কারক ও বিভক্তি

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি বাংলা ২য় প্ত্র

 

কারক বিভক্তি

কারক বিভক্তি বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। কারক হল বাক্যের ক্রিয়া পদের সাথে অন্যান্য পদের সম্পর্ক এবং বিভক্তি হল শব্দকে বাক্যে ব্যবহারের জন্য শব্দের সাথে যুক্ত হওয়া বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি। 

সহজ ভাষায়, 

·        কারক (Karok):

একটি বাক্যে ক্রিয়া (verb) এবং নামপদের (noun/pronoun) মধ্যে সম্পর্ককে কারক বলে। 

 

·        বিভক্তি (Bivokti):

বাক্যে ব্যবহৃত শব্দগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য শব্দের সাথে যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত হয়, তাকে বিভক্তি বলে। 

 

কারক প্রধানত প্রকার:
কর্তৃকারক (কর্তা): যে কাজ করে (যেমন: "ছেলেটি বই পড়ছে" - এখানে "ছেলেটি" কর্তা)
কর্মকারক (কর্ম): যাঁর উপর ক্রিয়ার ফল পরে (যেমন: "মাছ ধরছি" - এখানে "মাছ" কর্ম)
করণ কারক: যা দিয়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় (যেমন: "কাঁচি দিয়ে কাটো" - এখানে "কাঁচি" করণ)
সম্প্রদান কারক: যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান করা হয় (যেমন: "ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও" - এখানে "ভিক্ষুককে" সম্প্রদান)
অপাদান কারক: যা থেকে কিছু উৎপন্ন, গৃহিত, বা দূরীভূত হয় (যেমন: "পড়াশোনা থেকে পালিয়ে যেও না" - এখানে "পড়াশোনা" অপাদান)
অধিকরণ কারক: ক্রিয়ার আধার বা সময় (যেমন: "গাছে পাখি বসে আছে" - এখানে "গাছে" অধিকরণ) 

বিভক্তি আবার দুই প্রকার:
শব্দ বিভক্তি: যা শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে পদ তৈরি করে (যেমন: "", "কে", "", "", "তে" ইত্যাদি)
ক্রিয়া বিভক্তি: যা ক্রিয়া পদের সাথে যুক্ত হয়ে কাল পুরুষ ভেদে ক্রিয়াকে চিন্হিত করে (যেমন: "", "", "তে" ইত্যাদি) 

কারক বিভক্তির সঠিক ব্যবহার বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে। 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

 

#.গীর্জায় গিয়ে যীশু ভজে সে' যীশু কোন কারকে কোন বিভক্তি ?

 

কর্তায় শূন্য

 

কর্মে ৭মী

 

কর্মে ২য়া

 

কর্মে শূন্য

 

 

#.'আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাখবে'- কোন কারক?

 

অধিকরণ

অপাদান কারক

সম্প্রদান কারক

কর্তৃকারক

 

#.তিলে তৈল হয়' কোন কারক?

সম্প্রদান

অপাদান

করণ

অধিকরণ

 

#.লোভে পাপ পাপে মৃত্যু' এখানে লোভে শব্দের কারক বিভক্তি কী?

কর্তায় ৭মী

অপাদানে ৭মী

কর্মে ৬ষ্ঠী

করণে ৭মী

 

#.' সুতোয় কাপড় হয় না' কোন কারক?

কর্তৃকারক

কর্মকারক

করণ কারক

কোনোটিই নয়

কর্তৃকারক

ব্যাকরণে, বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলা হয়।ক্রিয়ার সঙ্গে 'কে' বা 'কারা' যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা কর্তৃকারককে নির্দেশ করে। একে "কর্তাকারক" বলা হয়

 

উদাহরণ: খোকা বই পড়ে। (কে বই পড়ে? খোকা - কর্তৃকারক) মেয়েরা ফুল তোলে। (কে ফুল তোলে? মেয়েরা - কর্তৃকারক)

 

প্রকারভেদ

কর্তৃকারকের বহুবিধ প্রকারভেদ বিদ্যমান।

 

কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে:

মুখ্য কর্তা: যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে, সে মুখ্য কর্তা। যেমন- ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।

প্রযোজক কর্তা: মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায়, তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

প্রযোজ্য কর্তা: মূল কর্তার করণীয় কাজ যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

ব্যতিহার কর্তা: কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে একজাতীয় কাজ সম্পাদন করে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন- বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।

বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকমের হতে পারে:

কর্মবাচ্যের কর্তা: কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে বসে। যেমন- পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।

ভাববাচ্যের কর্তা: ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে বসে। যেমন- আমার যাওয়া হবে না।

কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা: বাক্যে কর্মপদই যখন কর্তৃস্থানীয় হয়। যেমন- বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।

 

মুখ্য কর্তা

মুখ্য কর্তা হলো সেই কর্তা, যে নিজে নিজেই বাক্যের ক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। অন্য কথায়, যে কর্তা কোনো কাজ নিজে করে, তাকেই মুখ্য কর্তা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, "ছেলেটি বই পড়ছে" - এখানে "ছেলেটি" হল মুখ্য কর্তা, কারণ সে নিজে নিজেই বই পড়ার কাজটি করছে। 

সংক্ষেপে, মুখ্য কর্তা হলো

·        ক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে মূল ব্যক্তি বা বস্তু।

·        যে নিজে কাজটি করে, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে।

·        উদাহরণ: "সূর্যোদয় হচ্ছে", "বৃষ্টি পড়ছে"

 

 

প্রযোজক কর্তা

প্রযোজক কর্তা (Producer Agent) হলেন সেই কর্তা, যিনি নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেন। অন্যভাবে বললে, প্রযোজক কর্তা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি কোনো কাজ করার জন্য অন্য কাউকে নিযুক্ত করেন। উদাহরণস্বরূপ, "শিক্ষক ছাত্রদের বাংলা পড়াচ্ছেন।এখানে শিক্ষক হলেন প্রযোজক কর্তা এবং ছাত্ররা হল প্রযোজ্য কর্তা। 

 

প্রযোজ্য কর্তা

প্রযোজ্য কর্তা হলো সেই কর্তা, যাকে দিয়ে প্রযোজক কর্তা কাজটি করিয়ে নেয়। সহজ ভাষায়, যখন কোনো ব্যক্তি বা বস্তু অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে দিয়ে কোনো কাজ করায়, তখন যাকে দিয়ে কাজটি করানো হয়, সেই ব্যক্তি বা বস্তুটিই হলো প্রযোজ্য কর্তা। 

উদাহরণস্বরূপ, "মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন" এই বাক্যে, মা প্রযোজক কর্তা এবং শিশু প্রযোজ্য কর্তা। এখানে মা শিশুকে দিয়ে চাঁদ দেখানোর কাজটি করাচ্ছেন। 

অন্যভাবে বলা যায়, প্রযোজ্য কর্তা হলো সেই কর্তা, যে মূল কর্তার (প্রযোজক কর্তা) ক্রিয়া সম্পাদনে সহায়তা করে। যেমন- "শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন" এখানে শিক্ষক প্রযোজক কর্তা এবং ছাত্ররা প্রযোজ্য কর্তা। 

 

 

 

ব্যতিহার কর্তা

ব্যতিহার কর্তা হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি ধারণা, যেখানে দুটি কর্তা একত্রে একটি সাধারণ কাজ করে। সহজভাবে বললেযখন দুটি কর্তা একই কাজ করে, তখন তাদের ব্যতিহার কর্তা বলা হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, "বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়" এই বাক্যে "বাঘ" এবং "মহিষ" দুটি কর্তা এবং তারা "জল খাওয়া" নামক একই কাজ করছে। তাই এখানে "বাঘে" এবং "মহিষে" ব্যতিহার কর্তা। 

 

কর্মবাচ্যের কর্তা

কর্মবাচ্যের বাক্যে কর্মপদটিই মুখ্য এবং কর্তা অপ্রধান থাকে। এখানে কর্মপদ অনুযায়ী ক্রিয়াটি সংঘটিত হয় এবং কর্মপদের সাথে ক্রিয়ার সম্পর্ক প্রধান হয়। সাধারণত কর্মবাচ্যের কর্তায় 'দ্বারা', 'কর্তৃক', 'ি' বা '' বিভক্তি যুক্ত হয়।

কর্মবাচ্য (Passive Voice) :
যে বাক্যে কর্মপদের অর্থ প্রাধান্য পায় এবং ক্রিয়া কর্মপদকে অনুসরণ করে, তাকে কর্মবাচ্য বলে। 

 

 

ভাববাচ্যের কর্তা

ভাববাচ্যের বাক্যে কর্তা সাধারণত অনুপস্থিত থাকে অথবা গৌণভাবে উপস্থাপিত হয়। এক্ষেত্রে, ক্রিয়াপদটিই মুখ্য হয়ে ওঠে এবং কর্মপদ সাধারণত অনুপস্থিত থাকে। 

ভাববাচ্য হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি বাচ্য (voice) যেখানে বাক্যের মূল বক্তব্য প্রকাশিত হয় ক্রিয়ার মাধ্যমে, কর্মপদের মাধ্যমে নয়। ভাববাচ্যের বাক্যে কর্তা উপস্থিত থাকলেও তা গৌণ বা অপ্রধান থাকে। কখনো কখনো কর্তা একেবারেই অনুপস্থিত থাকে। মূল কথা হল, ভাববাচ্যে ক্রিয়াপদটিই প্রধান এবং কর্মপদ সাধারণত থাকে না। 

উদাহরণস্বরূপ, "আমার যাওয়া হবে না" এই বাক্যে "যাওয়া" ক্রিয়াটি প্রধান এবং "আমার" কর্তাটি গৌণ। এখানে "যাওয়া" ক্রিয়াটি দিয়ে বক্তার মনোভাব প্রকাশ করা হচ্ছে। 

 

 

কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা

কর্ম-কর্তৃবাচ্যের বাক্যে কর্মই কর্তা রূপে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ, বাক্যের কর্মপদটিই কর্তা হিসেবে কাজ করে এবং ক্রিয়াটি সেই কর্ম পদের অনুসারী হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, "বাঁশটি (কর্ম) কাটছে" এই বাক্যে "বাঁশ" শব্দটি কর্ম হলেও, এটিই যেন কর্তা হিসেবে ক্রিয়াটিকে (কাটছে) ঘটাচ্ছে। 

কর্ম-কর্তৃবাচ্যকে অনেক সময় "অর্ধ-কর্মবাচ্য" বা "মধ্যম-কর্মবাচ্য" বলা হয়। 

কর্ম-কর্তৃবাচ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হলোকর্মপদই এখানে কর্তা হিসেবে কাজ করে, ক্রিয়াটি কর্মপদের অনুসারী হয়, অনেক সময় কর্তা অনুপস্থিত থাকে

উদাহরণ

·        "ঘোড়াটি (কর্ম) ছুটছে।" (এখানে ঘোড়া কর্ম হলেও, ছুটছে ক্রিয়াটি তার অনুসারী)

·        "ধান কাটা হচ্ছে।" (এখানে ধান কর্ম, এবং কাটা হচ্ছে ক্রিয়াটি তার অনুসারী)

·        "কলমটি (কর্ম) পাওয়া গেছে।" (এখানে কলম কর্ম এবং পাওয়া গেছে ক্রিয়াটি তার অনুসারী)

·        ঠাঁস ঠাঁস ভাঙ্গিতেছে বাগানের বাঁশ।" এটা কোন্ বাচ্য -

কর্মকর্তৃবাচ্য:- যে বাক্যে কর্তার উল্লেখ থাকে না, কর্ম পদটিই কর্তার মতো কাজ করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। 'ঠাঁস ঠাঁস ভাঙ্গিতেছে বাগানের বাঁশ'' - এই বাক্যাংশে কর্তা নেই,কর্মকেই ('বাঁশ') কর্তা বলে মনে হয়। অর্থাৎ ...

 

 

1:

 

কর্ম কারক

কর্ম কারক হলো বাক্যের সেই পদ, যা ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য কর্তা যাকে অবলম্বন করে বা যার ওপর নির্ভর করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে। সহজ ভাষায়, কর্ম কারক হলো "যা'কে" বা "যা" দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই। 

আরও সহজে বুঝতে, "কর্ম কারক" হলো

·        কর্তা যা করে বা যার ওপর ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাই কর্ম কারক।

·        বাক্যে "কী" বা "কাকে" দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটি কর্ম কারক।

·        উদাহরণস্বরূপ, "ছেলেটি বই পড়ছে" এই বাক্যে, "ছেলেটি" কর্তা এবং "বই" কর্ম। এখানে "ছেলেটি" কী পড়ছে? - "বই" সুতরাং "বই" কর্ম কারক।

কর্ম কারক সাধারণত দুই প্রকার

1.   উদ্দেশ্য কর্ম: বাক্যের মূল কর্ম পদটি।

2.  বিধেয় কর্ম: উদ্দেশ্য কর্মের সাথে সম্পর্কিত অন্য কর্ম পদটি।

উদাহরণস্বরূপ, "আমি তাকে ভাত Rঁধতে বললাম" এই বাক্যে "তাকে" উদ্দেশ্য কর্ম এবং "ভাত" বিধেয় কর্ম। 

কর্ম কারকের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:

·        কর্ম কারকে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হতে পারে। 

·        দ্বিকর্মক ক্রিয়া (যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে) থাকলে একটি প্রধান কর্ম এবং একটি অপ্রধান কর্ম থাকে। 

·        কর্তা নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তাকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলে। 

উদাহরণস্বরূপ, "মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন" এখানে "শিশু" প্রযোজ্য কর্ম এবং "চাঁদ" প্রযোজক কর্ম। 

 

 

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

 

#.গীর্জায় গিয়ে যীশু ভজে সে' যীশু কোন কারকে কোন বিভক্তি ?

কর্তায় শূন্য

কর্মে ৭মী

কর্মে ২য়া

কর্মে শূন্য

 

বাংলা কারক বিভক্তি কারক-বিভক্তি কারক কর্ম কারক কর্ম কারক

সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম

সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম হলো সেই পদ বা শব্দ যা ক্রিয়ার কাজটি গ্রহণ করে বা যার উপর ক্রিয়াটি সংঘটিত হয়। অন্যভাবে বললে, যে ক্রিয়ার অর্থ সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য কর্মপদের প্রয়োজন হয়, তাকে সকর্মক ক্রিয়া এবং সেই কর্মপদকে "সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম" বলা হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, "ছেলেটি বই পড়ছে" এই বাক্যে "পড়ছে" হলো সকর্মক ক্রিয়া এবং "বই" হলো কর্ম। এখানে "পড়ছে" ক্রিয়াটির অর্থ সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য "বই" কর্মপদের প্রয়োজন হয়েছে। 

সুতরাং, যে কোনো সকর্মক ক্রিয়ার উদাহরণে, কর্মপদটি ক্রিয়াটির সাথে সম্পর্কিত থাকবে এবং সেটিই হবে সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম। 

 

 

প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম

প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম হল সেই পদ যা প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম কারক হিসাবে কাজ করে। অন্যভাবে বলা যায়, যে পদের উপর ক্রিয়াটি (কাজটি) ঘটছে, সেই পদটিই প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম। যেমন, "মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন" এই বাক্যে "শিশু" শব্দটি প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম। এখানে "দেখাচ্ছেন" ক্রিয়াটি "শিশু" এর উপর সংঘটিত হচ্ছে। 

সংক্ষেপে, প্রযোজক ক্রিয়া (যে ক্রিয়া অন্যের দ্বারা চালিত হয়) যে পদের উপর সংঘটিত হয়, সেই পদটিকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলা হয়। 

আরও স্পষ্ট করে বললে, প্রযোজক ক্রিয়া (যেমন "দেখাচ্ছেন", "খেলাচ্ছেন") যে কর্তা দ্বারা (যেমন "মা", "সাপুড়ে") চালিত হয়, সেই কর্তার দ্বারা ক্রিয়াটি যার উপর প্রযুক্ত হয়, সেই পদটিই প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম। 

উদাহরণস্বরূপ

·        "মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন" - এখানে "শিশু" শব্দটি প্রযোজক ক্রিয়া "দেখাচ্ছেন" এর কর্ম।

·        "সাপুড়ে সাপ খেলাচ্ছে" - এখানে "সাপ" শব্দটি প্রযোজক ক্রিয়া "খেলাচ্ছে" এর কর্ম।

 

 

সমধাতুজ কর্ম

সমধাতুজ কর্ম হলো বাক্যের ক্রিয়া কর্ম একই ধাতু থেকে গঠিত হলে, সেই কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাতুর্থক কর্মপদ বলে। 

উদাহরণস্বরূপ, "খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি" এই বাক্যে "ঘুমিয়েছি" ক্রিয়াটি "ঘুম" ধাতু থেকে গঠিত এবং "ঘুম" কর্মপদটিও একই "ঘুম" ধাতু থেকে গঠিত। তাই এখানে "ঘুম" কর্মপদটি সমধাতুজ কর্ম। 

আরও কিছু উদাহরণআর কত খেলা খেলবে, এমন সুখের মরণ কে মরতে পারে, বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছি, আর মায়াকান্না কেঁদো না গো বাপু

সংক্ষেপে, সমধাতুজ কর্ম হলো বাক্যের ক্রিয়া কর্ম একই উৎস থেকে গঠিত হলে তাকে বোঝায়। 

 

 

উদ্দেশ্য বিধেয়

একটি বাক্যের দুটি অংশ থাকে: উদ্দেশ্য (subject) বিধেয় (predicate) বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয়, তাকে বিধেয় বলে। 

উদাহরণস্বরূপ, "ছেলেটি বই পড়ছে" এই বাক্যে "ছেলেটি" হল উদ্দেশ্য এবং "বই পড়ছে" হল বিধেয়। 

আরও সহজভাবে, যদি প্রশ্ন করা হয়, "কে বা কারা?" তাহলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটি উদ্দেশ্য এবং "কী করছে?" বা "কেমন আছে?" এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে যা পাওয়া যায়, তা বিধেয়। 

সুতরাং, একটি বাক্যের গঠন বুঝতে হলে উদ্দেশ্য বিধেয় এই দুটি অংশ ভালোভাবে বুঝতে হবে। 

 

করণ কারক

করণ কারক (Karon karok) হল বাংলা ব্যাকরণে কারক (Karak) শব্দের একটি প্রকার, যা ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা উপায়কে নির্দেশ করে। 

করণ কারকের সংজ্ঞা:
করণ কারক (Karon karok) মানে হল যা দিয়ে বা যার দ্বারা ক্রিয়া (verb) সম্পন্ন হয়। অন্যভাবে বললে, যে বস্তুকে অবলম্বন করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে করণ কারক বলে। 

করণ কারক চেনার উপায়:
করণ কারক চিনতে হলে বাক্যের ক্রিয়াপদকে "কিসের দ্বারা", "কী উপায়ে" বা "কী দিয়ে" প্রশ্ন করতে হয়। উত্তরে যা পাওয়া যায়, তাই করণ কারক। 

উদাহরণ

·        "ছেলেটি বল দিয়ে খেলছে।" - এখানে "বল দিয়ে" হল করণ কারক, কারণ "খেলছে" ক্রিয়াটি "বল দিয়ে" সম্পন্ন হচ্ছে।

 

 

সম্প্রদান কারক

সম্প্রদান কারক হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি কারক যা "যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, বা সাহায্য করা হয়" তাকে বোঝায়। একে নিমিত্ত কারকও বলা হয়। এখানে ব্যক্তিই সম্প্রদান কারক হয়, বস্তু নয়। 

সম্প্রদান কারক:

·        সংজ্ঞা: বাক্যে যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু দেওয়া বা করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। 

·        উদাহরণ:

o   "দরিদ্রকে দান করো।এখানে "দরিদ্রকে" সম্প্রদান কারক। 

o   "ভিখারিকে ভিক্ষা দাও।এখানে "ভিখারিকে" সম্প্রদান কারক। 

o   "সৎপাত্রে কন্যা দান করো।এখানে "সৎপাত্রে" সম্প্রদান কারক। 

সম্প্রদান কারকের বৈশিষ্ট্য:

·        স্বত্ব ত্যাগ: সম্প্রদান কারকে গ্রহীতার প্রতি দাতার স্বত্ব (অধিকার) সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা বোঝায়। 

·        ব্যক্তিবাচকতা: সাধারণত ব্যক্তিকেই সম্প্রদান কারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

·        বিভক্তি: চতুর্থী বিভক্তি (যেমন: -কে, -রে) সাধারণত সম্প্রদান কারকে ব্যবহৃত হয়। 

সম্প্রদান কারকের গুরুত্ব: 

·        বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করে: সম্প্রদান কারক বাক্যের উদ্দেশ্য এবং গ্রহীতাকে নির্দেশ করে, যা অর্থের স্পষ্টতা বাড়ায়।

·        ভাষার মাধুর্য বৃদ্ধি করে: এটি ভাষার সৌন্দর্য মাধুর্য বৃদ্ধি করে।

সম্প্রদান কারক সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: 

·        সম্প্রদান কারক এবং কর্ম কারক: অনেক সময় সম্প্রদান কারক এবং কর্ম কারকের মধ্যে বিভক্তিগত (যেমন: চতুর্থী বিভক্তি) মিল দেখা যায়। তবে, সম্প্রদান কারকে স্বত্বত্যাগের বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

·        কিছু ব্যাকরণবিদ সম্প্রদান কারককে কর্ম কারকের অন্তর্ভুক্ত করতে চান।

 

 

 

অপাদান কারক

অপাদান কারক মূলত বিশেষ্য পদ এবং এর সাথে সম্পর্কিত পদ যেমন বিশেষণ বা সর্বনাম এর উপর প্রযুক্ত হয়। অপাদান কারক দিয়ে সাধারণত কোনো কিছু থেকে সরে যাওয়া অর্থ বোঝানো হয়। বাংলা ভাষাতে বিশেষ্যের পরে হতে, থেকে,চেয়ে (পঞ্চমী বিভক্তি), দিয়া, দিয়ে (তৃতীয়া বিভক্তি) ইত্যাদি অনুসর্গ ব্যবহার করে সাধারণত অপাদান কারক বোঝানো হয়।

 

 

অধিকরণ কারক

অধিকরণ কারক হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি কারক যা ক্রিয়া সম্পাদনের স্থান সময় নির্দেশ করে। সহজ ভাষায়, অধিকরণ কারক হলো যা ক্রিয়া সংঘটনের আধার বা ক্ষেত্র নির্দেশ করে। একে ইংরেজিতে "locative case" বলা যেতে পারে। 

অধিকরণ কারক চেনার উপায়:

·        "কখন" বা "কোথায়" দিয়ে প্রশ্ন করে যদি উত্তর পাওয়া যায়, তবে সেটি অধিকরণ কারক। 

·        এই কারকে সাধারণত "", "", "তে" ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। 

উদাহরণ

·        "বনে বাঘ থাকে" - এখানে "বনে" শব্দটি অধিকরণ কারক, কারণ "কোথায়" বাঘ থাকে? - এই প্রশ্নের উত্তরে "বনে" পাওয়া যাচ্ছে।

·        "গরমকালে বৃষ্টি হয়" - এখানে "গরমকালে" শব্দটি অধিকরণ কারক, কারণ "কখন" বৃষ্টি হয়? - এই প্রশ্নের উত্তরে "গরমকালে" পাওয়া যাচ্ছে।

·        "তিনি ক্লাসে প্রথম হয়েছেন" - এখানে "ক্লাসে" শব্দটি অধিকরণ কারক, কারণ "কোথায়" প্রথম হয়েছেন? - এই প্রশ্নের উত্তরে "ক্লাসে" পাওয়া যাচ্ছে।

অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ:

·        কালাধিকরণ: সময় বোঝালে, যেমন - "সকালে সূর্য ওঠে" 

·        আধারাধিকরণ: স্থান বা পাত্র বোঝালে, যেমন - "ঘি তে ঘি থাকে" 

·        ভাবাধিকরণ: ক্রিয়া পদের动作 বা ভাব বোঝালে, যেমন - "কান্নাতে তার বুক ভেসে যাচ্ছে" 

 

 

কালাধিকরণ

কালাধিকরণ একটি বাংলা ব্যাকরণের পারিভাষিক শব্দ যা অধিকরণ কারকের একটি প্রকারভেদ। এটি ক্রিয়া সম্পাদনের সময় বা কালকে নির্দেশ করে। যখন কোনো বাক্যে ক্রিয়া সংঘটনের সময় উল্লেখ করা হয়, তখন সেটি কালাধিকরণ কারক হয়। 

অধিকরণ কারক সাধারণত "কখন" এবং "কোথায়" এই দুটি প্রশ্নের মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। "কখন" প্রশ্নের উত্তরে কালাধিকরণ কারক এবং "কোথায়" প্রশ্নের উত্তরে স্থানাধিকরণ বা আধারাধিকরণ কারক পাওয়া যায়। 

উদাহরণস্বরূপ

·        "সূর্য সকালে উঠে।" - এখানে "সকালে" শব্দটি কালাধিকরণ কারক, যা "কখন" প্রশ্নের উত্তরে এসেছে।

·        "বিকেল বেলা মাঠে খেলা হবে।" - এখানে "বিকেল বেলা" শব্দটি কালাধিকরণ কারক।

কালাধিকরণ কারকে সাধারণত "", "", "তে" ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। 

 

 

ভাবাধিকরণ

ভাবাধিকরণ হলো অধিকরণ কারকের একটি প্রকার, যেখানে একটি ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার ফলে আরেকটি ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার ভাব প্রকাশ পায়। এটিকে "ভাবে সপ্তমী" বলা হয়, কারণ এতে সপ্তমী বিভক্তি (/য়/তে) যুক্ত হয়

ভাবাধিকরণের সংজ্ঞা এবং উদাহরণ

·        সংজ্ঞা:

যখন একটি কাজ হওয়ার কারণে আরেকটি কাজ সংঘটিত হয়, তখন প্রথম কাজটিকে ভাবাধিকরণ কারক বলা হয়.

·        উদাহরণ:

·        সূর্যোদয়ে পদ্ম ফোটে (সূর্যোদয় হওয়ার কারণে পদ্ম ফুল ফুটেছে).

·        বৃষ্টিতে বেগ বাড়ে (বৃষ্টি হওয়ার কারণে বেগ বেড়েছে).

·        বসন্তে وكিল ডাকে (বসন্ত আসার কারণে কোকিল ডাকছে).

·        বিপদে মোরে রক্ষা করো (বিপদ আসার কারণে রক্ষা করার প্রয়োজন হয়েছে).

 

 

আধারাধিকরণ

আধারাধিকরণ একটি বাংলা ব্যাকরণের ধারণা যা অধিকরণ কারকের একটি প্রকারভেদ। অধিকরণ কারক ক্রিয়া সম্পাদনের স্থান বা কাল নির্দেশ করে। আধারাধিকরণ স্থান বা আধারকে নির্দেশ করে এবং এটি তিন প্রকার: ঐকদেশিক, অভিব্যাপক, বৈষয়িক। 

আধারাধিকরণের প্রকারভেদ:

1.  1. ঐকদেশিক আধারাধিকরণ:

যখন কোনো বিশাল স্থানের একটি নির্দিষ্ট অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হয়, তখন তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন: "পুকুরে মাছ আছে" (এখানে মাছ পুকুরের যে কোনো একটি অংশে আছে) 

2.   2. অভিব্যাপক আধারাধিকরণ:

যখন কোনো বস্তু সমগ্র আধারকে ব্যাপৃত করে থাকে, তখন তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে। উদাহরণস্বরূপ, "ঘরে আলো আছে" (আলো পুরো ঘরটিকে আলোকিত করে) 

3.   3. বৈষয়িক আধারাধিকরণ:

যখন কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কোনো বিশেষ বিষয়ে দক্ষ বা পারদর্শী হয়, তখন সেখানে বৈষয়িক আধারাধিকরণ হয়। যেমন: "রাম অংকে ভালো" (রাম অংকের ক্ষেত্রে পারদর্শী) 

সুতরাং, আধারাধিকরণ অধিকরণ কারকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা স্থান বা আধারকে কেন্দ্র করে ক্রিয়ার অবস্থান নির্দেশ করে। 

 

 

সম্বন্ধ পদ

সম্বন্ধ পদ হলো সেই পদ যা বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সাথে অন্য বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সম্পর্ক নির্দেশ করে। এটি বাক্যের ক্রিয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, বরং অন্যান্য পদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, "রামের ভাই" বাক্যে "রামের" শব্দটি সম্বন্ধ পদ, যা "ভাই" এর সাথে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু "যাবে" ক্রিয়া পদের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। 

সংক্ষেপে, সম্বন্ধ পদ হলো

·        বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সাথে অন্য বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সম্পর্ক।

·        ক্রিয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

·        "" বা "এর" বিভক্তি যুক্ত হয়ে সম্বন্ধ পদ গঠিত হয়।

উদাহরণ: "রামের ভাই" - এখানে "রামের" সম্বন্ধ পদ, "খালিদের বই" - এখানে "খালিদের" সম্বন্ধ পদ, "কালের যাত্রা" - এখানে "কালের" সম্বন্ধ পদ

অতএব, সম্বন্ধ পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ যা বাংলা ব্যাকরণে বিভিন্ন পদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।