অধ্যায় ২ দিল্লী সালতানাত + মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস |

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি (BCS) Preliminary Preparation 200 Marks সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ)

দিল্লী সালতানাত |

দিল্লী সালতানাত বলতে মধ্যযুগে ১২০৬ থেকে ১৫২৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ের ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনকালকে বুঝানো হয়। সময়ে ভিন্ন ভিন্ন শাসকগোষ্ঠী ভারত উপমহাদেশ শাসন করলে তারা সকলেই ছিলেন মুসলিম এই সময় বিভিন্ন তুর্কি আফগান রাজবংশ দিল্লি শাসন করে যেমন- মামলুক সুলতান বা দাস বংশ (১২০৬-৯০) , খিলজি রাজবংশ (১২৯০-১৩২০), তুঘলক রাজবংশ (১৩২০-১৪১৩), সৈয়দ রাজবংশ (১৪১৩-৫১) এবং লোদি রাজবংশ (১৪৫১-১৫২৬) সকল রাজবংশ সাম্রাজ্যকে একত্রেদিল্লী সালতানাতনামে অভিহিত করা হয় দিল্লির সুলতানদের শাসনকালে ভারতীয় সভ্যতার সাথে ইসলামী সভ্যতার মিশ্রণ ঘটেছিল দিল্লী সালতানাতের কারণেই ভারত উপমহাদেশ ইসলাম প্রচারের সুযোগ তৈরি হয়েছিল এবং ফলশ্রুতিতে উপমহাদেশে ইসলাম একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫২৬ সালে দিল্লি সালতানাত মুঘল সাম্রাজ্যের কাছে পরাজিত হলে উপমহাদেশে দিল্লী সালতানাতের অবসান হয়

 

দাস বংশ (১২০৬-৯০)

ভারতবর্ষে প্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন মুহম্মদ ঘুরী। ময়েজউদ্দিন মুহম্মদ বিন সাম ইতিহাসে মুহম্মদ ঘুরী নামে পরিচিত। কোন কোন ঐতিহাসিক ঘুরীদের পারসিক জাতি বলে অভিহিত করলেও ঐতিহাসিক লেনপুল তাদের আফগান জাতির বংশধর বলে অভিহিত করেছেন। গজনীতে ঘুর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে মুহম্মদ ঘুরী উপমহাদেশে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন।

·        তরাইনের প্রথম যুদ্ধ:
প্রতিপক্ষ : মুহম্মদ ঘুরী পৃথ্বিরাজ চৌহান
সময়কাল : ১১৯১ খ্রিঃ
ফলাফল : মুহম্মদ ঘুরী শোচনীয়ভাবে পরাজিত আহত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।

·        তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ:
প্রতিপক্ষ : মুহম্মদ ঘুরী পৃথ্বিরাজ চৌহান
সময়কাল : ১১৯২ খ্রিঃ
ফলাফল : পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত নিহত হন এবং মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

অতঃপর মুহম্মদ ঘুরী উত্তর উপমহাদেশের শাসনভার তার সুযোগ্য সেনাপতি কুতুবুদ্দিনের উপর ন্যস্ত করে গজনী প্রত্যাবর্তন করেন। কুতুবউদ্দিন উত্তর ভারতে রাজ্যবিস্তার করে দিল্লীতে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। 'আইবেক' কথাটির অর্থ হল 'ক্রীতদাস' মুহাম্মদ ঘুরি কুতুবউদ্দিন আইবেককে ক্রীতদাস হিসেবে ক্রয় করেছিলেন। এই কারণে ইংরেজ ঐতিহাসিকরা তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে দাসবংশ নামে এবং ১২০৬ থেকে ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কে মামলুকদের শাসনকাল হিসেবে অভিহিত করেন।

সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবেক (১২০৬-১২১০ সাল)

কুতুবুদ্দিন আইবেক মুহম্মদ ঘুরীর একজন ক্রীতদাস হিসাবে জীবন শুরু করেন। তিনি মুহম্মদ ঘুরির অনুমতিক্রমে ভারত বিজয়ের পর দিল্লীতে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করেন। উপমহাদেশে স্থায়ী মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক। দানশীলতার জন্য তাঁকে ' লাখবক্স ' বলা হত। দিল্লীর কুতুবমিনার নামক সুউচ্চ মিনারটির নির্মাণকাজ শুরু হয় তাঁর শাসনামলে। তিনি মিনারটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি। দিল্লীর বিখ্যাত সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে এর নাম রাখা হয় কুতুবমিনার।

সুলতান শামসউদ্দিন ইলতুতমিশ (১২১১-১২৩৬ সাল)

কুতুবউদ্দিন আইবেকের জামাতা ইলতুৎমিশ ১২১১ সালে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি দিল্লী সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি কুতুব মিনার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন এবং নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন। ভারতে মুসলমান শাসকদের মধ্যে তিনি প্রথম মুদ্রা প্রচলন করেন। তিনি ১২২৯ সালে বাগদাদের খলিফা আল মুনতাসির কর্তৃক 'সুলতান--আজম' উপাধি প্রাপ্ত হন। তাঁর পুত্র নাসিরুদ্দীন মাহমুদ বাংলার বিদ্রোহী সুলতান গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজীকে পরাজিত করে বাংলা দিল্লীর শাসনাধীনে আনায়ন করেন। ইলতুৎমিশ চল্লিশজন দূর্বী সেনাপতির নেতৃত্বে এক বিরাট তুর্কী বাহিনী গঠন করেন। ইলতুতমিশের চল্লিশজন সেনাপতি ইতিহাসে বিশিষ্ট 'চল্লিশ' নামে পরিচিত।

সুলতানা রাজিয়া ( ১২৩৬ - ১২৪০ )

সুলতানা রাজিয়া ছিলেন ইলতুৎমিশের কন্যা। তিনি ছিলেন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণকারী প্রথম মুসলমান নারী ১২৩৬ সালে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং অমাত্যদের চক্রান্তে মাত্র চার বছর পরই ১২৪০ সালে তিনি সিংহাসনচ্যুত হন।

সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ (১২৪৬-১২৬৬ সাল)

নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন দিল্লির মামলুক সালতানাতের ৮ম সুলতান। তিনি নাসিরউদ্দিন মাহমুদের পুত্র সুলতান ইলতুতমিশের পৌত্র ছিলেন। ইলতুতমিশ তাকে তার বাবার নাম প্রদান করেছিলেন। আলাউদ্দিন মাসুদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি মসনদে বসেন। তিনি অত্যন্ত ধর্মভীরু লোক ছিলেন সরল অনাড়ম্বর জীবনযাপনের জন্য তিনি ফকির বাদশাহ নামে পরিচিত। তিনি কুরআন নকল টুপি সিলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন (১২৬৬-১২৮৭ সাল)

গিয়াসউদ্দিন বলবন ছিলেন দিল্লির ৯ম মামলুক সুলতান। তিনি প্রথমে নাসিরউদ্দিন মাহমুদের উজির ছিলেন। নাসিরউদ্দিন নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যাওয়ার পর বলবন মসনদে বসেন। বলবন ১২৬৬ থেকে ১২৮৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শাসন করেছেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বিদ্যোৎসাহী গুণীজনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। 'ভারতের তোতা পাখি' নামে পরিচিত আমীর খসরু বলবনের দরবার অলংকৃত করেন।

খলজী বংশ (১২৯০-১৩২০খ্রিঃ)

খলজী রাজবংশ ছিল তুর্কি-আফগান বংশোদ্ভুত মুসলিম রাজবংশ। ১২৯০ থেকে ১৩২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই রাজবংশ দক্ষিণ এশিয়ার বিরাট অংশ শাসন করে। জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজী এই রাজবংশের পত্তন করেন। এটি দিল্লি সালতানাত শাসনকারী দ্বিতীয় রাজবংশ।

জালাল উদ্দিন খিলজী ( ১২৯০ - ১২৯৬ )

জালালউদ্দিন খিলজী যিনি সিংহাসন আরোহণের সময় ৭০ বছর বয়সি ছিলেন , একজন প্রজাদরদি এবং বিনয়ী সুলতান ছিলেন তিনি খলজী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তুর্কি অভিজাতদের বিরুদ্ধাচরণ সত্বেও তিনি ১২৯০ সালে দিল্লির মসনদে বসেন। জালাল উদ্দিনের এই আরোহণ সবাই মেনে নেই নি। বরং তার বছরের শাসনে বলবন এর ভাইপো মমলুকদের প্রতি অনুগত সামরিক অধিনায়কদের নিয়ে বিদ্রোহ করে জালাল উদ্দিন এই বিদ্রোহ দমান এবং অনেক অধিনায়কদের মৃত্যুদণ্ড দেন।

আলাউদ্দিন খলজী (১২৯৬-১৩১৬)

পর্যটক ইবনে বতুতা আলাউদ্দিন খলজীকে দিল্লীর শ্রেষ্ঠ সুলতান বলে অভিহিত করেছেন। আলাউদ্দিন খলজী জণগনের সার্বিক কল্যাণের জন্য দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের উপর হস্তক্ষেপ করেন এবং প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য নির্দিষ্ট হারে বেধে দেন। তিনি শিল্পানুরাগী ছিলেন। বিখ্যাত ' আলাই দরওয়াজা ' তাঁরই কীর্তি। তিনি প্রথম মুসলমান শাসক হিসাবে দক্ষিণ ভারত জয় করেন।

তুঘলক বংশ (১৩২০-১৪১৩ সাল)

তুঘলক বংশ ১৩২০ সালে গিয়াসউদ্দিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি তুর্কি মুসলিম রাজবংশ যারা ১৩২০ থেকে ১৪১৩ পর্যন্ত দিল্লী সালতানাতের শাসক ছিল। এই সালতানাতের রাজধানী ছিল দিল্লি। এই সাম্রাজ্য মধ্যযুগে ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করেছে।

মুহম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১)

·        মুহম্মদ বিন তুঘলক অত্যন্ত প্রতিভাশালী শাসক ছিলেন

·        দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তররাজ্য শাসনের প্রত্যক্ষ অসুবিধা দূর করার জন্য ১৩২৬- ২৭ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানী দিল্লী থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু নানাকারণে কর্মচারীদের দেবগিরি পছন্দ না হওয়ায় এবং উত্তর ভারতে মোঙ্গলদের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি রাজধানী দিল্লীতে ফেরত আনেন।

·        প্রতীক মুদ্রার প্রচলনসুলতান সোনা রূপার মুদ্রার পরিবর্তে প্রতীক তামার মুদ্রা প্রচলন করে মুদ্রামান নির্ধারণ করে দেন। প্রতীক মুদ্রা জাল না হওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা সে যুগে ছিল না। ফলে ব্যাপকভাবে মুদ্রা জাল হতে থাকে। এজন্য সুলতানকে পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হয়।

·        ইবনে বতুতার আগমন১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ইবনে বতুতা ভারত বর্ষে আগমন করেন।

মাহমুদ শাহ

তুঘলক বংশের শেষ সুলতান ছিলেন মাহমুদ শাহ। বিখ্যাত তুর্কি বীর তৈমুর ছিলেন মধ্য এশিয়ার সমরকন্দের অধিপতি। শৈশবে তাঁর একটি পা খোড়া হয়ে যায় বলে তিনি তৈমুর লঙ নামে অভিহিত। মধ্য এশিয়ায় বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে ১৩৯৮ সালে তৈমুর ভারত আক্রমণ করেন। তৈমুরকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা মাহমুদ শাহের ছিলনা। তিনি বিনা বাধায় দিল্লীতে প্রবেশ করেন। প্রায় তিনমাস ধরে অবাধ হত্যা লুন্ঠনের পর তিনি বিপুল সম্পদ নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান।

খান জাহান আলী

খানজাহান আলী ছিলেন একজন মুসলিম ধর্মপ্রচারক এবং বাংলাদেশের বাগেরহাটের একজন স্থানীয় শাসক। খান জাহান আলী তুঘলক সেনাবাহিনীতে সেনাপতির পদে যোগদান করেন। তিনি রাজা গণেশকে রাজি করে বাংলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন। তিনি বাগেরহাট জেলায় বিখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীতে (১৪৩৫-১৪৫৯ খ্রিঃ) এটি নির্মাণ করেন।

মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদে গম্বুজ মোটেও ষাটটি নয়, গম্বুজ মোট ৮১টি। মসজিদের ভিতরে ষাটটি স্তম্ভ বা পিলার আছে। মসজিদের চারকোণায় চারটি মিনার আছে। এটি বাংলাদেশের মধ্যযুগের সবচেয়ে বড় মসজিদ। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে।

লোদী বংশ (১৪৫১-১৫২৬ খ্রিঃ)

লোদী রাজবংশটি পশতুন (আফগান) লোদী উপজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাহলুল খান লোদী ,লোদী রাজবংশের সূচনা করেছিলেন এবং প্রথম পশতুন ছিলেন যিনি দিল্লির সুলতানি শাসন করেছিলেন। লোদী বংশ রাজবংশ দিল্লী সালতানাতের পঞ্চম এবং সর্বশেষ রাজবংশ ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের নিকট দিল্লীর লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহীম লোদীর পরাজয়ের মাধ্যমে দিল্লীর সালতানাতের পতন ঘটে। ১৫২৬ সালে বাবর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপনে উদ্যোগী হলে দিল্লীর সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে।

 

মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস |

জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে ইব্রাহীম লোদীকে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাঘতাই খান তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ অবদমিত হলে যোগদানকারী মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহদুর শাহকে রেংগুনে পাঠানো হয়। এভাবে মুঘল সাম্রাজ্য শেষ হয়।

পানিপথ : পানিপথ উত্তর-পশ্চিম ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের একটি শহর। এটি দিল্লি থেকে ৯০ কিমি, উত্তরে যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে পানিপথের যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

পানিপথের যুদ্ধসমূহ :

·        পানিপথের প্রথম যুদ্ধ : ↓
প্রতিপক্ষবাবর এবং ইব্রাহিম লোদী
সময়কাল১২ এপ্রিল, ১৫২৬
ফলাফলইব্রাহীম লোদী পরাজিত নিহত হন। দিল্লির সালতানাতের পতন হয় এবং উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়। বাবুর এই যুদ্ধে কামান ব্যবহার করেন। এটি ভারতের ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে প্রথম কামান ব্যবহার।

·        পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ : ↓
প্রতিপক্ষআকবর সেনাপতি বৈরাম খান এবং আফগান নেতা হিমু
সময়কাল১৫৫৬ সাল
ফলাফলহিমু পরাজিত নিহত হন। যুদ্ধের ফলে আকবর দিল্লি অধিকার করেন। যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আফগান সংঘর্ষের অবসান ঘটে।

·        পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ : ↓
প্রতিপক্ষআহমদ শাহ আবদালি মারাঠা
সময়কাল১৭৬১ সাল
ফলাফলআহমদ শাহ আবদালি মারাঠাদিগকে পরাজিত করেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের বংশ তালিকা

·        সম্রাট জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ( মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) (১৫২৬১৫৩০ খ্রি.)

·        সম্রাট হুমায়ুন (১৫৩০১৫৪০ খ্রি.)

·        সম্রাট আকবর (১৫৫৬১৬০৫ খ্রি.)

·        সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫১৬২৭ খ্রি.)

·        সম্রাট শাহজাহান (১৬২৮১৬৫৮ খ্রি.)

·        সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮১৭০৭ খ্রি.)

·        সম্রাট বাহাদুর শাহ (১৭০৮১৭১২ খ্রি.)

·        সম্রাট জাহান্দার শাহ (১৭১২১৭১৩ খ্রি.)

·        সম্রাট ফাররুকশিয়ার (১৭১৩১৭১৯ খ্রি.)

·        সম্রাট রাফি-উদ-দারজাত (২৮ ফেব্রুয়ারি জুন ১৭১৯ খ্রি.)

·        সম্রাট দ্বিতীয় শাহজাহান ( জুন ১৭১৯১৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ খ্রি.)

·        সম্রাট মোহাম্মদ শাহ (১৭১৯১৭৪৮ খ্রি.)

·        সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর (১৭৪৮১৭৫৪ খ্রি.)

·        সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪১৭৫৯ খ্রি.)

·        সম্রাট তৃতীয় শাহজাহান ( ১০ ডিসেম্বর ১৭৫৯১০ অক্টোবর ১৭৬০ খ্রি.)

·        সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ( ১৭৬০১৮০৬ খ্রি.)

·        সম্রাট মোহাম্মদ শাহ বাহাদুর ( ৩১ জুলাই ১৭৮৮ অক্টোবর ১৭৮৮ খ্রি.)

·        সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ ( ১৮০৬১৮৩৭ খ্রি.)

·        সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭১৮৫৭ খ্রি.)

পরিচিত নাম

জন্মের সময় নাম

সম্রাট জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর

জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ

সম্রাট হুমায়ুন

নাসির উদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন

সম্রাট আকবর

জালাল-উদ্দিন-মোহাম্মদ

সম্রাট জাহাঙ্গীর

নুরুদ্দিন মোহাম্মদ সেলিম

সম্রাট শাহজাহান

শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ খুররাম

সম্রাট আওরঙ্গজেব

মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব

সম্রাট বাহাদুর শাহ

কুতুব উদ্দিন মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম শাহ আলম

সম্রাট জাহান্দার শাহ

মাজ উদ্দিন জাহান্দার শাহ বাহাদুর

সম্রাট ফাররুকশিয়ার

ফররুখসিয়ার

সম্রাট রাফি-উদ-দারজাত

রাফি উল-দারজাত

সম্রাট দ্বিতীয় শাহজাহান

রাফি উদ-দৌলত

সম্রাট মোহাম্মদ শাহ

রশান আক্তার বাহাদুর

সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর

আহমেদ শাহ বাহাদুর

সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর

আজিজ-উদ-দীন

সম্রাট তৃতীয় শাহজাহান

মহি উল মিল্লাত

সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম

আলী গহর

সম্রাট মোহাম্মদ শাহ বাহাদুর

বিদার বক্

সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ

মির্জা আকবর

সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ

আবু জাফর সেরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ জাফর

মুঘল সম্রাটদের জন্মের সময় নাম

জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর (১৫২৬-১৫৩০ )

১৪৮৩ সালে বাবর মধ্য এশিয়ার বর্তমান রুশ-তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ফারগানায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতার দিক হতে তৈমুর লঙ এবং মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। তিনি ছিলেন ফারগানার যুবরাজ। পিতার মৃত্যু হলে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি পিতৃসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। জ্ঞাতিশত্রুদের আক্রমণে সিংহাসনচ্যুত ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তিনি পূর্বদিকে গমন করেন এবং ১৫০৪ সালে কাবুল দখল করে নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা করেন দিল্লীর শাসনকর্তা ইব্রাহীম লোদীর জ্ঞাতিশত্রু পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খান লোদী বাবরকে ভারতবর্ষ আক্রমনের আহবান জানালে বাবর বিনা বাধায় ১৫২৫ সালে পাঞ্জাব দখল করেন। ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল বাবর দিল্লীর অদূরে পানিপথের প্রান্তরে ইব্রাহীম লোদীর মুখোমুখি হন। যুদ্ধে বাবর ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কামানের ব্যবহার করেন ইব্রাহীম লোদী পরাজিত নিহত হলে বাবর দিল্লী অধিকার করেন এবং নিজেকে সমগ্র হিন্দুস্তানের বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ১৫২৭ সালে রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করে দিল্লীতে মুঘল সম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৩০ সালে বাবর মারা যান। তিনি ' তুযুক--বাবর ' নামে আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন যা ফরাসি ভাষায় রচিত।

নাসির উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন (১৫৩০-১৫৪০)

বাবুরের মুত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হুমায়ূন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট হুমায়ূন বাংলা প্রবেশ করেন এবং গৌড় অধিকার করেন। তিনি গৌড় নগরের অপরূপ সৌন্দর্য এবং এর অপরূপ জলবায়ুর উৎকর্ষ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি গৌড় নগরীর নাম পরিবর্তন করে 'জান্নাতাবাদ'/ জান্নাতুল সুবাহ রাখেন। তিনি বাংলায় আটমাস অবস্থান করে দিল্লীর দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে বক্সারের নিকটবর্তী চৌসা নামক স্থানে শেরশাহ হুমায়ূনকে অতর্কিত আক্রমণ করেন। চৌসারের যুদ্ধে (১৫৩৯ সাল) পরাজিত হয়ে হুমায়ূন কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে দিল্লী পৌঁছেন। পরের বছর (১৫৪০ সাল) শের শাহের বিরুদ্ধে আবার অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু কনৌজের নিকট বিলগ্রামের যুদ্ধে তিনি আবার পরাজিত হন। বিজয়ী শেরশাহ দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। শেরশাহ ভারতে পাঠান শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পারস্য সম্রাটের সহায়তায় হুমায়ূন ১৫৫৫ সালে পুনরায় দিল্লী দখল করেন। ১৫৫৬ সালে দিল্লীর অদূরে তাঁর নির্মিত দীন পানাহ দূর্গের পাঠাগারের সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

মসলিন : মসলিন তুলার আশ থেকে প্রস্তুত করা এক ধরনের সূক্ষ্ম কাপড় বিশেষ। বাংলার ইতিহাসে মসলিন বলতে তৎকালীন ঢাকা এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় উৎপাদিত অতি সূক্ষ্ম কাপড়কে বোঝানো হতো। এটি "ঢাকাই মসলিন" নামে বিশ্বব্যাপী খ্যাত ছিল। মসলিন শব্দের উৎপত্তির উৎস অস্পষ্ট হলেও নামটি যে ইউরোপীয়দের দেয়া সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। মসলিন মুঘল সম্রাটদের বিলাসের বস্তু ছিল।

শেরশাহ (শুর শাসন) - (১৫৪০-১৫৫৫)

শেরশাহ (১৫৪০-১৫৪৫) : শের খান প্রথম জীবনে বিহারের শাসনকর্তা সুলতান মুহম্মদের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুঘল সম্রাট বাবরের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং বাবরের বিরাগভাজন হয়ে পলায়ন করে পুনরায় সুলতান মুহম্মদের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। সুলতান মুহম্মদের মৃত্যুর পর তিনি বিহারের প্রকৃত শাসনকর্তা হয়ে বসেন। ১৫৩৮ সালে তিনি বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদকে পরাজিত করে বাংলা দখল করেন। ১৫৩৯ সালে চৌসারের যুদ্ধে হুমায়ূনকে পরাজিত করে শেরখান 'শেরশাহ' উপাধি নেন। তিনি নিজেকে বিহারের স্বাধীন সুলতান হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৫৪০ সালে তিনি বাংলা দখল করেন। একই বছর তিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে দিল্লী অধিকার করে উপমহাদেশে আফগান সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রকৃত নাম ফরিদ খান  ১৫৪৫ সালে বারুদ বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন।

·        গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডতিনিসড়ক আজম ' বাংলাদেশের সোনারগাঁ থেকে লাহোর পর্যন্ত ৪৮৩০ কি.মি. (৩০০০ মাইল) দীর্ঘ একটি মহাসড়ক নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ইংরেজগণ রাস্তা সংস্কার করে নাম দেয় 'গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড '

·        ডাক ব্যবস্থার উন্নয়নতিনি ডাক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

·        কবুলিয়ত পাট্টাশেরশাহ কবুলিয়ত (চুক্তি দলিল) পাট্টার (ভূমি স্বত্বেও দলিল) প্রচলন করেন। কৃষকগণ তাদের অধিকার দায়িত্ব বর্ণনা করে সরকারকে কবুলিয়ত নামে দলিল সম্পাদন করে দিত আর সরকার পক্ষ থেকে জমির উপর জনগণের স্বত্ব স্বীকার করে নিয়ে পাট্টা দেওয়া হত।

·        দাম মুদ্রাঃ শেরশাহ মুদ্রাব্যবস্থার সংস্কার করেন। তিনি 'দাম' নামক রূপার মুদ্রার প্রচলন করেন।

মুঘল সাম্রাজ্য (দ্বিতীয় পর্যায়)

সম্রাট জালাল উদ্দিন আকবর (১৫৫৬-১৬০৫ সাল)

১৫৫৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর বৈরাম খান আকবরের রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হন। এজন্য আকবর অনুরাগবশত তাকে Lord Father বা খান বাবা বলে ডাকতেন। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর হিমু দিল্লীর মুঘল শাসনকর্তাকে পরাজিত করে দিল্লী আগ্রা অধিকার করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন।

·        আকবরের উদার নীতিঅমুসলমানদের উপর ধার্য সামরিক করকে জিজিয়া কর বলে। সম্রাট আকবর রাজপুত হিন্দুদের বন্ধুত্ব অর্জন করার জন্য তীর্থ জিজিয়া কর রহিত করেন। তিনি রাজপুত কন্যা যোধাবাঈকে বিবাহ করেন। তিনি রাজপুতদের বিভিন্ন উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করেন।

·        আকবরের ধর্মমত১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সকল ধর্মের সার সম্বলিত 'দীন-- ইলাহী' নামক নতুন একেশ্বরবাদী ধর্মমত প্রবর্তন করেন।

·        আকবরের চরিত্র কৃতিত্বসম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য সর্বাধিক বিস্তার লাভ করে। আকবর ১৫৭৬ সালে বাংলা জয় করেন। সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য সম্রাট আকবর সাম্রাজ্যকে ১৫টি প্রদেশে ভাগ করেন। রাজকর্মচারীদের সুবিন্যস্ত করার জন্য তিনি মনসবদারী প্রথা চালু করেন। সম্রাটের রাজসভার সদস্যদের মধ্য আবুল ফজল, ফৈজী, টোডরমল, বীরবল, মানসিংহ প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল রাজস্ব ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। আবুল ফজল রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ 'আইন--আকবরি' আকবরের রাজসভার গায়ক ছিলেন তানসেন। তানসেনকে 'বুলবুল--হিন্দ' বলা হয়। আকবরের রাজসভার বিখ্যাত কৌতুককার ছিলেন বীরবল। তার আমলে নির্মিত হয় ফতেহপুর সিকরি।

·        আকবরের সময় সমগ্র বঙ্গদেশ - 'সুবহ--বাঙ্গালাহ' নামে পরিচিত ছিল।

·        'বুলান্দ দরওয়াজা' - এর নির্মাতা সম্রাট আকবর।

·        অমৃতসর স্বর্ণমন্দির - এর নির্মাতা সম্রাট আকবর।

·        আকবরের সমাধি - সেকেন্দ্রায়।

·        বাংলাদেশে বার ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে - সম্রাট আকবরের সময়।

সেলিম নূর উদ্দিন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭ সাল)

সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে নূরজাহানের বিবাহ মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি অপূর্ব রূপবতী গুণবর্তী মহিলা ছিলেন। নূরজাহানের বাল্য নাম ছিল মেহেরুন নেছা। সম্রাট আকবর বাংলা জয় করলেও সারা বাংলায় মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলায় মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'তুজুক--জাহাঙ্গীর' 

·        জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ভারতে ইংরেজদের আগমন ঘটে।

·        নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন।

·        তিনি আগ্রার দূর্গ নির্মান করেন।

·        বাংলা দখল করার জন্য সুবাদার ইসলাম খান চিশতীকে (বাংলার প্রথম মুঘল সুবাদার) তিনি বাংলায় প্রেরন করেন

শাহজাহান ওরফে খুররম (১৬২৮-১৬৫৮ সাল)

তিনি মুঘল বংশের পঞ্চম শাসক। মমতাজ মহল ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী। শাহজাহান তার স্ত্রীকে প্রাণাধিক ভালবাসতেন। সম্রাজ্ঞী ১৬৩১ সালে চতুর্দশ সন্তান জন্মদানকালে শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন। সম্রাট তার প্রিয়তমার মৃত্যুতে গভীর আঘাত পান। তিনি আগ্রার যমুনা নদীর তীরে পত্নীপ্রেমের অক্ষয়কীর্তি 'তাজমহল ' নির্মাণ করেন। তাজমহলের স্থপতি ওস্তাদ ঈশা খাঁ। বলদেব দাস ছিলেন তাজমহল নির্মাণকার্যে নিযুক্ত বাঙালি স্থপতি। মণি মুক্তা খচিত স্বর্ণমণ্ডিত ময়ূর সিংহাসন সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি। সম্রাট শাজাহানের মুকুটে বিশ্ববিশ্রুত অপূর্ব 'কোহিনুর' হীরা শোভা বর্ধন করত। ১৭৩৯ সালে পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ দুর্বল মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ এর আমলে হীরা পারস্যে নিয়ে যায়। এটি বর্তমানে ইংল্যান্ডের রানীর রাজপ্রাসাদে শোভা পাচ্ছে সম্রাট শাহজাহান দিল্লীতে লাল কেল্লা, জাম--মসজিদ, দিওয়ান-- আম, দিওয়ান--খাস, আগ্রায় মতি মসজিদ এবং লাহোরে সালিমার উদ্যান নির্মাণ করেন। এজন্য তাঁকে Prince of Builders বলা হয়। সময় সম্রাটের অনুমতিক্রমে ইংরেজরা বাংলায় 'পিপিলাই' নামক স্থানে প্রথম সরাসরি বাণিজ্য কুঠি বা বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। সম্রাট শাহজাহানের চার পুত্র হল দারা, সুজা, আওরঙ্গজেব মুরাদ।

আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭ সাল)

শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের গর্ভে চারপুত্র দুইকন্যা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পুত্রদের নাম দারা, সুজা, আওরঙ্গজেব মুরাদ। কন্যাদের নাম ছিল জাহান আরা রওশন আরা। ভ্রাতৃযুদ্ধে জাহান আরা দারার পক্ষ এবং রওশন আরা আওরঙ্গজেবের পক্ষ সমর্থন করে। যুদ্ধে অপর ভাইদের পরাজিত করে আওরঙ্গজেব ক্ষমতা দখল করেন। সম্রাট শাজাহান তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেবকে যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ 'আলমগীর' নামক তরবারী প্রদান করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব অতিশয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। এজন্য তাঁকে 'জিন্দাপীর' বলা হয়। তিনি জিজিয়া কর পুনঃস্থাপন করেন। তাঁর সময়ে সুবাদার শায়েস্তা খান বাংলা থেকে পর্তুগীজদের বিতাড়িত করেন।

মুহম্মদ শাহ

দুর্বল অকর্মণ্য মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ এর আমলে (১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে) পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। নাদিরশাহ ভারত হতে মহামূল্যবান কোহিনূর হীরা, ময়ূর সিংহাসন এবং প্রচুর ধনরত্ন পারস্যে নিয়ে যান। কোহিনূর হীরা বর্তমানে ইংল্যান্ডের রাণীর রাজপ্রাসাদে শোভা পাচ্ছে। ময়ূর সিংহাসন বর্তমানে আছে ইরানে।

আহমদ শাহ আবদালীর ভারত আক্রমণ : আহমদ শাহ আবদালি নাদির শাহের সেনাপতি ছিলেন। তিনি নাদিরশাহের মৃত্যুর পর আফগানিস্তানের অধিপতি হন তিনি মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে ভারত আক্রমণ করেন কিন্তু পরাজিত হন। পরাজয়ের শোধ নেওয়ার জন্য তিনি আরও তিনবার ভারত আক্রমণ করেন।

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭-১৮৫৭)

শেষ মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। সিপাহী বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালে তাঁকে রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুনে) নির্বাসন দেওয়া হয়। ১৮৬২ সালে তিনি রেঙ্গুনে নির্বাসিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রেঙ্গুনেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।