ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সিন্দাবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক প্রভৃতি ছদ্মনামে সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখতেন। |
উপাধি |
শামসুর রাহমান ‘নাগরিক কবি' হিসেবে খ্যাত। |
পুরস্কার |
তিনি ১৯৬৩ সালে ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার', ১৯৬৯ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার', ১৯৭৭ সালে ‘একুশে পদক' এবং ১৯৯১ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন । |
কাব্যগ্রন্থ |
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো : |
উপন্যাস |
তাঁর উপন্যাসগুলো: |
আত্মস্মৃতি |
‘স্মৃতির শহর' (১৯৭৯), |
শিশুতোষ |
‘এলাটিং বেলাটিং' (১৯৭৫), |
প্ৰবন্ধ |
‘আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ' (১৯৮৬), |
বিখ্যাত পক্তি |
১. পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত, |
বিখ্যাত কবিতা |
বিখ্যাত কবিতা : |
মৃত্যু |
তিনি ১৭ আগস্ট, ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কবির ইচ্ছানুযায়ী ১৮ আগস্ট বনানী কবরস্থানে মায়ের সমাধির মধ্যে সমাহিত করা হয়। |
রবীন্দ্র সাহিত্যের অনুরাগী ভক্ত ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী আনোয়ার পাশা ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছে দেশাত্মবোধ, মননশীলতা এবং প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা। আমৃত্যু তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক।
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
আনোয়ার পাশা ১৫ এপ্রিল, ১৯২৮ সালে ডবকাই গ্রাম, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন । |
হাস্নাহেনা |
রাজশাহী কলেজে বিএ অধ্যয়নকালে ‘ হাস্নাহেনা ' শিরোনামে তাঁর একটি রম্যরচনা প্রকাশিত হয়। |
পুরস্কার |
তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর) পান। |
সাহিত্যকর্ম |
তাঁর সাহিত্যকর্মসমূহ: উপন্যাস:
‘রাইফেল রোটি আওরাত' (১৯৭৩): এটি মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত প্রথম উপন্যাস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আনোয়ার পাশা এপ্রিলে এটি রচনা শুরু করেন এবং জুন মাসে সমাপ্ত করেন। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে এ উপন্যাসে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুদীপ্ত শাহীনের মাধ্যমে ঔপন্যাসিক নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। গল্পগ্রন্থ :
‘নিরুপায় হরিণী' (১৯৭০)। কাব্য :
‘নদী নিঃশেষিত হলে' (১৯৭০), |
মৃত্যু |
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাক-বাহিনী (আল বদর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে । |
সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে সাম্যাবস্থা আনয়নের প্রচেষ্টার অন্যতম অগ্রদূত শহীদুল্লা কায়সার। বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তিনি শ্রমিক-জনতার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং ৩ জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে মুক্তি পান। তাঁর রচিত উপন্যাসে উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বাঙালি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংগ্রামী চেতনা।
সাহিত্যিক উপাদান |
সাহিত্যিক তথ্য |
জন্ম |
শহীদুল্লা কায়সার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। |
প্রকৃত নাম |
তাঁর প্রকৃত নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। |
পরিচিতি |
কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তাঁর ভাই এবং অভিনেত্রী শমী কায়সার তাঁর মেয়ে। |
আদর্শ |
তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ' গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। |
সাংবাদিকতা |
১৯৪৯ সালে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে 'দৈনিক সংবাদ' এর সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। এতে দেশপ্রেমিক ছদ্মনামে 'রাজনৈতিক পরিক্রমা' ও বিশ্বকর্মা ছদ্মনামে 'বিচিত্র কথা' শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লিখতেন। |
সাহিত্যকর্ম |
তাঁর রচিত সাহিত্যকর্মসমূহ: উপন্যাস:
‘সারেং বউ' (১৯৬২): এটি তাঁর প্রথম উপন্যাস। এতে সমুদ্র উপকূলবর্তী জনপদের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কদম সারেং জাহাজের নাবিক। সৎ ও সরল বলে সহকর্মীদের মতো বাড়ি-গাড়ি করতে পারেননি, কিন্তু অভাব-অনটনের মধ্যেও ছিলো সুখের সংসার। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মাদক পাচারের অপরাধে জেলে যেতে হয়। দীর্ঘদিন কদম সারেং নিখোঁজ থাকায় যুবতী স্ত্রী নবিতুন ডুবে যায় দারিদ্র্যের করালগ্রাসের অন্তরালে এবং নিপতিত হয় লোলুপ সমাজপতিদের শিকারের কবলে। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ নবিতুন সব কিছু পরাজিত করে। প্রবল ঝড়ের পর সারেং ফিরে আসলে পিপাসিত কদম সারেংকে ধর্মীয় বিধি লংঘন করে নবিতুন নিজের দুগ্ধ পান করিয়ে সুস্থ করে তোলে। ‘সারেং বউ' উপন্যাসে সব সংস্কার তুচ্ছ করে মানবতাবোধকে জয়ী করা হয়েছে। উপন্যাসটির জন্য তিনি ‘আদমজী পুরস্কার’ (১৯৬২), ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার' (১৯৬২) লাভ করেন । চরিত্র: কদম সারেং, নবিতুন। স্মৃতিকথা:
‘রাজবন্দীর রোজনামচা' (১৯৬২)। ভ্রমণকাহিনি:
‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ' (১৯৬৬)। |
মৃত্যু |
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যগণ তাঁকে ঢাকার কায়েতটুলির বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। |