সুখ (কায়কোবাদ

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি বাংলা সাহিত্য পাঠ

লেখক-পরিচিতি

 

১৮৫৭ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে কবি কায়কোবাদের জন্ম। তাঁর প্রকৃত নাম মুহম্মদ কাজেম আল কুরায়শী। ‘কায়কোবাদ' কবির সাহিত্যিক নাম । প্রথমে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হলেও পিতার অকালমৃত্যুতে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে মাদরাসায় ভর্তি হয়ে এন্ট্রান্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং আগলা গ্রামেরই পোস্টমাস্টার পদে চাকরি গ্রহণ করেন ।

বাংলা কাব্যধারায় কায়কোবাদ গীতিকবি হিসেবেই খ্যাত। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি ‘বিরহবিলাপ' কাব্য রচনা করেন। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ও মারাঠা শক্তির পতনের কাহিনি নিয়ে তাঁর রচিত ‘মহাশ্মশান মহাকাব্যের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য হলো : ‘কুসুমকানন, ‘শিবমন্দির, ‘আমিয় ধারা, ‘মহরম শরীফ ও ‘শ্মশান-ভস্ম। কবি কায়কোবাদ ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ কর্তৃক 'কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন' উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৫১ সালের ২১এ জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মূল কবিতা

 

“সুখ সুখ বলে তুমি, কেন কর হা-হুতাশ,

 সুখ ত পাবে না কোথা, বৃথা সে সুখের আশ!

 পথিক মরুভূ মাঝে খুঁজিয়া বেড়ায় জল,

জল ত মিলে না সেথা, মরীচিকা করে ছল! 

তেমতি এ বিশ্ব মাঝে, সুখ ত পাবে না তুমি, 

মরীচিকা প্রায় সুখ, - এ বিশ্ব যে মরুভূমি!

 ধন রত্ন সুখৈশ্বর্য কিছুতেই সুখ নাই,

 সুখ পর-উপকারে, তারি মাঝে খোঁজ ভাই! 

আমিত্বকে বলি দিয়া স্বার্থ ত্যাগ কর যদি,

 পরের হিতের জন্য ভাব যদি নিরবধি! 

নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা, 

মুছালে পরের অশ্রু ঘুচালে পরের ব্যথা ! 

আপনাকে বিলাইয়া দীনদুঃখীদের মাঝে, 

বিদূরিলে পর দুঃখ সকালে বিকালে সাঁঝে!

 তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি, 

যা রুপিবে তাই পাবে, সংসার যে কর্মভূমি!

 

শব্দার্থ টীকা

 

মরুভূ - মরুভূমি ।

জল তো মিলে না... করে ছল - জল, উদ্ভিদ ও জীবশূন্য বালুকাময় বিস্তীর্ণ স্থান হচ্ছে মরুভূমি। সেই মরুভূমির মাঝে পানীয় জল খুঁজে পাওয়া ভার । কখনো কখনো উত্তপ্ত বিস্তীর্ণ বালুরাশিকে সমুদ্র বলে ভ্রম হয়। এই ভ্রান্তিই হলো মরীচিকা, ছলনা বা মোহ। অর্থাৎ ধন-রত্ন অর্থ-সম্পদ প্রকৃত সুখের নিয়ামক নয়। সুখ খুঁজতে গিয়ে এসব উপকরণের পেছনে ছোটা মরীচিকার পেছনে ছোটার মতোই ৷

এ বিশ্ব যে মরুভূমি - অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদের অধিকারী মানুষ প্রকৃত সুখী নয় । প্রকৃত সুখ হলো আত্ম-সুখ। ধন-সম্পদ বাহ্য-সুখ। বাহ্য-সুখের অধিকারী মানুষের হৃদয়ে মরুভূমি ।

আমিত্বকে বলি দিয়া - অহমিকা বিসর্জন দিয়ে । 

বিদূরিলে পর দুঃখ বিকালে সাঁঝে - সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সারা জীবন সবার দুঃখ ঘোচালে ।

তবে পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে - সবার দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণা দূর করতে পারলে বা করার প্রচেষ্টায় যে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করা যায় কবি সেকথাই এখানে বলেছেন।

যা রুপিবে – তাই পাবে - যা বপন করবে তার ফল পাবে, অর্থাৎ ভালো কাজের জন্য ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

পাঠ-পরিচিতি

 

 

কায়কোবাদ রচনাবলির অন্তর্গত ‘অমিয়-ধারা কাব্যগ্রন্থ থেকে “সুখ কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। ১৯২৩ সালে ‘অমিয়-ধারা প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।

মরুভূমিতে পানীয় জল খোঁজার মতোই মানুষ সুখের অন্বেষণে মশগুল। ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব ইত্যাকার সম্পদের অধিকারী হয়ে মানুষ সুখী হতে চায়। কিন্তু কবি বলেছেন, বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়েও প্রকৃত সুখী হওয়া যায় না । প্রকৃত সুখী হতে হলে সবাইকে তার ভেতরকার ‘আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে নিরহঙ্কারী হতে হবে। বিসর্জন দিতে হবে আপন স্বার্থপর সুখান্বেষা। নিজের সকল কর্ম নিয়োজিত করতে হবে পরহিতে। দীনদুঃখীর ব্যথা দূর করার মধ্যেই খুঁজতে হবে আত্মসুখ। অপরের উপকারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। অপরের দুঃখ-দুর্দশা বিদূরিত করতে পারার মধ্যেই প্রকৃত অর্থে মানুষের আত্মিক সুখ ও শান্তি নিহিত বলে কবি মনে করেন

 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

 

 

১. কে ছল করে?

 

ক. সংসার

গ. মরুভূমি

খ. কর্মভূমি

ঘ. মরীচিকা

 

২. 'আমিত্ব' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

 

ক. ব্যক্তিগত স্বার্থ

খ. সামষ্টিক সম্প্রীতি

গ. পরহিত ব্রত

ঘ. পারিবারিক স্বার্থ

 

নিচের কবিতাংশটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:

 

সকলের মুখ হাসি ভরা দেখে

পার না মুছিতে নয়ন ধার?

পরহিত ব্রতে পার না রাখিতে

চাপিয়া আপন বিষাদ ভার?

 

৩. কবিতাংশের প্রথম দুই চরণের ভাবের সঙ্গে "সুখ" কবিতার সাদৃশ্য হলো-

 

ক. কর্মের মধ্য দিয়ে সুখ

খ. নিজের সুখই প্রকৃত সুখ

গ. অপরের সুখে সুখী হওয়া

ঘ. পরের জন্য আত্মদানেই সুখ

 

৪. উপর্যুক্ত পঙ্ক্তিমালা ও "সুখ" কবিতা উভয় ক্ষেত্রে প্রকাশিত হয়েছে-

 

i. পরের কল্যাণে নিজের স্বার্থ ত্যাগ

 

ii. অন্যের সুখে নিজের দুঃখ ভুলে যাওয়া

iii. পরশ্রীকাতরতা পরিহার করা

 

নিচের কোনটি ঠিক?

 

ক. i,ii

গ. ii, iii

খ. i, iii

ঘ. i, ii ও iii

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

 

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন-মন সকলি দাও, তার চেয়ে সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও। পরের কারণে মরণেও সুখ, সুখ সুখ করে কেঁদোনা আর, যতই কাঁদিবে, যতই ভাবিবে, ততই বাড়িবে হৃদয়ভার।

 

ক. কবি কায়কোবাদের প্রকৃত নাম কী?

 

খ. 'বৃথা সুখের আশ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. কবিতাংশের জীবনদর্শন "সুখ" কবিতার সাথে যে দিক থেকে সাযুজ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. "সুখ" কবিতায় কবি কায়কোবাদ উক্ত জীবনদর্শন বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন-মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।গ. উদ্দীপকের সঙ্গে "ঋতু বর্ণন" কবিতার বসন্ত ঋতুর সাদৃশ্য আছে- ব্যাখ্যা কর।

. 'উদ্দীপকটি "ঋতু বর্ণন" কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি'- মূল্যায়ন কর।